• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হঠাৎ পাওয়া’-এর একাদশ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : হঠাৎ পাওয়া

  শারমিন আক্তার সেজ্যোতি

৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫২
উপন্যাস
ছবি : শারমিন আক্তার সেজ্যোতি

কণার ব্যর্থতায় মানুষ আজ মুখ লুকিয়ে হাসে। সে স্পষ্ট সেই হাসির শব্দ শুনতে পায়। সেই বিদ্রূপের সুর দিব্যি তার কানে ভেসে আসে এবং আস্তে করে তার কানের পাশেই তা বাজে। না চাইতেও তাকে তা সহ্য করে নিতে হয়। তাই সে প্রতিনিয়ত নিজেকে শাস্তি দিয়ে বেড়ায়, পূর্বের ভালো ফলাফলের জন্য শান্তি। শুধুমাত্র পড়াশোনা কেন্দ্রিক নিজের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের জন্য শাস্তি।

তবে একাএকা আর ভালো লাগছে না কণার। উপরন্তু বড় আপা তার একা চলাফেরা নিয়ে নানা রকম সন্দেহ প্রবল কথাবার্তা বলছে!

- নাহ। আর কোচিংয়েই যাব না! এরপরে সে কোচিং যাওয়া বন্ধ করে দিলো।

লাইবা কণাকে প্রথম থেকেই বলে এসেছে তার টিচারের কাছেই পড়তে। দুজনে একসাথে পড়বে কিন্তু কণা বরাবরই না বলে এসেছে, কারো বাড়িতে গিয়ে পড়াটা তার কাছে খুব আলসেমির এবং অপছন্দের।

তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, এখন সে অনেক মন্দ লাগা কাজও স্বাচ্ছন্দ্যেই মেনে নেয়। তাও হাসিখুশি মুখে। এটাও না হয় নিক! হ্যাঁ, কাল থেকে কণাও লাইবার সাথেই পড়বে!

কণা বাসায় বললো যে সে লাইবার সাথে তার বাড়িতে গিয়েই পড়তে আগ্রহী। কণার মা প্রথমে কিছুটা আপত্তি জানালেও বাকিরা মেনে নিয়েছে, পরে তিনিও অনিচ্ছাসত্ত্বেও হ্যাঁ বলেছেন।

তাছাড়া কতটুকুই বা দূরে? এই তো লাইবার বাসা, মাত্র ২মিনিটের পথ। একা একা চলার চেয়ে এটাকেই বরং বেটার অপশন মনে হয়েছে কণার বড় বোন। তাই আগ্রহের সাথেই মেনে নিয়েছে। উপরন্তু লাইবার বাসায় তেমন কেউই নেই বিরক্ত করবার মতো। শুধু ছোট্ট একটি ভাই, পড়ে ক্লাস ফাইভে, তাই তাকে নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে লাইবার মা খুব সচেতন এবং বুদ্ধিমতী মহিলা, তাই চিন্তার যেটুকু কারণ ছিলো তাও অকারণ বলা যায়।

স্যার চলে এসেছে কিন্ত কণার খবর নেই, লাইবার পড়া এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বার হয়ে যাচ্ছে। সাথে মনে নানারকম প্রশ্নও উঁকি দিচ্ছে তার। কণা কি আবার মত পালটে ফেললো! পড়বে না নাকি! হঠাৎ স্যারের জিজ্ঞাসাসূচক কণ্ঠে তার ভাবনায় ছেদ পড়লো,

- কি ব্যাপার লাইবা! মন কোথায় তোমার?

কিছুটা তড়িঘড়ি করেই সে উত্তর দিলো, ‘না না ভাইয়া, আসলে আপনাকে বলেছিলাম না আমার বান্ধবী কণাও আসবে পড়তে! তাই দেখছিলাম ও আসছে কিনা!’

- আসলে তো দেখতেই পাবে, খেয়াল করো। ম্যাথের এই চাপটার টা খুবই ইম্পরট্যান্ট, তাই মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করো ।

লাইবা সম্মতিতে মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘জী ভাইয়া!’

এর কিছুক্ষণ পরেই কণা এলো। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসার কারণে দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে, ভিতরে প্রবেশ করবে কিনা সন্দিহান সে। একে তো বেশ দেরিতে এসেছে তার উপরে একেবারে নতুন কোন স্যারের কাছে এবং সেটাও অন্যের বাড়িতে। তদুপরি সমস্ত প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে কণা শান্ত গলায় বললো, ‘আসবো স্যার?’

কণার কণ্ঠ শোনা মাত্র লাইবা উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো, ‘কিরে কণা তুই এতো দেরী করলি কেনো? আমি তো বলেছিলাম ৪টায় আসতে এখন তো ৫টা বেজে গেছে রে! আয় আয় ভিতরে আয়।’

নিজের অস্থিরতায় কিছুটা ভাটা দিয়ে এপাশ-ওপাশ তাকাতে তাকাতে কণা ভিতরে প্রবেশ করলো। মাঝারি সাইজের একটা ঘরের এক কিনারার একটা সেগুন কাঠের টেবিলের দুপাশে তিনটি চেয়ার বসানো। এক সাইডে দুটো, অন্য সাইডে একটি। কণা স্বভাবতই এসে লাবিবার পাশে বসলো। ওর খুব আনইজি লাগছে,কারন সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকটি এতক্ষণেই নিজের মাথা তুলে কণা কিংবা লাইবার দিকে তাকায়নি, উপরন্তু সে কিসব লিখে যাচ্ছে! কণা আড়চোখে লোকটিকে পর্যবেক্ষণ করছে,ওর সিক সেন্স বলছে লোকটি হয়তো গম্ভীর এবং রাগী প্রকৃতির হবেন।

স্যারের দৃষ্টি এড়িয়ে লাইবা কণার দিকে আরো খানিকটা চেপে এসে ফিসফিস করে বলে যাচ্ছে, ‘কিরে কণা এতো লেট করলি কেনো?’

কণাও চাপা কণ্ঠে উত্তর দিলো, ‘ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে, অ্যার্লাম বাজে নাই।’

- তুই এখনো বাচ্চা পোলাপানের মতো বিকালে ঘুমাস! হায়রে!

- আচ্ছা, স্যারটা কি খুব রাগিরে? কেমন চুপচাপ হয়ে আছ!

- না রাগী না, ক্যালকুলাসের সেই ম্যাথটা করতেছে! মিলতাছে না তাই চুপ।

কণা তৎক্ষণাৎ বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো, ‘ওটা তো ভুল আছে! প্রিন্ট উঠে নাই তোর বইয়ে।’

লাইবা কণার গায়ে চিমটি কেটে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, ‘আরে চুপ চুপ বলিস না, একদম বলবি না তুই’।

এ পর্যায়ে ফিসফিস ভেঙ্গে ওদের হাসির শব্দ সামনে বসে থাকা গম্ভীর ছেলেটির কাছেই পৌঁছল,সাথে-সাথেই ছেলেটি মাথা তুলে নরম গলায় বলে উঠলো, ‘তোমাদের গল্প শেষ হয়েছে? লাইবা?’

- না না ভাইয়া গল্প করতেছি না, কণা জিজ্ঞেস করলো কোন চাপটার এ আছি আমরা, তাই বলছিলাম।

- হু, এই ম্যাথটার কোথাও ভুল আছে বুঝলে।আর কণা তুমি তো আজকে আসলে আমাদের ক্যালকুলাস শেষ এর পথে। সমস্যা নেই আবার রি-ভাইস দেয়া হবে তখন দেখে নিও।

কণা এপাশ-ওপাশ মাথা নেড়ে বললো, ‘জী স্যার!’

-আমাকে স্যার বলার দরকার নেই কণা,আমি প্রফেশনাল টিচার না। ভাইয়া বইলো।

- সরি স্যার! না মানে ভাইয়া স্যার।

লাইবা নিঃশব্দে হেসে বিড়ি-বিড়িয়ে বলছে- ‘এক ভাইয়া ডাকাতেই কণা শেষ।’ কিন্তু কণা নিশ্চুপ। সামনে বসে থাকা স্যার নামক ভাইয়া শুনতে চাওয়া ছেলেটি আবারও ম্যাথে মনযোগী হলো। তবে স্যারদের আগে কখনো কণা ভাইয়া বলে ডাকেনি এটাই প্রথমবার। তাই এমন হচ্ছে! তবে কোথাও ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ছেলেটিকে কিছু চেনাচে না লাগছে কণার। কোথাও দেখেছে মনে হচ্ছে কিন্তু ঠিক কোথায় তা মনে আসছে না।

কণা কিছুটা ডিটেকটিভ লুকে কলম চিবিয়ে চিবিয়ে নিজের মেমোরিতে বেশ খানিকটা জোড় দিয়েও মনে করতে পারলো না। তবে লোকটি কোনক্রমেই ওর দিকে ঠিকভাবে তাকাচ্ছে না যেন ইচ্ছাকৃতভাবে মুখলুকিয়ে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে সামনা সামনি তাকালেই কণা তাকে চিনে ফেলবে আর চেঙ্গিস খান জাতীয় কোন নামে চেঁচিয়ে ডেকে উঠবে তাই তিনি অকারণ ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন।

তবে খুব ভালো বোঝায় ছেলেটা, একেবারে ধরে ধরে শিখানোর মতো! কিছুক্ষণের খাপছাড়া সব চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে মনযোগী হয়ে উঠলো কণা, খুব মন দিয়ে শুনে সামনে বসে থাকা স্যারদের প্রশ্নে জর্জরিত করা তার পুরনো অভ্যাস! কিছুদিন হলো অভ্যাসে ভাটা পড়েছিলো কিন্তু আজ আবার কণার ইচ্ছেতে জোড়ার শুরু হয়েছে।

লাইবার বরাবরই ক্যালকুলাস পছন্দ না! ও অপেক্ষায় আছে কখন ক্যালকুলাস এর ইতি টানা হবে! কণা না আসলে এতক্ষণে হয়ে যেত কিন্তু ও এসে এই বিশ্রী চাপটার টার স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। তিক্ততার সুরে লাইবা বিড়বিড় করে বলছে, ‘মনযোগী স্যারের মনযোগী স্টুডেন্ট ‘

সাথে স্পষ্ট কণ্ঠে আমতা-আমতা করে বললো, ‘শ্রাবণ ভাই, আজকে বাদ দেন। মাথায় ঢুকতেছে না কিচ্ছু।’

- আর অল্প কয়েকটা ম্যাথ বাকি আছে লাইবা, শেষ করে দেই আজকে।

লাইবা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। ওর এখন ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে কণাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে, এত প্রশ্ন কোথা থেকে আসে ওর! এত পড়ে হবেটা কি? এসব নানা কথায় লাইবা পুনরায় বিড়বিড় করে যাচ্ছে। এমন সময় লাইবার মা চা নাস্তা নিয়ে এসে বললেন, ‘বাবা হিমেল খেয়ে নাও।কিরে কণা ভালো পড়ায় না হিমেল বল?’

কণা মাথা নাড়লো, স্যার পড়ায় বিরতি দিয়েছে কিন্তু কণার কাছে ব্যাপারটা একটু খটকা লাগছে। লাইবা ডাকছে শ্রাবণ ভাই বলে আর লাইবার মা ডাকছে হিমেল বাবা বলে! ব্যাপারটা গোলমেলে মনে হচ্ছে কণার কাছে।

ও ভাবছে, ‘মানেটা কি? সবাই কি এই লোকটিকে ইচ্ছেমত সব নামে ডাকে নাকি!’

(চলবে....)

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড