সাখাওয়াত আলী
পেয়ালা বেয়ে চা গড়িয়ে পড়ছে। রমণীটি অন্যমনস্ক। হাতে সোনার বালা, শরীরে দামি শাড়ি। আড়চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসা মানুষটির দিকে। রহস্যময় মানুষ। একটু আগেও যাকে খুব কাছের বলে মনে হলো এখন তাকে জগতের সবচাইতে কঠিনতর প্রাণী মনে হচ্ছে। মানুষটিও তার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তাকানোর মাঝে বিভ্রম। গভীর বিভ্রম। রমণীটি সেই বিভ্রমে হানা দিতে চেষ্টা করছে। পড়ে ফেলতে চাইছে তার সমস্ত আশা, প্রত্যাশা, অনুরাগ। রমণীটি তাকিয়েই আছে তার মানুষটির দিকে। পেয়ালা বেয়ে গড়িয়ে পড়া চা এখন পায়ের কাছের আঙ্গুলের গোড়ালিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু রমণীটির সেদিকে খেয়াল নেই। সে ডুবে আছে এক গভীর বিভ্রমে। জীবনের সবচাইতে কঠিনতম সময়ে। একটা সময় রমণীটি নীরবতা ভাঙ্গলো। সামনে বসা মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কী দেখছো?’ মানুষটি বললো, ‘আমাকে।’ - তোমাকে! কিন্তু তুমি যে আমাকে দিকে তাকিয়ে আছো! - হ্যাঁ। তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। তোমার মায়াময় চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে আছি। - তাহলে তুমি যে বললে তুমি তোমায় দেখছো? - হ্যাঁ। আমি আমায় দেখছি। তোমার শান্ত, স্বচ্ছ, মায়াময় চোখদুটিতে আমায় দেখছি। দেখছি কতটা মায়া চোখে পুষে রাখলে একটা মানুষকে এভাবে দেখা যায়। রমণীটি ম্লান হাসলো। তারপর আলতো করে তার হাতটি মানুষটির হাতে রাখলো। তারপর বললো, ‘কতটা স্বচ্ছভাবে তোমায় দেখা যায়?’ - যতটা স্বচ্ছভাবে মানুষ আয়নায় তার প্রতিকৃতি দেখে। - আচ্ছা, কখনো যদি এমন হয়, চোখ দুটি থেকে পৃথিবীর আলো নিভে গেলো। শেষ হয়ে গেলো তার জমিয়ে রাখা চোখের জ্যোতি। তখনও কি ঠিক এভাবেই তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে?
মানুষটি আবার নীরব হয়ে গেলো। নীরবতার চাদরে আবার ঢেকে গেলো দু’জন। ভেসে উঠলো এক ভালোবাসাময় সময়। করুণ, গভীর, স্পর্শহীন এক সময়। যে সময়ে শুধু তাকিয়ে থাকা যায়, অনুভব করা যায়, ভালোবাসা মাখা যায় কিন্তু কথা বলা যায় না। মানুষটি রমণীটির দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। রমণীর করা প্রশ্নটি মানুষটিকে নিথর করে দিয়েছে। শান্ত, চুপচাপ মানুষটি আরও যেনো মিইয়ে গেলো। তারপর একটা সময় মানুষটির চোখ বেয়ে টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা মায়ার বিন্দু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রমণীটি এবার আর অবাক হলো না। সে দু'ফোঁটা মায়ার বিন্দু মুঠ করে হাতে নীল। তারপর পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ, কোমল পানিটি নিজের মুখে মেখে দিলো। রমণীটি মেখে নীল এক শব্দহীন মানুষের অনুভূতি, এক না বলা মানুষের গভীর ভালোবাসা, এক অপার্থিব রহস্য।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড