• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘ঝাপসা বিকেল কিংবা অস্তিত্ব’ গ্রন্থের তিনটি কবিতা

  তৌহিদ আজিজ শাতিল

০৬ মার্চ ২০১৯, ১৪:১৬
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

আঁধারের সংলাপ

চন্দ্রাহত ঠোঁটের অহংকারে এক সুমিষ্ট আঁধার লুকিয়ে থাকে। অনাহারের অনিদ্রায় কিংবা আহারের নিদ্রায় কি আজও খুঁজি সেই আঁধার? নাকি মৃত চাঁদের আরক্তিম লালচে আভায় ফুটে ওঠে একটি ঝরনা? যে ঝরনায় পানি ছিল আমার জন্য, হেমন্তের কোনো এক বিকেলে প্রস্ফুটিত একটি ঝরনা... আর ছিল একটি আকাশ, দুটি সমুদ্র। ছিল স্বপ্ন বেঁচার টাকায় কেনা আধেক কিছু স্বপ্ন। অসতর্ক দৃষ্টির অন্তরালে কি ছিল সন্তর্পণের এক চাহনি! সুমিষ্ট সেই আঁধার? আঁধারের সংলাপে আমি কি শুধুই একটি সেমিকোলন? সংলাপ কি তবে ভুল পাঠ? পাঠোদ্ধারের চেষ্টা কি তবে ভুল? পাঠোদ্ধারের শেষবেলায় ঝরনার ক্রন্দনে আমি আজো খুঁজে ফিরি সেই সুমিষ্ট অন্ধকার...

আকাশের ঠিকানায় চিঠি -১

একাকিত্ব, এ এক গভীর অন্ধকূপের মত। সুখের ছন্দ আসলে মেলানো যায় না। আজকাল আমার বড়ো বেশি ঘুম পায়, কিন্তু সহজে ঘুমুতে পারি না। অনেক রাত জেগে থাকি, আবার অনেক রাত ঘুমের মধ্যে জেগে থাকি।

খুব মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে যাই। হঠাৎ জেগে উঠলে মনে হয় জীবনানন্দের লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছি। হ্যাঁ, এইমাত্র আমার দু চোখ উপড়ে ফেলা হল, পেট-বুক চিড়ে ফেলা হল। কী অমায়িক টকটকে রক্ত! চামড়ার নিচে এত আয়োজন জীবনের! কিন্তু, কিন্তু তবুও কোনো বোধ পেলাম না। আখিশূন্য অন্ধকার কোটর থেকে শুধু অনুভব করলাম পঞ্চমীর চাঁদ সত্যিই ডুবে গিয়েছে।

কিন্তু ‘বাঁচিবার সাধ’ কি আছে? ঐ তো, এইমাত্র খুলি থেকে আমার মস্তিষ্ক আলাদা করে নেয়া হল। নাহ, তাও কিছুই টের পেলাম না। এভাবে হয়ত অনেক সময় কেটে গেল, অনেকগুলি পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেল। হঠাৎ জানালার পাশে টেবিলের উপর, জ্যোৎস্নার আলোতে রাখা আমার উপড়ে নেয়া দু চোখ থেকে দেখলাম, কে যেন এক টানে আমার হৃদপি-টা আলাদা করে ফেললো। এইবার বোধ করি একটু বোধ হল। এক অদ্ভুত নীলচে একাকিত্বের বোধ।

উপড়ে নেয়া, রক্তশূন্য, নীলচে মলিন আর একেবারে শুকনো ঐ দু’চোখ বেয়েও কি দু ফোটা নীল অশ্রু গড়িয়ে পড়লো নাকি? নাকি জ্যোৎস্নার আলোতে ঐ দু ফোটা চিকচিক শুধুই বিভ্রম?

সম্বোধনহীন বৃষ্টি, আকাশ কিংবা তুমি

তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। ভেবেছিলাম এই শরতে আর বৃষ্টি হবে না। কিন্তু নাহ, এই ভাদ্রের শেষেও এক অসহ্য সুন্দর কুয়াশাচ্ছন্নফ বৃষ্টি। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে, কিন্ত বৃষ্টি দেখছি কিনা জানি নাহ... কখনো কখনো এক দিকে তাকিয়ে থেকেও কিছুই দেখা যায় না।

সবসময় তো আমিই দেখি, আজ না হয় বৃষ্টি কিছুক্ষণ আমাকে দেখুক... অল্প কিছুক্ষণ, একবার চোখের পলক ফেলতে যতটুকু লাগে, হোক ঠিক ততটুকু সময়। তবুও দেখুক..

আকাশ, তুমি বরং আজ থেমে যাও, এতটা ভাঙন তোমার কাছে আশা করিনি। রাস্তাঘাট, নদী মাঠ ক্ষেত সব ভেঙে যাচ্ছে কেবল তোমার জন্য। ভেঙে যাচ্ছে দালান কোঠা, রমণীর চিবুক, খসে পড়ছে পুরোনো পলেস্তারা, রং উঠে যাচ্ছে পাশের বাড়ির দালানের, রং উঠে যাচ্ছে ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা কোনো এক তরুণের, কোনো এক রমণী তোমাতে ভিজতে ভিজতে নিজের অজান্তেই হারাচ্ছে খুব যত্ন করে দেয়া নেল-পলিশের রঙটুকু।

এত কেড়ে নেয়া কেন তোমার? প্রাপ্তির মধ্যে তো শুধু ওইটুকুই যে তোমার চোখের জল দিয়ে আমারটুকু ঢেকে রাখা... অবশ্য আজকালকার যুগে অতটুকুই বা কম কিসের? কী আর করা, ঝরে পড়তে থাক তুমি বিন্দু বিন্দু কষ্টের মত, ছোট ছোট দুঃখের মত, অল্প বিস্তর প্রেমের মত, আমার মত, আমার শেষ না হওয়া, উইপোকায় খেয়ে যাওয়া কবিতাগুলোর মত, শার্টের বুক পকেটে থাকা, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া, না পাঠানো চিঠিগুলোর মত কিংবা শুধু তোমার মতন হয়ে। আচ্ছা, আকাশের বুকে এত কষ্ট কেন? কষ্ট নাকি রংধনু? নাকি রংধনুই কষ্ট?

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড