নাসিম আহমদ লস্কর
শিশুদের মনে আনন্দ জাগিয়ে তোলাই শিশুতোষ রচনার উদ্দেশ্য। নিষ্পাপ, নাবালক শিশুদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার আলোকে আলোকিত করা, জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়াই শিশুতোষ রচনার অন্যতম লক্ষ্য। একটি শিশু যখন খাওয়াদাওয়া করেনা, ঠিকমতো ঘুমোয় না তখন মা তাকে শিশুতোষ ছড়া শুনিয়ে খাওয়ানো ও ঘুমপাড়ানোর কাজটা সেরে নেন। মূলত, শিশুতোষ ছড়াগুলো শিশুদের বিমল আনন্দ দেয়। বলা যায় যে, শিশুতোষ লেখকরা মায়ের দায়িত্ব পালন করেন।
ছড়াকার এমদাদ আলী একজন শিশুতোষ লেখক। তাঁর রচিত বেশিরভাগ ছড়াই শিশুবিষয়ক। স্বভাবগতভাবেই তিনি একজন শিশুপ্রেমিক। শিশুদের নিয়ে লিখতে তিনি ভালোবাসেন। তরুণ এই লেখকের লেখা শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ ‘ম্যাজিক মামা’ ২১ শে বইমেলা ২০১৮ তে সিলেটের ‘পায়রা প্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক: সিদ্দিকুর রহমান। ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটিতে মোট ১২ টি ছড়া প্রকাশিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি ছড়া নিয়ে আলোচনা করা হলো-
শিশুদের মাঝে নেই কোন ক্লান্তি। তারা জগতকে দেখতে চায়, অজানাকে জানতে চায়। তাই তাঁরা সবসময় নানা কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকে। কখন কি করবে না করবে এমন ভয়ে মা বাবা সবসময় তাঁদের পিছু লেগে থাকে। দেখা আর জানার আগ্রহ থেকেই মূলত তাঁদের এমন চঞ্চলতা। ‘ক্লান্তি নেই’ ছড়ায় এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
‘বয়স হবে চার কী পাঁচ পিচ্চি আকিদে’র, এক মিনিটের জন্যও নাই ক্লান্তি বাকিদের। সূর্য উঠার আগেই সে জেগে উঠে নাচে, ভোর হয়েছে সবাই ওঠো চেঁচায় কানের কাছে।’
শিশুদের কাছে শীতের পিঠা বেশ একটা লোভনীয় খাদ্য। পিঠার ঘ্রাণে তাঁদের মন কাড়ে; আনন্দে তাঁরা নেচে উঠে মা-দাদিরা যখন পিঠা বানানোর কথা বলে। শিশুমনের এ আনন্দের কথাই ফুটে উঠেছে ‘শীতের পিঠা’ ছড়ায়।
‘শীতের দিন বিকেলে মা করছে পিঠা দাদি আছে পাশে বসে এবং যে দি’টা।
পিঠার ঘ্রাণ বাতাসে মনটা যে কাড়ছে আর কতক্ষণ বলো মা পেটটা যে পুড়ছে।’
মামা পৃথিবীর এক মধুর সম্পর্কের নাম। ভাগ্নে ভাগ্নিদের সাথে মামাদের থাকে মধুর সম্পর্ক। মামাদের কাছে যা চাওয়া হয় তাঁর সবই পাওয়া যায়। বাবা মায়েরা কখনো অনেক সময় সন্তানের আবদার পূরণ করেন না। কিন্তু মামারা সবসময় তাঁদের ভাগ্নে ভাগ্নিদের আবদার পূরণ করেন। ‘মামা’ নামক চিরমধুর চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে ‘ম্যাজিক মামা’ ছড়ায়। ‘মামা আমার জগৎসেরা কিনে দেয় ওয়েফার। আদর করে এত্তোখানি এমন আছে আর কার? -- অঙ্কে আমি ভীষণ কাঁচা মামা করে দেয় সমাধান আমার মামা ম্যাজিক মামা তাঁর মাথায় অনেক জ্ঞান।’
ছোট ছেলেমেয়েরা খেলতে ভালোবাসে। গৎবাঁধা জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাঁদের অনেক কষ্ট হয়। তাইতো তাঁরা স্কুলে যেতে চায়না। কারণ ওখানে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করতে হয়। উড়ুউড়ু মন এসব বাঁধাধরা মানতে নারাজ। শিশুদের এসব উড়ুউড়ু ভাবনার কথা ফুটে উঠেছে ‘দুষ্টু খোকা’ ছড়ায়।
‘খোকন সোনা ইস্কুলেতে চায়না যেতে রোজ, নানা বায়না মিটিয়েও তাঁর যায় না দেয়া বুঝ।
হাজার শর্তে ইস্কুলেতে যেতে রাজি হয়, বিকেল বেলা খেলার মাঠে মারে ধুম ছয়।’
শিশুরা গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্পই যেন তাঁদের প্রাণ। গল্পের মাধ্যমে তাঁরা আনন্দ লাভ করে। ছড়াকার তাঁর ‘রাজার কিচ্ছা’ ছড়ায় শিশুদের সেই আনন্দ দিতে চেয়েছেন।
‘এক যে ছিলো রাজা ছিলো দুই রানি তাঁর। দুই রানি কুস্তি করে খাওয়ায় ঘোলা পানি ধরে।
রাজার ছেলে এসে বলে কে খাওয়ালো পানি, রেগে রাজা একী বলেন বাপ রে তোর নানি!’
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। দীঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে শিশুদেরকে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো। এটা দেশপ্রেমেরও অংশ বটে। ছড়াকার তাঁর ‘একাত্তর’ নামক ছড়ায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় করণীয় কর্তব্যের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন।
‘দাদার মুখে বাবু বসে যুদ্ধের কথা শুনছে কত্তো মানুষ মরছে যে বাবু হাতে গুনছে বাংলা নিয়ে বাবু শুয়ে স্বপ্ন খুব বুনছে।
লাখো লাখো শহিদের রক্তে ভেজা এ মাটি তাঁদের স্মৃতির শপথ নিলাম আমরা সবাই হবো খাঁটি।’
শিশুতোষ ছড়া লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ছড়ায় ছড়ায় শিশুমনে জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া। এ বইটি শিশুমনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি জ্ঞানের আলোকও ছড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি শিশুমনে ইতিহাস, ঐতিহ্যের বার্তাও পৌঁছিয়ে দিয়েছে। বইটিতে শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আমি আশা করি বইটি শিশুদের হাতে হাতে পৌছে যাবে; সেই সাথে সমাদৃত হবে।
লেখক : নাসিম আহমদ লস্কর শিক্ষার্থী : বিবিএ প্রোগ্রাম ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড