• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আল আমীনের তিনটি কবিতা

  আল আমীন

১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:১৬
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

সংসার বাড়ির প্রেম

ঘরণীর চিরুনি হারিয়ে গ্যাছে। খুঁজতে খুঁজতে হাতে থাকা কাঁথায় ফোঁড় দেয়া সুঁইও পড়ে গেল অন্ধকারে! আমি বিরক্ত হয়ে ঘামছি। এত বোকাও হয় মানুষ! তার যাচ্ছেতাই আস্ফালন দেখে আমার মন কেমন ভাল হয়ে গেল। বিরক্তি কমে এসে চোখ গেল তার গালে-চুলে! সংসারের এতসব খুঁটিনাটি বিষয়ও যার খেয়াল এড়ায় না, তারে বোকা বলি আমি কোন জ্ঞানে! ঝামটা দিয়ে ওঠা তার অগোছালো চুলে হাত রাখলাম! ছোটবেলায় দুবলার চরে ঘাসফড়িঙ ধরার দিনের কথা মনে পড়ে গেলো! ঘাসের শিয়রে তার গৌরবদন যেন একখানি পাখীর পালকের মতো স্মিত শৈশব তার পুরোটায় ছড়ানো! আমি আবার স্থির হলাম! আমি তাকে ভালবাসি! আমি আমার শৈশব কখনো ভুলতে চাই নি। আমার শৈশব যার কাছে, আমার যৌবন যার জমানতে, আমার ভবিষ্যৎ যারে কোলে গচ্ছিত! আমি আরো স্থির হলাম, আমার সংসার যার আঁচলের খুঁটে বাঁধা! আমি তারে ভালবাসি!

যা কিছু চুম্বন দিয়ে করেছি সুন্দর

আমি কোনদিনই চাই নি, আমার হৃদয়টা কেউ দেখুক, সেই চেষ্টাই করেছি সারাক্ষণ তাকে অজানিতার আঁচলের আড়ালে আগল দিয়ে রাখতে।

কিন্তু কোন কৌতুহলে ছিন্ন করলে তুমি তা? আলগা করে দিলে হৃদয়ের অবরণ! আর কেনইবা গুঁজে দিলে সে ছিন্ন আঁচলে দেবীর আরাধনা-পূজ্য নারীত্বের ফুল-কলিকা?

উফ: কী যন্ত্রণা! তোমার দীঘল বুকের ললিত কুসুমের সুবাস আমাকে রুষ্ঠ অতিষ্ঠ করে তুলছে! ও ছিন্ন-আঁচল-তলে অনভ্যস্ত হৃদয় আর থাকতে চাইছে না। ছিদ্র যখন করেছো, এই ছিদ্র দিয়েই তুলে নাও না কেনো হৃদয়টাকে? তোমার বুকের মাঝে সামান্য এ ফুল-কলিকার গন্ধে কেনো মাতাল করে রেখেছো আমায়!

নারী! তোমার নারীত্ব কি এমনই? নাকি এ সুধু হেঁয়ালিকা? এমন দহন জ্বেলে দিয়ে কেমনে স্থির থাকো তুমি!

বুকের পাপড়ি-তলে আমাকে লুকাতে পারলে কাছে এসে; তবে নিজের কাছে নিয়ে বুকের মাঝে রাখতে এ কোন হেঁয়ালির আশ্রয়!

তারপরও তুমি পারো! তোমার বুক ও সুখের অধর-আরাধনা যার সুখ-সৃষ্টিতে নিমগ্ন করলে শেষেও কিনা' ফুল দিয়ে ভুল ঢাকতে চাও? হা'রে! কী জটিলতা! তবু তুমি সুন্দর নারীত্ব প্রতিবিম্বের বৈশিষ্ট্য মূরতি-ই তোমার আরতি।

আবেদনময়ী! যুগল-নীলচোখ, চুম-চয়না অধর। আমিই তোমার আঁচল-কাঁচলি-নিচোর! তোমার বুক-জোড়া অঞ্চল আমায় আরাধ্য ফুল-ভূমি। তোমার রেশমি-চুলে বনময় পরিবেশ, আবেগ-ঘন ভ্রু; সবই কামনার ফুলঝুরি। যা কিছু সুন্দর ঐ ললাট করবো চুম্বন; যা কিছু চুম্বন দিয়ে করেছি সুন্দর।

কস্তুরীনামা

বর্তমান হলো সেই উজ্জ্বলতম সূর্য, যাকে আমরা অনন্ত দিন বলে ভেবে বসি। আর ভবিষ্যৎ এক বোবা প্রাণীর মতো, যা কিছুই বলে না, যার কথা কিছুই বুঝি না। আশঙ্কা এবং সম্ভাবনা দুইই থাকে তার কাছে। কিন্তু অতীত আমাদের অন্তরের দস্যু! দিন শেষে সে হাসাবে, কাঁদাবে... তবু বারবার সে-ই ফিরে আসবে কেবল। সুখে কিংবা আফসোসে...

আর এই সব কথার কসম খেয়ে, নারীত্বের সর্বমঙ্গল-সত্যে তোমারে ভালবাসতে শিখে বলে উঠি, সুন্দর উত্থিত হয়েছে, ধ্রুপদী উত্থিত হয়েছে, মঙ্গল উত্থিত হয়েছে।

এইসব ভূত ভবিষ্যতের অন্তরীন ভাবনা ভুলে যাও তুমি; আমার সমুদ্র!

তোমার হাত হ'লো সেই পুরোহিত, যিনি মন্ত্র জানেন না। আজ আমার অতীতকে নিগৃহীত করতে চাই চিরতরে।

বর্তমান পর্যবসিত হোক তোমার কোলে; আমার ভবিষ্যতের হাতের তালুতে চেটেপুটে লুট হোক তোমার চোখ!

আমি এবার আবার প্রেমে পড়তে চাই। তুমি খয়েরি পাড়ওয়ালা বাসন্তী রঙের শাড়ী পরে এসো। মজতে চাই শান বাধানো পুকুর ঘাটের মতো তোমার হাতের চুড়িতে; রিনিকিঝিনি হাঁটতে চলতে ভাঙবে তোমার কাঁচা হাতে পরা নতুন শাড়ির ভাঁজ!

যে নারীকে চিরকাল সমুদ্র ভেবে এসেছি, সেই সমুদ্রই তুমি রয়ে গেছো আজো। তারে চাঁদও ভেবেছি, চাঁদই রয়ে গেছো আজো।

যে আমার কাঁধ জুড়ে শুইলে এখনো অনুভব করি চান্দের নাভিতে তুমি জমেছো কস্তুরী, আমি সেই কস্তুরীর মালিক; ঘ্রাণে পাগল হয়ে ছুটি। তোমারে বুকে নিয়ে তোমারেই চোখে দেখি আবার সামনে আসছ হেঁটে; ঝাঁপ দেই সমুদ্র ভেবে! কিন্তু অতল জল তুমি! কতটুকু আর কাটা যায় সাঁতার! পুরোভাগই রয়ে যায় অজেয় তোমার বুক! তবু তুমিই আমার ব্যক্তিগত সমুদ্র, যাকে কিনেছিলাম আমি আমার সাঁতার কাটার দামে। তুমি আমার চোখ জুড়ানো হিমবাহ, যার কপালে খুন হয়েছিলাম আমি কাজলের নামে। তুমি আমার কথা বলার প্রশান্ত স্বর, তোমায় নিয়েই ভোরের ঠোঁটে উজাড় হই আমি। তুমি তোমার ভেতরেই তোমারও চেয়ে বেশি তুমি, তুমি তোমার ভেতরেই শরীরের চেয়ে বেশি তুমি। ফুলটুকু তুমি, হাতটুকু ছুঁয়ে, হাত ছুঁয়ে তুমি হও ফুল।

নারীরও চেয়ে প্রেমিকা তুমি বেশি, মানবীর চেয়ে মোহিনী। সাদায়-কালোয় নও তুমি কোনো, রঙেরও অধিক রঙিন তুমি, প্রেমেরও অধিক প্রেম।

কবিতার নামে তোমাকে লিখতে চাইলে বুক জুড়ে শুয়ে দেখিয়েছিলে, হাতের রেখায় আজ দ্যাখো আমিই তোমার রাজপুরুষ। অন্তঃকরণ পরিশুদ্ধ করিবার নিমিত্তে যে হাত ধরেছিলাম, সেটা তোমারই বটে! বাম হাতে ছোঁয়া যায় না তোমায়; তুমি পবিত্র অতি!

আমি জানি, সেই প্রেমিকা সবচেয়ে সুখী হয়, যে সূক্ষ্ম বিচারে মুখস্থ রাখে তার নিজ-পুরুষের ঘ্রাণ। ডানায় কৈশোর নিয়ে ঘুমায় যে মেয়ে, তারও থাকে কিছু পরোয়া না করার অভ্যেস। কোনো পুরুষের বুক সে চায় তো, নেবেই। কোনো অগোছালো যুবকের হাত সে ধরবে তো গোছালো পুঁথির পাঠ তারে পড়াবেই। অথচ পুরুষের নজর তলপেটে মেদহীন প্রেমিকার দিকে। ধারণা, তার নাকি সর্বসুখ ওতেই।

আর আমি তোমায় সাধন করতে চাই। এ যেন অনন্তকাল আমরা কথা বলতে বসেছি, কিন্তু সন্ধ্যা তো হয়েই যায়।

দ্যাখো, মেঘের নাভির মত একরোখা হয়ে শুয়ে আছি তোমার কটিদেশের প্রতিবেশী হয়ে। মধুর চাকের মত মাৎসর্য তোমার সবটুকুই কেবল আমি মুখে তুলে নিতে চাই। বাচ্চা হাঁসের পালকের মত চোখ তুলে চাও, আমি নধর মাটির দলা হয়ে যাব।

আমি সমুদ্রে যাব তোমার সাথে ছেলেখেলা করতে। আমি বালিশও কিনব হেলাফেলা করতে। সুখী হতে আর কী লাগে, যখন তুমি আমায় নিয়ে এত সুখী!

গরীবেরও বর্ষপূর্তি হয়, প্রেমিকেরও... বয়স কি আদৌ বেড়েছে প্রিয়তমা? কী মনে হয় তোমার? পাহাড় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার দিন, সে-ও কি গিয়েছে চলে? আঙ্গুলে আঙ্গুল গুঁজে পথ চলার দিন, কিছুই হবে না পুরনো; চলো, ওই মেঘেদের দেয়ালে বসে দু'জনে দোলাব পা।

এই তো সেদিন, দেখিলাম উত্তরের পাহাড়ে ফুটে আছে ফুল, কাছে যেতেই সমুদ্র হয়ে গেল সে হরিণী! এখন আমার হেমন্তেই বসন্ত আসে, সাজে গৌরি মুখে পান সাজানো রং! হরিণী ফুল সে, সমুদ্র হয়ে আমারে ডোবায়, আমার অন্তরাত্মার দৌড়ঝাঁপ যত তারে নিয়েই; পাহাড়ে পাহাড়ে সুরভী ছড়ানো তার। আজ আমারে সহসা বিচলিত করে আমার নিজের নারীর ঘ্রাণ; স্বর্গের মায়ামৃগ যে—কস্তুরী নাভিতে নিয়ে ঘুমায়!

তুমি তো জানোই না, আত্মহত্যা করতে গিয়ে আমি খুঁজে পেয়েছি এক যুগল সমুদ্র; তোমার জোড়া ভ্রুর ছায়ায় তির তির করে কাঁপে তার জল। বেড়ে যায় আমার সলীলে সমাধিস্থ হওয়ার সাধ! দাঁড়াতে পারি না তোমার চোখের সামনে...

সুন্দর, তোমার পায়ের পাতায় রক্তজবা হয়ে ফুটতে চাই, আষাঢ়ে পূর্ণিমা হও তুমি; আমি শিউলি ফুল ছড়াবো তোমার চোখে!

এই সন্ধ্যার বাতাসে মাখিয়ে দিয়ো তুমি পপি ফুল চূর্ণ করে, আরেকটুকু বুক উতলা নিশ্বাসে, দাঁড়াও জানালায়। আমি তোমার ঘাড়ের কাছাকাছি, স্থির হও চোখ, সুস্থির পায়ে পা! ওই যে দ্যাখো রাত্রি, হয়েছে নেশায় মাতাল... এবার তুমি কী চাইবে?

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড