শারমিন আক্তার সেজ্যোতি
নেহা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই চিঠির উপর সবার আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে উঠলো। কি আছে ওই চিঠিতে? কি এমন লিখেছে নেহা ? আর কিই বা লিখতে পারে নেহা তুষারকে?
সকলের উৎসাহের মাঝে অভি বধীর হওয়ার মিথ্যে ভান করে চুপ করে আছে। পারলে তুষারকে গিলে ফেলে এখনই। নানা প্রশ্ন ওর মাথায় উঁকি দিচ্ছে কিন্তু সেসবকে পাশ কাটিয়ে ও নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
‘তবে নাহ আর তো অপেক্ষা করা যায় না’ এই বলে জোবায়ের উঠে গিয়ে তুষারের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলো।
- কিরে ব্যাটা! কতক্ষণ এক চিঠি নিয়ে বইসা থাকবি। তুই না পড়লে আমি পড়ি দেহ।
সাথেসাথে সবাই বলে উঠলো জোবায়ের জোড়ে জোড়ে পড়। অভি মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। তুষার চুপ। জোবায়ের পড়া শুরু করলো,
এই যে তুষার সাহেব, কি ব্যাপার বলুন তো? কোথায় থাকেন আপনি? সামনে তো আসেনই না। তাই চুপিসারেই দেখতে হয় আপনাকে। আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো! এটা কি আপনার ভাব, নাকি আপনি এমনই?
সে যাই হোক। আসল কথায় আসি, কথাটা শুনে আপনি অবাক হবেন জানি। আকাশ থেকে পড়বেন তাও জানি। কিন্তু আমি যে আর পাঁচটা লজ্জাবতী লতার মতো নুইয়ে পড়া মেয়ে না। সেটা আপনি কিছুটা হলেও বুঝেছেন আশা করি।
প্রথম দিন আপনাকে গায়ে পড়ে আলাপ জমানো টাইপ ছেলে ভেবেছিলাম। আমার ও বা কি দোষ। নিজের পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোট ফেলে বলেন মসজিদ এ দিয়ে দিতে। অবাক না বলেন। তখন আপনাকে নিয়ে হেসেছিলাম মনে মনে, ভেবেছিলাম আপনি আমার পিছু নেবেন আবার এবং বারবার। কিন্তু তেমনটা হলো না।
আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কিনা দেখতে গিয়ে রোজ অজান্তে আমিই আপনাকে খোঁজা শুরু করি, আর খুঁজে পেলাম এখানে। ফুপির বাসার ব্যালকনি থেকে আপনাদের আড্ডার জায়গাটা দেখা যায়। আমি সারাদিন চোখ রাখি এখানে, কখন আপনি হুট করে চলে আসেন। ব্যালকনি থেকে দেখি আপনাদের। আপনাদের ঠিক না আপনাকে। লজ্জাটা আমার বরাবরই একটু কম, তাই ফ্যালফ্যাল করে দেখি। কখনো চোখে চোখ পড়েনি যদিও কিন্তু পড়লেও আমি চোখ ফিরিয়ে নিতাম নাহ। উল্টো আমি যে শুধু একদিন না রোজই এভাবে তাকিয়ে থাকি সেটা আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম হুম।
আর ওই যে, আপনার বোকা বন্ধু অভি! বোকা না ঠিক বড্ড বোকা। আপনি তো ওনার জন্যই আমাকে একটু সাময়িক পাত্তা দিয়েছিলেন, তাই না?
তো এভাবে আপনার বোকা বন্ধুটিকে মাঝ-পথে ফেলে গেলেন। উনি একা তো আমাকে পটাতে সক্ষম না। তার জন্য ওনার আপনার সাহায্য দরকার। এটা আপনাকে বুঝতে হবে। কাউকে সাহায্য করলে পুরোপুরিই করতে হয়। নইলে হিতে বিপরীত হয়।
এই যে দেখুন আপনার কাজ টা আপনি ঠিকঠাক না করায় আমি আপনার উদার বন্ধুটির উপর মুগ্ধ হতে পারলাম না। মুগ্ধতা কাজ করলো তো কোথায়? আপনার উপর! আপনি দেখতে যে খুব আহামরি সুন্দর তা কিন্তু নাহ। তবে একটা ব্যাপার আছে আপনার মধ্যে, বেশ কাছে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো।
আর আপনার মধ্যে বশ করার এক মৌন ক্ষমতা আছে। কেউ ইচ্ছে করে কারো পোষ মানে না, পোষ মানাতে জানতে হয়। তবে আপনি আসলেই আপনার সেই ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত কিনা আমার জানা নেই। আমি মন থেকে আপনার কাছে ধরা দিতে চাই, গ্রহণ কিংবা বর্জন আপনার উপর নির্ভর। আপনি আমাকে যেভাবেই মূল্যায়ন করুন না কেন, আমি তা মাথাপেতে নেবো।
হ্যাঁ, কিংবা না উত্তর টা আজই জানাবেন। অপেক্ষা আমার পছন্দ নাহ, অপেক্ষার সময় বড্ড বড় হয়। শুনেন, আপনার বন্ধুকে বলবেন, আমি বৃষ্টিতে ভিজলে সে যতবার ছাতা নিয়ে আসবে প্রত্যেকবারই আমি ছাতাটা নেবো। কারণ কেউ সেধে পড়ে সাহায্য করতে আসলে না বলতে নেই। ওনাকে বলবেন, উনি আমাকে যা যা দিতে চান সব একেবারে পাঠিয়ে দিতে। উপহার পেতে ভালোই লাগে, মন্দ না ব্যাপার টা।
আর ওনার সেন্স অব হিউমার খুব ধোঁয়াটে। কবিতা লেখার বেশি ইচ্ছে হলে কেটে-কুটে নয় নিজেরই চেষ্টা করা উত্তম।
জোবায়ের পুরো চিঠিটা একবারে পড়ে গেলো, যেন ক্লাসের স্যার ওকে রিডিং পড়তে বলেছে। চিঠির লেখাগুলো শুনে অভি আর তুষার বাদে বাকিরা হো হো করে হেসেছে। তবে অভি কোথায়? না অভি এখানে নেই, চিঠি শেষ হওয়ার আগেই অভি চলে গেছে।
তুষার আবার শুয়ে পড়েছে। চিঠির ভিতরের লেখাগুলো যে এমন হবে সেটা তুষার ভাবতে পারেনি। মনেমনে নানারকম বহুমুখী চিন্তাভাবনা করছে তুষা। অভিকে নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই, ওই ব্যাটার মাঝেমধ্যে প্রেমে ছক্কা হাঁকানোর পূর্বেই বোল্ট আউট হওয়ারও দরকার আছে। ইচ্ছে মতো আর কতদিন প্যাভিলিয়ন এ থাকবে। কিন্তু তুষার ভাবছে অন্যটা নিয়ে, এই যে নেহা নামের মেয়েটা!
মেয়েটা আসলেই কি অদ্ভুত না। দুনিয়াতে আর ছেলে খুঁজে পেলো না, শেষমেশ আমাকে! বড় ভয়ঙ্কর মেয়েটা!
তুষার কণাকে খুঁজছে। বারবার অনলাইন যাচ্ছে কণার আশায়। ওকে আজকের এই নাস্তানাবুদ হওয়ার কথা বলতে কিন্তু কণা মেয়েটা আজ সারাদিন অনলাইন আসেনি। মনে মনে কণার উপর তুষারের অভিমান হচ্ছে। কি এমন কাজ শুনি একবার ও অনলাইন আসা গেলো নাহ। আর পরমুহূর্তেই ভাবছে আচ্ছা ও ঠিক আছে তো। সুস্থ আছে তো!
সারাটা দিন তুষার কণার অপেক্ষায়। ফোনে সামান্য নোটিফিকেশনের সাইন্ডকেও তুষার কণার ম্যাসেজ ভেবে বারবার ভুল করছে। রাত একটা হঠাৎ কণার ম্যাসেজ-
- কি ব্যাপার কেমন আছো?
তুষার সিন করে কিছুক্ষণ রেখে দিলো। এখুনি রিপ্লে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মনের মধ্যে কিছু একটা ওকে আটকে দিচ্ছে। নাহ, বন্ধুত্বে এসব থাকতে নেই। তুষার রিপ্লে দিলো।
- ভালো,সারাদিন কোথায় ছিলা? - এই তো বাসায়ই, এক্সাম না সামনে পড়তে ছিলাম। - ও আচ্ছা,খুব ভালো। - হ্যাঁ, তারপর তোমার কি অবস্থা? - ভালোই, আজকে একটা ঘটনা ঘটছে কণা। - কি? - তোমাকে বলেছিলাম না, অভি যে একটা মেয়েকে পছন্দ করে নেহা নাম। - হ্যাঁ মনে আছে, কি মেয়েটা হ্যাঁ বলে দিছে? - নাহ! - তাহলে!
তুষার কণাকে সব বললো। কণা হাসছে। তুষার লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু তাতে কি, একটা মেয়ে তুষারকে এমন চিঠি লিখেছে এটা শুনেই কণার হাসি চেপে রাখা দায়। কারণ কণা এমন না। এইতো সেদিনই প্রেমহীন থাকার শপথ নিয়েছে কণা। তাই ওর কাছে নেহা মেয়েটা বেশ অবাক করার মত। যে কিনা নিজ থেকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে কোন ছেলেকে। কিন্তু তুষার কোন উত্তর দেয়নি নেহার চিঠির। এখানে কণার ঘোর আপত্তি। - অবশ্যই তোমার উত্তর জানানো উচিত তুষার। মেয়েটা অপেক্ষা করে আছে।
নাহ, তুষার নেহাকে কিছু বলবে না। চিঠি লিখে উর জানানো, সেতো অসম্ভব। তুষার কণাকে বোঝাতে চাইলো-
- কণা, তুমি বুঝবে না, এই মেয়ে অদ্ভুত! বিচিত্র!
- মেয়েটা অনেক সুন্দর, তুমিই নিজেই বলেছো তুষার! আর স্পষ্টবাদী!
- হ্যাঁ সুন্দর, কিন্তু সৌন্দর্যতা দিয়ে প্রেম হয় না কণা।
- তো তোমার কেমন মেয়ে চাই?
- সাধারণ! যে নিজেকে অন্য আবরণে মুড়িয়ে রাখবে নাহ। মনটা হবে বইয়ের খোলা পাতার মতো যেন আমি সহজেই পড়তে পারি। বিশ্বাস করো কণা,আমি চাই না আমার বউ অহেতুক সুন্দর হোক। কিংবা অনেক আধুনিক হোক। ও হোক কালো কিংবা শ্যামলা কিংবা সাদামাটা শুধু আমার হলেই হবে। - বাব বাহ! তুষার তুমি তো দেখছি বেশ ব্যাকডেটেট চিন্তা ভাবনা করছো। - হ্যাঁ হতে পারে, কিন্তু আমি সাধারণ কাউকেই ভালবাসবো কণা, দুজনের একটা হাসি কান্নার ছোট্ট ঘর হবে,ওর রাগে ঘর আমাবস্যায় ভরবে আর অভিমানে নামবে জ্যোৎস্না!আমার ভালোবাসায় সে হবে অসাধারণ, অনন্য!
- তোমার বউ যদি খুব কালো হয়,মুটি হয়,বিশ্রী হয় টাকলা হয় তখন? - অতিরঞ্জিত করছো কেনো? চামড়ার রঙ্গে ভালোলাগা, ভালোবাসাকে বাধা যায় কি? - জানি না ঠিক! তবে ছেলেরা নিজেদের ঘরে একটা সুন্দর, মিষ্টি বউ আনারই স্বপ্ন দেখে!তুষার । - হবে হয়তো কিন্তু শুধু রঙিন হওয়াই সুন্দর না, সুন্দর হতে অন্য কিছু লাগে! - কি লাগে? - ছাড়ো এসব,তোমার পরীক্ষা কবে? - এইতো তিন মাস পড়ে! ও তুষার দুই তিন দিন পর থেকে আমি আর ফেসবুকেতে আসবো না! সময় নষ্ট, পড়াশুনা করতে হবে মনদিয়ে! - একেবারেই আসবে নাহ? - নাহ! পরীক্ষা শেষে আবার আসবো। - ঠিক আছে।আচ্ছা কণা তোমার কোন ছবি নেই ফেসবুকে! - আছে গ্রুপ ছবি। - শুধু গ্রুপ ছবি কেনো? - এমনি, আমার ভালো লাগে না । - তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে হয় কণা,একটা ছবি প্রোফাইল পিক দাও জাস্ট কিছুসময়ের জন্য,আবার ডিলিট করে দিও পরে। - ছবি? - তুমি না চাইলে ওকে,তেমন জরুরী নাহ! - আচ্ছা দিচ্ছি বাট কথা দাও দেখেই ডিলিট করে দেবে। - ওকে
কণা ওর একটা ছবি দিলো তুষারকে। কথা ছিলো দেখেই ডিলিট করে দিতে হবে। তুষার তাই করলো। দেখেই ডিলিট করে দিলো। এর পরে দুই দিন কণা আর ফেসবুকে আসলো না। কিন্তু তুষারের জীবনে কণা যেন গেঁথে গেছে। সেদিন কিছুক্ষণের জন্য কণার একটা ছবি দেখেছিলো তুষার। কণা খুব সাধারণ। সুন্দরী বলা যায় না। কণার দাবি কণা কালো তবে, তুষারের ধারণা শ্যামবর্ণের। ওর চেহারায় এক অদ্ভুত মায়া আছে। বড় বড় দুটো চোখ যেন তাকিয়ে ছিলো তুষার এর দিকে। সাময়িক দেখা সেই ছবিটা তুষার জীবনের মানচিত্র ভেবে বসেছে। আর সেই মানচিত্র থেকে খুঁজে খুঁজে কণার সব অপরূপ বিশেষণ বার করছে।
মানচিত্রের কোথাও কি তুষারপাত হয় না। কোথাও না। কণা কি কখনোই তুষার আচ্ছন্ন হয় না। তুষার এর অপেক্ষা প্রবল হচ্ছে, মনে প্রাণে কণার শুভাকাঙ্ক্ষী, ও চায় কণা জীবনের প্রতিটা স্বপ্নকে হাত বাড়িয়ে ছুঁক, অনুভব করুক, আর ইচ্ছে হলে রেখে দিক হাতের মাঝখানে। দিনরাত ফোন হাতে বসে থাকে তুষার। হয়র তো কখনো কণা হুট করেই একটু অনলাইন আসবে কিছু হাসির স্টিকার দিয়ে বলবে কেমন আছো তুষার?
কিন্তু কণা আসে না। এরপরেও বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। তুষার ইদানীং বেনসন এর মায়ায় আরো জড়িয়ে যাচ্ছে। বন্ধুত্বটা ওদের অযাচিত নয়। গাঢ়তার একটা অনুভব আছে। তুষার ভেবেই শান্তি পায়। অভি আর ওদের আড্ডাতে আসে না এখন। নেহা তুষারের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। ওকে না পেয়ে আরো একটা চিঠি দিয়ে গেছে জোবায়ের এর কাছে।
তুষার ও আর আগের মতো আড্ডা জমাতে পারে না, ও এখন শুধু শ্রোতা-দর্শক। সন্ধ্যায় জোবায়ের নেহার চিঠিটা তুষারকে দিলো, তুষার পকেটে রেখে দিলো। জোবায়ের ধরে নিয়েছে এই চিঠি তুষার এর আর পড়া হবে নাহ। আজও সন্ধ্যা থেকে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। তুষার আর জোবায়ের মঞ্জু চাচার দোকানে বসে কড়া লিকার দিয়ে চা খাচ্ছে সাথে বেনসন।
জোবায়ের তুষার এর দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার বৃষ্টি দেখছে আর কারো অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ কণার ম্যাসেজ-
- কি ব্যাপার তুষার ভাই?
কণার ম্যাসেজ এ তুষার যতটা না খুশি হলো। রাগ তারচেয়ে বেশি হচ্ছে ওর!
- আমি তোমার ভাই হলাম কবে, কণা? - হও নাই হবা! আচ্ছা এক কাজ করো তুষার চলো আমরা ভাই-বোন হয়ে যাই। আমার কোন বড় ভাই নাই। - কিন্তু আমার অনেক বোন আছে,নতুন করে কোন বোনের দরকার নেই। - ও আচ্ছা।
কণার কথায় তুষার রেগে আছে। তুষার বরাবরই একটু রাগী নেহাত কণার উপর ও রাগ করে থাকতে চায় না। থাকতে পারে না।
- আচ্ছা তুষার বন্ধুত্বে তুমি তুমি শব্দটা বেমানান, তাই না বলো? - বেমানান কেনো হবে? - না আমার কাছে লাগে একটু,আচ্ছা চলো আমরা আজ থেকে তুই তুই করে বলি? - তুই? তোমাকে! - হ্যাঁ, তুই করে বললে বন্ধুত্বটা ফিল করা যায়, তুমি কেমন যেন লাগে! - তোমার ইচ্ছে হলে তুমি তুই করে বলতে পারো, আমি পারবো নাহ। - কেনো পারবে না? অদ্ভুত তো! - কারণ, মেয়েদের আমি তুই বলে ডাকতে অভ্যস্ত নাহ। - আচ্ছা ঠিক আছে,আমি তুই করে বলবো,তুমি তুমিই বইলো।
কণার কথাশুনে তুষার প্রতিনিয়ত বোকা হয়ে যাচ্ছে এই মেয়েটা চঞ্চল, সেকেলে সেটা তুষার জানে। কিন্তু এগুলো কেমন চঞ্চলতা। এসব একটু ভাবার আগেই কণার ম্যাসেজ-
- কিরে তুষার? কি ভাবস?
আরে কণা তো সত্যিই তুষারকে তুই বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছে!
- কণা, তুমি আমাকে সত্যিই তুই বলে ডাকবে? - হ্যাঁ, তুমিই তো পারমিশন দিয়ে দিলা,তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও ডাকো। - আমি তোমার চেয়ে ৪-৫বছরের বড়! বুঝছো? - তার মানে বলতে চাচ্ছো তুমি বুইড়া!
বলেই একের পর এক হাসির স্টিকার দিয়ে ম্যাসেঞ্জার ভাসিয়ে দিচ্ছে কণা। তুষার ভাবছে কণা সত্যিই পাগল! এই হাসি এই কান্না আর এই চুপ! বোঝা দায় ওকে। কিন্তু মাঝেমাঝে কণা বড় অদ্ভুত ফাজলামি করে।
- কি ব্যাপার তুষার, এতো কি ভাবস? - আবার! তুই বললা? - হ্যাঁ, বলবো, আমার যখন ইচ্ছে বলবো তোর কি?
নাহ কণার মাথায় ভুত চেপেছে। ডাকুক তুই বলে! ওর যা ইচ্ছে তাই বলুক! কণার সব অবাধ্যতা তুষারের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। এত বেশি প্রশ্রয় তুষার কখনো কাউকে দেয় নি।
- আচ্ছা তুষার কি করো, টানবাবা কই? - টানবাবা আবার কি? - টানবাবাও চিনো না! টানবাবা মানে বেনসন! শুকটান! - শুকটান! - হু, সুখের টান তাই এটার নাম হবে শুকটান!
তুষার হাসছে, কণার আর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাম দেওয়া! ও সবকিছুর ই একাধিক নাম দেয়! যখন যা মনে পরে! যেমন কণা প্রায়ই তুষার কে কানাবাবা বলে ডাকে! কারণ তুষারের প্রিয় সানগ্লাস কালো!
- তুষার, সিগারেট কেনো খাও? - এমনি,আগে খেতাম না,বন্ধুরা সবাই খায়,ওদের থেকে দুই এক টান দিতে দিতে এখন নিজেও একটু আধটু খাই। - একটু আধটু! মিথ্যুক। - আরে না আমি চেইন স্মোকার না,মুডের উপর স্পোকার! - কি বিশ্রী গন্ধ সিগারেট এর! - না না,বেশি খারাপ নাহ। - চুপ করো,যারা খায় তাদের কাছে অমৃত ই লাগে। - হে হে,তাও ঠিক। - তুষার আমার সিগারেট পছন্দ না, যে ছেলে সিগারেট খাবে তাকে আমি বিয়েই করবো না। - ইস! তোমার ইচ্ছায় সব না!দেখবা তোমার জামাই দিনে ৫প্যাকেট বেনসন টানবো - কক্ষনো নাহ! - না খাইলে আমি গিয়া শিখাইয়া আসমু! - শিখালেও খাবে নাহ। - এহ,গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল,জামাইর নাই খরব আর উনি তারে এটা খেতে দেবে না তো ওটা খেতে দেবে না। তোমার জামাইর বাবা -চাচা ও খাবে দেখবা! - কি বললা? - হু, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘরে আসবে আর তোমারে পিটাবে! তখন এই তুষার হিরোর মতো গিয়ে তোমাকে বাঁচাবে।
কণা হাসছে। অদ্ভুত কথা যে শুধু কণাই বলে তা না। তুষার ও বলে। কিন্তু হঠাৎ কণা বললো,
- তুষার তুমিও আর সিগারেট খাবা না। - এহে,কেন কেন? তোমার কথায় বেনসন ছাড়ুম! আমারে কি তোমার জামাই পাইছো নাকি? - ধুর তুষার, কি সব যে বলো তুমি! তুমি কেন জামাই হবা। ইউ আর মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমার ফ্রেন্ড সিগারেট খাবে নাহ। - এহে, তাইলে প্রোফাইলে লেইক্ষা রাখো, সিগারেট খাদক পোলাপাইন নট অ্যালাউড! - উফ, বাজে বইকোনা তো। বলছি না খেতে এখন তোমার ইচ্ছা। খেলে খাও না খেলে না খাও! - আচ্ছা, আমাকে কেনো সিগারেট খেতে নিষেধ করছো? - কারণ, সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর! - ওরে বাপ, তারমানে এই তুষারের স্বাস্থ্য নিয়ে কণাও ভাবে! হায়রে তুষাররে তো দেখতাছি সবাই আদর করে! স্পেশাল তুষার! - নিজের গুণকীর্তন বন্ধ করো,যা খুশি করো। - ঠিক আছে,আজ থেকে তোমার নামে দুইটা করে বেনসন এক্সট্রা খামু। - যা যা খা! খাইয়া মর! আমি গেলাম, পড়মু।
কণা চলে গেলো। তুষার রাতজেগে রইলো। এর পরে ২মাস কেটে গেলো কণা আর ফেইসবুকে আসেনি। মাঝে একবার বলেছিলো ওর জন্য দোয়া করতে। তুষার এখনো রাতজাগে,আড্ডায় আবার তুষার মনযোগী হয়েছে। আবির এর বিয়ে ঠিক হয়েছে। খুশির খবর দিতে এসেছে। আজ পার্টি হবে, ব্যাচেলর পার্টি। তুষারকে উদ্দেশ্য করে আবির বলে উঠলো- ‘আজকা গণহারে বেনসন হবে মামু’।
তুষার মুচকি হেসে কানে হেডফোন গুজে ফুল ভলিউম এ জেমস হয়ে উঠলো। জোবায়ের বলে উঠলো, ‘তুষার বেনসন খায় না আর!’
আবির হেসে উঠে বললো, ‘কেন ওয় কি এখন বেনসন ছাইড়া বিড়ি ধরবে ঠিক করছে।’
- সে কোন এক অজ্ঞাত কারণে সিগারেট পরিত্যাগ করেছে।
বলেই জোবায়ের তুষার এর দিকে তাকালো। তুষার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
(চলবে...)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড