• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘মেঘভোর’ উপন্যাসের ষোড়শ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘভোর

  রোকেয়া আশা

২৩ মার্চ ২০১৯, ১১:২৩
ছবি
ছবি : প্রতীকী

ফুফু যখন ডিভোর্স নিয়ে এবাড়িতে চলে আসে তখন আমাদের একটা ভয়াবহ দুঃসময় চলছে। আমরা মাত্রই জানতে পেরেছি, বড় আপা তার বরের দ্বিতীয় পক্ষ। লোকটার আগের পক্ষে বউ বাচ্চা সব আছে। এমন একটা অস্থির পরিবেশে ঋদ্ধ ভাইয়াকে নিয়ে ফুফুর এবাড়িতে চলে আসা নিয়ে আবার নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছিলো। ডিভোর্সি একটা মেয়েকে আমাদের সমাজ কখনোই ভালো চোখে দেখে না। আর যদি তার বাচ্চা থাকে তাহলে তো কথাই নেই। আম্মা ভালোভাবে নিতে পারেনি ব্যাপারটা। বারবার ফুফুকে দোষারোপ করতো মানিয়ে না নেওয়ার জন্য। আমি এখনো মাঝেমধ্যে ভাবি, মানিয়ে নেওয়া আসলে কি?

সিফাত আংকেলরা তখন নতুন এসে উঠেছে এই পাড়ায়। আমি, মাহিন আর ঋদ্ধের সাথে তার আসতে আসতেই খুব ভাব হয়ে গেলো। আমরা চারজন বন্ধু ছিলাম, সেখানে আমি একমাত্র মেয়ে। রূপু আপা বরাবরই আলাদা থাকতো, তখনো। আমরা অবশ্য তখন সিফাত ভাইয়া বলতাম। তখন তিনি মাস্টার্সে পড়ছেন। ফুফুর চেয়ে চারবছরের ছোট।

না, সিফাত আংকেল আমার রামিসা ফুফুকে নিয়ে পালিয়ে যায়নি। ঋদ্ধ ভাইয়াকে সহই ফুফুকে নিজের পরিবারে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফুফুর তাতে সায় ছিলো। হয়তো, ভালোবাসার জন্য না। ভালো থাকার জন্য। নিত্য ভাইয়ের সংসারে থেকে মা - ভাবীর খোঁটা সহ্য করার চাইতে বয়সে ছোট সিফাতকে বিয়ে করাটা ভালো অপশন ছিলো ফুফুর জন্য। পুরো এলাকায় খুব কানাকানি পড়ে গেছিলো এই অসম বিয়ের জন্য। আব্বু বা আম্মা, কারোই সায় ছিলোনা। তবুও বিয়েটা হলো, যদিও এরপর থেকে ফুফুর সাথে এবাড়ির কোন সম্পর্ক আর ছিলো না।

আমাদের বাড়ির পেছনে একটু জংলা ধরনের একটা জায়গা আছে। মন খারাপ লাগলে আমি ওখানে গিয়ে বসে থাকি, একা। কয়েকটা ইট রাখা আছে ওখানে, আমিই রেখেছি। ইটগুলো সাজিয়ে তার ওপর বসে থাকি চুপ করে।

শাহীন ভাই এলো খুব নিঃশব্দে। সবসময়ের মত। যাদের অনেকগুলো ভাইবোন, তাদের সবার মধ্যে একইরকম ঘনিষ্ঠতা থাকে না। অন্তত একজন থাকে সবচেয়ে আপন। আমার ক্ষেত্রে যেটা শাহীন ভাই। ভাই এসে বললো, ‘রামিসা আর রূপসা - এই দুই চরিত্রের পার্থক্য কই জানিস?’ আমি মাথা ঝাঁকাই। - একজন পালিয়ে গিয়েছিলো , আরেকজন সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সবার সামনে দিয়েই নিজের ভালো থাকা বেছে নিয়েছে। ‘হ্যাঁ’। ভাই কথাটা বলেই আমার মাথায় হাত রাখে। তারপরেই বললো, - পালিয়ে যাওয়া মানুষদের আমি পছন্দ করি না মেঘ। রূপসা যার সাথেই যাক, সেটা যদি সবার সামনে দিয়ে যেতো; আমি জোর করে হলেও মেনে নিতাম। আমি চেষ্টা করি ভাইয়ের মুখটা দেখতে। কিন্তু ভালো করে দেখতেই পাচ্ছি না। এত অন্ধকার এখানে! - আব্বুর সবচেয়ে কাছাকাছি তুই ছিলি, সবসময়। এমনকি হয়তো বড় আপার চেয়েও বেশী। ভাই কথাগুলো বলে সামনের নিটোল অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে। অন্ধকার - কেমন মন খারাপ করা একটা শব্দ। অন্ধকারের নিজস্ব একটা ঘ্রাণ আছে, কিছুটা জলীয় একটা ঘ্রাণ। এই ঘ্রাণটা নেওয়ার সময় কারো মন ভালো থাকেনা। কষ্ট হয়। আমারো হচ্ছে।

বড় আপা, দাদী, আব্বু - যেসব প্রিয়জন হুট করেই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। সবার জন্যেই আমার ভীষণ কষ্ট হতে থাকে।

সারাটাদিন এক ফোঁটাও চোখের জল না ফেলা এই আমি হাউমাউ করেই কাঁদতে শুরু করি। এই জলীয় অন্ধকারটা বোধহয় ভাইও সহ্য করতে পারছেনা। আজ এতগুলো বছর পর, ভাইও কাঁদছে। আমি ভাইয়ের কান্নার কোন শব্দ পাচ্ছিনা, দেখতেও পাচ্ছি না। কিন্তু আমার মাথায় যেই বৃষ্টির ফোঁটার মত পানিগুলো পড়ছে, সেগুলোর উৎস কোথায়, আমি জানি।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড