মোস্তফা তারিকুল আহসান
আমাদের কথাসাহিত্যে নিয়ে যুগপৎ আশান্বিত ও হতাশ হবার কারণ রয়েছে। যদি এমন ভাবি যে, আমাদের দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক রচনাক্রম সে এক বিশাল অধ্যায়, সেক্ষেত্রে সেটা অবশ্য আশাপ্রদ ব্যাপার। তবে লক্ষ্য থাকে যে, আমাদের সাহিত্যের এই শাখা অন্যান্য শাখার মতোই অনেকটা নিজস্ব মেরুদ- ছাড়াই দাড়াতে শুরু করেছিলো। আমাদের পথিকৃৎ লেখকদের রচনাই যখন স্পষ্ট অনুকরণের ছাপমারা সেক্ষেত্রে এভারেজ সাহিত্যকে মামুলী উপাধিতে বিশেষিত করা চলে। এই নেতিবাচক ধারণার অর্থ এই নয় যে, আমাদের কথাসাহিত্যের ইতিহাস, বৃদ্ধি ও ক্রমসম্প্রসারণশীল ব্যাপ্তিকে অস্বীকার করা হচ্ছে। বরং আমরা আজ পর্যন্ত যে কথাসাহিত্য পেয়েছি তার মাত্রিকতার (অবশ্যই জীবন ও শিল্পের সুক্ষ্ম মাত্রাগত দিক লক্ষ্য রেখে )দিকে নিজেদের দৃষ্টির প্রাখর্যকে সনাক্ত করার কথা বলছি। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, কোনো কথাসাহিত্যকই উপরোক্ত ধারণাপ্রোক্ত ক্যাটাগরির বাইরে নন। সেটা অবাক বা বিম্ময় প্রকাশের ব্যাপার নয়, বরং সেটাই বাস্তবতা। সংখ্যাধিক্যই কখনোই সাহিত্যর গুণগতমান বিচারের নিয়ামক নয়, একথা আমাদের বার বার স্মরণ করা দরকার। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের যে বৈভব ও বৃদ্ধি তাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাযুজ্য করলে সেটা একটা বড় ইতিহাস। বিভাগপূর্ব (৪৭ পূর্ব) ও বিভাগোত্তরকালে থেকে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের সব রচনা নেহাত কোনো সালতামামির ইতিহাস নয়। একটা বড় ধরনের ইমারত আমরা নির্মাণ করতে চলেছি সন্দেহ নেই। কিন্তু মনে হচ্ছে একটা সেরা বা সুউচ্চ ইমারত আমরা আজো তৈরি করতে পারেনি। কেউ কেউ অবশ্যই বেরিয়ে আসতে পারতেন বিশাল ক্যানভাস নিয়ে, কিন্তু আসেননি অর্থাৎ আসতে পারেননি। এদেশের একজন কথাসাহিত্যিক একবার সাহসী এক বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন ,পঞ্চাশ দশক থেকে আজ পর্যন্ত (৮০ দশক) কথাসাহিত্যে ওয়ালীউল্লাহ ছাড়া কারো নাম আমি করতে পারবো না। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শক্তি সমর্থ ও গভীর জীবনবোধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ রেখে বললেও বলতে পারি, লাল সালু ছাড়া তাঁর অন্য দুটি উপন্যাসের কাঠামো নিজস্ব নয়। এ সম্পর্কে শুধু একটা কথা এখানে বলা চলে তিনি ফরাসী ওই জাতীয় উপন্যাসকে সহজে আত্তীকরণ করতে পেরেছিলেন, এবং বাংলাভাষায় উপযুক্ত প্রেক্ষিতসহ উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন। সুতরাং আমাদের দৈন্য স্বীকার না করে উপায় নেই।
উত্তরাধিকার ভেঙে ভেঙে গড়ে ওঠে নতুন শিল্প সভ্যতা সমাজ। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এটার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ একজন সাহিত্যিক কখনো বিচ্ছিন্ন নন। তিনি তাঁর পূর্ববতী ও সমসাময়িকদের দ্বারা নির্মিত পরিবেশ আবহে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন। যাঁরা শক্তিমান তাঁরা বেরিয়ে আসেন প্রথাসিদ্ধ পথ কেটে কেটে। সামগ্রিকভাবে যে নির্মাণ বা ঐতিহ্য তাতে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে একটা দেশের সাহিত্য এক হিসেবে একক কারো সাহিত্য যেমন নয়, তেমনি নিজে কখনো স্বয়সম্পূর্ণ নন। কারণ, তাঁর অজান্তে তিনি অন্বিত হয়ে পড়েন অন্য লেখকদের দ্বারা।
T S Eliot বলেছিলেন, No poet, no artist of any art, has his complete meaning alone. His significance, his appreciation is the appreciation of his relation to the dead poets and artists. You cannot value him alone….. What happens when a new work of art is created is something that happens simultanously to all the works of art with preceded it. অর্থাৎ একজন যখন নতুন কিছু লিখেছেন তখন, পুরনো লেখার সঙ্গে (পুরনো সঞ্চয়ের সঙ্গে) সেটা যোগ হচ্ছে বা মিশে যাচ্ছে। যেন একটা ধারাবাহিক কর্মযোগ। তবু এর বাইরেও আমরা লক্ষ না করে পারি না যে, পৃথিবীর শিল্প সভ্যতার সঙ্গে দুএকটা নাম বার বার গভীর দ্যোতনার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে, তার আশপাশে আর কেউ নেই। সেই সব মহীরূহ যা লিখেছেন, তার সামান্য কিছু চোখের সামনে আসলে স্পষ্ট বোঝা যায়, এ আলাদা জিনিস। আমরা উপন্যাসে টলষ্টয়, হুগো, গোর্কিকে কেন সবার উচ্চে স্থান দিচ্ছি- সেটা তো স্পষ্ট। সুতরাং কোনো দেশে রস সাহিত্য একক ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করছে, তাদের আর সবাই হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। এখানেই আমরা talent-এর মাত্রার পরিচয় পেতে পারি। যাঁরা একটা বলয়ের বাইরে কখনো আসতে পারছেন না, বা tradition ভাঙ্গতে পারছেন না, তাঁরা প্রতিভাবান নন। প্রতিভাবান শব্দের মাত্রাগত বিন্যাসও লক্ষ্যযোগ্য। কারণ, শাদা অর্থে সবাই প্রতিভাবান।
আমাদের কথাসাহিত্যের ধারায় আমরা দেখবো বরাবরই গতানুগতিকতার উদাহরণ। বক্সিমক, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং পরবর্তীকালে তিন বন্দোপাধ্যায়ের হাতে যে সমৃদ্ধি, সে ধারা ও পরবর্তীকালে আর টিকে থাকেনি। মুসলমান সাহিত্যকরা প্রাগ্রসর চিন্তাভাবনা ও শিক্ষাদীক্ষা ঐহিত্যের অভাবে খুব ভালোভাবে যাত্রা শুরু করতে পারেননি। কাজী আব্দুল ওদুদ বা তাঁর পূর্বে কাজী ইমদাদুল হককে পেয়েছিলাম প্রথম দিকে। লক্ষ্য করার ব্যাপার যে, তাঁরা যেটা(অর্থাৎ pattern)যে শুরু করলেন, সেটা অনেক আগেই পুরনো হয়ে গেছে। অর্থাৎ ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে যে একটা গোষ্ঠী কথাসাহিত্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন তাঁরা অনেকটা ভাঙা কিংবা দাঁড়বিহীন নৌকা নিয়ে যাত্রা করলেন। কথাটা একদিক দিয়ে খুবই আপত্তিকর, আবার অন্যদিকে থেকে দেখলে খুব বেশি আপত্তিকর নয়। কথাসাহিত্যের শুরুতে আমরা যাদের পেয়েছিলাম (মোজাম্মেল হক, নজিবর রহমান, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, বেগম রোকেয়া, কাজী ইমদাদুল হক) তাঁরা তাঁদের সমসাময়িক হিন্দু লেখকদের সমান দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। বলতে পারি প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ওই সময় তার যথার্থ স্ফুরণও সম্ভব ছিলো না। সে কারণে ৪৭ পরবর্তী বাংলা কথাসাহিত্যের যে দুটো ধারা স্পষ্টত সীমা নিয়ে গড়ে উঠতে থাকে সেখানেও আমরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল পক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়েছি। আজো আমরা এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি কিনা তা নিয়ে বাকবিত্তন্ডা চালানো যেতে পারে, তবে আমাদের স্থান যে খুব মজবুত হয়ে উঠতে পারছে না সেটা স্বীকার করে নেয়া ভালো। ৪৭ পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যের যে ব্যাপ্তি-গভীরতা ও স্থিতধী মনন লক্ষ্য করা গিয়েছিলো, স্বাধীনতাপরবর্তীকালে সেটা আরো অবকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ সময়ে লেখার মাত্রার চেয়ে সংখ্যার আধিক্যের ওপর গুরুত্ব বেড়েছে। যার ফলে উপন্যাসের বা গল্পের অবকাঠামো বা গঠনকৌশল সৌকর্য ও সর্বোপরি জীবনের গভীরতর আততী অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে এবং যা কথাসাহিতোর অঙ্গনে অনেকটা অনভিপ্রেত তারহ আমদানি হচ্ছে। লক্ষ্য করা যাবে যে অহেতুক হিউমার, ফ্যান্টাসী, যৌনতা এবং নিছক খেলো ব্যাপার কথাসাহিতোর আসরে জাকিয়ে বসেছে। যাঁরা এসবের বাইরে জীবনের নির্বেদ নিয়ে লিখতে চেয়েছেন, তাঁরা বরাবরই গতানুগতিক। আর এই গতানুগতিকতা আমাদের কথাসাহিত্যের বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
আমরা জানি, সর্বোপরি একটা দার্শনিকসুলভ অধ্যায় উপন্যাসের জন্য জরুরী। সেক্ষেত্রে গল্প ও প্লটকে কখনো গুলিয়ে না ফেলে একটা নিজস্ব Pattern-এ ঔপন্যাসিককে এগিয়ে যেতে হয়। গল্প কখনোই শাদা অর্থে গল্প হিসেবে চিহ্নিত বা বিবেচিত নয় এক্ষেত্রে। উপন্যাসে গল্পকে পাঠকের জন্য অনিবার্য করে তোলার দুটো মাত্র উপায় রয়েছে। প্রথমত পাঠককে এক ধরনের (Curisity- র মধ্যে রাখা- যেটা স্বভাবতই রাখা সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে। তবে যদি সম্ভব হয় পাঠককে টানে। E M Forster যেমন বলেছিলেন, আমরা সবাই শারেজাদার স্বামীর মতো গল্প শুনতে চাই। আমরা জানি ঘটনা ছাড়া বঙ্কিম কিংবা রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এগুতো পারতেন না। শরৎচন্দ্র তো আরো এক ধাপ এগিয়ে। তিনি ঘটনা না পেলে পাত্র পাত্রীর কারো অসুখ বাধিয়ে দিতেন (সমালোচকের মন্তব্য)। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ মনস্তাত্ত্বিক কিংবা কাব্যগন্ধী উপন্যাস লিখে তাঁর দুর্বলতার বিপক্ষে খানিকটা দাড়িয়ে উঠতে পেরেছিলেন (যদিও চোখের বালি মনস্তাত্ত্বিক হলেও ঘটনাবহুল)। অন্যদের সে সুযোগ হয়নি। আসলে উপন্যাসে গল্প হলো It is a narrative of events arranged in their time-sequence. sequence কে মুর্ত করে তোলার মতো শব্দধবোধ ও কৌশল ঔপন্যাসিকের থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত পাঠকের সামনে যে গল্প ঔপন্যাসিক বলবেন, তাঁর ভেতরে ঔৎসুক্য ধরে না রাখলেও বর্ণনাভঙ্গি ও জীবন গভীরতা এত তীর্যক হবে যে পাঠক সবসময় একটা নির্বেদের মধ্যে থাকবেন। সেটা বাস্তব ও কিছুটা অবাস্তবের মাখামাখিতে নতুন একটা ব্যাঞ্জন যা সবসময়ে মানবমুখী প্রত্যয় জিজ্ঞাসা ও গভীর দার্শনিক দ্যোতনার পরিপূরক।
২ শওকত ওসমান (জ. ১৯১৭-১৯৯৭?) আমাদের কথাসাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে অন্বিষ্ট একটি পরিচিত নাম। আগেই বলেছি, বিভাগোত্তর নয়, বিভাগপূর্বকাল থেকেই আমাদের কথাসাহিত্যের যাত্রা শুরু এবং শওকত ওসমান ছিলেন প্রথম থেকেই। সে বিবেচনায় তিনি এ শাখার উৎস, বিকাশ ও সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। ইতিহাস পরম্পরায় এই সুদীর্ঘ সমযে রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থনীতিক ও সাংস্কৃতিক সামুহিক ঘটনাবর্তের এক নির্মম স্বাক্ষী ও অংশীদার তিনি। ক্রমঅগ্রসরমান ক্রমবিবর্ধিত বাঙালি মুসলিম জীবন-সংস্কৃতির অনুধ্যানের সবটা তাঁর চোখের সামনেই ছিলো সব সময়। একজন সচেতন প্রাগ্রসর জীবনবাদী মানুষ হিসেবে তাঁর অংশগ্রহণও আমরা লক্ষ করেছি। সুতরাং স্বাভাবিক এ সময়কার সকল আকীর্ণ ঘটনাপ্রপাত তাকে সংশ্লেষিত করেছে, এবং তাঁর লেখায় আমরা তা পেয়েছি। কথাসাহিত্যের বাইরে নাটকে, প্রবন্ধে, আত্মচরিতে,শেখের সম্বরাতেও তাঁর কমিটমেন্ট লক্ষ করা যায় বরাবরই। সে-নিরিখে তাঁর সাহিত্যে আমাদের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের গভীর মর্মবেদনার উৎসরণ লক্ষ করার কথা। সময়ের ব্যাপ্তিতে তিনি আজো মহীরূহের মতো। সুতরাং, তাঁর কাছে আমাদের দাবি সবচেয়ে বেশি। এই দাবি মূলত তাঁর অভিজ্ঞতার কাছে সত্যলব্ধ অভিজ্ঞতা, ঐতিহাসিক সত্য বাঙালি জীবনের টানাপড়েন এবং সর্বোপরি আমদের মূল চেতনারকাছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এই মানুষটি আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিপন্ন সময়ে আমাদেরকে সঠিকভাবে এগিয়ে যাবার মন্ত্রণা দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা বোধ করি ছিলো অন্যখানে। সাহিত্যে নিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি, আমরা তাঁর কাছে চেয়েছিলাম সম্ভবত গভীর চেতনা শৈলী সমন্বিত সাহিত্য যেটা তাঁর মৌলক্ষেত্র।
রাজনৈতিক ঘটনাবর্তের দুর্ময় সময় অতিক্রান্ত করার কারণে, জাতীয় জীবনে চড়াই উৎরাই পার হবার জন্য আমাদের সাহিত্যে বৈচিত্র আসা খুবই জরুরি ছিলো, কিন্তু কার্যত তা আসেনি। ’৪৭ পরবর্তীকালে বা চল্লিশ দশক থেকে যারা এ ধারাকে (সত্যেন সেন, আবু জাফর শামসুদ্দিন, আবু রুশদ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সরদার জয়েনউদ্দীন, রশীদ করীম, শহীদুল্লাহ কায়সার, শামসুদ্দিন আবুল কালাম) নির্মাণ করেছেন তাঁদের সাহিত্যে আমাদের সামগ্রিক রাজনৈতিক, সামাজিক-গার্হস্থ্য সাংস্কৃতির গভীরভাবে এসেছে এমন বলা যায় না। রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের যে মহাকাব্যিক বিশালতা আমাদের ছিলো তা নিয়ে যুগোত্তীর্ণ কিছু রচনা আমরা আশা করেছিলাম। সরদার জয়েনউদ্দীনের ‘অনেক সূর্যের আশা’, শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ এ তার প্রতিচ্ছাপ লক্ষ করা যায় । যদিও তা সঠিক মাত্রা পায়নি। ধরে নেয়া চলে এই বিশাল ক্যানভাসকে ধারণ করার মতো মেধা ও প্রজ্ঞা তাদের ছিলো না। আমরা লক্ষ করেছি পরবর্তীকালে পশ্চিম বাংলার ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (পূর্ব-পশ্চিম) এ ধারায় লিখে সফলতা পেয়েছেন। যদিও তাঁর আগে আমাদের অগ্রবর্তীদের লেখা উচিত ছিলো। অবশ্য আমাদের গ্রামীণ সমাজ, আঞ্চলিক জীবন ও প্রকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের অনুষঙ্গে আমরা বরাবরের মতো ব্যর্থ। বরাবরই বলেছি এ কারণে যে এ রকম জাতীয় ও বিশাল উদ্দীপনামূলক অনুষঙ্গকে উপযুক্ত অভিজ্ঞতা ও শৈল্পিক মণ্ডনক্রিয়ায় সিক্ত করার মতো মেধা হয়তো আমাদের নেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের মতো বিষয়ের সঠিক মাত্রা নিয়ে, প্রকরন্ত নিয়ে আমরা উপন্যাস সৃষ্টি করতে পারিনি। লক্ষণীয় যে, এক্ষেত্রে আমরা বেশির ভাগ সময় প্রত্যক্ষ ঘটনার বর্ণনা ও স্মৃতিচারণ করেছি। আমাদের গভীর চেতনার সূক্ষ্মতাত্ত্বিক মাত্রা যোজন করতে পারিনি। অনেকে বলেন, সে সময় নাকি এখনো আসেনি। হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তবে স্বীকার্য যে গ্রামীণ জীবন, লোকজ চালচিত্র এবং গ্রাম্য ও নাগরিক জীবনের মিশ্র যোগসূত্র নিয়ে আমরা বেশ সফল কিছু রচনা পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সফল রচনা আমরা পেয়েছি। তবু সেটাও আশাব্যঞ্জক নয়।
৩ বাংলাদেশের কাথাসাহিত্যের সম্ভাবনাময় সঙ্গে শওকত ওসমানের সাহিত্যের যোগসূত্রকে মুল্যায়ন করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত অভীক্ষার স্মরণ নিতে হয়েছে। আমরা চেয়েছি, আমাদের এভারেজ মানদন্ড পাঠকের সামনে ভেসে উঠুক। সেক্ষেত্রে এই কথাশিল্পীকে আমরা হয়তো আলাদা করে চিনতে পারবো। শওকত ওসমানের কথাসাহিত্যের পরিধি ব্যাপক। রচনার সংখ্যা ও প্রকৃতি থেকে অনুমান করা সহজ যে, তাঁর রচনার পরিমাণ অনেক। বিভাগপূর্ব কাল থেকে বর্তমান বাংলাদেশ পর্যন্ত তাঁর রচনাক্রম ইতিহাস, দেশ, জাতি, সমাজের নানান প্রসঙ্গের দ্বারা উৎকীর্ণ। সেক্ষেত্রে আমরা সময়কেই বড় নিয়ামক হিসেবে ধরতে পারতাম। এবং জাতীয় জীবনের টার্নিং মুহূর্তকেই আমাদের মাপকাঠি হিসেবে মেনে নেয়া সমীচীন। তবে লক্ষণীয় যে, তিনি একটা সরল সোজা পথে চলেছিলেন। তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্যসূচক রেখা খুব একটা বেপথু নয় মোটামুটি একটা সরল রেখা। শাদা অর্থে তাঁর বিষয় মধ্যবিত্ত সমাজ বিশেষজ্ঞ গ্রামীণ সমাজ। কখনো অতীতচারী মুসলমান সমাজের টানাপড়েন, তাঁদের ধর্মীয় জীবন, কখনো ব্রাতা সাধারণ মানুষ, আবার কখনো জাতীয় জীবনের নানা সংঘটনে ক্ষুব্ধ মেরুদন্ডহীন মধ্যবিত্ত, এক কথায় ব্রিটিশ আমল থেকে বাঙালি মধ্যবিত্তের ক্রমঅপসৃয়মান জীবনচরিত্র তিনি একে গেছেন দীর্ঘদিন ধরে, কখনো গল্পে কখনো উপন্যাসে। সমাজ জীবন তাঁর বড় উপাদান। সমাজের মানুষ এসেছে স্বাভাবিক মানুষের মতো। অর্থাৎ সমাজ মানসবিক্ষণ নেই বললেই চলে। অর্থাৎ সমাজ জীবনের সঙ্গে লীন মানুষের স্বাভাবিক স্থূল জীবন এসেছে- একটা ধারাবাহিক ও সংহতরূপে। তবে, ব্যক্তিক্রমধর্মী যেনো কেউ নেই, কিংবা ভেতরের মানুষ তার মানসলোকের জটিল ব্যুহ ভেদ করে এই বেরিয়ে আসার যে চলমান সুক্ষ্ম পথ যে দার্শনিক মনেভঙ্গি তাঁর নেই। বিশের দশক আর ত্রিশের দশকের পটভূমিতে তাঁর বিখ্যাত দুটি উপন্যাস রচিত। ‘জননী’ উপন্যাসে সমাজ ঔপন্যাসিকের নিজস্ব জীবন অভিজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। এখানের ভাষা শব্দ গঠন ও রচনাশৈলী চমৎকার। অবশ্য ঐ সময়ের অন্যান্য ঔপন্যাসিকের প্রভাব এখানে স্পষ্ট। তবু তাঁর ভাষা প্রয়োগে নিজস্ব ধরন ও গতিময়তা পাঠককে মুগ্ধ করে– ‘একটি বাঁক ফিরিতেই পরিচিত পথ দেখিয়া সে পুলকিত হইয়া উঠিল। এই শীর্ণ রাস্তাটি সাদা ফিতের দাগের মত আঁকাবাঁকা সমন্বয়ে পাড়ার ওদিকে মিশিয়া দিয়াছে। দুইপাশে নানা রকমের গাছ।
সন্ধা আসন্ন। ভয়াতুর মসৃণ অন্ধকার জমিয়া উঠিতেছে খানা খোন্দলে, পত্রপঞ্জের অনাবৃত বুকে।’ জননী দরিয়া বিবি সন্তানের জন্য নিজের জীবন ও ধর্ম সত্য বোধকে বিসর্জন দিয়ে মাতৃত্বের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে। এই জননী গোর্কির জননী নন স্পষ্ট বোঝা যায়। কিন্তু উপন্যাসের চারিত্র্য বিচারে অনুসন্ধিৎসু পাঠক হোচট খাবেন। এখানে প্রধান সমস্যা উপন্যাসের শৈল্পিক প্রকরণ তথা অবকাঠামোগত সমস্যা। আর শওকত ওসমানের যেটা প্রধান দোষ কাহিনী বিন্যাস ও বর্ণনায় ধৈর্যচ্যূতি ও অহেতুক বাকচাতুর্থ। জননী উপনাাস সম্পর্কে একজন সমালোচকের মতামত লক্ষ্য করেন; মূল কাহিনীর সঙ্গে উপকাহিনীর সংযোগ কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন অত্যাবশ্যক হয়েছে, কোথাও কোথাও তেমনই শিধিল ও ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। মূল কাহিনীর মধ্যে উপন্যাসের শুরু থেকে আজহারের প্রথম বারের গৃহত্যাগ পর্যন্ত সাংসারিক দুঃখচরিত্রের মধ্যে এতই নিঃসঙ্গতা লক্ষিত হয় যে কখনো কখনো একঘেয়েমি ও বিরক্তি এসে যায়, বাড়ি থেকে মিস্ত্রীকর্ম করতে গিয়ে আজহার যে পরিবেশে থাকে তা অত বিস্তারিতভাবে উপস্থাপনার প্রয়োজন ছিল না। অথচ আমরা জানি উপন্যাসে জীবনের সামগ্রিক খুটিনাটি বর্ণনা দিয়েছেন টলষ্টয় ও দস্তভয়েস্কি এবং সেখানে তা কখনো পাঠকের কাছে বিরক্তির বা আরোপিত মনে হয়নি। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরী তা হলো প্রত্যেকটি চরিত্রকে অন্বিত করে তোলে, এবং তাদেরকে অপরিহার্য করে তোলা সর্বোপরি এমন এক নির্মোহ ও সৌন্দর্যময় ভঙ্গিতে বর্ণনা করা যাতে পাঠক সহজে আটকা পড়ে অবচেতনভাবে। শওকত ওসমানের অন্যান্য উপন্যাস সম্পর্কেও এ অভিযোগ সত্য। আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাসের উদাহরণ দিতে চাই। ‘বনী আদম’(১৯৪৬ সালে আজাদে প্রকাশিত) উপন্যাসে তিনি যেনো খেই হারিয়ে ফেলেছেন। অবকাঠামোগত ক্রটি এখানে প্রকট। মনে হয় যেনো কোন পরিকল্পনা বা অভিনিবেশ ছাড়াই তিনি উপন্যাস শুরু ও শেষ করেছেন। সমালোচক বলেন,‘ কাহিনী হিসেবে বনী আদম সুবিন্যাস্ত নয়। তবে যে সমস্ত আদম সন্তানের ঘটনা এখানে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খতা বিদ্যমান থাকলেও কাহিনী ঢিলেঢালা।’ পরবর্তী পর্যায়ে কথাসাহিত্যে শওকত ওসমান তাঁর নিজস্ব অচলায়তন ভেঙ্গে বের হতে পেরেছেন সে কথা ও বলা চলে না। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে রচিত তাঁর উপন্যাসগুলো লক্ষ্য করলে দেখতে পাব তিনি মূলত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া কিংবা চরিত্রসমূহের ভেতরকার গভীর অনুভবঋদ্ধ মনোপ্রতিন্যাস নেই। ফলে তা সাধারণ গন্ডির বাইরে আসতে পারেনি। জলাংগী (৪৯৭৪) দুই সৈনিক (১৯৭৩) উপন্যাস দুটিতে মুক্তিযুদ্ধের শাদামাটা কাহিনীই বিবৃত হয়েছে। দুই সৈনিকের মখদুম মৃধা পাকিস্তানপন্থী রাজাকার অথচ তার দুই কন্যা চামেলী ও সাহেলী বাংলাদেশের পক্ষে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছে। দুই কন্যার খান সেনা কর্তৃক অপহৃতা, ধর্ষিতা হবার পর মুখদুম অন্তর্দ্বন্ধে ভুগেছে। একে আমরা নতুন একটা মাত্রা বলতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিসেবে নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩) কে বেশ সফল বলা যায়। কারণ বাংলাদেশের নারীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে নির্যাতিতা ধর্ষিতা হয়েছে তার এক করুণ চিত্র এখানে চিত্রিত।
এখানে সবরকম (শ্রেণীর) নারীর (জায়েদা, জনিমা, সখিনা, রাশিদা বিবি, আমোদিনী) আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের যে অবদান তা সার্থকভাবে পরিস্ফুটিত। এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। এদের মানসম্ভ্রম যেভাবে ধুলোয় মিশে গেছে তাদের চোখের সামনে তাতে করে তিলে তিলে তারা উপলব্ধি করেছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কতটা ত্যাগ বাঙালির স্বীকার করতে হয়েছে। নিজেদের ভেতরের আগুন ও গ্লানি, পাশাপাশি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা তাদের মানসলোকে নতুন অনুধ্যানের জন্ম দিয়েছে। তারা মুক্তি সৈনিকে পরিণত হয়েছে। বন্দী নারীরা হানাদারের ছোবলে পরিণত হয়েছে। বন্দী নারীরা হানাদারের ছোবলে উলঙ্গ অবস্থায় একসঙ্গে থেকেছে- ধর্ষিতা হয়েছে, অন্যকে ধর্ষিতা হতে দেখেছে, শওকত ওসমান সে সব দৃশ্যের সে সব অনুভবের মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে তাঁর অভিজ্ঞতা ও কাহিনীর মাত্রিকতা প্রশংসার্হ। আমরা শওকত ওসমানের সামগ্রিক কথাসাহিত্যের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাবো, নতুন বিষয় ও মাত্রা নিয়ে তিনি উপন্যাস ছোটগল্প লেখার প্রয়াসী ছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁর আরবী ও ফার্সী ভাষার দক্ষতা তাকে বেশ সহায়তা দান করেছে। এ পর্যায়ে তার ক্রীতদাসের হাসি (১৯৬২) অন্যতম সফল উপন্যাস। এখানের পটভূমি বাগদাদের তৎকালীন সময়ে হলেও এর বিষয়বস্তুর প্রতীকী ব্যঞ্জনা তা চিরকালীন সত্যের পরিচয় বহন করে। খলিফা হারুনর রশিদের হাবসী ক্রীতদাস তাতারীকে তার প্রেমিকার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে (নিজে জোরপূর্বক বিয়ে করে) ধনদৌলত দিয়ে হাসি খুশি রাখতে বাধ্য করতে চান। কিন্তু মানসিক শাস্তির প্রতিফলন হয় হাসিতে-জোর করে ভেতরে কষ্ট চেপে রেখে কেউ হাসতে পারে না। এই সত্য উপন্যাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখানে বাগদাদকেন্দ্রিক মুসলিম জীবনাচরণ সংস্কৃতি ও ভাষার অপূর্ব মিশ্রণ ঘটাতে পেরেছেন শওকত ওসমান। তবে তাঁর সমাগম(১৯৬৭) উপন্যাসে যে অবকাঠামো ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করা হয়েছে তা সুসামঞ্জস ও শৈল্পিক নয়। কারণ, কাহিনী ছাড়াই তত্ত্বীয় উপন্যাস লিখতে চেয়ে বরেণ্য লোকদের আমদানি করে তাদের মুখে যে বুলি ও তাদের নগ্ন বাকভঙ্গির সমাগম করেছেন তাতে একে একটি ক্যারিকেচার জাতীয় রচনা বড়জোর বলা চলে। এখানে পরীক্ষাপ্রিয়তার পরিচয় তিনি না দিলেই পারতেন। উপন্যাসের পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় খুব সচেতনভাবে তা কখনো আরোপিত হতে পারেনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যদি পাঠক বুঝতে পারেন, তবে সেটা আর পরীক্ষা থাকে না, হয়ে উঠে নিছক হাত-পাকানো ব্যাপার। যুক্তনিষ্ঠ, বিজ্ঞানমনস্ক ও সংস্কৃতিবান লেখক ও ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নানা ধরনের রচনার বহুমাত্রিকতাই প্রমাণ করে যে তাঁর জ্ঞানের পরিধি ও আগ্রহ ব্যাপক। বিশেষভাবে কবিতার সঙ্গে তাঁর অশৈশব যোগ থাকার ফলে তাঁর কথাসাহিত্যে গতি ও মানবিক প্রত্যয়ের পরিচয় গভীরভাবে আসে। কবিতা, সম্বরা ছড়া নাটক প্রবন্ধ অনুবাদ রাজনৈতিক নিবন্ধ এসবের বাইরে আমরা তাকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে পেতে বেশি আগ্রহী। ধারণা করা ভুল হবে না একজন লেখক সংবেদনশীল এবং অনুভববেদা সব অনুষঙ্গকে সংক্রমিত করে, তাই নানা বিষয়ে লেখক জানার ও উপলব্ধি করা সুযোগ পান। তবু তাকে বেছে নিতে হয় একটা নিজস্ব ভুবন এবং সে ভুবনে তিনি সতত সঞ্চরণশীল সারথী; তিনি নিজে যেমন বুঝতে পারেন, পাঠকেরাও পারেন। তাই গোড়াতেই যে নেতিবাচক অভীক্ষা দিয়ে শুরু করেছিলাম তার সঙ্গে সূর মিলিয়ে বলা ভালো শওকত ওসমান তাঁর নিজস্ব পথে যদি আরো নিবিষ্ট হতেন তবে আমরা হয়তো হতাশ হতাম না। কারণ, দিন দিন আমরা উটের পিঠের মতো ন্যুজ দেহে হাটতে হাটতে চলেছি। ঘোড়ার মতো হাটছি না বা দৌড়াচ্ছি না। আমরা পৃথিবীর অপরাপর সাহিত্যের দিকেও তাকাচ্ছি না,অনেকটা আয়াসলব্ধহীন যা সৃষ্টি করছি- তার আনন্দেই বিভোর হয়ে থাকছি, ফলে আমাদের তিমিরঘর আলো হয়ে উঠছে না, হয়তো উঠবে কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে।
আমাদের কথাসাহিত্যের নির্মাণপথ যে সুদীর্ঘ সময়ের আবহে ঋদ্ধ তাতে শওকত ওসমান একাই পাহাড় সমান দাড়িয়ে আছেন। পাহাড়ের উচ্চতা নিয়ে দরকষাকষি চলতে পারে, তবে সেটা যে পাহাড় তাকে কোনো সন্দেহ নেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড