মিশির হাবিব
১ আকাশ উন্মুক্ত হলেও শরীরে কখনো সূর্যের আঁচ লাগেনি মাথার ওপর দিনরাত তোমার অক্লান্ত ছায়া ছিলো ভাঙা চালের ফাঁকে অবাধ্য বৃষ্টি কোনোদিন মনে হয়নি ফোঁটা ফোঁটা শিশির ভিন্ন অন্য কিছু চালের অভাবে মায়ের অক্ষমতার জল একবারও উঁকি দিতে দেখিনি। আজ তুমিহীন ঘরের মধ্যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে কেন জানি ভীষণ অম্লযানশূণ্যতা, যেন এক আবদ্ধ জেলখানায় পড়ে থাকি বেপরোয়া মশা-মাছির মতো অভাব তিনবেলা ভনভন করে আলোর স্পর্শে গেলে বোধ হয় অসহ্য গরম নির্দ্বন্দ্ব গাছের জীবনও তো ছায়াহীন বাঁচে না কীভাবে আমি তোমার বিহনে পাড়ি দেই দ্বন্দ্বময় দীঘল জীবন?
২ পিতৃহীনদের কোনো আশা থাকতে নেই তারা কেবল আকাঙ্ক্ষার তিয়াসায় ভুগবে, দীর্ঘশ্বাসের উষ্ণতায় ঘর্মাক্ত কপাল চাপড়াবে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে, আর কতদিন এভাবে কাটবে জীবন?
পিতৃহীনদের জীবনের সব সুখ পিতার লাশের সাথে কবরে চলে যায়, আবদ্ধ চারদেয়ালে আশাগুলো আটকে থাকে তাই তাদের আর আশার মুখ দেখা হয় না।
সংসারে বাবা বেঁচে থাকলে দুর্দশা কাছে আসতে ভয় পায়, বাবার মৃত্যুতে লুকিয়ে থাকা দুর্দশা ঝাঁক বেধে উড়ে আসে মৃত্যুর আগমুহূর্ত অব্দি তারা আর পিছু ছাড়ে না।
পিতৃহীনদের জন্য পৃথিবীর সকল দুয়ার বন্ধ থাকে, খোলা থাকে কেবল একটি দুয়ার যে দুয়ার জীবন আর মৃত্যুর প্রভেদ।
৩ বাবা তুমি একবার আমার সন্তান হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসো, পিতৃত্ব কেমন,কতোটা মধুর আমি তোমার ভেতর হাজার পুত্রের বাবা হওয়ার সুখ নেবো। মায়ের গর্ভকালীন সময় থেকে আমার যত্নের কথা ভেবে সব কাজ ভালোবেসে সাধন করেছো। বিধির বিধানে বাবারা মহান হয় আর সন্তানেরা হয় স্বার্থপর, বাবাকে উপোষ রেখে নির্মম সন্তান মাছের মাথায় ক্ষুধার তৃপ্তি মেটায়, জগতের স্বার্থে পিতৃস্নেহ মাটিতে লুকিয়ে বাবার কবরের পাশে সন্তান হেঁটে যায় দাঁড়াবার সময় তার নেই। সন্তান হয়ে বাবাকে কতোটা আর বাসতে পেরেছি ভালো? জগতে সন্তান হয়ে বাবার মতো বাবাকে কতোটা আর ভালোবাসা যায়? সামান্য কদিনে পিতৃপ্রেমের সাধ কিছুই মেটেনি, কখনো মেটার কথাও নয়। বাবা তুমি একবার আমার সন্তান হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসো, পিতৃস্নেহের গৌরবে তোমার উশর রক্তে আমি পৃথিবীভর বেঁচে রইবো।
৪ বাবার মৃত্যুর পর একটি তারা দূর থেকে আমার মাথার উপর আলো ছড়ায়,
আসমানি তারাটাকে আমার বাবার চোখের মতো মনে হয়।শুনেছি, মানুষ মরে গেলে গাছ থেকে পাতা খসে পড়ে। বাবারা চলে গেলে আকাশের তারা হয়ে সন্তানের মাথায় আশীর্বাদের আলো ছড়ায়। সেই আলোয় পা টিপে টিপে আমি একা পথ চলি, ক্লান্ত হলে গাছের কোলে বসে একটু জিরাই, ডানা কোটার শব্দ শুনে পাশে দেখি, গাছের ডালে শালিক হয়ে ছায়া দেয় বাবার মতো কেউ।
৫ ধানভর্তি বস্তা মাথায় নিয়ে হাঁটার সময় একদিন ধানক্ষেতের আলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলাম, সেদিন মনে হয়েছিলে মাথায় এক বস্তা ধান বোধয় সবচে' ভারী। এরপর যখন সন্তান হয়ে পিতার লাশ কাঁধে বহন করে অন্ধকার কবরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হলো, সাত আসমান আর জমিন আমার মাথায় ভেঙে পড়েছো সমস্ত শক্তি খসিয়েও এগুতে পারছিলাম না। বিশ্বাস করুন, সন্তানের কাঁধে পিতার লাশের চেয়ে অসহ্য ভার আর কিছু নেই। সোনার মতো পিতার লাশ কাঁধে নিয়ে পা পা হেঁটেছি আর কদমে কদমে গ্রহণ করেছি মৃত্যুর বিস্বাদ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড