• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সোঁদা গন্ধের আলো-ছায়া থেকে পল্লীকবি'র প্রস্থানের দিন আজ

  শব্দনীল

১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:৩৩
কবিতা
ছবি : পল্লীকবি জসীমউদ্দীন

রবীন্দ্রযুগের কবি হয়েও রবীন্দ্রবলয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে যে কজন কবি নিজের নামকে বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ করেছেন তার ভিতর অন্যতম পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। যার কবিতায় ভেসে উঠেছে পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন, মাঠে-ঘাটে খেটে খাওয়া মানুষের সুখ-দুঃখের কথা, শোষণ-নিপীড়নের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার কথা। তাঁর কবিতার মধ্যে মুগ্ধতার সাথে দুলে উঠেছে কুমড়োর ডগা, কচি কচু পাতা, ভাঁট ফুলের ঘ্রাণ, দুর্বা ঘাসের শিশির, লেবু পাতার নিচের অন্ধকার।

প্রতিটি দেশের মতো আমাদেরও আছে চিরায়ত গ্রামীণজীবন। আঞ্চলিকতা পূর্ণ জনপদ। এই জনপদেই জসীমউদ্দীন সাহিত্যের উপাদান খুঁজেছেন নিপুণ হাতে। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’ এর দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়-

‘এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।’

জসীমউদ্দীন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পরিবার এবং বিয়োগান্তক দৃশ্যের এক সাবলীলতা ফুটিয়ে তুলেছেন এই কবিতায়। তিনি বাংলা সাহিত্যে আলোড়নও তোলেন ‘কবর’ কবিতার মাধ্যম। তাঁকে আবেগ আর অনুভূতির কবিও বলা যায়। তিনি ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মাদ জসীমউদ্দীন মোল্লা তাঁর নাম হলেও তিনি জসীমউদ্দীন নামেই পরিচিত। তাঁর মায়ের নাম আমিনা খাতুন আর বাবা আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন।

মোসলেম ভারত পত্রিকায় জসীমউদ্দীনের ‘মিলন গান’ নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালে। এটিই তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্য। এরপর প্রগতিশীল সাহিত্য পত্রিকা কল্লোলে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘নকশীকাঁথার মাঠ।’

‘সখী দীন দুঃখীর যারে ছাড়া কেহ নাই সেই আল্লার হাতে আজি আমি তোমারে সঁপিয়া যাই। মাকড়ের আঁশে হস্তী যে বাঁধে, পাথর ভাসায় জলে তোমারে আজিকে সঁপিয়া গেলাম তাঁহার চরণতলে।’

‘নকশীকাঁথার মাঠ’ বাংলা ভাষায় রচিত আখ্যানকাব্য বা কাব্যউপন্যাস। যখন রবীন্দ্রযুগে তারই বলয়ে বেড়ে উঠতে থাকে বাংলা সাহিত্য ঠিক তখনই বাংলা কবিতার জগতে ইউরোপীয় ধাঁচের আধুনিকতার আন্দোলন চলছিল সমসাময়িক কবিদের মধ্যে। ঠিক সে সময়ে প্রকাশিত হয় গ্রামীণ ধারার ‘নকশীকাঁথার মাঠ।’ যা ছিলো রূপাই ও সাজু নামক দুই গ্রামীণ যুবক-যুবতীর প্রেমের এক করুণ কাহিনী।

জসীমউদ্দীন শুধু যেমন কবিতায় সাধারণ গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি লিখেছেন পল্লী গান বা লোক গান। ‘আমার সোনার ময়না পাখি’, ‘আমার গলার হার খুলে নে’, ‘আমার হার কালা করলাম রে’, ‘আমায় ভাসাইলি রে’, ‘কেমন তোমার মাতা পিতা’, ‘নদীর কূল নাই কিনার নাই’এর মতো বিখ্যাত তার ঝুলিতে আছে।

লোক সাহিত্যের বিখ্যাত গবেষক এবং সংগ্রহ ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের সাথে কাজ করেছেন জসীমউদ্দীন। তারই নির্দেশে ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোক সাহিত্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কবি ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিটি পল্লীগ্রামে অবস্থান করার মাধ্যমে চিনেছিলেন শাশ্বত বাংলার রূপ। এই রূপের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে বেদের মেয়ে, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পদ্মা নদীর দেশে, রুপবতি এর মতো কাব্যগ্রন্থ, নাটক। এই জন্য তাকে বলাহয় পল্লি কবি।

‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয় গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়; মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি, মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়, তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।’

‘নিমন্ত্রণ’ কবিতার মাধ্যমে কবি জসীমউদ্দীন শহুরে জীবনকে গ্রামীণ জনপদের দিকে ডেকে ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ পাড়ি জমিয়েছেন সোঁদা গন্ধের আলো-ছায়া থেকে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড