• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হঠাৎ পাওয়া’-এর দ্বিতীয় পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : হঠাৎ পাওয়া

  শারমিন আক্তার সেজ্যোতি

১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৩৯
উপন্যাস
ছবি : শারমিন আক্তার সেজ্যোতি

মেয়েদের কিভাবে পটানো যায়, কিভাবে ব্যক্তিত্ব ধরে রেখে একই সাথে পুরুষ এবং প্রেমিক উভয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করা যায়, প্রায়শই এ নিয়ে বন্ধুমহলের প্রেমহীন, প্রেমিকা হারানো শোকে কাতর ব্যথিতদের তুষার পরামর্শ দেয়। মনোযোগী শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপনে তুষার কখনো কার্পণ্য করে না।

অভির অনুরোধ ও ফেললো না তুষার। সে তাকে বলে, ‘মেয়ে পটানোর প্রথম ধাপ হলো তার নাম-পরিচয় জানা।’

এরপর অভিসহ সবাই মেয়ের নাম জানতে গলির মোড়ে এসে দাঁড়ালো। আয়োজনটা এমন যেন যুদ্ধে যাত্রাগামী বন্ধুকে সাহসের সাথে বিদায় জানাতেই ওদের এই জটলা। নিতান্তই কর্তব্য এবং বন্ধুপ্রীতিই ওদের সমাবেশের উদ্দেশ্য, প্রেম সেখানে তুচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ। অভির জোড় দাবি মেয়েটা এই পথ থেকেই আবার ফিরবে, তোরা শুধু আর একটু দাড়া।

সবাই উৎসুক চোখে অভির নতুন শিকার দেখার অপেক্ষায়, বেছে বেছে সব সুন্দরী মেয়েগুলোই অভির কাছে ধরা দেয়, এ যেনো কৃষ্ণহীন বৃন্দাবনে সাড়ি ধরে সুন্দরী গোপিনীদের মেলা। আর অভি বৃন্দাবনের ভারপ্রাপ্ত কৃষ্ণ।

প্রেমের শুরুতে অভি মুগ্ধতায় ডুবে থাকে, রানিং প্রেমিকার রূপের বর্ণনা দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না সে, উল্টো কয়েক ধাপ বাড়িয়ে বলে ঐশ্বরিয়া, দিপিকা কোন ছাই ওর। রূপের কাছে সব পানসে বুঝলি? নেহাত লাইট ক্যামেরার দুনিয়াতে নেই, নইলে কত কত ছেলে ওর ছবি বুকে নিয়ে শুয়ে থাকতো! কেঁদে বুক ভাসাতো। কত ছেলে ওকে ভেবে ভেবেই পাগল হতো তার ইয়াত্তা কি আছে?

তবে প্রেক্ষাপট আর প্রেমিকা উভয়ের বদলের সাথে-সাথেই যে তাদের নিয়ে লেখা বিবৃতির ও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করতে হয়, সেটা অভি বুঝে উঠতে পারে না। আর ব্রেক আপের ঠিক পরমূহুর্তেই অভি পূর্বোক্ত সব বক্তব্যকে ভুল ধারনা বলে উড়িয়ে দেয়। হঠাৎ, একটা মেয়ে আসছে দেখে অভি অস্থির হয়ে বললো, ‘ওই তো ও আসছে, ও ই তো!’

- তুষার যা না ভাই নামটা একটু জেনে আয়! যা ভাই।

বাইকে হেলান দিয়ে শুয়ে তুষার ওর কি গভীর ভাবনায় ডুবে আছে, ও অবশ্যই নাম জানতে যাবে তবে অভিকে একটু নাচাতে মন্দ লাগছে না।

অভি ব্যস্ত হয়ে উঠলো, ‘তুষার যা প্লিজ, এই শেষ বার, আর না, যা ভাই। মেয়েটা চলে যাচ্ছে!

অবশেষে তুষার বাইক নিয়ে মেয়েটার কাছেই যাচ্ছে, সবাই অধীর হয়ে ওর কেরামতি দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু না তুষার মেয়েটাকে কিছুই বললো না, পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সবার আশায় বালি দিয়ে তুষার চলে যাচ্ছে, কিন্তু হঠাৎ ই ও পিছনে ফিরে বললো, ‘এক্সকিউজ মি আপু, আপনার ব্যাগ থেকে টাকা পরেছে মনে হচ্ছে।’

মেয়েটা ঘুরে তাকানোর আগেই তুষার ওর পকেট থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বার করে মাটিতে ফেলে দিলো।

মেয়েটা তার ব্যাগ চেক করে বললো, ‘সরি ভাই, আমার টাকা না এটা।’ -ও আচ্ছা! মেয়েটা চলে যাচ্ছে এমনসময় তুষার ডেকে বললো, ‘আপু আপনি টাকাটা নিয়ে যান এই পথেই তো যাবেন সামনে মসজিদ এ দিয়ে দিয়েন।’

মেয়েটা কিছুক্ষণ ভেবে তুষারের দিকে হাতবাড়িয়ে টাকাটি নিলো।

এবার তুষার চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘বাই দা ওয়ে আপু, আপনাকে তো এলাকায় আগে কখনো দেখিনি! নতুন নাকি ‘ - হ্যাঁ, আমি ফুঁপির বাসায় বেড়াতে এসেছি। - আপনার ফুঁপির নাম? - মাজেদা বেগম, চেনেন নাকি? - না চেনার কি আছে, আমি তো এখানকারই ছেলে, আমি তুষার, আপনার ফুঁপিকে আমার নাম বলবেন আশা করি চিনবে। - ওহ আচ্ছা, জী বলবো। - ওকে আসি! সরি কি জেনো বললেন নামটা? - আমি আমার নাম বলিনি এখনো, ফুঁপির নাম বলেছি!(মৃদু হাসি দিয়ে) - ওহ আচ্ছা, সরি! - ইটস ওকে, আমি নেহা। -ওকে নেহা ভালো থাকবেন, বাই।

নাম এবং পরিচয় জানার আংশিক পর্ব শেষ, তবে জোবায়ের এর মতে মেয়েটা বোকা না, খানিকটা খটকা। একে পটানো সহজ হবে না।

অভি তৎক্ষণাৎ সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিলো। নতুন প্রেমের সূচনা পর্বে সবাইকে আংশিক ট্রিট দিলো অভি, তবে তুষার ট্রিট নেয় না। ওকে দেওয়া হলো সুস্বাদু এক প্যাকেট বেনসন। শান্তির প্যাকেট। বেনসনে তুষার এর না নেই। আজকের রাত্রের আড্ডা জমলো না, বৃষ্টি পড়ছে থেমে-থেমে। সবাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাড়ি ফিরলো তাড়াতাড়ি।

বাড়ি ফিরে তুষার জানলার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছে, সঙ্গী পকেটে থাকা শান্তির প্যাকেট। তবে তুষার বিরক্ত। যতটা না বৃষ্টি হয়েছে তার থেকে বেশি বৃষ্টি বিলাসী স্ট্যাটাস এ ফেইসবুকের হোমপেইজ আজ বন্যাপ্লাবিত। মেয়দের ছবিতে হোমপেইজ ফটোশপ এর আখড়া মনে হচ্ছে।

ছবি নিজের কিন্তু ক্যাপশন এ বৃষ্টি। অদ্ভুত সব ব্যাপার! সেসব ছবিতে কমেন্টস ও আছে ভুড়িভুড়ি, কারো সুন্দর মুখশ্রীতে কমেন্ট করার চেয়ে পূর্ববর্তী কমেন্টগুলো পড়ে বেশ আরাম লাগে তুষারের, হাসি ও পায় মেজাজও বিগড়ে যায়। একসাথে ফুল প্যাকেজ।

হঠাৎ তুষার এর চোখ পড়লো চায়ের পেয়ালা হাতে আরবি হরফে কি সব লেখা কোন এক বালিকার প্রোফাইলের উপর। আপাতদৃষ্টিতে ফেইক আইডি বলে মনে হচ্ছে। একটু ঢু মারার জন্য তুষার অপরিচিতার টাইমলাইন এ ঢুকে পড়লো। একটু আলাদা, সবকিছু! টাইমলাইন এ কোন সিঙ্গেল ছবি নেই তবে কিছু গ্রুপ ছবি আছে। অর্থাৎ আইডিটা ফেইক না।

আরবি লেখাগুলোর মর্মার্থ বোঝা ভার, তবে একে একটা ম্যাসেজ দিয়ে মর্মার্থটা জেনে নিলে মন্দ হয়না। তুষার একটা ম্যাসেজ দিয়েই দিলো, উদ্দেশ্য তেমন কিছু না। ইচ্ছে হলো এতটুকুই.....

- হে! - হাই! - নাইস টু মিট ইউ। কেমন আছেন? - ভালো! ইউ? - আলহামদুলিল্লাহ্‌! - কি করেন আপনি, আই থিংক স্ট্যাডি! - হ্যাঁ, ইন্টার ফাস্ট ইয়ার এ পড়ি, আপনি? - আমি চিটাগাং কমার্স কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করলাম, এখন এমবিএ আর এমএ করার জন্য চেষ্টা করছি। - ও আচ্ছা, বাট আমি এসব বুঝি নাহ খুব একটা।কমার্স নিয়ে আমার আইডিয়া শূন্যের ঘরে। - হা হা! এটুকু বুঝতে কমার্সে পড়ার দরকার হয় না, আচ্ছা আপনার প্রোফাইলের আরবি লেখাগুলোর অর্থ কি? - আমি জানি না আসলে, এটা আমার খুব প্রিয় একটা ছবি তাই দিয়ে রেখেছি যদিও নেট থেকেই নেওয়া। বাই দা ওয়ে তুমি করেই বলি, অনেক ছোট আপনি বয়সে! -হ্যাঁ বলতে পারেন, তবে আপনার ডাক নাম কি? - তুষার! তোমার? - জলকণা! - কী, জলকণা! - নাম কণিকা, সবাই ডাকে কণা বলে। আর আমি ডাকি জলকণা বলে। - নিজেকে নিজে ডাকো? - হ্যাঁ, মাঝেমাঝে!

ওদের চ্যাটিং চলছে, খুব সাধারণ কিছু কথাবার্তা হচ্ছে, নিজেকে জলকণা দাবি করা কণিকা নামের মেয়েটা তুষারের চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু ওর সাথে কথা বলে মজা আছে! বেশ চঞ্চল প্রকৃতির, হাসতে খুব ভালোবাসে মনে হচ্ছে, কথায় কথায় হি হি লেখে। লেখে মানে তো হাসেও। তাই না।

ভোর রাত হয়ে গেলো ওরা সাধারণ কথাবার্তা দিয়ে অসাধারণ ঘুমকে ভুলে গেলো। বেনসন এর প্যাকেটে এখনো দু’টো বেনসন তুষার এর অপেক্ষায় আছে, ঘুমের মতো করে এদেরকেও বেমালুম ভুলে আছে তুষার। কণা খুব হাসিখুশি মিশুক প্রকৃতির তবে বেশ কনজারভেটিভ মাইন্ডের, থাকে কুমিল্লা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ছে, সামনে ওর ইন্টার পরীক্ষা, বাবা মায়ের বেশ আদরের কণা, ওরা দুই বোন এক ভাই। ভাইটা ছোট, বড় বোন আর ছোট ভাইয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে কণা। এরপরে ওদের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো, কণা রাত জেগে পড়াশুনা করে, পড়াশুনার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস মেয়েটা। তুষারও রাত জাগে তবে পড়াশুনার জন্য না। এমনি, অকারণে জেগে থাকে।

ঘুমাতে একটাই কারণ লাগে ঘুম পাওয়া, তবে তুষার এর ঘুম খুব একটা পায় না তাই জেগে থাকে। কণা সারারাত ধরে ম্যাথ করে ফাঁকেফাঁকে ওদের চ্যাটিং হয়। কণার কোন ছেলে ফ্রেন্ড নেই, ও বানাতে ও চায় না। জীবন নিয়ে খুব ফিক্সড কিছু প্লান ওর, বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা আর একজন ভালো ডাক্তার হওয়াই যেন ওর জীবন, অথচ ওর বয়সী মেয়েগুলোর জীবনে এ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। ও সেসব দেখে, বুঝতে চেষ্টা করে, ভালো মন্দ যেমনি লাগুক তুষার এর সাথে শেয়ার করে।

বেশ কিছুদিন কেটে গেলো, ক্লাসমেট কিংবা সমবয়সী না হওয়া সত্ত্বেও ওদের মধ্যে বেশ বন্ধুত্বসুলভ কথাবার্তা হচ্ছে। এই যেমন কণা কেমন ছেলে পছন্দ করে, কেমন ছেলে ওর বর হবে। এসব নিয়ে কতো কথাই না হয় ওদের।

কণার মতে ও অত্যন্ত বদরাগী একটা মেয়ে তাই ওর বর হবে শান্তশিষ্ট। যেনো সিদ্ধান্তটা নিতান্তই ওর। অপরপক্ষের কোনো রায় নেই। ও প্রেম-ভালোবাসায় জড়াবে না। এসবে নাকি ফিউচার হাসবেন্ড কে ঠকানো হবে। আর হ্যাঁ, যেহেতু ও প্রেম করবে না ওর বরের ও কোন পূর্ববর্তী প্রেম থাকা যাবে নাহ।

কণার এসব ব্যাকডেটেড, বাচ্চাসুলভ কথাগুলো তুষার মন দিয়ে শোনে, তুষার কারো বাধ্য হতে শেখেনই কখনো কিন্তু কণা নামের মেয়েটা একটু বেশিই সেকেলে কথা বলে। যাতে তুষারও সাপোর্ট করে চলেছে। সাপোর্ট না করেও উপায় নেই। কণা জীবনের কতটুকুই বা দেখেছে এখনো, জীবন নিয়ে ওর ধারনা তাই সহজসরল। এখনই ওকে ধরে বেধে বাস্তবতার কঠিন জ্ঞান দিতে গেলে হিতে বিপরীত ও হতে পারে। কণা অকারণে সিরিয়াস হয়ে যেতে পারে। তুষারের সাথে মনখুলে কথা বলায়, সঙ্কোচ বোধ করতে পারে। কি দরকার সবকিছুকে এতো জটিল করার। তবে আজ তুষার বলেই ফেললো, ‘আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?’ - হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আমার থেকে বড়। - বয়সে বড় ছোট দিয়ে ফ্রেন্ডশিপ হয় না কণা, বন্ধুত্বে এসব দেখতে নেই। - হু তাও ঠিক। - তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো, আপনি শুনলে মনে হয় আমি বুড়ো হয়ে গেছি! - হা হা তো আপনিতো বুড়োই! - না সত্যি,আপনি তো একটা মুরব্বি মুরিব্বি ভাব আছে। - আমি আমার কোন ফ্রেন্ডকে তুমি বলি না,আসলে তুমি শব্দটা ফ্রেন্ডশিপ এর সাথে যায় না। তুই পারফেক্ট! - তুমি কি তাহলে আমাকে তুই তুই বলে ডাকবে ঠিক করেছো? - না তেমন না,আসলে দেখুন এর পরে যখন আমার বরকে আমি আপনার কথা বলবো তখন সে প্রথমে প্রশ্ন করবে এতো বড় একটা ছেলে তোমার ফ্রেন্ড হয় কি করে? - আমি কি তোমার থেকে অনেক বেশি বড়? - ঠিক তা না,আসলে আমরা তো ক্লাসমেট না! তাই - বলবা, ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ড! - না তা বললে কি হয়, দেখুন আমি কোথাও এক জায়গায় পড়েছি একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো ফ্রেন্ড হয় না। ফ্রেন্ডশিপটা ছুতো মাত্র! - ওসব দার্শনিক কথাবার্তা ভাই। - আর দেখুন আমি ফেসবুকে যত ফ্রেন্ডই বানিয়েছি সবাই এক পর্যায়ে সেই একই পথে হাটে! - তুমি কি আমাকেও তাদের দলে ফালাচ্ছো? - না ফেলে উপায় কি! আপনি ও তো ছেলে! - হা হা,ভয় নেই আমি কখনো তেমন কিছু বলবো না। - প্রমিজ করতে পারবেন? যে এটা শুধুই একটা ফ্রেন্ডশিপ হবে এর বেশি কখনো না। - আরে পানিয় কণা। তুষার দুনিয়ায় ওয়ান পিস। তুষার এর থেকে নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। - কিন্তু যদি কখনো বলেন তো আর ফ্রেন্ডশিপ থাকবে না। - ঠিক আছে। কিন্তু তুমি এতো ভয় পাও কেনো? - ভয় না। মানুষের মন ভাঙ্গার চেয়ে আগে বলে দেওয়াই ভালো,আমি পিওর থাকতে চাই। যেন সেই মানুষটা যে আমার জীবনে আসবে সে কখনো আমার কোন অতীত নিয়ে কষ্ট না পায়, আর আমাকে সন্দেহ না করে। - অদ্ভুত,তুমি ভাই। - হ্যাঁ, আপনিও। - আরে ভাই হ আমার ১০০০বছর বয়স,খুশি? - হা হা। - হাসে আবার? - তো কি করবো? - তুই বা তুমি একটা বলে ডাকো রে ভাই,এই বয়সেই নিজেরে বুড়ো ভাবিতে চাই না। - হা হা

এভাবেই কণা আপনি থেকে তুমি ডাকা শুরু করলো তুষারকে। বহু দিনপরে আজ আড্ডাটা আবার জমেছে সবার। নেহাকে পটাতে কোন অপশন বাদ রাখেনি অভি। এতদিনে, নেহার জন্য গলির মোড়ে রিক্সা রেডি করা রাখা, আর নেহাকে দেখলে মুচকি হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই ছিলো অভির দৈনন্দিন রুটিন। সে হাসির অর্থ ছিলো, রিক্সাটা আমিই তোমার জন্য রেডি করে রেখেছি।

কিন্তু নেহা বুঝেও না বোঝার ভান করে রিক্সায় উঠে চলে যেত, যেন রিক্সা ওর পৈত্রিক সম্পত্তি। যেন ও বাসা থেকে বার হলেই সরেজমিনে রিক্সাসহ একজন রিকশাচালক ওর জন্য অপেক্ষা করাটাই স্বাভাবিক। অভি, নেহার এমন আচরণে কষ্ট পেয়েছে বহুবার কিন্তু প্রেমে হার মানার ছেলে অভি না। ও জানে জয়ই ওর গন্তব্য। এবার অভি চিঠি লেখা শুরু করলো। সেকেলে প্রেমিকদের মতো। নেট ঘেঁটে দশ-পনেরোটা কবিতা থেকে কেটে-কুটে নিজের নামেই বানিয়ে ফেলতো নেহা কে নিয়ে প্রেমকাব্য। এই তো সেদিন ঝুম বৃষ্টিতে নেহা কাক ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতো, যদি না অভি নিজের ছাতাটা ওকে দিয়ে দিতো।

সবাই আড্ডায় ব্যস্ত, আর অভি কাঠের গুড়ির ওপর হেলান দিয়ে নিজের প্রেমের সম্ভাব্যতার ছক আঁকছে মনেমনে। কেনই বা আঁকবে না। নেহা তো ওর ছাতাটা নিয়েছিলো, ধন্যবাদ ও বলেনি! ছাতা ফিরিয়েও দেয়নি। এর মানে কি দাড়াও! নেহা, অভিকে আপন ভাবতে শুরু করছে। হ্যাঁ, তেমনি হবে!

এসব ভেবে ভেবে অভি মুচকি হাসি দিচ্ছে। ঠিক তখনি একটা মেয়েকন্ঠ অভির কানে বাজলো। আরে এটা তো নেহারই কণ্ঠ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা গেলো সত্যি। হ্যাঁ, এটা নেহাই। কিন্তু ও এখানে কেনো এসেছে? ওকি সবার সামনে আমাকে প্রপোজ করবে নাকি? নাহ, সেটা খুব লজ্জার হবে। একটু আড়ালে ডেকে নিক আমাকে। কিন্তু না নেহা অভির কাছে আসেনি।

নেহা খুব গম্ভীর সুরে বললো, ‘এই যে তুষার সাহেব, ভালো আছেন তো?’ তুষার কিঞ্চিত অবাক হয়ে বললো, ‘আমাকে বলছেন?’ - হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। আপনিই তো তুষার তাই না। ওয়ান পিস।

আসলে তুষার নেহার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। সেই কবে অভির হয়ে একটু নাম পরিচয় জানা। এর পরে তো আর দেখা হয়নি নেহা নামক মেয়েটার সাথে। কিন্তু তুষার ভয় পেলো, ভাবছে পটাতে গিয়ে অভি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসেনি তো। আর ফেঁসে গিয়ে আমার নাম বলে আসেনি তো!

অভির কোন বিশ্বাস নেই। ওর পক্ষে সব সম্ভব। মেয়ে পটাতে অভি কোন ফাঁক-ফোকর রাখে না কখনো, উল্টো যেখানে যা ফাঁক-ফোকর থাকে সব সত্য-মিথ্যে যা দিয়ে হোক ভরাট করে দেয়।

নেহা বেশ ভাবিস্ট একটা মেয়ে। বিড়ালের চোখের মতো আকর্ষণীয় ছোট ছোট দুটো চোখ নেহার। হাসলে কিংবা রাগলে গালে টোল পরে। বেশ আনকমন আর ছিপছিপে গড়নের ফর্সা একটা মেয়ে। দেখলে যে কেউই সুন্দর বলবে ওকে।

এতক্ষণে নেহার মুখের বানী স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, ‘এই যে আপনি’। নেহা হাত দিয়ে ইশারায় অভিকে ডাকছে। অভি ব্যস্ত হয়ে বললো, ‘আমাকে বলছো?’ - হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি, এদিকে আসুন তো।

অভি পারলে একলাফে গিয়ে নেহার সামনে পড়ে কিন্তু গাছের গুড়ি বেয়ে নামতে একটু সময় লাগলো। নেহার সামনে এসে বাধ্য ছেলের মতো বললো, ‘হ্যাঁ, বলো নেহা’। - বলছি কিন্তু তার আগে বলুন আপনি আমাকে তুমি তুমি করছেন কেনো? বলেছি না আপনি বলে ডাকবেন।

অভির মুখটা শুকিয়ে গেলো, সবার সামনে নেহা ওর সাথে এমন না করলেও পারতো! নেহা কিছু একটা বার করছে ব্যাগ থেকে, চিঠি হয়তো!

অভি ভাবলো ওর চিঠিগুলো মনে হয় সব ফেরত দিতেই এসেছে নেহা। কিন্তু না, নেহা বললো অন্য কথা। চোখ কপালে তোলার মতো কথা। সে বললো, ‘এই যে মিস্টার অভি এই নিন। চিঠিটা তুষার সাহেবের হাতে দিন’।

অভি অবাক! মনেমনে ভাবলো চিঠিতো আমি লিখেছি! কিন্তু রিটার্ন চিঠি তুষার এর কাছে কেনো যাবে। অভি চিঠিটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেহা রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘চিঠিটা তো তুষারকে দিতে বলা হয়েছে তাই না!’ অভি শুধু মাথা নাড়ালো। - তো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান!

অভি চিঠিটা তুষারকে দিলো। তুষার একবার বলতে চাইলো চিঠি আমাকে কেন কিন্তু বললো না। ভাবলো, হয়তো অভিকে নিয়েই কিছু বলতে চাচ্ছে মেয়েটা। অভি হয়তো বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। চিঠি পড়েই দেখি কি লিখেছে?

তুষার চিঠি হাতে নিয়ে খুলতে গেলো কিন্তু হাজারো অবান্তর ভাবনা ওর মনকে গ্রাস করে মুখে বিষনণ্ণতার রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু নেহা থামিয়ে দিলো। বললো, ‘এখন না আমি যাই তারপর। আর উত্তর টা অবশ্যই আজকে পাঠাবেন আমি কাল চলে যাব।’

নেহা চলে যাচ্ছে এমন সময় অভি বলে উঠলো, ‘আর আমার চিঠিগুলো?’ নেহা হাসিমুখে বললো, ‘ওগুলো মোড়ের দোকানে দিয়ে দিয়েছি, ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা বানানোর জন্য।’ বলেই নেহা চলে গেলো, অপমানে অভির চোখ-মুখ তখন লাল হয়ে উঠছে।

(চলবে...)

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড