মুহাম্মদ বরকত আলী
প্রাইমারিতে ওদের অভিযোগের শেষ নেই। ক্লাস রুম খোলার আগেই দরজার কাছে গিয়ে হাজির। সবার আগে ফাস্ট বেঞ্চ ধরতে হবে। ক্লাস রুম খোলার পর থেকেই শুরু, স্যার, ম্যাডাম জায়গা দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর এই কে মারল, কে খাতা চুরি করেছে, কলম নিয়েছে এসব নানান অভিযোগ।
হেড স্যার আপনাকে অফিসে ডাকছে। এইটুকু বলেই দে দৌঁড়। এই মাত্র ক্লাসে আসলাম আর এর মধ্যেই ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে।
কি আর করার, ফিরে এসে আর ক্লাস নেওয়া যাবে না। তোরা আজ একা একাই পড়তে থাক। আজ মনে হয় কুফা লেগেছে। সকাল থেকে ক্যাচালের উপর দিয়ে দিনটা শুরু করতে হয়েছে। যাগগে দেখি কি হলো।
অফিসে ঢুকতেই মৌসুমি হাসান আপা ডাগর ডাগর দু’চোখে ঢ্যাব ঢ্যাবিয়ে আমার দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে এই মাত্র উনার পাকা ধানের ক্ষেতে এক পালা মই দিয়ে এসেছি। না, এক পালা না দুই পালা দিয়েছি। তাই এখন উনার চিন্তা হচ্ছে সারা বছর খাবেন কি? নাকি এঁচোয়ে আরও বড় কিছু করেছি? আর কি ক্ষতি করলে মানুষ এভাবে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে তা আমার জানা নেই।
কি করেছি আমি, যে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে? আমার ভয় করছে না বুঝি? আমিও কিন্তু ভয় দেখাতে পারি। ছোট বেলায় ইশকুলে শিখেছি কিভাবে ভয় দেখাতে হয়। আমার সহপাঠীরা ঠিক যে ভাবে ভয় দেখাতো সেই কায়দায় ভয় দেখাতে পারি। এখন আমার ইচ্ছে করছে দু’চোখের পাতা উলটিয়ে লাল অংশ বের করে ভয় দেখায়। এই যা আমার কথা গুলো শুনে ফেললো না কি? কে জানে বাবা উনি আবার মানুষের মন পড়তে জানে কিনা। আমার নীরবতা দেখে হেড স্যার বললেন, তুমি কি জানো একজনের ক্লাসের পড়ানোর ব্যাপারে অন্যজনের কিছু বলতে নেই?
জী স্যার, জানি এটা খুব খারাপ ব্যাপার। একদম ঠিক না।
তাহলে তুমি বলেছো কেনো?
কখন কি বললাম? কোথায় বললাম? কখন কি বলেছি মনে নেই স্যার? দয়া করে মনে করিয়ে দিন না?
মৌসুমি হাসান আপা ফোঁস করে বলে উঠলো, তুমি গত কাল অষ্টম শ্রেণীতে আমার পড়ানোর ব্যাপারে কিছু বলোনি?
আমি বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপারে কথা বলেছি?
হেড স্যার বললেন, ‘মশা’।
মশা! কোথায় মশা?
আরে এখানে মশা না, তুমি মশা নিয়েই কথা বলেছো।
আমি কিছুটা হাঁসির ছলে বললাম, কোথায় কোন মশা? মশার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই স্যার। মশা এক ধরনের অতি সাধারণ ছোট জীব। শরীরের কোথাও বসলে একটা চটকানি খেলে যার আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না তাকে নিয়ে আবার কি বলবো? একে নিয়ে টানা হেঁচড়া করা ঠিক না স্যার। এত ক্ষুদ্র প্রাণী নিয়ে আমি কি কথা বলবো? মৌসুমি আপা কাল মশার জীবন চক্র সম্পর্কে পড়াচ্ছিল আর তুমি তাই নিয়ে মন্তব্য করেছো? হেড স্যারের কথা শেষ হতে না হতেই এরই মধ্যে মৌসুমি হাসান আপা সাপের মত একবার ফোঁস করে বললো, মশা কয় দিন বাঁচে সেটা তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে? পৃথিবীর সবাই জানে মশা আড়াই দিন বাঁচে। আমরাও বইতে পড়ে আসলাম। আর তুমি কি না বলেছো মশা এক সপ্তাহের বেশি বাঁচে। আমি না কি ছেলে-মেয়েদেকে ভুল শিখাচ্ছি। এই কথাগুলো তুমি ছেলেমেয়েদের বলোনি?
আমার একটু হাসি পাচ্ছে। কিন্তু স্যার, আপা রেগে যাবেন এই ভেবে ওদের সামনে হাসলাম না। বাইরে গিয়ে ওদের চোখের আড়ালে একটু হেসে নিলে মন্দ হয় না। বাইরের দিকে পা বাড়াতেই মনে সায় দিলো না। বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক না।
আপাতত হাসিটা কিছুক্ষণ রিজার্ভে থাক। পরে কোনো সময় দুঃখ পেলে এইটুকু হাসি দিয়ে কিছুটা হলেও শান্তি পাওয়া যাবে। আজকাল আবার হাসির খুব কদর। ডাক্তারেরা বলেন, হাসলে নাকি হার্ট ভালো থাকে। নিয়োমিত হাসলে শরীর মন দু’টোই ভালো থাকে। তাই হাঁসি না পেলেও প্রতিদিন একটু আধটু জোর করে হলেও হাসতে হয়। কি ব্যাপার, কিছু বলছো না যে? ঘটনা কি সত্য? জি স্যার, সত্য। কেনো বলেছো? বারে, আপনি ভুল পড়াবেন আর আমি সেটা দেখে শুনেও কিছু বলবো না? ছাত্রছাত্রীরা ভুল শিক্ষা নিলে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ওরাই তো জাতির কর্ণধার। সব সেক্টরে আবেগ দয়া খামখেয়ালি থাকলেও শিক্ষার সেক্টরে এগুলো থাকে না স্যার। আমি জেনে শুনে তো আর ভুল শিক্ষা নিতে দিব না স্যার।
(চলবে...)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড