অধিকার ডেস্ক ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৭
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও সোনালি কাবিনের কবি আল মাহমুদ আর নেই। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ০৫ মিনিটে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ থেকে পাঠকদের সামনে কয়েকটি কবিতা তুলে ধরা হলো-
সোনালি কাবিন-০১
সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিণী যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু'টি, আত্নবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি আহত বিক্ষত করে চারিদিকে চতুর ভুক্রুটি; ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন, ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি; দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন? আমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলংকার কিনি। বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না; তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা পরাজিত নয় নারী, পরাজিত হয় না কবিরা; দারুন আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।
সোনালি কাবিন-০২
হাত বেয়ে উঠে এসো হে পানোখী, পাটিতে আমার এবার গোটাও ফণা কালো লেখা লিখো না হৃদয়ে; প্রবল ছোবলে তুমি যতটুকু ঢালো অন্ধকার তার চেয়েও নীল আমি অহরহ দংশনের ভয়ে। এ কোন্ কলার ছলে ধরে আছো নীলাম্বর শাড়ি দরবিগলিত হয়ে ছলকে যায় রাত্রির বরণ, মনে হয় ডাক দিলে সে -তিমিরে ঝাপ দিতে পারি আচল বিছিয়ে যদি তুলে নাও আমার মরণ। বুকের ওপরে মৃদু কম্পমান নখবিলেখনে লিখতে কি দেবে নাম অনুজ্জ্বল উপাধিবিহীন? শরমিন্দা হলে তুমি ক্ষান্তিহীন সজল চুম্বনে মুছে দেবো অদ্যাক্ষর রক্তবর্ণ অনার্য প্রচীন। বাঙালি কৌমের কেলি কল্লোলিত করো কলাবতী জানতো না যা বাৎসায়ন, আর যত আর্যের যুবতী।
সোনালি কাবিন-০৩
ঘুরিয়ে গলার বাঁক ওঠো বুনো হংসিনী আমার পালক উদাম করে দাও উষ্ণ অঙ্গের আরাম নিসর্গ নমিত করে যায় দিন, পুলকের দ্বার মুক্ত করে দিবে এই শব্দবিদে কোবিদের নাম। কক্কার শব্দের শর আরণ্যক আত্নার আদেশ আঠারোটি ডাক দেয় কান পেতে শোনো অষ্টাদশী, আঙুলে লুলিত করো বন্ধবেণী, সাপিনী বিশেষ সুনীল চাদরে এসো দুই তৃষ্ণা নগ্ন হয়ে বসি। ক্ষুধার্ত নদীর মতো তীব্র দু'টি জলের আওয়াজ-- তুলে মিশে যাই চলো অকর্ষিত উপত্যকায়, চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাজ উগোল মাছের মাংস তৃপ্ত হোক তোমার কাদায়, ঠোঁটের এ লাক্ষারসে সিক্ত করে নর্ম কারুকাজ দ্রুত ডুবে যাই এসো ঘূর্ণ্যমান রক্তের ধাঁরায়।
সোনালি কাবিন-০৪
এ তীর্থে আসবে যদি ধীরে অতি পা ফেলো সুন্দরী মুকুন্দরামের রক্ত মিশে আছে এ-মাটির গায়, ছিন্ন তালপত্র ধরে এসো সেই গ্রন্থ পাঠ করি কত অশ্রু লেগে আছে এই জীর্ণ তালের পাতায়। কবির কামনা হয়ে আসবে কি, হে বন্য বালিকা অভাবে অজগর জেনো তবে আমার টোটেম সতেজ খুনের মতো এঁকে দেবো হিঙ্গুলের টিকা তোমার কপালে লাল, আর দীন-দরিদ্রের প্রেম। সে-কোন গোত্রের মন্ত্রে বলো বধূ তোমাকে বরণ করে এই ঘরে তুলি? আমার তো কপিলে বিশ্বাস, প্রেম কবে নিয়েছিলো ধর্ম কিংবা সংঘের স্মরণ? মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস। যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন তারপর কিছু নেই, তারপর হাসে ইতিহাস।
সোনালি কাবিন-০৫
আমার ঘরের পাশে ফেটেছে কি কার্পাশের ফুল? গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শর্বরী, কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল নিয়ে এসো চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি। ব্যাধের আদিম সাজে কে বলে যে তোমাকে চিনবো না নিষাদ কি কোনোদিন পক্ষিণীর গোত্র ভুল করে? প্রকৃতির ছদ্মবেশ যে-মন্ত্রেই খুলে দেন খনা একই জাদু আছে জেনো কবিদের আত্নার ভিতরে। নিসর্গের গ্রন্থ থেকে, আশৈশব শিখেছি এ প-পড়া প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল, চিরস্থায়ী লোকালয় কোন যুগে হয়নি তো গড়া পারেনি ঈজিপ্ট, গ্রীস, সেরোসিন শিল্পীর আঙুল। কালের রেদার টানে সর্বশিল্প করে থর থর কষ্টকর তার চেয়ে নয় মেয়ে কবির অধর।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড