তানভীর আলাদিন
কিরে মা-মণি কেমন আছিস? কখন এলি? তোর শ্বশুড়-শাশুড়ি কেমন আছে?
-ওহ্ আব্বু, এক সঙ্গে এত প্রশ্ন? ওনারা সবাই ভালোই আছে, শুধু আমি ছাড়া! - কেনরে? কি হয়েছে আমার মা-মণিটার? - আব্বু-ফুফু-ফুফা, জিসান যে আর আমার জিসান নেই! ও পুরোপুরি বদলে গেছে! - ধুর, তুই কি সব আবোল-তাবোল বকছিস।
আমার মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে শানুদি বললো, দেখ মা, কারো ইন্ধনে পড়ে কানকথা ধরে সংসারে অশান্তি ডেকে আনিস না। মনে রাখিস মা, সন্দেহ একটা কঠিন রোগ, অনেকটা ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। সন্দেহের কোনো পোকা তোর মাথায় এলে ওটা ঝেড়ে ফেলে সমস্যাকে সামনা-সামনি মোকাবেলা করতে শেখো, তোর মনে কোনো খটকা থাকলে জিসানকে প্রশ্ন কর, ও যদি তোর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়, তবে না হয়।
অশ্রু মাখা চোখে শুভ্রা বলে না ফুফু, সন্দেহ নয়, জিসান একটা আগাগোড়া মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড। সন্দেহটা ছিলো গত একবছর আগেই, তুমি যে বললে সামনা-সামনি হতে, আমি কিন্তু অনেকবার ওর মুখোমুখি হয়েছি, বরাবরই ও অনর্গল মিথ্যে বলে গেছে আমাকে! এখন সে যে পর্যায়ে নেমে গেছে, এমন একটা পঁচা মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে কোনো আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ বসবাস করতে পারে না।
আমি শুভ্রা মা-মণির মাথায় হাত বুলাতে-বুলাতে শুধালাম, মা’রে তোর কষ্টটা কি, সেটা আমাকে আর তোর ফুফু-ফুফাকে সব খুলে বল। আমারা শুনে নিশ্চয়ই এর একটা বিহিত করতে পারবো। মা’রে আমরাতো সব সময় মনে করে আসছি তুমি আর জিসান সুখে আছো, প্রতিনিয়ত দোয়াও করে এসেছি তাই।
- আব্বু, ফুফু তোমাদের দোয়া বোধহয় বিধাতা ঠিক গ্রহণ করেনি, তাইতো একটা মানুষ যাকে মনে-প্রাণে ভালোবেসে, সব উজাড় করেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবন সঙ্গী করেছি, সে কি অবলীলায় আমার সঙ্গে মিথ্যাচার করে অন্য মেয়ে মানুষ নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে!
শুভ্রা’র মুখে এমন কঠিন কথা শুনে আমি- শুনুদি আর দুলাভাই থ’বনে গেলাম। শানুদি, আমি আর দুলাভাই সবাই একে অপরের দিকে অশ্রুজল চোখে তাকালাম। আমরা শুভ্রা’র মা-মণির মুখ থেকে এমন কিছু শোনার জন্যে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না। শুভ্রা তার ফুফাকে শুধালো- আক্কেল, তুমি গতকাল পত্রিকা পড়েছো?
- কোন পত্রিকা মা? -দৈনিক ঊষার প্রভা -নারে মা, আমিতো অন্য পত্রিকা পড়ি। তা দৈনিক ঊষার প্রভা নিয়ে কি যেনো বলতে চেয়েছিলে? - ওই পত্রিকাটা বোধহয় এখানে কম চলে, মনে হয় আঞ্চলিক ভাবে ভালো চলে, না হয় স্যাপ্লিমেন্টতো বের করতো না, ওই পত্রিকাটায় গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের স্যাপ্লিমেন্ট বের করেছে। তাতে তারা দেশের বিভিন্ন স্পটে বেড়াতে যাওয়া অনেকগুলো প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির ছবি ছেপেছে। তারমধ্যে জাফলংয়ের একটা ছবিতে জিসান আর মেহিনীর জলকেলীরত একট ছবিও ছেপেছে। - তার মানে জিসান দু’সপ্তাহের ব্যাবসায়িক ট্যুরে বরিশাল যায়নি? তা মেহিনী মেয়েটা কে? - না ফুফা, বরিশাল গেলেতো আর জাফলংয়ের ছবি আসতো না, মোহিনী কোনো মেয়ে না, ওটা একটা মহিলা, ওর স্বামী ওকে ছেড়ে চলে গেছে, মহিলাটা জিসানের পিএস ছিলো। গতবছর জিসান আর মোহিনীকে নিয়ে কিছু কথা আমার কানে এলে, আমি জিসানকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম। তখন সে এমন ভান করেছে যেনো আকাশ থেকে পড়েছে। তারপর তড়িগড়ি করে এক সপ্তাহের মধ্যে সে মোহিনীকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিলো বলে জেনেছি! শুভ্রা মা-মণি তার ব্যাগ থেকে একটা দৈনিক ঊষার প্রভা পত্রিকা বের করে দিয়ে বললো, দেখো তোমারা ফুফু, এই লোকটা কি আমার সেই জিসান?
শানুদি অবিশ্বাস্য এক চাহনিতে আমতা-আমতা করেই বললো, মা মানুষের মতোতো মানুষও থাকে, আমাদের যদি দেখায় কোনো ভুল হয়?
- বলো কি ফুফু, জিসান আর মোহিনী এই দু’জনের মতো একই রকম? জানো ফুফু, আমিও মনকে এমন ধরণের প্রবোধ দিতে চেয়েছিলাম। যেহেতু পত্রিকাটি আমি গতকাল বিকেলে হাতে পেয়েছি, তাই রাতেই আমার সাংবাদিক বন্ধু সুপান্তকে জিসানের সেলফোন নম্বরটি দিয়ে তার অবস্থান জানতে চেয়েছিলাম, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় সুপান্ত জানালো নম্বরটি এখন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আছে। তখন সঙ্গে-সঙ্গে আমি জিসানকে ফোন করলাম, জিসান বললো, সে বরিশালে আছে! চার-পাঁচ দিন পরে ফিরবে। আমি শুধু তাকে বলালাম, তোমার বরিশাল বুঝি শ্রীমঙ্গলে? তারপর ফোনটি অফ করে তোমাদের কাছে চলে এলাম।
(চলবে...)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড