• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : বোকামি

  কাজী সাবরিনা তাবাস্‌সুম

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৮
গল্প
গল্প : বোকামি

রুপা ঠিক করলো মিতুলের সাথে দেখা করবে এইবার। অনেক তো হলো ফেসবুক ফেসবুক প্রেম। এইবার মুখোমুখি হওয়া দরকার। রুপা অবশ্য এখনও মিতুলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু প্রতিদিন চ্যাটিং না করলে তাদের দুজনেরই অস্থির লাগে। আরও অনেক ব্যাপার-স্যাপার ঘটে যাচ্ছে রুপার জীবনে যা মিতুল কে জানানো দরকার। কারণ উত্তর গুলো মিতুলই দিতে পারবে। রুপা বুঝতেই পারছেনা তার মনে কি মিতুলের জন্য ভালবাসা? নাকি নিছক ক্ষণিকের আবেগ? যেটাকে ক্রাশ বলে। তাই রুপার দেখা করা দরকার মিতুলের সাথে, জলদি।

রুপা ঠিক করলো তারা দেখা করবে কমলাপুর রেলস্টেশনে। ট্রেন এবং রেললাইন রুপার খুব প্রিয়। রুপার মনে হলো কোনো বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষের সাথে দেখা করতে চাইলে রেলস্টেশন থেকে ভাল কিছু হতে পারেনা। মিতুল আবার খুব excited. সে রুপাকে দেখেনি। ফেসবুকে রুপার সব ছবি custom করা। মিতুল অনেক বার দেখতে চেয়েছে। কিন্তু ছবি ছাড়া প্রেম কতদূর এগোয় তা রুপার দেখার ইচ্ছা ছিল। মিতুল কে রুপার অনেক ভাল লাগে। কিন্তু ছেলেটা যে এত বোকা হবে সেটা রুপা ভাবেনি। নিজের ছবি, পরিচয় সব রুপাকে জানিয়েছে। বিনিময়ে রুপা কোনো তথ্যই দেয়নি। রুপা দেখতে চায় মিতুল তাকে দেখে কেমন আচরণ করবে? প্রেম সামনে এগুবে কিনা সেটা নির্ভর করবে মিতুলের আচরনের উপর।

মিতুলকে রুপা বলেছে সে লাল রঙের সালওয়ার কামিজ পরবে। লাল মিতুলের খুব অপছন্দের রং। রুপা মিতুলকে রাগিয়ে দিতে খুব মজা পায়। সে জানে মিতুল রেলস্টেশনে গিয়ে প্রতিটা লাল রঙের কামিজ পরা মেয়ের দিকে তাকাবে। রুপা আসলে লাল কিছু পরবে না।

বিশেষ দিনে রুপা পরলো নীল রঙের একটা শাড়ি। হাতে জড়ালো বেলীফুলের মালা। মনের মতো সাজলো। কপালে দিল কাল টিপ। ঠিক যেন হুমায়ূন আহমেদের নায়িকা ‘রুপা’। আসলে মিতুল খুব হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত। মিতুলকে চমকে দিতে রুপার এই সাজ। মিতুলের এই ‘রুপা’ নামটি খুব পছন্দ। রুপার কোনো ছবি না দেখে রুপার প্রেমে পরার এটাও একটা কারণ হতে পারে। অতশত জানেনা রুপা। সে চিন্তা করে যাচ্ছে লাল জামা পরা মেয়ে খুঁজতে থাকা মিতুল এর সামনে গিয়ে যখন বলবে ‘আমি রুপা! তখন মিতুল কি ভাববে? আবার বলে বসবে না তো , ‘আপনি হুমায়ুন আহমেদের রুপা। আমার রুপা না। আমার রুপা লাল জামা পরবে’। রুপা ভাবছে, মিতুল যা বোকা। সে এরকম বললেও রুপা অবাক হবে না। বরং নিঃশব্দে চলে যাবে। পরে একদিন আবার লাল জামা পরে মিতুলের সামনে গিয়ে মিতুলকে বোকা বানাবে। অবশেষে পুরো স্টেশন চষে ফেললো রুপা। কই মিতুল? কোথাও দেখলো না। তারা প্রমিজ করেছিল যে কেউ কাউকে ফোন করবেনা। খুঁজে বের করবে। মিতুলকে তো রুপা চেনেই। আর মিতুল রুপাকে খুঁজবে লাল জামার কোড দিয়ে। মিতুলের তো রুপাকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ রুপা লাল জামা পরেনি। কিন্তু রুপার তো খুঁজে পাওয়ার কথা। পাচ্ছেনা কেন? রুপার অস্থির লাগতে থাকে। যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য দেখা করতে চেয়েছিল, সে প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। সে আসলে ভীষণ ভালবাসে মিতুলকে। কিন্তু মিতুল কই?

রুপা চলে গেল কমলাপুর রেলস্টেশনের বিশাল ওভারব্রিজ এর উপর। যেখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু মিতুলকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। বোকা ছেলেটা আসেনি তাহলে? ভালবাসে না রুপাকে?

হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে বললো, ‘কেমন আছো রুপা?’ পেছনে তাকিয়ে যাকে দেখলো তাকে সে চেনেনা। কিন্তু অপলক তাকিয়ে রইলো। এত সুদর্শন ছেলে হয়? একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে। ঠিক যেন হুমায়ুন আহমেদের হিমু। কে এই লোক? রুপাকে চেনে কি করে? রুপাকে চমকে দিয়ে ছেলেটা বললো, ‘অনেকক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য স্যরি। তোমার গতিবিধি দেখতে মজা লাগছিল। আমি মিতুল’।

হতভম্ব রুপা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলোনা।

মিতুল বলে চললো, ‘তুমি নিজের ছবি দিচ্ছো না দেখে আমিও আমার ছবি দেইনি। তোমার সাথে একটু মজা করলাম। বিশ্বাস করো, বাকি সব তথ্য ঠিক ছিল। আমি জানতাম তুমি জীবনেও লাল জামা পরবে না। বরং হুমায়ুন আহমেদের রুপা সেজে আসবে এরকম একটা ধারনা ছিল। সকাল থেকে তাই নীল শাড়ি পরা মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি। রেলস্টেশনে দেখা করতে চেয়ে তুমি আমার কাজ আরও সহজ করে দিয়েছো। নীল শাড়ি পরে রেলস্টেশনে তো দ্বিতীয় কেউ আসবেনা। তাই তোমাকে দেখা মাত্রই তোমার পিছু নিলাম। আর তুমি যেভাবে লাল জামা পরা মেয়েদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছো, আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম তুমিই রুপা। এত খুঁজে বেড়াচ্ছো কেন আমাকে বলতো? খুব ভালবাসো বুঝি?’

রুপা ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল মিতুলের গালে। বললো, ‘তুমি মিথ্যুক এবং বুদ্ধিমান। আমি একটা বোকা ছেলেকে ভালবাসি। তোমাকে নয়।’ মিতুল মুচকি হেসে রুপার হাত দুটো ধরে বললো, ‘আমি এই বোকা মেয়েটাকে পাগলের মত ভালবাসি। সে কি আমাকে শেখাবে কিভাবে বোকা হওয়া যায়?’ রুপা কাঁদতে লাগলো। এ কান্না হেরে যাওয়ার কান্না। মিতুলের ভালবাসার কাছে সে হেরে গেছে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড