বদরে মুনীর
কাটা-শ্বাসনালী থেকে বেরুনো বাতাস এসে ঝাপটা মারছে ছুরির গায়ে; সেই ফাঁকে, সেই প্রাণের ঘর্ঘরে, বায়ুপ্রবাহের অপচয় রোধকল্পে, সম্ভবত – খিঁচে উঠছে পরাস্ত শরীর।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, অসংখ্য রঙিন বেলুন শব্দবুদ্ধাদের মতো উড়ে উড়ে ফেটে পড়ছে অনিবার্য অর্থহীনতায়।
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, লেগে-থাকা রক্তের উপরিতল শুকিয়ে মসৃণ, ম্যাট-লেমিনেটেড!
সামনে ছিল নীলাকাশ, একটু আগেও, শাদা মেঘ, কালো-কালো পাখি… অকস্মাৎ বিস্তীর্ণ হলুদ! যেন দুনিয়ার সব শস্যখেত আকাশে উঠেছে।
আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি, এ-বাতাস নেহাত বাতাস নয়; খাঁটি বাংলা, আ মরণ, এ যে সমীরণ!
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, অন্তরা স্টুডিও পাশে রেখে ক্লান্ত প্রবীণার মতো গোরস্তানমুখি পাকা-গলি, একতলা বাড়ি, জাল-দেয়া জানলা ছোট্ট একটা ছাদ, লোহার মই দিয়া ছাদে ওঠা যেত…
তখন, সবে কলেজের মেয়েরা, ব্যাঙাচির লেজ খসে পড়েছে কেবল! এমন রঙিন, বিবেচনাহীন দিন, রাত্রি… অসংকোচ এমন মহান! রিকশায় উঠলেই মনে হত বাঁপাশে প্রাণ নিয়ে স্বর্গে উড়ে যাচ্ছি, একবার হাত ধরলে, সারাদিন আর কিছুই ধরা যেত না!
সেই অধরা দিনের ছবি আমি ফের দেখতে পাচ্ছি, একজোড়া মাধুর্যহীন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হাঁটুর নিচে দ্বিখণ্ডিত হ’তে হ’তে আমি যেন শুনতে পাচ্ছি কারও ফিসফিস, কারও বিহ্বল, ছলছল জল:
‘রাত্রে যাওয়া হবে না, ট্রেন থাকুক… কথা শোনা লাগে… কী কুয়াশা… দিন-দিন বয়স তো কমছে না! আমি কিন্তু ঝামেলা বাঁধাবো…’ ‘মামি শুনবে!’ ‘না, আম্মা ঘুমাচ্ছে; আপনাকে একবার তুমি বলি?’
আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, কাটা-বন্দুকের বেকার কার্টিজের মতো ভ্রান্ত নিশানায় ধেয়ে যাচ্ছে আমার প্রায়-কবন্ধ দেহের উচ্চারণচেষ্টা সমুদয়;
আমি যেন শুনতে পাচ্ছি, মানুষের চিরায়ত আর্তচিৎকারের মতো, হাত-চাপা গোঙানির মতো, কাটা-শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস বেরুচ্ছে; ধ্বনি হচ্ছে, কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড