• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রবন্ধ

‘গোরখোদকের গান’ দ্রোহ বিরাজনীতির বিরুদ্ধে

  সৌরভ মাহমুদ্‌

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪৯
প্রচ্ছদ
প্রচ্ছদ : কাব্যগ্রন্থ ‘গোরখোদকের গান’

‘আমি বলবো- পরম করুণাময় ও অশেষ দয়ালু মহান কৃষকের নামে শুরু।’

এইটা হইলো দ্রোহ, এইভাবে ঘোষণা করতে হয় ইশতেহার। সৈকত আমীনের এই দ্রোহ একইসাথে প্রচলিতে চিন্তা, দর্শন, সমাজ এবং দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা শিল্পের বিরাজনীতিকরণের বিপক্ষেও। সৈকত আমীনের কবিতা চিৎকার করে ঘোষণা কইরা দিতাছে আমার একাত্মতা কৃষকের সাথে। যে কৃষক অর্থনীতি চালায় আর যেই কৃষক বাঁশখালিতে গুল্লি খায়া মরে।

সৈকত আমীন তার পুরো 'গোরখোদকের গান' বইয়ে মূলত সেই জনতার হইয়া কথা কইছেন। যে জনতা মাইর খায়, মরে, যেই জনতা মিছিল করে, মরে, ভুলে যায় সব আবার মনেও রাখে এমন এক জনতার কথা। যেই জনতার ভেতরে বিশ্বজিৎ নামে একজন মরে যায়। জনগণ দেখে বিচারের কৌতুক। তবু জনতা চুপ মেরে পরে থাকে। আর সৈকত আমীন লিখে,

‘.....যারা এখন হাঁটছে খালি পায়ে, রাতে তারা জুতোর দোকানের সামনে ঘুমাবে, খালি গায়ে।

বিশ্বজিৎ তাদের জন্য আর কখনওই পোশাক বানাবে না, বিশ্বজিৎ-এর শার্ট নিয়ে আর কোনো দিন মিছিল হবে না।’

তবে যেহেতু কবিতাই লিখতাছেন, যেহেতু করতেছেন রাজনীতির আলাপ ফলে লোকজান খাড়ায়া বা বইয়্যা জিগাইবেন কবিতা লেইখ্যা শ্রমিকের কী লাভ? তখন কবি লিখেন-

‘ওদের মাঝে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেছিলো আমাকে- কবিতায় শ্রমিকের কি লাভ? কবিতা শ্রেণীসংগ্রামের কি এমন কাজে আসে? এই মহৎ প্রশ্নে আমি অনেকক্ষণ জাদুঘরে সোভিয়েত কবি মায়াকোভস্কির ছবির দিকে চেয়েছিলাম, বলছিলাম আমি- কমরেড, একদিন আমাদের মিছিল গিন্সবার্গের কবিতার মতো দীর্ঘ হবে।’

তো এইযে পলিটিক্যাল লিখতাছেন সৈকত আমীন সেইটা তো অনেকেই লিখতাছেন, কিন্তু সৈকত আমীন কেন আলাদা? বিকজ সৈকত আমীন লিখতাছেন এগেইনস্ট দ্য পাওয়ার। ২০১৮ তে এরশাদের বিরুদ্ধে কবিতা লেখা সহজ কাম, মামুলি বাট এই টাইমে, এই টাইমের পাওয়ারের বিরুদ্ধে কওয়ার দম লাগে। একটা প্রবল দুঃসময় আর বিরুদ্ধ শক্তির সময়ে সৈকত আমীন লিখতাছেন,

‘অস্ত্র উদ্ধারে গেলে সন্ত্রাসী আর কেন ফেরে না!’

‘কারা জিগাতলায় ছাত্র পেটায় অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতা টেকায় সেই খবর কে জানে না?’

লিখতাছেন দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বাঙলাদেশ রাষ্ট্র দ্বারা পাহাড়ি জনপদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে-

‘তুমি মানে চাকমা নারীর মুখ চেপে ধরে মাতৃভাষার খেয়াল রাখি দুর্গের আড়ালে ধর্ষিতা পাহাড়ে পাহাড়ে জ্বলে চিতা জলপাই রঙা খুনি আর লাশের মেলে না খোঁজ’

সৈকত আমীনের কবিতা মুলত ইতিহাসের একটা পক্ষের কথা কয় যে পক্ষ চিরকাল লড়াই করছে পৃথিবীটারে বদলানোর, পৃথিবীটারে বাসযোগ্য করবার। যেই পক্ষ একটা দীর্ঘকালের সিলসিলা। যেই পক্ষের কথা ঘোষণা করতাছেন কবি-

‘যতকাল ডানায় আর পালকে জ্বলে শোষণের স্মৃতি যতবার তোমার ব্যাংক কৃষি জমি দখল করে বগ হয় আরও দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখো এই আমার চিঠি, হাতকড়া আর লোহার শিকের পিছেই সঠিক নক্সালবাড়ী জন্মাবে আবারো।’

তো এই লড়াইয়ের বাইরেও সৈকত আমীনের কবিতায় আছে এই সমস্ত জীবনের প্রতি তুমুল স্যাটায়ার। যেইখানে সৈকত আমীন নিজেরে আরেকটা পরিচয়ে প্রমাণ করতাছেন। চিঠি নামের একটা কবিতায় কবি বলতাছেন-

‘গাছ কাটা বন্ধের এতো পোস্টার পোস্টারের কাগজও নাকি গাছ কেটে আসে! ........... পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছি নিজেকে একা- গাছ কাটা বন্ধ হলে- কাগজ আর চিঠি আসাও কি বন্ধ হয়ে যাবে?’

লিখতেছেন-

‘কবরে গিয়েও দেখি আগে থেকে মানুষ শুয়ে আছে নিজের জন্য খোঁড়া কবরে বারবার এসে শুয়ে পড়েছে অন্য কেউ।’

আবার লিখতেছেন-

‘দীর্ঘকাল পর মনে হলো আমি নিজের দিকেই চেয়ে আছি। শূন্যে দুলছে পা, সিলিঙে ঝুলছে লাশ একটু পর পর লাশ টা আমার কাছে সিগারেট খেতে চায়।’

এইযে লাইনগুলা এগুলা একইসাথে মৃত্যু, জীবন, মানুষ, সমাজ সমস্তকিছুরেই স্যাটায়ার। যেইখানে কোন নিশ্চয়তা নেই, নেই কোন স্নিগ্ধতা কেবলই এক বিশৃঙ্খল শৃঙ্খলে আটকে পরা এক লাইফ।

এইভাবে সৈকত আমীন জীবনের কমপ্লেক্সকে তুড়ি মেরে, নির্যাতিত মানুষের পক্ষের একজন হয়েই লিখেন কবিতা। তার কবিতা বাঙলা আধুনিক কবিতার যে বর্ণনাধর্মী ধারা তারই ধারাবাহীকতার কবিতা। যেইখানে ইমেজ গুলি আমাদের ধারে কাছের চেনা, নিত্য দিনকার বাট সৈকত আমীনের কলমে সেগুলো তীব্র আর দগদগে হয়ে ভেসে আসে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় এই পৃথিবী এখনও শ্রেণীবিভক্ত। আর যতদিন শ্রেণী থাকবে, যতদিন এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীরে ডোমিনেট করবে ততদিন লড়াই।

আপনে যদি মনে করেন এই ক্লান্ত, জীর্ণ, ক্লীশে বিরাজনীতির শিল্পের সময়ে কবিতাকে গণের কথা কওয়া দরকার। গণের সাথে একাত্ম থাকা দরকার। তবে পড়েন গোরখোদকের গান। শেষ করতাছি সৈকত আমীনের কবিতা দিয়ে যা পড়ে আপনিও স্বপ্ন দেখতে পারেন একটা লাল ভোরের-

‘এমনকি পারমাণবিক বোমা বিস্ফরণের পর যখন অন্ধকার সারা শহর আমি একা একা দাঁড়িয়ে দেখেছি সেদিন রাতেও জোনাকিদের মাঝে কেউ কেউ নির্ভয়ে জ্বলে উঠেছিল...’

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড