• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জিয়াউর রহমানের পাঁচটি কবিতা

  জিয়াউর রহমান

০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৬
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

এ শহর মানুষের নয়

মেকাপের প্রলেপে আচ্ছাদিত আজব এ নগর কৃত্রিমতায় মানবীয় গুণাবলীর নির্লজ্জ বিসর্জন, চেয়ে দেখি আর নিজেকে ভেঙে ফেলি বারবার। কাক হয়ে ময়ূরের পুচ্ছ লাগানোর নির্লিপ্ত প্রয়াস, কনক্রিটের আড়ালে মজলুমের গুমরে কাঁদা কষ্ট, জীবিকার্জনে মানবতাহীন নিকৃষ্ট পন্থার বেসাতি দেখে নিজেই নিজের কাছে শিউরে উঠি শতবার! আধুনিকতা তুমি আমার নও, এ নগর তুমিও।

সেলুলয়েড ফিতার আবক্ষে গা ভাসানো উষ্ণতা, বৃদ্ধাশ্রমে জন্মদাতার শেষ সময়ের করুণ আর্তি রঙিন জীবনের মানসে নারী পুরুষের অবাধ নষ্টামি দেখতে চাইনি আমি, তবুও দেখতে হয়। মদ নারীতে মত্ত তথাকথিত সুশীলের সুশীলতা ধর্মের নামে অধর্মে সয়লাব বিশ্বাসের বাতিঘর ঠকানোর প্রতিযোগিতায় দস্যিপনা! সামাজিকতার বিষবাষ্পে ভারাক্রান্ত মনুষ্যত্ব! আধুনিকতা তুমি আমার নও, এ নগর তুমিও।

ঘৃণ্য অপরাধীর তৈল মর্দনে বীরের আসন কলঙ্কিত জ্ঞানীর কাঁধে বোঝা তুলে দুরাচারীর ছলচাতুরী, কাক শকুন অপেক্ষা তুচ্ছতাচ্ছিল্য জীবনের দাম! জ্ঞাত অজ্ঞাত লাশের সারিতে নির্বাক জনগণ, এমনি চলে সকাল থেকে রাত, তারপর সকাল। এ শহর মানবতাহীন, এ শহর মানুষের নয়, আধুনিকতা তুমি আমার নও, এ নগর তুমিও।

দ্বৈত

ঘরের মাঝে ঘর আমার বাহির করেছে পর পথের মাঝে হারানো পথে কেউ দিল না বর।

ভাবনার মাঝে কান্না এখন বোবা চোখের দৃষ্টি অষ্ট প্রহর সঙ্গী আমার ঝাপসা চোখের বৃষ্টি।

সকাল দুপুর রাত্রি কাঁদায় বিরহে বুকটা জ্বলে মনের ভিতর মন বেঁধেছি আপন হৃদয় বলে!

সুখ খুঁজি আমি জগৎমাঝে হৃদয় রয়েছে বন্দী সুখের দরজা খোলার জন্য করতে পারিনি সন্ধি।

মনের আগুন পোড়ায় এখন মনকে রেখে বেঁধে কি দোষ দেব তারে আমি হৃদয় দিয়েছি সেধে।

আমার মাঝে আমি একা হৃদয়ে দ্বৈত বাস হা-হুতাশে আমিও একদিন সত্যিই হবো লাশ।

বিভীষিকা

স্বপ্ন জীবন রঙিন করে গতি আনে মনে ভাঙা হৃদয়ের জীবন মরে বড় বেদনার সনে। যে জীবনে আঁধার এসে স্বপ্ন কেঁড়ে নেয়, সে জীবনে কোন মন্ত্র বাঁচার তাগিদ দেয়?

স্বপ্ন গুলো রঙিন হয়না বৈরী বাতাস বহে দুখের নদী কষ্ট দিয়ে সুখের কথা কহে। আশার ভেলা হঠাৎ এসে দূরে মিলিয়ে যায়, সুনামিতে যে প্রেম পড়ে কেমনে তারে ধায়?

অনেক দাগা বুকের মাঝে জ্বলে দিবানিশি ভালোবাসা কবর দিয়ে হবো কি মুনিঋষি? ভাবনাগুলোয় মরচে পড়ে হতাশ করে দেয় আশাহীন মানব জীবন পূর্ণতা কেঁড়ে নেয়।

স্বপ্ন দেখা কঠিন অতি সবাই কি আর দেখে, স্বপ্ন জয়ের সফল গাঁথা ইতিহাসে লেখে। সুখের স্বপ্ন দেখে যারা জীবন যৌবন ধরে কষ্ট ছাড়া সুখ আসেনা দেখছি জনম ভরে।

স্বপ্ন কখনো ধ্বংস হয়না চুপসে পড়ে মনে সময়ের সাথে যুদ্ধ করে আসে ধনে জনে। স্বপ্ন পূরণ করার তরে সাহস রাখে যে জন, কার এমন সাধ্যি বলো ভাঙতে পারে সে পণ?

ভালোবাসার উল্টো পিঠ

ভালোবাসা চাঁদ আর ভালোবাসা ফুল এই দুই চিনতে করেনা কেউ ভুল। রাতে চাঁদ আলো দেয় ফুল দেয় গন্ধ ফুল আর চাঁদ হীনে ধরা লাগে মন্দ।

প্রেমহীন প্রেমিকের ব্যর্থতা ক্ষণিকের বেদনা ভুলতে প্রয়োজন টনিকের। প্রেমে সুখ ধরা দেয় জীবন হয় পূর্ণ ছাঁকা বিষ হৃদয়কে করে দেয় চূর্ণ।

উদাসীন মনটা কেড়ে নেয় প্রাণটা সর্বদা ভয়ে থাকি গেল বুঝি জানটা। যাযাবর নাই ঘর আছে শুধু দেহ তার দেহ'তে কি হবে প্রাণপাখী গেছে যার?

মধু কথার মুখখান কাজে তে আধখান হৃদয়কে ভেঙে দিয়ে করে দেয় খানখান। লোভ থাকে যার মনে থাকুক না বহু জনে পাশ ফিরে চলে যাও দেখো না তার ধনে।

প্রেমেতে জ্বালা আছে বেদনার বলী আছে মন বুঝে ভালোবেসে থাকেনা কেউ কাছে। তিল থেকে তাল হয় প্রেমিকের গা সয় শুদ্ধ প্রেম কখনো হয়নি তো আজও ক্ষয়।

স্বাধীনতার সন্ধানে

ঘুমটা ভেঙে গেল অস্পর্শী শব্দের দ্যোতনায় চারপাশে সুনসান নীরবতার মাঝেও বিহ্বলতা মনের খাঁচায় আলপিন ফুটিয়ে চলেছে তৃতীয় নয়ন, পালা এ জগত থেকে, দূরে পালিয়ে যা! বিছানা থেকে পা ফেলেছি মাত্র, স্টেনগানের মুহুর্মুহু শব্দে প্রকম্পিত চারপাশ! আর্তচিৎকারের বিভীষিকাময় আহাজারি, দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো পাশের বাড়ীটা, মানুষ গরু ছাগল পুড়তে থাকা গগনবিদারী চিৎকার, বাতাসে কাঁচা মাংস পোড়ার গন্ধ! ওরা ধরে নিয়ে গেল আরেক সূর্য সন্তান! আমি নপুংসক এর ন্যায় আবার শুয়ে পড়লাম।

কাল রাতের শেষ হয়েছে পূর্বাকাশের আলোয়, স্বীয় সত্ত্বাকে পরিপক্ব করেছি স্বাধীন ভূখণ্ডে বসে বিদেশী তাঁবেদারি নেই, স্বজাতের শাসনে সোনার বাংলা! আবার এলো বিভীষিকাময় কালরাত, বাঙলার মাটি কেঁদে উঠলো আরেকবার! গঙ্গা যমুনায় অনেক জল গড়ে গেল। স্বদেশী শাসন শোষণের রাহুগ্রাসে ম্রিয়মাণ স্বাধীনতা পশ্চাৎদেশে কালশিটে পতাকা এঁকে দিল। আমি নিশ্চুপ হলাম নপুংসক বলে!

ঘুমাতে পারিনা আর, সেই যে ঘুম ভাঙলো! প্রতিরাত বয়ে আনে বিভীষিকাময় ভয়ার্ত কালরাত, গুম খুনের মহোৎসবে লালায়িত হায়েনা, প্রতিনিয়ত বিষ নিঃশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে আসে স্টেনগানের জ্বলন্ত ব্যারেল লাল সবুজ পতাকার বুকে। আমি বজ্রকন্ঠে প্রতিবাদ করতে পারিনা, স্বাধীন হয়েও বলতে পারিনা 'খামোশ'! অনাচার থামাও, স্বাধিকার ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি যে বীরের ঘরে নপুংসক!

স্বাধীনতা, তুমি কবে আসবে বলো তো? কবে নপুংসকটার বেড়াজাল থেকে নিয়ে যাবে আমায়, আমি শহীদ বীরের মতো অনাচার রুখতে চাই! তোমাকে ভালোবাসার প্রতিদানে খাদক হতে চাইনা। পদ পদবী চাইনা আমার, শুধু অধিকার ফিরিয়ে দাও। আমি মুক্তি চাই, শিকলে বাঁধা স্বাধীনতা নয়, স্বাধিকারের স্বাধীনতা চাই।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড