• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভালবাসার গল্প

‘আমি করবী, রক্তকরবী নই’

  জিন্নাত আরা শেখ ঋতু

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৪
ভালবাসার গল্প
ছবি : মঞ্জুর মোর্সেদ রিকি (মডেল- হামজা সাঈদ)

কাছে আসার গল্পে সবার যতটা আগ্রহ থাকে দূরে যাওয়ার গল্পে ততটা অনীহা। তবে কি ছাদনা তলায় যাওয়াটা ভালবাসার পূণর্তা? চার হাত এক হতে না পারাটা কি ব্যথর্তা? না ব্যর্থতা নয়। আমার ডিকশনারিতে ব্যর্থতা নামের কোনো শব্দ নেই। আমি সংগ্রাম করে টিকে থাকাকে জীবন মনে করি। কারণ আমি করবী।

বাবা শখের বসে রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘রক্ত করবী’ থেকে আমার নাম রেখেছিলো করবী। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় বাবা আমার মাঝে সিংহী ভাব খুঁজে পেয়েছিলো। কেননা আমি ছোট থেকেই অনেক দায়িত্বশীল ছিলাম। আর আমাদের সমাজে পরিবারের বড় সন্তানদের দায়িত্ববান হতে হয়।

সে যাই হোক আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি আমার বাবা। আর তার পরের তালিকায় রয়েছে হুলো। না এটা কোনো বিড়াল নয় আমার ছোট ভাই শিহাব। আমি আদর করে এই ত্যাঁদড় প্রাণিকে ‘হুলো’ বলে ডাকি। হুলো জানতো আমার সম্পর্কের কথা। এদের পাশাপাশি আরও একজন পুরুষ আছে আমার জীবনে যে আমার দুনিয়া।

- ইমরান, আমার আম্মু বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। তুমি ভাল করেই জানো সংসারে বাবা নেই। এমন অবস্থায় মা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক বেশি ইনসিকিউর ফিল করে। সে চায় বাবার মত আমার পাশে এমন কেউ থাকুক যে ছায়া হয়ে থাকবে। বারবার তুমি বিয়ের কথায় চুপ করে থাকো কেনো? কিছু তো একটা বলবা? সব শুনে ইমরান কোনো কথা বলে না।

সালটা ২০১৩, তখন আমি কলেজে পড়ি। কাকতালীয় এক ঘটনায় সম্পর্ক শুরু হয়। আমরা শাহরুখ-কাজলের জুটি ছিলাম না। তবুও অনেকে পছন্দ করে মিস্টার-মিসেস পারফেক্ট বলে ডাকতো। বয়সের তুলনায় ইমরানের চেয়ে আমি অনেক ম্যাচিওরড ছিলাম। বলতে গেলে কোনো কোম্পানির মত এই সম্পর্কটাকে পরিচালনা করতাম। তবে সে অনেক সাপোর্ট দিতো। তবে আশ্চর্য এক বিষয় ছিলো আমাদের ওরকমভাবে ঝগড়া হতো না। এতো গোছানো সম্পর্ক কিভাবে হয় মাঝে মধ্যে এটা ভেবে হতবাক হয়ে যেতাম। আমি ওর ছোট ছোট বিষয়গুলো অনেক খেয়াল রাখতাম। আর ও আমার সাথে একই রকম আচরণ করতো।

হঠাৎ ইমরানের ফোনকল। ও প্রশ্ন করলো করবী তুমি কোথায় ? এইতো সিঁড়িতে বসে আছি। আবার পাল্টা প্রশ্ন করলো বাসায় যাবে না? আমি, না ইমরান। স্টুডেন্ট পড়াতে যাবো। আচ্ছা সন্ধ্যার আগে বাসায় যেও।

চাইলে মায়ের কাছ থেকে পকেট মানি নিতে পারি কিন্তু সেটা করিনা। এমনিতেই সেমিস্টার ফি দিতে দিচ্ছে তার মধ্যে থাকা-খাওয়ার খরচ আম্মুর ওপর চাপাতে চাইনা। এ কারণে নিজের পকেট মানি নিজে জোগাড় করি। স্টুডেন্ট পড়াই, রং তুলি দিয়ে ক্যান্ভাস এঁকে সেল করি।

আমি এখন ঢাকায় আর ইমরান খুলনাতে। ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কয়েক মাস আগে আমার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকায় এসেছিলো। গত তিন মাস হচ্ছে আর দেখা হয়না। ও অনেক ছটফট করছে দেখা করার জন্য কিন্তু আমার সেমিস্টার ফাইনাল চলে এ কারণে আসতে পারছে না। পরীক্ষাটা শেষ হলে আমি খুলনাতে যাবো।

খুলনা আমার প্রাণের শহর ছোট থেকে ওইখানে বড় হয়েছি। আব্বু প্রত্নতাত্ত্বিক ছিলেন। ২০১২ সালে হঠাৎ একদিন স্ট্রোক করে সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। আমি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণঅধ্যয়ন বিভাগের ছাত্রী। ছোট থেকে পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় বাবা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। আজ সে নেই তবে তার স্বপ্নে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে লড়াই করে যাচ্ছি। আর এ লড়াই সবচেয়ে বড় ঢাল ইমরান। ওর মত এতোটা হেল্পফুল সাপোর্টার পাটর্নার পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।

এখন আমি থার্ড ইয়ারে। আম্মু কোনোভাবেই কথা শুনতে নারাজ। সে ইতিমধ্যে ৪ টা ছেলেকে দেখিয়েছে। কোনোভাবেই তাকে বোঝাতে পারছি না এদিকে ইমরান চায়না এখন বিয়ে করতে। বিয়ে মানে অনেক বড় দায়িত্ব ও এতো বড় দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাচ্ছে না। বেশ কিছুদিন হচ্ছে এসব ব্যাপারে আমি ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি কিন্তু ও গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই ঠিক করেছি আজই ক্লিয়ারকাট কথা বলবো ও কি চায় জানবো।

সন্ধ্যায় ইমরানকে কল দিলাম সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে সেটাও বললাম। সব কথা শুনে ইমরান বললো, ওকে বিয়ে করে ফেলো আমি এখন বিয়ে করতে পারবোনা। কিছুক্ষণের জন্য আমার মনে হলো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। প্রায় চার বছরের সম্পর্ক আমাদের কিভাবে এ কথা বললো? এতো স্বপ্ন, ওয়াদা সবকিছু এক নিমিষে যেনো শেষ হয়ে গেলো। সম্পর্কটাকে গলা টিপে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করলো না।

আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে প্রায় এক বছর। প্রায় সময় কথা হয়। এর মাঝে একবার দেখা করেছে। তবে প্রেমিক হিসেবে নয় ভাল বন্ধু হিসেবে। ও জার্মান যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে আর তারই সুবাদে ঢাকায় এসেছে। এই সুযোগে আমার সাথে দেখাও হয়েছে। এর মধ্যে একদিন ইমরানের কল দিয়ে জানালো জার্মানে যাওয়া কনর্ফাম হয়ে গেছে। সামনের মাসে ওর ফ্লাইট। শুনে বুকের মধ্যে আচমকা এক ঝটকা লাগলো। বুঝলাম না এ অনুভূতি সুখের না কষ্টের। হয়তো বা দূরে যাওয়ার বেদনা আর ওর স্বপ্নের সিঁড়ি খুঁজে পাওয়ার অনন্দ।

যাওয়ার দিন সকাল থেকে ইমরান আমার সাথে সারাদিন সময় কাটায়। চলে যাওয়ার আগ মূহুর্তে লুকানো এক না বলা সত্য বলে যায়। আমার সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। তার সাথে অনেকদিন সম্পর্ক ছিল। কোনো এক কারণে ওই সম্পর্কটাও টিকিয়ে রাকতে পারেনি। আমার বিশ্বাস ছিল আমি থাকা অবস্থায় অন্য কাউকে গ্রহণ করবে না। এটা ছিল আমার জন্য আরেক ঝটকা। তবুও আমরা এক আছি প্রেমে নয় বন্ধুত্বে।

কী পেলাম? কি হারালাম জানিনা। কারণ লাভ লসের অংক কষে ভালবাসা যায় না। আমরা দু’জন দুজনকে পাইনি তবে হারিয়ে ফেলেছি সেটাও না। আমাদের যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে তা আজীবন এভাবেই রয়ে যাবে। কে বলেছে এক ছাদের নিচে না থাকলে ভালবাসা মাটি চাপা পড়ে যায়? আমরা আলদা আছি কিন্তু ভালবাসায় ভাটা পড়েনি। আমাদের ভালবাসা এখনো জীবন্ত। রক্ত করবীর মত বিদ্বেষময় নয়।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড