সোহেল বীর
গল্পের ভুবনে একটি প্রতিশ্রুতিশীল নাম- আমির সোহেল। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও নিয়মিত লিখে থাকেন। সেই লেখালেখির ধারাবাহিকতায় এবার গল্পগুলো ‘ফেসবুকে ভূত বন্ধু’ নামে তার প্রথম কিশোর গল্পগ্রন্থ এক মলাটে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ অমর একুশে বইমেলায়।
ফেসবুকে ভূত বন্ধু- নামের মধ্যে একদিকে যেমন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংযুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি সেখানে ভূতের রহস্যজনক উপস্থিতি শিশু-কিশোর পাঠকদেরকে গল্প পড়ার জন্য আগ্রহী করে তোলে। এই নামগল্পের মতোই মোট সাতটি চমৎকার গল্প স্থান পেয়েছে এই বইয়ে। প্রকাশিত হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। গল্পগুলোর নাম নির্বাচনেও গল্পকার আমির সোহেলের দক্ষতার পরিচয় মেলে- ঐশি ভূত হয়ে গেল অতঃপর, গুণ, চমকের কথার চমক, সূর্যমুখি গাছে টুনটুনির বাসা, ফেসবুকে ভূত বন্ধু, মিষ্টি পাখির গান এবং শেহজাদের বিকেল। সবগুলো গল্পই শিশু-কিশোর উপযোগী।
বর্তমান সময়ে শহুরে শৈশব আর কৈশোর যেন গ্রীলবন্দি বারান্দায় আটকে থাকে। কোমলমতি শিশু-কিশোররা বইয়ের ব্যাগ বইতে গিয়ে কৈশোরগুলো হারিয়ে ফেলছে নিজের অজান্তেই। নির্মল প্রকৃতি কিংবা খোলা মাঠে তাদের বিকেল কাটে না, তাদের বিকেলগুলো কাটে বিল্ডিংয়ের ছাদে কিংবা বাসার ব্যালকনিতে। তবুও শেহজাদ বিকেল হলেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে কখন সে পাখিদের আনন্দমুখর কলকাকলি শুনতে পাবে! পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে যেন তার ঘুম ভাঙে। কৌতূহলী শেহজাদ ভাবতে থাকে সে যদি পাখিদের ভাষা বুঝতে পারত, তাদের সাথে কথা বলতে পারত, তবে কতই না মজা হতো। ‘শেহজাদের বিকেল’ গল্পে গল্পকার বর্ণনা করেন এভাবে- ‘শেহজাদ নাস্তা হাতে ব্যালকনিতে বসে পাখিদের ডাক শোনে। মাঝে মধ্যে ভাবে, ইস! যদি পাখিদের ভাষা বুঝতে পারতাম। আর যদি পাখিদের ভাষা জানতাম পাখিদের সাথে কথা বলতাম, কি মজাই না হতো!’
এ গল্পের শেষ দিকে গল্পকার লিখেছেন, কিভাবে শেহজাদদের নিত্যকার রঙিন ভাবনাগুলো থমকে যায়- ‘প্রতিদিনই শেহজাদের বিকাল এমন কত রঙের ভাবনায় কেটে যায়। প্রাইভেট টিউটর আসলে এই ভাবনার সমাপ্তি ঘটে। শেহজাদ উঠে যায় বইপত্র সঙ্গে নিয়ে স্যারের কাছে পড়তে।’
বর্তমান সময়ে একটা অস্থির প্রতিযোগিতায় কোমলমতি শিশু-কিশোরদেরকে নামিয়ে দেন তাদের অভিভাবকরা। যেন তাকে ক্লাশে ফার্স্ট-সেকেন্ড হতেই হবে। এই প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া ছাড়াও যে মেধার স্বাক্ষর রাখা যায়, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করা যায়, তা সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে ‘গুণ’ গল্পে। গল্পকার লিখেছেন, ‘মারুফ খুব পড়াশোনা করে। এত পড়াশুনা করেও ক্লাসে প্রথম হতে পারে না। নাযিফ ছেলেটা ফার্স্ট হয় নিয়মিত। ... মারুফের তাই কষ্ট।’ এই ফার্স্ট না হওয়া ছেলেই একদিন ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে। গল্পকারের বর্ণনায়- ‘অনিক তার ব্যাগ থেকে একটা ম্যাগাজিন বের করে বলল, কিছুদিন আগে আমার জন্য একটা ছবি এঁকে পাঠিয়েছিলে যে, সেটা আমি জাতীয় ছোটদের ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় জমা দিই। তোমার ছবিটা সারা দেশের সব ছবির মধ্যে প্রথম হয়। আগামী মাসেই বড় প্রোগ্রামের মাধ্যমে তোমাদের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার তুলে দেবেন।’
‘চমকের কথার চমক’ একটি ভিন্ন ধরনের গল্প। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চমক। ক্লাসের শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে যেন সমাজের সচেতন মানুষের কাছেই প্রশ্নগুলো ছুড়ে দেয়- ‘আয় আয় চাঁদ মামা ছড়াটা কে কে পার হাত তুলো... সবাই হাত তুললো। একজন ছাত্রীকে স্যার শুনাতে বললেন। ছাত্রী দাঁড়িয়ে শুরু করল...। এমন সময় চমক আবার দাঁড়িয়ে পড়ল। স্যার বললেন, কিছু বলবে চমক? - স্যার চাঁদে নাকি মানুষ গিয়েছিল। - হ্যাঁ আরও পঞ্চাশ বছর আগে গিয়েছিল। - স্যার গতকাল রাতে ভাইয়া পড়ছিল তখন শুনছিলাম। ভাইয়ার কাছে জানতে চাইছিলাম, এত বছরে আর যেতে পারেনি কেন? ভাইয়া উত্তর না দিয়ে বিরক্ত হইছে। স্যার আপনি বলেন, পঞ্চাশ বছর আগের চেয়ে আমরা সবকিছুতে আরও কত উন্নত হয়েছি। তবুও এত বছরে যেতে পারেনি কেন?... - চমক তোমার প্রশ্নের জবাব পরে দেব। এখন আমরা ক্লাসে মনোযোগ দিই।’ ভূত- ছোটদের অনেক বেশি আগ্রহের একটি বিষয়। প্রকৃতপক্ষে ভূতের কোনো অস্তিত্ব থাক বা না থাক, এ নিয়ে ছোটদের কৌতূহলের যেন শেষ নেই। ভূতের গল্প ছোটদের মনে বাড়তি আনন্দ এনে দেয়। জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে যখন ভূত বন্ধু এসে হাজির হয়, তখন গল্পটা আরও বেশি রহস্যময় হয়ে ওঠে। ‘ফেসবুকে ভূতবন্ধু’ গল্পে আমরা জানতে পারি সেই রহস্যময় কাহিনী- ভূত কীভাবে বন্ধু হয়ে ওঠে! গল্পকারের ভাষায়- ‘মনের ভেতর থাকা সুপ্ত বাসনা ভূত বন্ধু বানানোর, এবার সেটা ফেসবুকের মাধ্যমে খুঁজতে লাগল। বিভিন্ন ভূতের বইয়ের ভিতরে থাকা নাম দিয়ে সার্চ দিতে লাগল। এরকম অনেক দিন ধরে খুঁজতে খুঁজতে একদিন পেয়ে গেল এক ভূত বন্ধু!’ ভূত বন্ধুর বাকি অংশটুকু আমরা মূল গল্পেই পাবো। নির্মেদ বর্ণনা ও সাবলীল ভাষা অন্য গল্পগুলোকেও আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তুলেছে। দৃষ্টিনন্দন চাররঙা প্রচ্ছদ আর অলঙ্করণে ভরপুর ক্রাইন সাইজের ৩২ পৃষ্ঠার এই বইটি শিশু-কিশোদের সহজেই ভালো লাগবে বলে আশা করা যায়। বইটি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবইয়ের চাপকে প্রশমিত করবে, তাদের মনে বই পড়ার আনন্দকে ছড়িয়ে দেবে বেশি করে- সেই প্রত্যাশা। ফেসবুকে ভূতবন্ধু আমির সোহেল প্রচ্ছদ: হামিদুল ইসলাম স্বাপ্নিক প্রকাশন মূল্য: ২২০ টাকা ঘরে বসে বইটি পেতে কল করুন : ০১৭২৯৯১৬১৩৩
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড