• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছোট গল্প : একটি নেহার গল্প ও আমরা

  সালেহ্ রনক

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫১
গল্প
ছবি : প্রতীকী

তিন বোনের অন্যতম নেহা মাত্রই জীবনের ৮ বছর পার করেছে। দুধদাঁতগুলো বিদায় নিতে শুরু করেছে স্হায়ী দাঁতগুলোকে পাকাপোক্ত জায়গা করে দিতে। বাবা ইলিয়াস হোসেন ফেরী করে মুরগি বিক্রি করেন অলিগলি ঘুরে ঘুরে। নেহার এতটুকুন জীবনাকাশে হঠাৎ করেই কালবৈশাখী এসে হানা দিয়েছে।

বেশ কিছুদিন আগে নেহার মা ওর একটি দাঁত ফেলে দিতে গিয়ে জানতে পারে নেহার জীবনে দ্রুতবেগে ধেয়ে আসা কালবৈশাখীর নাম। দাঁত ফেলে দেয়ার পর থেকে রক্ত পড়া বন্ধই হচ্ছিল না। স্হানীয় ডাক্তার অনেক চেষ্টা করার পর ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। নেহার পরিবার ভোলা জেলার অন্তর্গত লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা।

ভাগ্যগুণে নেহার বাবা পেয়ে যায় রাহাত নামের এক তরুণকে। রাহাত আগাগোড়া একজন পরিপূর্ণ মানবিক তরুণ। দীর্ঘবছর ধরে অসুস্থ রোগীদের নিজ দায়িত্বে রক্ত সংগ্রহ করে আসছে,জড়িত আছে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে। রাহাত ও তাঁর পরিবারের পরামর্শ ও সাহায্যে ইলিয়াস হোসেন তার মেয়ে নেহাকে নিয়ে ঢাকা আসে নিজের সঞ্চিত অবলম্বনটুকু নিয়ে। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানায়, নেহার ব্লাড ক্যান্সার। যেহেতু বয়স কম ও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে সেহেতু চিকিৎসা করালে নেহাকে বাঁচানো সম্ভব। তবে এই মরণব্যধির চিকিৎসার জন্য দরকার ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। নেহার বাবা বাস্তবতা ও নিজের অক্ষমতা বিবেচনা করে কলিজার টুকরা মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে অসহায়ত্বের পাথর বুকে চেপে।

রাহাত পরবর্তী খবর নিতে গিয়ে জানতে পারে নেহার বাবার অক্ষমতার কথা। রাহাত আমার পূর্ব পরিচিত, স্নেহধন্য। এতটুকুন ছেলের মানবিক গুণ দেখে আমি মুগ্ধ। রাহাত আমার কাছে পরামর্শ চায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে। এর মধ্যে বন্ধু শাহীনও এইটুকুন একটি মেয়ের জন্য কিছু একটা করার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করে। আমি অতি সাধারণ মানুষ, ভেবে পাচ্ছিলাম না, কি করতে পারি এই মেয়েটির জন্য?

প্রয়াত বন্ধু রাজীবের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল আমার অমূল্য সম্পদ আমার বন্ধুদের কথা। যারা আমার শক্তি ও প্রেরণা। আমি জানি আমার ফেইসবুক বন্ধুরাও আমায় ভীষণ ভালোবাসেন। নিশ্চয়ই প্রিয় বন্ধু রাজীবের মতো করে নেহার পাশে এসেও দাঁড়াবেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।

রাহাত নেহাকে ক্যান্সার হাসপাতালে সিট না থাকার কারণে ভর্তি করাতে না পেরে ডাক্তাদেরই পরামর্শে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। ঢাকা মেডিকেলেও একই অবস্থা,সিট ফাঁকা নেই। অনেক দেনদরবার করে রাহাত নেহাকে একটি বেডে আর একটি শিশুর সাথে থাকার ব্যবস্থা করে। গতরাতে রাহাত, পলাশ ও রিক্তার সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, বিনাচিকিৎসায় নেহাকে মরতে দিব না।

আজ সকালে রাহাতকে সঙ্গে করে ঢাকা হাসপাতালে ডাক্তাদের সাথে আলোচনা করে নেহার জন্য একটি কেবিনের ব্যবস্হা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিই। আশা করছি আগামীকাল নেহা কেবিন পেয়ে যাবে। কেবিন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নেহার পুরোপুরি চিকিৎসাও শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ যেসব সিটে অন্যান্য শিশুরা ভর্তি আছে,সেখানে আগামী ৩ মাসের আগে সিট খালি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যারা বর্তমানে কেবিনে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে পরবর্তীতে তারাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওয়ার্ডে সিট পাবে। প্রতিদিনের কেবিন ভাড়া ৪শ টাকা।

নেহা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি বিভাগের ২১০ নং ওয়ার্ডে ৩নং বেডে ভর্তি আছে। কাল হয়তো কেবিনে যাবে। থেকে থেকে নাক মুখ দিয়ে রক্ত যাচ্ছে। নেহাকে যখন বললাম, নেহা আমি তোমার একটা চাচ্চু, বল তো মা তোমার কেমন লাগছে? নেহা কোন উত্তর দেইনি, ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল অশ্রুসিক্ত চোখে। ঐ করুণ চোখদুটো যেন বলতে চেয়েছিল, আমি বাঁচতে চাই।

আগামী দুই একদিনের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে ফান্ড রাইজিং এর কাজ শুরু করবো। নেহার বাবার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট ও কয়েকটি বিকাশ নম্বর খোলার চেষ্টা করছি। এমন বন্ধুর পথে সকল বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাশে চাই। আর্তের জন্য ভিক্ষার হাত যতবার পেতেছি,দুহাত ভরে ভালোবাসা পেয়েছি। প্রিয় বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা,এবারও সফল হতে দিন। আপনারাই আমার গর্বের ধন, প্রেরণা ও সাহস। আসুন, সবাই মিলে আবার গাই জীবনের জয়গান।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড