• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুক্তিযুদ্ধা অবলম্বনে

গল্প : অভিলাষ

  রোকেয়া রিক্তা

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৫
ছবি
ছবি : প্রতীকী

সবার অজান্তে ঘর ছেড়ে বেরল গুলশান। দেশে তাকে পৌছাতেই হবে। কিন্তু কোথায় বাংলাদেশ! কত দুরে! বিয়ের দেড় বছরে মাত্র তিন বারই দেশে এসেছে ও।

তবে অচেনা পথকে আজ মোটেও ভয় পাচ্ছে না গুলশান।ভয় পেয়েছিল স্বামীর বাড়ির চেনা মুখগুলোকে।

পাকিস্তানি পরিবারের বউ গুলশান। ছেলেবেলা থেকেই বাবার কাছে অত্যাচারী পাকিস্তানিদের নৃশংস অত্যাচারের ভয়ঙ্কর কাহিনী শুনেই বড় হয়েছে ও । ৫২তে, ৬৯ রে তাদের সে অমানুষিক অত্যাচারের ঘটনা তার মন বিষিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানিদের প্রতি। কিন্তু বিধির বিধান, সেই পাকিস্তানি পরিবারেই তার বিয়ে হলো। দাদুর কথার বলি হতে হলো তাকে। বন্ধুর নাতির সাথে নাতনির বিয়ে দিবে কথা দিয়েছিল মেহের পাটোয়ারী। সেই কথার বলি হলো গুলশান।

দেড় বছরের সংসার জীবনে খুব বেশি খারাপ ছিলনা ও। কিন্তু ক্ষমতার লোভে এত নৃশংস কেও হতে পারে,সেটা পাকিস্তানিদের খুব কাছে থেকেই ও বুঝেছে। তাদের সে জঘন্য মুখচ্ছবির সাথে সাথে বেলালের চিরচেনা নিরীহ মুখটাও ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে গুলশানের কাছে।

পাকিস্তানি মিলিটারি অফিসার বেলাল। একবারেই বাবার অনুগত পুত্র। বাবা জাভেদ আল বাশারের ক্ষমতার হাত বেশ উঁচুতেই। তেমনি তার বন্ধু রেহানে জব্বারি। ক্ষমতা লোভী দেশপুত্র এরা। বেলাল অনেকটা জিরাফের মতই নিরীহ। বেলাল পোষা শিকারি পশু। শিকারের আদেশ দিচ্ছিল বাবা ও বাবার বন্ধু মহল। বেলাল নরাধম এ বলিষ্ঠ পোষা জানোয়ারেরে মত ঝাঁপিয়ে পড়ছিল নিরীহ বাঙালীর উপর। সাথে হাজার হাজার পাকসেনা।

লড়ছে অসহায় বাঙালি। জান, মাল ইজ্জত সবই হানাদারদের কবলে ধ্বংস হচ্ছে।গুলি, বোমাবাজি, লুট, ধর্ষণ কিই না করছে এরা।বেতারের খবরগুলো সে তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে গুলশানের কাছে।

বেলাল তিনদিন, পাঁচদিন পরেই বাড়ি ফেরে। কত কাজ এখন তার। বাঙালি নারীদের একচেটিয়া ধর্ষণ, বাড়িঘর লুটপাট, আগুনজ্বলানো, গুলি, বোমাবাজি, আরো কত কি!

বন্দি পাখির মত চারদেয়ালে মাথা খুটে মরছে গুলশান। রোজকার মত আজও সন্ধ্যায় জাভেদ আল বাশারের বসার ঘরে বন্ধু মহলের আড্ডা। একেকটা জানোয়ার মনে হয় এদের। তারপরেও ঘরের বউ তাই আতিথেয়তা তাকেই করতে হয় রোজ। নাশতা নিয়ে আসতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো গুলশান। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে বৃদ্ধ রেহানে জব্বারির গলা - ‘কিয়াহে ইয়ার! ও বাঙ্গাল মুলুক মে হামারা লোগোকো ক্যাঁছে দিন গুজারতাহে? বেলাল নে কুচ বাতায়া কিয়া?’

শায়খ আহম্মদ - ‘আরে বাচ্চা কিয়া কাহেগা হাম লোগোকো! হামারা পাস তো গরমি গরমি খবর পৌঁচা ,ও খবরে সুন্নে কি বাদ তোমহারা মানমে না আফসোস আজায়ে কি কিউ হাম ইতনে জালদিছে বুঢঢা হোগায়ি! হাহ…হাহ…’

রেহানেজব্বারি - ‘ও ইয়ার মাজাকি মাত কারো, জাভেদ! তুমনে তো কুচ কাহো। হোতাহে কিয়া ওহাপে?’

কষ্টকরে হাসি থামিয়ে জাভেদ আল বাশার বললেন, ‘ও ইয়ার হামারকা আর্মি বাচ্চা ওহাপে তো নওশা কি তারা রেহতাহে। খানা, পিনা, ওরাতভি ঢের ঢের মিলতাহে’

রেহান - ‘হা হা সামঝগায়া,সামাঝগায়া,সসুরাল মে যেসা বহু কি সাথ সালি মিলতাহে,, হাসির ধমকে কথাগুলো শেষ করতে পারলেন না।’

তৃতীয় ব্যক্তি আরো খানিকটা রস যোগ করে বললেন, ‘হামলোগ ভি তো মিলিটারিমে থি, কুচ ওয়ারাত কি হিচ্ছা হামলোগও কো তো পানা চাহিয়ে, হা হাহ… ও যওবান ল্যারকি হাহ…হাহ’

গুলশান নাশতার ট্রে টা নামিয়ে বলে উঠল,তসবিগাছা রেখে কথাগুলো বলুন, খোদার গজব পড়বে তসবি হাতে এমন নোংরা আলোচনা করলে! হতভম্ব হয়ে গেলেন জাভেদ আল বাশার, এত বড় সাহস ঘরের বউ পেল কোথায়! এত গলার জোর কেন! নিজেকে সামলে নিয়েই হুঙ্কার করে উঠলেন, ‘বহু! খামোশ!’

হনহন করে গুলশান ঘরে চলে এলো। তিনজন বন্ধুই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। রেহানে জব্বারি বললেন, জাভেদ! ঘার কি দুশমন বিভসন ইসিকো ই কেহতেহে! আভি ইসে রুখো বারনা বহত দের হো যায়েগা!

বেতারের খবরটা শোনার বৃথা চেষ্টা করছে গুলশান, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না, হালকা ধাক্কা দিচ্ছে ও যদি একটু ক্লিয়ার হয়! হঠাৎ সজোরে ওর হাত থেকে রেডিও টা মেঝেতে আছড়ে কুচি কুচি করে দিল কেও। আহত ফণিনীর মত ফেছনে তাকিয়ে দেখে শ্বশুর দাড়িয়ে। সাথে রেহানে জব্বারি ও। ওর বুঝতে আর বাকি রইল না কেন এটা করলেন উনি। মৃদু হেসে বলল, একটা কথাতেই এত ভয় পেলেন আপনারা!

রোহানে জব্বারি এবার তার ভিতরের রূপটা বাইরে নিয়ে এলেন। মিলিটারিদের কিছু ধর্ষণের ছবি ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, ঘার কি বহু তুম, বহু কি তারা রাহ, বারনা ইস হালাত ভি তুমহারা নসিব মে জুড়যায়েগা!

গুলশান আর সহ্য করতে পারল না।চিৎকার করে বলে উঠল, কার ইবাদত করেন আপনারা? খোদার নাকি শয়তানের! এত বদনসিব আপনাদের! নোংরা কাফেরের দল! খোদার গজব পড়বে, আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য। কষে থাপ্পড় দিল জাবেদ আল বাশার। বাঘিনীর মত ফুঁসছে গুলশান। পেটে উপর কষে লাথি মারতেই পড়ে গেল ও। মা বলে আর্তনাদ করতেই চুলের মুঠি ধরে হেঁচকা টানে তুলে বললেন, মারণে কি পেহলে পাঙ্খা হোতায়ে! সালে বাঙ্গাল কি বীজ। ফিরছে বাঙ্গাল কি নাম মু’মে লিয়া তো মু তোড় দুংঙ্গি, ইয়াদ রাখনা।

তিন দিন ধরে নানান নোংরা কথা ও শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে পালানোর পথটাও তৈরি করে ফেলল ও। ব্যস, শুধু সূর্যটা ডোবার অপেক্ষায়। এমন সময় পরিচিত গলার ডাক। বেলাল কে দেখেই চোখ জোড়া জলে ভিজে এল ওর। সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল,কি অফিসার! কেমন কাটালে! দাদি থেকে নাতি অব্দি কেউ তবে বাদ গেলনা, না?

স্ত্রীর কটু ইঙ্গিতে সারা শরীরে যেন বিষ ছড়িয়ে পড়ল বেলালের। বলল, মু সামহাল কে গুলসান।

তুমিও মারবে নাকি? মারতে পারো, সয়ে গেছে এ কদিনে। তবে সত্যি করে বলত, এত অবিচার খোদা কতক্ষণ সইবেন! গজব পড়বেনা তোমাদের উপর! কান্নায় গলাটা আটকে ধরেছে। স্পষ্ট কথা বেরোল না। তবুও বলেগেল। তোমরা রোজ রোজ অগণিত মেয়েমানুষ ভাগে পাচ্ছ ধর্ষণের জন্যে, তেমনি কত খাবার দাবার! বাবা, রেহান আঙ্কল, আহম্মদ আঙ্কল সবাই আফসোস করে বলছিল তোমরা তাদেরও যদি কিছু মেয়ে এনে দিতে তবে…

বেলাল হাত চাপা দিয়ে ওর কথা বলা থামিয়ে দিল। চেয়ে দেখল প্রিয় স্ত্রীর গালে রক্ত জমা কালচে দাগ। একজন মিলিটারি সেনা দিনরাত অমানুষিক অত্যাচারে জর্জরিত করেছে হাজারো নিরীহ বাঙালি কে।ক্লান্ত দেহে দুর্ধর্ষ সে বীর যখন দেখল তারই গচ্ছিত সম্পত্তি তারই ঘরে নিরবে ক্ষয়ে গেছে তখনই সে অনুভব করল ব্যথাটা কোথায় আঘাত হানে। বাবার সাথে মতবিরোধ করার ক্ষমতা বেলালের নেই। খোলা আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠল, তুম তৈয়ার হো যাও, আগলি ফ্লাইট মে হামলোগ লন্ডন মে যারাহিহু।

এক হাত বেলালের দিকে তুলে মাথাটা ডানে বায়ে নাড়িয়ে কান্না ভেজা কণ্ঠে শুধু বলল, তোমার সাথে আর না, আর না বেলাল।

স্ত্রীর কথায় কান না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল বেলাল। ভাবনা শুধু যে করেই হোক রুমর কাছে ওকে রেখে আসতেই হবে। এখানে রাখা নিরাপদ নয়।

বেলাল ফেরার আগেই পালাতে হবে। অনেক দুরে পৌঁছাতে হবে। যেন ওরা নাগাল না পায়। পাগলের মত ছুটছে গুলশান।

টানা পাঁচ দিন পরে অজানা পথ তাকে পৌঁছেদিল সোনাই নদীর তীরে। প্রাণের মাতৃভূমিতে পা রাখল ও। নারী হৃদয়ের ভালোবাসাকে কবর দিয়ে দেশের সন্তান দেশে ফিরল। কত কান্না কত দুঃখ বুকে। মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদল গুলশান। সারা গায়ে কোমল মাটির শ্যামল পরশ মেখে ঘরের পথ ধরল ও। একটা গ্রাম পেরোতেই ওদের বাড়ি।

বাড়ি পৌঁছে বুকভাঙ্গা আর্তনাদে পাগল হলো ও। বাবা, মেঝকা কেও নেই! মিলিটারিদের হাতে সব শেষ। গুলশানের স্যার ফারুক স্যার। যার আন্তরিক সাহায্য নিয়েই পাকিস্তান ছেড়ে দেশে পৌঁছাতে পারল সেই ফারুক স্যার। মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেয়ার সব ঠিক করে রেখেছেন তিনি। ভোর হওয়ার আগেই তিনি ওকে মুক্তি বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। রাতটা মায়ের কছে থাকতে বড্ড মন চাইছে। ফারুক স্যার বারবার নিষেধ করলেন। কিন্তু গুলশান কিছুতেই শুনল না। মায়ের কোল ঘেঁষে শেষ বারের মত তৃপ্তির ঘুম ঘুমবে ও।

মা মমতা খানম কিছু যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছেন না। গলাটা আটকে ধরছে প্রাণের কথাগুলো। দুহাতে মায়ের মুখটা দুহাতে ধরে নিয়ে বলল, মা বেলালের কাছে আমি দুর্গের মত রক্ষিত ছিলাম। সে বাহুর বেড়ি ছেড়ে দেশে ফিরেছি ঘরের কোনে লুকোনোর জন্যে নয়। মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবো বলেই। তুমি শক্ত হও।তোমার কান্নার আওয়াজ যেন আমার কানে না পৌছায়।এই এটুকু দোয়া করো মা।

মায়ের বুকে ঘুমাচ্ছে গুলশান। অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখল ও।যেন ছোট্ট একটা বাংলাদেশ। কতশত গুলশান বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। হাজার হাজার বেলাল খামছে কেড়ে নিচ্ছে সেটা। আবার হাজারো ফারুক স্যার বেলালকে রুখছে। সবারই রক্তে লাল হচ্ছে ছোট্ট বাংলাদেশ।

হঠাৎ দরজার দুমদাম শব্দে সবার ঘুম ভাঙেগেল। ফারুক স্যারই এসেছেন হয়তো। দৌড়ে দরজা খুলেদিল গুলশান। সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে চারজন মিলিটারি বাড়ির মধ্যে ঢুকল। সবাই ভয়ে আড়ষ্ট। কারণ, এর আগেও একদিন এমনই বেশধারী এ বাড়িতে নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছিল। ওরা গুলশান কে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে চলল। বাড়িতে পুরুষ বলতে বৃদ্ধ মেহের পাটোয়ারী। বাঁধা দিতেই ওরা অশীতিপর এ বৃদ্ধ কে গুলি করল। গুলশান দৌড়ে পেছন থেকে ধাক্কা দিল সেই নরপশুকে। হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে। দাদুর লাঠিই অজানা এ যোদ্ধার হাতিয়ার। মমতা বেগম কাটারি ধরলেন। মিলিটারিদের রাইফেল থাকলেও গুলশানকে মারতে পারছেনা। কারণ রেহানে জব্বারির হুকুম একে জীবিত চাই। মায়ের থেকে কাটারি নিয়ে পাগলের মত আঘাত করতে লাগল। একজন মারা গেল। বাকিরা ওকে ধরতে গেল। দৌড়ে ঘরের দিকে গেল। আর পালানোর পথ নেই, কি করবে ও! হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ল। মায়ের বাটনা বাটার শিলটা যেন ওকে ডেকে নীল। তাই পড়ল শিলের উপর।সেটাই প্রাণপণে উঁচু করে ছিঁড়ে দিল এগিয়ে আসা জানোয়ারটার দিকে। ব্যাস শেষ। উপায় না দেখে গুলি ছুলড় এক মিলিটারি। রাখে আল্লাহ মারে কে। সঙ্গী নিষেধ না মেনে যে গুলি ছুড়বে তা বুঝতে পারেনি বাকি জন। সেই মারা গেল।পাল্টা আবার গুলিতে ধরা খেল গুলশান।

ডানহাত দিয়ে রক্ত ঝরছে অনবরত। মিলিটারি জিপে আবারও হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে তোলাহলো ওকে। এনে রাখল পাকিস্তানি কারাগারে।

তিনদিন তিনরাত বিরামহীন অমানুষিক অত্যাচারের মধ্যে ও প্রাণটা এখনও ধুকধুক করছে। পা থেকে মাথা অব্দি হিংস্র শকুনের দল খুড়ে খুড়ে খেয়েছে। মৃত্যু খুব কাছে চলে এল নির্ভীক এ বীরাঙ্গনার। না চেতন না অবচেতন এমনি সময় কাটছে।অমানুষিক শারীরিক অত্যাচারের পরেও চোখ জুড়ে সেই দুঃস্বপ্ন। ছোট্ট বাংলাদেশ, বুকে জড়িয়ে কতশত গুলশান, কেড়ে নিচ্ছে হাজারো বেলাল। ফারুক স্যারেকে রুখছে। মৃতপ্রায় গুলশানের ঠোঁটদুটো নড়ে উঠছে, নিও না বেলাল, নিও না এই কথার নৃত্যে। শব্দ বের হচ্ছে না কোনো।

ধিরপায়ে সেলের মধ্যে ঢুকল বেলাল। হাত পা সেঁকলে বাঁধা গুলশান আড়াই ফুট উঁচু চৌপায়ার উপরে মরার মত পড়ে আছে। কপালের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। হাতে পায়ে সেঁকলের বেড়ির মাপে রক্ত জমে আছে। কালচে সে দাগই বলে দিচ্ছে কত অমানুষিক অত্যাচারের ফলেই অযথা শেকল ছেড়ার চেষ্টা করেছিল অনবরত। গলার কাছে, বুকের কাছে নখের আঁচড়ের জ্বলজ্বলে রক্ত চিহ্ন বলে দিচ্ছে পরাজিতা এ বীরাঙ্গনা নিজেকে বাঁচাতে কিছুই করতে পারেনি। শেকলে বন্দি থেকেই মেনে নিয়েছে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন!

বেলালের এত আদরের গুলশান! এই হাল করেছে এরা! প্রিয় ফুলদানিটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে যেমন তার বুকে আর ফুল গুজে দেবার জায়গা হয় না। তেমনি পড়ে আছে গুলশান।

বিবেকহীন পশুর মত নিরীহ লোকগুলোর উপর অত্যাচার করে যাচ্ছিল বেলাল। কোন কষ্টই হয়নি তখন। বরং আরো উত্তেজনায় উষ্ণ হয়ে উঠছিল তাজা রক্ত দেখে। কত বাঙালি নারীর এভাবেই ধর্ষণ করে গুলি করেছে বেলাল ও তার সঙ্গীরা। তখন তো কষ্ট হয়নি। এখন বুকটা ভেঙেচুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা এমন করে ওর প্রাণের গুলশানকে শেষ করেদিয়েছে তাদের তাছে এর কৈফিয়ত নেয়ার কোনো শক্তিই ওর নেই। কি করে নিবে? সে নিজেও তো কত মেয়ের সাথে এমন করেছে। তারাও তো কারো না কারো বউ। কষ্টে দুঃখে নিজের গায়ের মাংস নিজেই টেনেছিরে শেষ হতে ইচ্ছে করছে। গুলশানের দুখানা পায়ের তলে মুখটা রেখে ডুগরে কেঁদে উঠল বেলাল। সমস্ত শরীরে শকুনের নলির আঁচড়, সবটাই ব্যথায় টনটনে। আদর করার স্থানও নেই সেখানে।

জীবন মৃত্যুর মাঝখানে গুলশান অনবরত বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাচ্ছে মাতৃভূমি। বেলাল খামছে খুড়ে কেড়ে নিচ্ছে বারবার। কারো ছোঁয়া পেয়ে সামান্য কেঁপে উঠল গুলশান। সর্বশক্তি নিয়ে চোখ মেলল একবার। ঠিক ওর মুখের উপরে ঝুঁকে আছে একটা মুখ। ঝাপসা ঝাপসা চেনা যায়না। দু'ফোটা জল টপটপ করে মুখের উপর পড়ল ওর। আবারও চাইল। হ্যাঁ, বেলালই, নিশ্চিত হলো গুলশান। কিছু যেন বলবে ও। ঠোঁটদুটো নড়ে নড়ে থেমে যাচ্ছে বারবার। দু'চোখ ভরে দেখছে বেলালের কান্নাভেজা মুখটা। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। বুকটা পুড়েছাই হচ্ছে। কিছু বলতে চেয়েও পারছেনা। একফোঁটা শব্দ বের হচ্ছে না শক্তিহীন দেহ-গহব্বর থেকে। সর্বশক্তি নিয়ে অনেকটা গোঙ্গানির একবার বলে উঠল, বাংলাদেশ কেড়ে নিও না বেলাল, বুকের মধ্যে রাখতে দাও…!

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড