• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনুগল্প : বাওয়ালী

  অপরাহ্ণ সুসমিতো

০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৭
গল্প
ছবি : প্রতীকী

প্রথম চুরি করি শ্যামনগরে আমার ছোটো ফুপুর বাড়ি। ফুপুদের বাড়ি মা আমাকে হরিণের মাংস দিয়ে পাঠালে সে রাতে ফুপুর বাড়ি চুরি করি। বেশি কিছু না, ফুপার ঘড়ি আর তার কুর্তার পকেটে থেকে শ’তিনেক টাকার মতো। চুরির আনন্দটা যৌবন জ্বালার মতো টকটক করে বাড়তে থাকে। ভয়, লোভ, নিষিদ্ধ এই শিহরণে আমার দিনরাত কাটে। তার উপর বাবাকে বাঘে খেয়ে ফেললে আমাদের সংসারে অভাব গল্কি নৌকার মতো দুলে দুলে বাড়তে থাকে।

রূপসা নদীর পাড়ে সন্ধ্যা নামলেই যেন যৌবন রাত। লোকজন ঘর থেকে বেরোয় না সহজে। সুন্দরবন বলে মানুষ খেকো বাঘের ভয় আছে। আমাদের গ্রামে বাঘ নিয়ে হরেক পদের গল্প ভাতের ধোঁয়ার মতো উড়ে বেড়ায়। নাইট স্কুলে আমাকে ভর্তি করানো হয়েছিল। পড়ালেখায় আমার মন কোনোকালেই ছিল না।

একটা বোবা রাগ আছে আমার সারাক্ষণ। রাগটা খুব কিলবিল করে। রাগটা মাথা থেকে শুরু হয়ে সমস্ত গতরে কিলুবিলু করে। বোবা রাগ গোঙাতে শুরু হয়। তখন ট্রলারে করে শরণখোলা চলে যাই। ওখানে ঝুমুর আছে। সারাক্ষণ পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে থাকে। নাচ জানে। আমি গেলে ঝুমুর আর কোনো কাস্টমার নেবে না। অন্য কাস্টমার দেখলে আমার গোঙানী রূপসার ঢেউয়ের লাহান দোল খায়,ঝুমুর জানে সেটা।

বাবা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করতো। রেয়ান্দা গ্রামে সবাই এক নামে চেনে। নূরালী বাওয়ালী। সাতক্ষীরায় আমার দাদার বাড়ি। কিন্তু দাদা মারা গেলে বাবাকে চাচারা কোনো জায়গা সম্পত্তি দেয়নি। বিপদ দেখে বাবা এই রেয়ান্দাতে এসে আশ্রয় নেয়। আমি তখন মায়ের পেটে।

গ্রামের কাউকে বাঘে খেয়ে ফেললে পুরো পরিবারকে পথে নেমে যেতে হয়,সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো স্বামীকে বাঘে খেলে বউকে অপয়া ঘোষনা করে সমাজ। এক ঘরে করে দেয়া হয়। বাণের পানির লাহান অভাব আয় আয় তৈ তৈ করে গোলপাতার ঘরে ঢোকে।

আমার মা সারাদিন আহাজারী করে। খেতে পাই না। আমাকে সারাদিন খিস্তি গালিগালাজ করে। অভাব সুনসান হরতাল টাইপ আমাদের একলা ঘরে ফোঁড়ার মতো জেগে থাকে। শালার ব্যাথা আছে, পুঁজ নেই। শেষমেষ মা শরণখোলায় এক ঠিকাদারের বাড়ি কাজ নেয়। ফুটফরমাস খাটার। বছরখানেক এরকম চলতে থাকে। একদিন অনেক রাতে মায়ের মরণ চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দখি মা উঠানে রক্ত বমি করছে। লোকজন আসার আগেই মা’র জীবন আউট। মরে ঠুস।

লোকজন বলছিল শরনখোলায় ঠিকাদারের বাড়ি কাজ করতে করতে গর্ভবতী হয় মা। সংসারে নতুন অতিথি আসবে বাবা ছাড়া, মা এটা মেনে নিতে পারছিল না। গর্ভ খালাস করার জন্য কোন এক কবিরাজের কাছ থেকে কি এক ঔষধ খেয়ে এই রক্তবমি। তারপর আর কি ? খোদা হাফেজ শরণখোলা, খোদা হাফেজ রায়েন্দা, খোদা হাফেজ সুন্দরবন।

চুরি করতে তখনই শিখে যাই। রোজগার খারাপ না । চুরি করি আর ঝুমুরের সাথে রসের সেলাই কল খেলি। ঝুমুরকে এনজিও এর এক আপা কনডম দিয়ে যেতো। আমাকে ঝুমুর ওসব ব্যবহার করতে বললে আমি হেসে দিতাম। বলতাম ; গোসল করব রেইনকোট পরে? পারব না রে রসের বাইদানী । আরেকদিন রাবার পরবানি,আজ না। দিন খারাপ যায় না। এর মধ্যে একদল ডাকাতের সাথে খাতির হয়ে যায়। ওরা সুন্দরবনের ভিতর ট্রলার নৌকা ইত্যাদিতে ডাকাতি করে। মাঝে মধ্যে ডাকাতি শেষে লোকজনকে রামদা দিয়ে কেটে টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। আমাকে ওদের পছন্দ হয়ে যায়।

আজকে আমার ডাকাতি করবার পয়লা দিন। খাকি রঙের প্যান্ট, পায়ে কেডস, মুখে মৌমাছি থেকে বাঁচার জন্য জালি জালি মুখোশ, গলায় মাফলার শরীরে কয়েক জায়গায় তারপিন তেল মেখে ছোট্ট খালটার পাশে বসে আছি। মশা চারপাশে ভনভন করছে। দূরে নানা রকমের ডাক।

আমার বাম হাতে শক্তি বেশি বলে শক্ত করে ধরে রেখেছি ইয়াব্বড় এক রামদা। আহ শিহরণ লাগছে। খবর আছে যে আজ এই পথে কয়েকজন বিদেশী যাবে। ডলার মালদার পার্টি। অপেক্ষায় আছি আমাদের দল। বর্ষার কইয়ের মতো খলবলে জোয়ার নদীতে, শরীরে। আহ! ঝুমুর তুমি কোন হানি ? অন্ধকার নামতে থাকে দোয়াতের কালির মতো কুচকুচে। ঝুমুর গাঙের ঢেউয়ের লাহান আমার সামনে খুলে ফেলতে থাকে সব। ওরে ঝুমুর রে আয় ডুবে যাই যমুনা; হুমহুম করে ওঠে অভ্যস্ত গতর... আহ!

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড