ডাঃ খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার কয়েকজন মহিয়সী নারীর বীরত্বগাঁথা, ত্যাগ তিতিক্ষা ও অনন্য অবদানের কথা লিখেছেন জনপ্রিয় কবি ও গবেষক ইমাম মেহেদী। গ্রন্থটির নাম করণ করা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার নারী’ শিরোনামে। গ্রন্থটির ভূমিকা অংশে লিখেছেন তৎকালীন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এমপি। সেখানে মন্ত্রী মহোদয় গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।একটি জায়গায় মাননীয় মন্ত্রী লিখেছেন, ‘এই নারীগণের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদেরই কয়েকজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক ইতিহাস রচনা করে ইতিহাস -ঐতিহ্য অনুসন্ধানী গবেষক ইমাম মেহেদী আমাদের সবারই কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন বলে মনে করি।’
ইমাম মেহেদী একাধারে একজন কবি, গবেষক ও সাংবাদিক। বাংলা সাহিত্যের একজন গর্বিত ছাত্র ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতায় পেশাগত জীবনের এক পর্যায়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন সমাজের প্রতি তাঁর আরো দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্তরের আলোড়নে নিজেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল বীর নারী যোদ্ধাগণ আমাদেরকে ঋদ্ধ করেছেন তাঁদের কথা তুলে ধরলেন আলোচিত গ্রন্থের মাধ্যমে। লেখক তার বক্তব্যে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উদয়গিরি ও রণাঙ্গন কুষ্টিয়া। নরহত্যাকারী পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ধারণ করে আছে এই কুষ্টিয়া ‘
তবে সেই সঙ্গে উল্লেখ্য, এই গ্রন্থে আলোচিত এই জনপদের কয়েকজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতি অবহেলা এবং উপেক্ষা প্রদর্শিত হয়েছে। এই রচনায় সেই অকৃতজ্ঞতা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে কুষ্টিয়া শহর কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন লেখক। একেবারে একক উদ্যোগে। কারো পৃষ্ঠপোষকতার ধার ধারেননি তিনি। এটি তাঁর চেতনা বোধের কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এটি তাঁর ঐকান্তিক দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। লেখক গ্রন্থটির শুরুর দিকে সংক্ষিপ্তভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ও তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
এরপর একাত্তরের রণাঙ্গনের সাহসী এগারোজন নারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, মোছা. আরজুমান বানু, লুলু ই ফেরদৌস, লুলু ই জান্নাত, রাবেয়া খাতুন, মোছা. মোমেনা খাতুন, দোলজান নেছা, এলেজান নেছা, মাছুদা খাতুন, শাহানা আক্তার চৌধুরী, মমতাজ আরা বেগম রুমী, রওশন আরা বেগম নীলা প্রমুখ।
গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠককুল তৃপ্ত হবেন এই কারণে যে, লেখক এই সকল বীর নারী যোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন সময়ের নানান স্মৃতি শ্রুতি লিখেছেন। সন্নিবেশিত করেছে তাঁদের ও তাঁদের পরিবার পরিজনের বর্তমান জীবন যাপনের সুখ-দুঃখের খুঁটিনাটি।
ইমাম মেহেদী'র এই ইতিহাস ঐতিহ্যের খোঁড়াখুঁড়িতে পাঠক গন্ধ পাবেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীভৎসতার, নারকীয়তার। যে কোন দেশ প্রেমী পাঠকের অনুভূতিকে নাড়িয়ে তুলবেই আশা করি। ইমাম মেহেদী’র এই ‘মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার নারী’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনী ‘বেহুলা বাংলা’। প্রকাশকাল অমর একুশে গ্রন্থ মেলা২০১৯। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আল নোমান।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড