অধিকার ডেস্ক ২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:৩৪
অবনী বাড়ি আছো অবনী বাড়ি আছো দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছো?’
যিনি এই লাইনগুলো লিগেছেন তাকে জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত করা হয়। যিনি ভাব-ভাষা প্রয়োগ ও নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে নিজের স্বাতন্ত্র্যতা কবিতার মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। বলছি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তিনি একাধারে ছিলেন ছিলেন কবি, ওপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত হন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। আজ এই কবির প্রয়াণ দিবস।
তিনি ১৯৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার জয়নগরের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা কমলা দেবী এবং বাবা বামানাথ চট্টোপাধ্যায়। মাত্র চার বছর বয়সে শক্তি তারা বাবাকে হারান এবং পিতামহ তার দেখাশোনা শুরু করেন।
১৯৪৮ সালে শক্তি কলকাতার বাগবাজারে আসেন এবং মহারাজা কাশিম বাজার পলিটেকনিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক দ্বারা মার্কসবাদের পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি প্রগতি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘প্রগতি’ নামে একটি হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন, যা খুব শীঘ্রই পরবর্তীতে মুদ্রিত রূপ নেয় এবং পুনরায় নাম বদনিয়ে ‘বহ্নিশিখা’ রাখা হয়।
শক্তি ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সিটি কলেজে ভর্তি হন তার এক মামার কাছে, যিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং তার তখনকার অভিভাবক, যিনি শক্তির হিসাবরক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই বছর তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সদস্য হন। ১৯৫৩ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক বানিজ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, যদিও তিনি বাণিজ্য অধ্যয়ন ছেড়ে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক অধ্যয়নের জন্যে প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা) ভর্তি হন, কিন্তু পরীক্ষায় উপস্থিত হননি।
১৯৫৬ সালে, শক্তিকে তার মামার বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়েছিল এবং তিনি তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে আল্টাডাঙ্গায় একটি বস্তিতে চলে যান। সে সময়ে তিনি সম্পূর্ণরূপে তার ভাইয়ের স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। দারিদ্রের কারণে শক্তি স্নাতক পাঠ অর্ধসমাপ্ত রেখে প্রেসিডেন্সি কলেজ ত্যাগ করেন এবং সাহিত্যকে জীবিকা করার উদ্দেশ্যে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম উপন্যাসের নাম ছিল কুয়োতলা। কিন্তু কলেজ জীবনের বন্ধু সমীর রায় চৌধুরীর সঙ্গে আড়াই বছর থাকার সময়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একজন সফল গীতিকবিতে পরিণত হন। নিজের কবিতাকে তিনি বলতেন পদ্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে সোনার মাছি খুন করেছি, অন্ধকার নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকার, ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো, হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১), প্রভু নষ্ট হয়ে যাই, সুখে আছি, ঈশ্বর থাকেন জলে, অস্ত্রের গৌরবহীন একা’সহ অন্যান্য।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৭৫ সালে পান আনন্দ পুরস্কার। ১৯৮৩ সালে ‘তার যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। এছাড়া তিনি একাধিক পুরস্কারে পেয়েছেন।
‘যেতে পারি, যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি/কিন্তু, কেন যাবো?’ কথাগুলো মতো তিনি যেতে চেয়েও যাননি। থাকছেন সাহিত্যপ্রেমীদের বুকে শুধু মাত্র প্রস্থান করে তার গদ্যের ঢংয়ে।
সূত্র : উইকিপিডিয়া
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড