• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : অবদমনগুলি

  সঞ্জীব চৌধুরী

০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:১৮
গল্প
ছবি : প্রতীকী

আগুন আর বাতাস তাঁকে তৈরি করেছিলো। তিনি, ক্লিওপেট্রা, শুভ্র সুডৌল, অবস্থান্তরে ঈষৎ লাল – যখন সূর্য ওঠে। তিনি ঋজু এবং সাবলীল হাঁস। জল তাঁকে স্পর্শ করে না, কাদা তাকে কলঙ্কিত করে না। যখন জনতার স্রোতে তিনি হাঁটেন, তখন চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হন। লোহা, ইস্পাত, আলপিন ঐতিহাসিক নিয়তির কারণে তার শরীরে আছড়ে পড়ে। বস্তুগুলি লেপ্টে থাকে। তিনি সচেতন এবং কোনো কিছুই তাঁকে বিচলিত করে না। উদাসীন তিনি, অথবা নন। বোঝা যায়, অথবা একেবারেই দুর্বোধ্য। তবু বৃষ্টিতে চিক্কণ। আর কদাচিৎ বলেন, ‘একদিন বিচ্ছিরি রকম মোটা হয়ে যাবো।’

‘মোটা হবেন কেন?’

‘আমার মা মোটা। আমার বাবা মোটা। আমার বাবার বাবা মোটা। বংশের মধ্যে মোটার একটা ধাঁচ আছে তো !’

‘ও।’

মাগো, যদি ধুমসি হয়ে যাই!’

‘বয়স কত হলো?’

‘এই…চব্বিশ-টব্বিশ।’

‘তাহলে মোটা হওয়ার রিস্ক আর নাই।’

‘একথা কেন বললেন?’

‘সান্ত্বনা দিলাম আর কি!’

অতঃপর তিনি ঠোঁট ফোলালেন। আর আমিও এতে করে যারপরনাই ফুলে উঠলাম। আমার স্বাস্থ্য ভালো হলো। খিদেও বেড়ে গেলো। সকাল বিকাল দুপুর-সারাক্ষণই খাই খাই করতে লাগলাম। প্লেটের পর প্লেট ভাত উজাড় করে দিতে থাকলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে রহস্যময় হাসি হাসেন। বলেন, ‘আপনার খিদে কিন্তু কমছে না’ – মুখের কথা কেড়ে নেয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করি না, বলি, ‘বরং বাড়বেই।’

‘আমি কিন্তু এর মধ্যে একটুও মোটা হই নি। গত দু’মাসে এক কেজি ওজনও বাড়ে নি।’

রিকশায় চলতে চলতে দু’জনের গায়ে বাতাস লাগে। তাঁর শরীর কি উষ্ণ! উষ্ণতা শোষণ করি চোখ বুজে। আমার আবারও খিদে পায়। আগুনের হলকা লাগে গায়ে। ফোস্কা পড়ে। আর তখনই তিনি রিকশাটা থামিয়ে দেন। বলেন, ‘আমি এখানেই নামবো।’ তখন অযথাই মন খারাপ হয়। অযথাই বুকপকেটে আর্তনাদ করে ওঠে লোহা, ইস্পাত, আলপিন…বলি, ‘আমিও কি নামবো?’ তিনি তাঁর উষ্ণ হাত নাড়েন। বাতাসে তরঙ্গ ওঠে। রোদের আঁচ লাগে। আমার স্মরণ হয়, তিনি আগুন আর বাতাস দিয়ে তৈরি।

তিনি, ক্লিওপেট্রা, অবস্থান্তরে ঈষ্ণৎ লাল। কিন্তু তাঁর হাত নাড়ার প্রকৃত অর্থ আমি অনুবাদ করতে পারি না। নামবো, না চলে যাবো – এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই তিনি চোখের আড়াল হয়ে যান। তিনি এরকমই। আমিও এরকমই।

রিকশাওলা মাথা চুলকায়, ‘এখন তাইলে কই যামু?’

‘গলির মোড়ে ভাই ভাই রেস্টুরেন্টে যান গিয়া।’

এত খিদেই আমার পেয়েছিলো যে কিছুক্ষণ পর হোটেল বয় এসে জানালো, ‘স্যার, কাঁচামরিচ আর লবণ ছাড়া সব কিছু শ্যাষ হইয়া গ্যাছে।’

আর এই কথা ক্রমে রাষ্ট্র হলো। ঢাকা শহরের সকল বন্ধু-বান্ধব কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটনাটা জেনে গেলো। কেমন করে-সেটা অবশ্য এখনো আমার কাছে রহস্য। কেউ কেউ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্নও করেছে। জানতে চেয়েছে, ‘কয় পিস মাংস খাইলি?’ নিজে উত্তর দেয়ার আগেই অন্যজন গলা বাড়ায়, ‘মোট চৌষট্টি পিস।’

আমি নিজেও কম অবাক হই না। এসব কী হচ্ছে? এসব গুজব না সত্যি? বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। যখন গায়ে বাতাস লাগে আর আগুনের হলকা টের পাই এবং যখন স্মরণ হয় আমার ঐতিহাসিক নিয়তির কথা, আমি পুনরায় ক্ষুধার্ত হয়ে উঠি। বড়ো সাধ জাগে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড