হরষিত ঘরামী
বহুদিন পর শিউলির সাথে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা।ওর সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিল।তারপর বিচ্ছেদ। শিউলি হাসিমুখে বলল, ‘আরে শুভ! কেমন আছো?’
আমি এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। বাসে বেশ ভিড়। সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে ছিল। খুব কষ্টে তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর ও ঘুরতেই দেখলাম ও। যদি ও শেষবার যখন দেখা হয়েছিল তখন হাসিমুখের বিদায় ছিল না। হাসিমুখে বিদায় না হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ বিচ্ছেদ কখনও হাসিমুখের হয় না।
আমিও হাসিমুখে উত্তর দিলাম ভালো আছি।
- তোমার যদি ব্যস্ত না থাকো তাহলে কোথাও বসতে পারি আমরা।
আমি আর না করতে পারলাম না। একটু ব্যস্ততা থাকার পরও। শিউলি আর আমি সামনের বাসস্টপে নেমে একটা কফি শপে বসে আছি। ওর সামনে কোল্ড কফি আর আমার সামনে হট কফি। সেই আগের মতো।
- শিউলি নীরবতা ভেঙে বললো, ‘কত দিন পর তাই না!’ - হ্যাঁ। বেশ অনেকদিন তো হলো। এই তো তিন বছর হয়ে গেছে ফেব্রুয়ারিতে। - ভুলোনি যে। - একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, তুমি তো জানো। আমার সব কিছু মনে থাকে। সব কথা। সব মুহূর্ত। সব দিন তারিখ। - প্রথম কবে আমায় দেখেছিলে মনে আছে আজও? শিউলি কফিতে চুমু দিতে দিতে বললো। - ২১ শে জানুয়ারি বিকালে। একটা সবুজ রঙের চাদর গায়ে ছিল তোমার গায়ে। শীতের বিকাল ছিল। - এখনো সব মনে রেখেছো? - মনে রাখে নি টুনির মা। মনে রয়ে গেছে। শিউলি হেসে বললো, টুনি ছিলো আমাদের মেয়ের নাম। তুমি জেগে স্বপ্ন দেখতে। আর আমি তোমাকে স্বপ্নিক বলে ডাকতাম। কতো স্বপ্ন দেখাতে।
- স্বপ্ন দেখাতাম। কিন্তু স্বপ্ন তো ভাঙেনি। তুমি তো থাকলে না। চলে গিয়েছিলে। অপেক্ষা করতে। সময় দিতে....
শিউলি আমার কথা থামিয়ে প্রসঙ্গ ঘুরানোর চেষ্টা করে বললো, ‘লেখালেখি কেমন চলছে?’ - হ্যাঁ। ভালোই। পড়ো আমার লেখা? - তোমার প্রথম উপন্যাসটা পড়ছিলাম কিন্তু কেন যেন মনে হলো নায়িকার চরিত্রটার ভিতর আমার ছায়া আছে।অনেকটা আমার মতো। - তখন সামনের কাছে ভালো কেউ ছিল তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কেন নিবো! - আমি কি ভালো কেউ ছিলাম?যে তোমার সাথে চিট করে চলে গিয়েছিল। আমি শিউলির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমি কখনো তোমাকে খারাপ কিছু ভাবেনি। হয়ত ঐ সময়টা অনেক কষ্টের ছিল। তোমাকে নিয়ে খারাপ লাগতো বেশি। আর যার সাথে ভার্সিটি লাইফের সেরা মুহূর্তগুলো কেটেছে তাকে খারাপ বলবো কীভাবে। কীভাবে ঘৃণা করবো। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায় না।’ - আমার জন্য অপেক্ষা করতে তাই না? প্রতিদিন! - হ্যাঁ। প্রথম প্রথম অপেক্ষা করতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম আমি তোমার কাছে ফুরিয়ে গেছিলাম। আমি তোমাকে সব সময় কেয়ার নিতাম। কখনো অবহেলা করতাম না। তুমি কখনো আমার অস্তিত্ব বুঝতে দিতাম না একটু দূরে গিয়ে কিংবা তোমার প্রয়োজনগুলো না চাইতে পেয়ে যেতে। আমার অভাব অনুভব করতে না। আর এভাবে আমি ফুরিয়ে গিয়েছিলাম তোমার কাছে আর সে জন্য অন্য কেউ এসে গিয়েছিল। আর আমি ভাবতাম আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। - কিন্তু হাসছো কেনো? - হাসছি কারণ কতো বোকা ছিলাম। বুঝতাম না অবহেলা ছাড়া ভালোবাসা হয় না।ভালোবাসতে ও ছল লাগে! - শুভ এসব বাদ দাও। তুমি বোকা না। আমি বোকা ছিলাম। আমি পরে ভুল বুঝতে পারছিলাম। সব সময় তোমাকে অনুভব করতাম। প্রতিটি মুহূর্তে। কিন্তু নিজের কাছে এত ছোট হয়ে গিয়েছিলাম যে তোমাকে আর কখনও ফোন দেয়নি। তুমি আমাকে ফেরানোর জন্য কতো না পাগল হয়েছিল! - হ্যাঁ। পাগল হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। - আমি শরতের ভোরগুলো অনেক মিস করি। তুমি ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙাতে। আমার হাতের মুঠোয় শিউলি ফুল ভরে দিতে। আর বলতে এই ভোরের শিউলিফুলগুলো শুভ্রতা ছড়িয়ে ফুরিয়ে যাবে কিন্তু তুমি ফুরাবে না। আমার জীবন থেকে।
আমি শিউলির কথা থামিয়ে বললাম, ‘প্লিজ থামো আর বলো না। ওগুলো আমাদের সোনালী সময়ের রঙিন স্মৃতি। ওগুলো আমি কখনও ভুলতে পারবো না। না পারবো ওদের উপেক্ষা করতে। আমি প্রতিটি জোছনা রাত আর বৃষ্টির বিকালে তোমাকে আমার মনে পড়ে।’
কিছুক্ষণ নীরব। তারপর শিউলি বললো, ‘কেউ আছে? লাইফ পার্টনার’ আমি শুধু এটুকু বললাম, ‘কোনকিছু শূন্য থাকে না। সেই শূন্যস্থান ধূলা দিয়ে হলেও ভরে যায়।’ - আমার বিয়ে। সামনের সপ্তাহে। আমি চাই তুমি আসবে। তুমি ভেবো না যে হঠাৎ দেখা হলো বলে নিমন্ত্রণ করলাম। আমি তোমাকে ফেসবুকে কিছুদিন যাবত নক দিবো বলে ভাবছিলাম কিন্তু আমি তো তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো তোমার বিয়েতে। আজ উঠি। কফিশপ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে ও বললো, ‘একটা কথা বলি, রাখবে?’ - হ্যাঁ, বলো দেখি। - আর সিগারেট খাবে না। আমি হেসে বললাম,‘আচ্ছা চেষ্টা করবো।’
শিউলি চলে গেল রিক্সায় উঠে। আমি চললাম উল্টা দিকে। কিছুদূর গিয়ে পিছে ফিরে দেখলাম রিকশা মিলেয়ে গেছে শহরের ব্যস্ত যানজটে।
মাথার উপর বৈশাখ মাসের রোদ। আমি হেঁটে চলেছি পিচ ঢালা তপ্ত রাস্তায়। গরমে রাস্তায় কুকুরগুলো মুখ হা করে জিহ্বা বের করে বসে আছে। আমার মনের ভিতর সেই সময়টা বার বার ফিরে আসছে। এই ভ্যাপসা গরমে ও বার বার সেই সময়ে ওর সাথে বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্তগুলো সামনে আসছে। মনে হচ্ছে এখনো আমি আছি সেই সময়ে। আমার পাশে আমার হাত ধরে শিউলি বসে আছে হুটখোলা রিক্সায়। আর আষাঢ়ের দুপুরে ঝুমঝুম বৃষ্টি পড়ছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড