• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

অগ্নিপুরুষ এর উপাখ্যান

  এমরান কবির

১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:১৬
প্রচ্ছদ
ছবি: প্রচ্ছদ (অগ্নিপুরুষ)

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালের অগ্নিপুরুষ উপন্যাসখানি অগ্নিকন্যা উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব। অগ্নিকন্যা উপন্যাসটি যেখানে শেষ হয়েছিল ঠিক তার পর থেকে অগ্নিপুরুষ শুরু। অগ্নিকন্যা শেষ হয়েছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। তখন ছয়দফা নিয়ে অগ্নিকন্যার প্রধান চরিত্র মতিয়া চৌধুরীর ভাবনা ছিল কেমন। তা দিয়েই উপন্যাসের শেষ। পাঠকের জ্ঞাতার্থে শেষ অংশটুকু পুনঃপ্রবেশ হতে পারে– ছয় দফা প্রকাশ হবার সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানীদের আত্মার দাবী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। মতিয়া বুঝতে পারছেন এটাই স্বাধীনতার মূল ইশতেহার। ছয়দফা ক্রমাগত পরিণত হবে একদফায়।

দৈনিক সংবাদে হেডলাইনের সংবাদটি পড়েই তিনি নিজের ঘরে গিয়ে বসলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে পত্রিকার প্রতিবেদনটি আবার পড়লেন। মনে মনে বললেন ক্যাম্পাসে যেতে হবে। আলেচানা করতে হবে ছয়দফা নিয়ে। বসতে হবে ছাত্রনেতাদের সাথে। গড়ে তুলতে হবে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন।

তবে অগ্নিপুরুষ পর্বটিতে অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুই প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছেন। বলা বাহুল্য যে সময়ের কথা নিয়ে লেখক হাজির হয়েছেন, সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দাবি যার হাত দিয়ে বের হয়েছে তার কথা বললে তো প্রধান চরিত্র হিসেবে তিনিই দাঁড়িয়ে যান। ফলে অগ্নিপুরুষ হয়ে উঠেছে মূলত: ছয়দফাকেন্দ্রিক রাজনীতির কুশীলবদের বিচরণ। এতে প্রধান চরিত্র যেমন অবধারিত ভাবেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর প্রধান সহযোগীগণ, যেমন, মাওলানা ভাসানি, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শেখ মনি প্রমুখের অবদান উঠে এসেছে। এর বিপরীত কুশীলব হিসেবে ওই সময় যারা রাজনীতি ও শোষণের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যেমন, ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান, জেনারেল মুসা খান, টিক্কা খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রমুখদের উপস্থিতি, ভূমিকা ও ষড়যন্ত্রও উঠে এসেছে ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ অংশ হিসেবে।

উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় ছয় দফা ঘোষণা করার পর করাচি থেকে দেশের মাটিতে পা রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার আশেপাশে তাজউদ্দিন সৈয়দ নজরুলদের দেখে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। ওদিকে ছয় দফা দেখেই দূরদর্শী আইয়ুব খান এর পরিণতি আঁচ করতে পারেন। নানা ধরনের কুটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে থাকেন। গ্রেফতার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের।

মাওলানা ভাসানি প্রথমে ছয় দফা মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া দেখে তিনিও শেষ পর্যন্ত ছয় দফা মেনে নিতে বাধ্য হন। জনগণের চাপে জেলের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ অংশ শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি জোরালো করতে থাকেন। ওদিকে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। ইয়াহিয়া প্রকাশ্যেই বললেন, শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু জনগণের দাবির মুখে তাদের একসময় হার মানতে হয়। ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’ শ্লোগানে মুখরিত জনগণ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলে। পশ্চিম পাকিস্তান প্রশাসন শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। মহানায়কের বেশে জেল থেকে বের হয়ে আসেন অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সংক্ষেপে এই হলো কাহিনি। কিন্তু এর ভেতরে রয়েছে আরো অসংখ্য চরিত্র, যে চরিত্ররা যার যার ভূমিকা পালন করে।

ইতিহাস তো ইতিহাস। উপন্যাস তো উপন্যাস। দুইয়ের উপাদানগত পার্থক্য বিস্তর। মূল উপাদান সময় ও চরিত্র। একই সাথে মূল ইতিহাসকে অক্ষুন্ন রাখা এবং চরিত্রগুলোর যথাযথ ভূমিকার উপস্থাপন করা সহজ কাজ নয়। এই দুই বিষয়ের একটু হেরফের হলেই উপন্যাসের বিশ্বস্থতা নষ্ট হতে বাধ্য।

এ কারণেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। লেখক মোস্তফা কামাল ইতিহাসের সূক্ষ্ণ সুতার উপর দিয়ে হাঁটবার চেষ্টা করেছেন। যেখানে একটুখানি বিচ্যুত হবার সমূহ সম্ভাবনা। এবং একটু বিচ্যূত হলেই সময়ের খড়গ তার উপরে পতিত হতে বাধ্য এবং তা রোধ করা কঠিন। কিন্তু লেখক মোস্তফা কামাল এতই সতর্ক ছিলেন যে এ ধরনের বিচ্যূতি তার উপন্যাসে পাওয়া যায় না। সময় ও চরিত্র এবং ইতিহাসের দাবিকে তিনি এক সুতোয় বেঁধেছেন এবং তাতে উঠে এসেছে আমাদের ইতিহাসের ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সালের মতো বিক্ষুব্ধ সময়।

অগ্নিপুরুষ : মোস্তফা কামাল প্রকাশক : পার্ল পাবলিকেশন্স প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ মূল্য : ৪০০ টাকা

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড