• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : নিঃসঙ্গ পথিক

  নিশো আল মামুন

১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৫৩
গল্প
ছবি : প্রতীকী

একজন মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো বই। খুব ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম। পথে একটা বই এর লাইব্রেরি পড়ত। শুকরিয়া লাইব্রেরি। লাইব্রেরির মালিক ছিলেন কলেজের একজন অধ্যাপক। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায় সময় লাইব্রেরির সামনে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে একটা লেখা পড়তাম। অধ্যাপকের হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবির ব্যানার। মনে হয় অধ্যাপক সবার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে কথা বলছে। তবে ছবির একপাশে তিনটি কথা লেখা- - বই পড়–ন মন ভালো থাকবে। - কঠিন মুহূর্তে বই আপনাকে সাহায্য করবে। - জ্ঞানের বাহক বই।

তখন এই কথাগুলোর কোনো মানে খুঁজে পাইনি। ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ মহাবিদ্যালয়ে যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। থাকি একটা ছাত্রাবাসে। নিরালা ছাত্রাবাস। প্রধান আনন্দ-অলকা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা। বন্ধুরা মিলে প্রতি সপ্তাহে একবার সিনেমা দেখতে যাই। একটা ভয়ের সিনেমা দেখে ভয়ে ও আতঙ্কে অস্থির হয়ে আমরা তিন বন্ধু রাত প্রায় দশটার দিকে সিনেমা হল থেকে বের হলাম। সমস্ত রাস্তা ফাঁকা। ছোট ছোট কিছু দোকানপাট ছাড়া বাকি সবকিছুই বন্ধ। যারা রাস্তায় তারা দ্রুত হেঁটে বাসার দিকে যাচ্ছে। ঘোরলাগা আতঙ্ক অবস্থায় যে ভয় আমাদের মনে কাজ করছে, ভাবছি অন্যরাও সে ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল হলো আমরা সিনেমা দেখেছি, ভয় আমাদের হচ্ছে বাকিরা তো সিনেমা দেখেনি। তাহলে শহরে থমথমে ভয়ঙ্কর পরিবেশ কেন? ছোট একটা মুদির দোকান থেকে জানতে পারলাম শহরের রাস্তায় আর্মি নেমেছে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকা নিষেধ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সমস্ত মিডিয়ায় একধরনের জ্বরের খবর প্রচার হচ্ছে। ডেঙ্গুজ্বর এই জ্বর হলে সহজে রক্ষা নেই। খুব দ্রুত রিক্সা নিয়ে আমরা ছাত্রাবাসে ফিরলাম। রুমে ঢুকতেই ছাত্রাবাসের মালিক আসাদ ভাই বললেন, সাবধানে থেকো, মশা যেন না কামড় দেয়। দিলেই সর্বনাশ ডেঙ্গু হবে।

সবার কাছে জ্বরের নামটি নতুন মনে হচ্ছে। সবাই একধরনের আতঙ্কে আছে। আমার বন্ধু মনি ময়মনসিংহের গফর গাঁওয়ের ছেলে। গফর গাঁওয়ের লোকেরা খুব সাহসী ধরনের হয়। মনির মধ্যেও সেই সাহসী ভাবটা আছে। সেদিন রাতে মনিও দেখলাম খুব ভয় পাচ্ছে। আমার রুম থেকে কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। মনি বলল, নিশো বেটা জ্বর হলে কেমনে কি? সবসময় জানি একশ তিন চার থাকে। বললাম, ভয় পাচ্ছ? মনি বলল, ভয়তো পাওয়ার কথাই গো বেটা! মরব নাকি?

আমি খুব করে হাসলাম। সবার কাছে এই রোগ নতুন হলেও আমার কাছে না। এই জ্বরের নাম আমি প্রথমে শুনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। ‘একবার কলিকাতায় ডেঙ্গুজ্বরের তাড়নায় আমাদের বৃহৎ পরিবারের কিয়দংশ পেনেটিতে ছাতুবাবুদের (আশুতোষ দেব) বাগানে আশ্রয় লইল।’ বই এর কথা কেন লিখছি! আমি এক নিঃসঙ্গ পথিক। অনেকবার পথ হারিয়েছি। যতবার পথ হারিয়ে পথের সন্ধানে যাত্রা করেছি, আর সেই নিঃসঙ্গ পথিকের সহযাত্রী ছিল বই। যা কঠিন মুহূর্তে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছে। একটা পথ হারানোর গল্প বলি-

সাপ্তাহিক ‘ভোরের তারা’ অফিস বন্ধ করে দিলাম। ব্যয়ভার বহন করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। ডাল-ভাত খাবার আশায় যে সৌখিন কাজে নেমেছিলাম তার ভুলের মাশুল কড়ায় গণ্ডায় দিতে হলো। অফিসে তালা লাগিয়ে দিলাম। খুব করুণ এক বাস্তব। রাত্রিবেলায় মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম টেক্সটাইল কেমিক্যাল ব্যবসাটাই করতে হবে। আগে একটা ব্যবসা দাঁড় করাই তারপর অন্যকিছু। কেমিক্যাল ব্যবসায় নতুন করে মনোযোগ দিতে লাগলাম। খুব উৎসাহ নিয়ে কাজ করছি। মাস ছয়েক যেতেই দেখি হিসেবের খাতা শূন্য। পথে বসার অবস্থা। অফিস আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমার সরলতাকে সবাই বোকামি ভেবে নিয়েছে। কাউকে কোনো দোষারোপ না করে নিজেকেই আজ এই অবস্থার জন্য দায়ী করলাম। অফিস যে বন্ধ করে দিবো সে পরিস্থিতিও নেই। মার্কেটে অনেক টাকা আটকে গেছে। মাঝ নদীতে পড়া অবস্থার মতো। বিনিয়োগ সমস্তই আমার। ক্ষতি হলে আমার হবে। আমার ক্ষতি মানেই তো অন্যরা লাভবান। অফিসে কাউকে কোনোকিছু বুঝতে না দিয়ে, ব্যস্ততা দেখিয়ে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু টাকা তো মার্কেট থেকে তুলতে হবে। যারা মেরে নিয়ে গেছে সে বিষয়টি অন্য ব্যাপার। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে না থাকলে ভালো মানুষগুলো অভিজ্ঞতা অর্জন করবে কার কাছ থেকে? যাহোক গল্পে ফিরে যাই।

তিন হাজার টাকা ছাড়া পকেটে কোনো টাকা নেই। সংসার চলবে কিসে বুঝতে পারছিনা। রাত্রিবেলায় নানান চিন্তায় ঘুম এলো না। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আঞ্জুমকে বললাম, একটা ইন্ডাস্ট্রিজে যাচ্ছি। সেখানে মিটিং আছে। রাস্তায় বের হয়ে মনটা খুব খারাপ হলো। সবাই শুধু ছুটছে। কেউবা অফিসে, কেউবা গার্মেন্টসে। আমার তো ছুটার জায়গা নেই। হঠাৎ মনে হলো আমি লন্ডন থেকে ফিরে আসলে ভুল করেছি। যদিও একথা আমার কখনো মনে হয়নি। সেদিন ক্ষণিকের হলেও মনে হলো।

ঢাকা বিমান বন্দর রেল স্টেশনে একটা বইয়ের দোকানে এসে দাঁড়ালাম। কৃষ্ণচূড়ার তলে ছোট একটা বইয়ের দোকান। পরিপাটি করে বই সাজানো। বই দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল। ডা. লুৎফর রহমান এর রচনা সমগ্র। বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম। বইটির দাম চারশত পঞ্চাশ টাকা। দুহাজার টাকা বাসায় রেখে এসেছি। আমার সাথে এক হাজার টাকা। অনেক হিসেব করে চলতে হবে। ঘরে সাত মাসের ছোট্ট একটা শিশু।

দু’দিন পর বাচ্চার দুধ কিনতে পারব কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় এত দাম দিয়ে বই কিনা মানে ভয়ঙ্কর একটা বিলাসিতা। অনেক রকম নিজের মধ্যে ভাবনা চিন্তার তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। অবশেষে লোভ সামলাতে পারলাম না। বই কিনে ফেললাম। আহা কি আনন্দ!

গাছতলাতেই বই পড়তে লাগলাম। হঠাৎ ইচ্ছে হলো ট্রেনে উঠে বই পড়ব। চলন্ত ট্রেনে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ কোনো দৃশ্য দেখে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাব। ট্রেনে উঠে বসলাম। বিমান বন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। কিন্তু মনের ইচ্ছে পূরণ হলো না। তাই আবার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর যাওয়ার টিকেট কাটলাম। বই পড়তে পড়তেই জয়দেবপুর পৌঁছালাম। ইস্টিশনে নেমে এক কাপ চা খেয়ে পছন্দমতো একটা জায়গায় পত্রিকা বিছিয়ে বই পড়তে লাগলাম। একটা বিচিত্র পরিবেশ। নানান জায়গার মানুষ ট্রেনের অপেক্ষায়। কেউ ব্যাচেলর আবার কারো হাতে সুটকেস পাশে স্ত্রী, পুত্র। অনেকে আমাকেও অপেক্ষমাণ যাত্রী ভাবছে।

বই এর পৃষ্ঠা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আমিও অনেকটা গভীরে পৌঁছে যাচ্ছি। একটা বিশাল সমুদ্রের মতো। অবিশ্বাস্য সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ মনস্থির ও শক্ত করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম। কেমিক্যাল ব্যবসা যে করেই হোক অনেক সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। সেই সাথে কচ্ছপের গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব আমার লেখালেখি অতি নীরবে। তবে এবার ব্যবসা শুরু করব একা। কোনো ইঞ্জিনিয়ার পার্টনারের এমনকি কোনো পার্টনারই দরকার নেই। আর্করাইট সুতা তৈরি করবার উন্নত ও ভালো রকমের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। গায়ে জামা নেই। পরনে জুতা নেই। শুদ্ধ করে দু’লাইন লিখতেও জানে না। অথচ তিনি আবিষ্কার করলেন সুতা তৈরির যন্ত্র পরে কারখানা স্থাপন করলেন।

বিলাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ সিংহ স্যার রবার্ট পিল। তিনি সম্রাট চতুর্থ জর্জের মন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা ছিলেন সামান্য কৃষক। বৃহৎ পরিবার চালানোর ভারসাম্য তিনি হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের খরচ যোগাতে একদিন তিনি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করলেন। এ ব্যবসা করতে করতে কাপড়ের ছাপ লাগানোর পন্থা আবিষ্কার করে ফেললেন। তাঁর জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। মানুষের চেষ্টা অধ্যবসায় ও চিন্তার সম্মুখে কিছুই অসম্ভব নয়।

নিউটন বলেছেন, আমার আবিষ্কার কারণ আমার প্রতিভা নয়। বহু বছরের পরিশ্রম ও নিরবচ্ছিন্ন চিন্তার ফলেই আমি আমাকে সার্থক করেছি। অস্পষ্টতা হতে ধীরে ধীরে স্পষ্টতার মধ্যে উপস্থিত হয়েছি। সাথে সাথে মার্কেটিং প্লানিং চিন্তা করে ফেললাম। দশটা টেক্সাটাইল ফ্যাক্টরিতে টার্গেট করে মার্কেটিং করব। আমার প্রডাক্ট আইটেম থাকবে দশটি। যার সম্পর্কে আমার নিখুঁত জ্ঞান থাকবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় এগারোটার মতো বেজে গেল। আঞ্জুম রাগ করে বলল, ‘সারাদিন কতবার ফোন দিয়েছি। একবারতো ফোনটা মানুষ ধরে। আর কেউ বিজনেস করেনা।’ আমি হেসে হেসে বললাম, ‘বাড়িতে যাব বলে তিস্তা এক্সপ্রেসের দু’টো টিকেট করলাম। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পেতে হলো, তাই ফিরতে রাত হয়েছে।’ - বাড়িতে মানে, বকশিগঞ্জে? - ঢাকায় ভালো লাগছে না। একটু বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে মন ভালো থাকবে। আঞ্জুম হঠাৎ এরকম পাগলামি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এর মধ্যে বিমান বন্দর ইস্টিশন নেমেই টিকিট করেছিলাম। পকেট থেকে টিকিট দু’টো বের করে আঞ্জুমের হাতে ধরিয়ে দিলাম। সারারাত নেট ঘেঁটে ঘেঁটে রাতে কেমিক্যাল সম্পর্কে একটা নোট বই-এর মতো তৈরি করলাম।

এখানে লাইব্রেরি আছে কিন্তু পর্যাপ্ত বই নেই। নরম চেয়ার নেই। চিৎ হয়ে শোবার এবং হেলান দিয়ে বসে চাঁদ, বা বৃষ্টি দেখার কোনোই ব্যবস্থা নেই। অতএব এখানে আমার শারীরিক এবং মানসিক স্বাধীনতার ব্যাঘাত ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।দু’দিন পর চলে গেলাম বাড়িতে। থাকার কথা ছিল সাত আট দিন। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে বকশিগঞ্জে আমাকে এবার আকর্ষণ করল না। আকর্ষণ না করার কারণটা হলো দু’দিন থেকেই আঞ্জুমকে রেখে আমি চলে এলাম। ঢাকায় মস্ত একটা ফ্লাটে একা। শূন্যতায় ভুগতে হচ্ছে। রাতে সমস্ত আকাশটা কেঁপে কেঁপে বৃষ্টি নামল। রুমের সব লাইট বন্ধ করে দিয়ে একধরনের রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করলাম। বর্ষার অন্ধকার ছায়া হঠাৎ হঠাৎ বিজলি চমকানো চারপাশটা খুব স্পষ্ট দূরে বারান্দা থেকে দেখা যায়। বড় বড় গাছগুলো বাতাসের ধাক্কায় নাড়া দিয়ে উঠছে। আশ্চর্য দৃশ্য। বারান্দা থেকে একটু দূরে দু’টি আমগাছে সমস্ত ডালপালা নেড়ে নেড়ে নৃত্যে মেতে উঠেছে। আমগাছের নৃত্য ও টুপ টুপ করে কাঁচা আম পড়ে যাওয়া দৃশ্য আমাকে অভিভূত করল। ছোটবেলায় দেখতাম ঝরে টিনের চালে যখন আম পড়ার শব্দ হতো দাদী খুশিতে জানালা খুলে, আম পড়ছে বলে চিৎকার করতেন। ঝড়ো হাওয়া ও আম পড়ার মধ্যে একধরনের যে মায়া আছে তখন সেই মায়া বুঝতে পারিনি। সারারাত বারান্দায় বৃষ্টির ছিটে ফুটায় ঝড় দেখলাম। মনে হলো বহুকাল এরকম ঝড় দেখিনি। জড়ের অভদ্র আচরণ সত্ত্বেও লেগেছিল ভালো।

ভোরবেলার প্রথম আলোয় খেয়াল করলাম কষ্ট করে যে নোট বই তৈরি করেছিলাম তা ভিজে একদম সম্পূর্ণই নষ্ট হয়ে গেছে। খুব দুঃখ হলো। পরে অবশ্য নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলাম। স্যার আইজাক নিউটনের প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা নামের বিখ্যাত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি জ্বলন্ত ল্যাম্পে পুড়ে গিয়েছিল। এ কাজটি করেছিল তার প্রিয় পোষা বিড়াল। সে ক্ষেত্রে আমারটা কি খুব সামান্যও কিছু? অবশ্যই না।

এর আগেও লন্ডন ইস্টেপেনি গ্রীনে আমার একটা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি হারিয়েছিল। উপন্যাসটি লিখতে সময় লেগেছিল ছয়মাস। পাণ্ডুলিপি হারানোর পর খুব মন খারাপ হলো। লন্ডন আইডিয়া লাইব্রেরিতে হঠাৎ একটা বই এর সন্ধান পেলাম ভিক্টোরিয়ার ওয়াকম্প। সে বইতে চমৎকার একটা তথ্য পেলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলির পাণ্ডুলিপিও ইস্টেপেনি গ্রীনে হারিয়ে ছিল। হারানোর তিনদিন পর পাওয়া গিয়েছিল। সেই গীতাঞ্জলি গ্রন্থের উপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেলেন নোবেল পুরস্কার। তবে আমার পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে এই মিলের কারণে নিজেকে খুব ধন্য মনে হলো।

নিজেকে অনেক সান্ত্বনা দিতে পারলাম। যাইহোক বারান্দা থেকে উঠে শীতল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে প্রায় আধঘণ্টা গোসল করে নিলাম। ফ্রেস হয়ে বের হলাম অফিসের সন্ধানে। নিকুঞ্জে সেদিনই ছোট একটা অফিস ভাড়া করে ফেললাম। অফিস ধোয়া-মোছা করে পরিষ্কার করে সাজাতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না। একটা টি এন্ডটি টেলিফোন সেট ও ইন্টারনেট সহ কম্পিউটার টেবিলের উপর বসিয়ে দিলাম। একটানা তিনদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর একটা ইন্ডাস্ট্রি থেকে ছোট ধরনের ওয়ার্ডার পেলাম। এক ওয়ার্ডারে লাভ হলো প্রায় ত্রিশহাজার টাকা। সন্ধ্যাবেলায় টাকা হাতে পেয়ে মনে এক ধরনের আনন্দে চোখে পানি এসে গেলো। অতি আনন্দেও যে চোখে পানি আসতে পারে এই অনুভূতি আমার এই প্রথম। ইচ্ছে করেই চোখের পানি মুছলাম না। দেখলে দেখুক সবাই। সেদিন রাতেই একটা নোহা গাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে গেলাম বাড়িতে। গাড়ি ছুটছে ঝড়ের গতিতে। আঞ্জুমকে নিয়ে ঢাকায় ফিরলাম। পরিপাটি করে সাজানো ছোট্ট অফিসটা দেখে আঞ্জুম খুব খুশি হলো কিন্তু প্রকাশ করলনা। শুধু বলল, এবার সাথে কে আছে? বললাম, আমি সাথে একটা বই, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।

আঞ্জুম কোনো কথা না বলে একটুখানি হাসল। চাঁদ যেমন অমাবস্যায় চলে যায় আবার নতুন রূপে দেখা দিবে বলে। আমিও বার বার নিজেকে আড়াল রেখেছি নতুন রূপে জাগবো বলে। অনেক দূরে সরে গিয়েছি খুব কাছে আসব বলে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড