• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ এর চতুর্থ পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : হৃদিতা তুই এমন কেন

  তানভীর আলাদিন

১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২০
গল্প
ছবি : প্রতীকী

শাহ আলম ভাই বললেন, হৃদিতা তুমি যেনো কেমন বদলে গেছো, টানা গত এক সপ্তাহ তোমাকে দেখছি রিহার্সালে তুমি কেমন অন্যমনষ্ক হয়ে কি যেনো ভাবছো? আমরা আগের হৃদিতাকে খুঁজে পাচ্ছি না! কি ভাবছো বাবার বদলী নিয়ে? নাকি তোমার পরীক্ষা নিয়ে? নাকি অন্য কোনো কষ্ট? তুমি ভেবো না সমস্যা থাকলে বলো, আমরা আছি, খুলে বললে হয়তো মনের কষ্টটা লাঘব হবে।

রাত ৯টা বাজতেই শাহ আলম ভাই আমাকে আর হৃদিতাকে রিহার্সেল থেকে ছেড়ে দিয়ে বললেন- যাও, বাসায় গিয়ে পারলে একটু পড়াশুনা করো তোমরা, সামনে তোমাদের পরীক্ষা। আগামীকাল একটু তাড়াতাড়ি এসো, পারলে তিনটার আগেই চলে এসো, দু’টো পথ-সভা আছে, সেখানে অপু তুমি প্রতিদিনের মতো হেলাল হাফিজ’র নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় আবৃত্তি করবে।ওটা এখনো হিট। কালকেও হয়তো সন্ধ্যার আগে-আগেই পথ-সভা দু’টো শেষ হবে, যদি না মামুরা ডিসটার্ভ করে। হৃদিতা তুমি কালও সন্ধ্যা করেই এসো, আমরা পথসভা শেষ করার পর নাটকের রিহার্সেল শুরু করবো।

আর দিনতিনেক ঠিকঠিক রিহার্সেলটা চালাতে পারলেই নাটকটা ভালোভাবে তোলা যাবে। নাটকটা নিয়মিত চালাতে পারি যদি তাহলে আন্দোলনটা আরো অনেক গতি পাবে, জনসমাগম যেমন বাড়বে, তেমনই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে। স্বৈরাচারের পতনটা ঘটাতে হলে গণআন্দোলনের বিকল্প নেই, সবাইকে এক সূরে গাইতে হবে, নূর হোসেন তার বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ধারণ করে যে আত্মহুতি দিয়েছে সেটাতো ব্যার্থ হতে দেয়া যাবে না। জানিস অপু, আমার মনে হয় আমিও গণতন্ত্র’র প্রসব বেদনার আর্তচিৎকার শুনতে পারছি। আচ্ছা তোরা এখন যা।

আমি শাহ আলম ভাইকে বললাম, ভাই পথসভাগুলোতে আমাকেও কি একটু বক্তৃতা করার সুযোগ দেয়া যায় না?

-যাবে না কেন? তুমি ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতায় যা বলতে চাও তার রিহার্সেল করবে। -ওহ্ ভাই, একটা কথাতো বলতে ভুলে গেছি, আজ সকালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আর দেশত্মবোধক গানের ক্যাসেট কেনার সময় সারেগামা রেকডিং থেকে আমার বন্ধু উকিলপাড়ার বিপুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। -শুনেছি, তুমিও সাবধানে থেকো। পারলে রাতে অন্য কোথাও ঘুমাবে। ওরা পাগল হয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া তোমার আশে-পাশে ডিস্টার্ভ করার মতো লোকজন পয়দা হয়ে গেছে। -বুঝলাম না ভাই? -বুঝার কাজ নাই, সময় হলে বুঝিয়ে বলবো, এখন সাবধানে থেকো, রাতে কোথায় থাকছো সেটা তোমার মাকে ছাড়া অন্য কাউকে বলতে যেওনা। -বাবাকেও না? -বাবাকে বলতে পারো, আর কাউকে না। আচ্ছা তোমাদের অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে, তোমরা এখন যাও।সাবধানে যেও।

আমরা বাসায় ফেরার পথে পা বাড়াতেই, হৃদিতা বললো- অপু চলো পাড়ার গলি ধরে যাই, সড়কটা ঠিক নিরাপদ না এখন।

-হেটে-হেটে যাবি? -হ্যাঁ, এখানেতো গলিতে রিকশা যায় না। চলো হেটেই যাই। শোন অপু, আমিও বলি কি তুই ক’দিন রাতে আর বাসায় থাকিস না… -তুইও শাহ আলম ভাইয়ের মতো ভয় পাচ্ছিস? -আমার মনে হয়, আমি শাহ আলম ভাইয়ের ইংগিতটা টের পেয়েছি… -যেমন? -আন্দাজ করছি, তাই আন্দাজ থেকে তোকে এখন কিছু বলতে পারবো না, তোকে বলছি তুই সাবধানে থাকিস, না হলে তোরও সর্বনাশ হয়ে যাবে। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি… -আর কার সর্বনাশ হয়েছেরে? তোরও শব্দটা বললি যে? আর আমার কিছু হয়ে গেলে কার কি? তোরই বা কি? -যার হয়েছে, হয়েছে, তোর যেনো না হয়… বলতে-বলতে হৃদিতা প্রায় কেঁদেই দিলো… -আমি বললাম, এই তোর কি হলো আবার কাঁদছিস কেন? -না, কাঁদছি কোথায়? বলে হৃদিতা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো, তারপর বললো, আমি জানি তুই আমার উপর ক্ষেপে আছিস, মাঝে-মাঝে হয়তো আমাকে মেরে ফেলতে তোর ইচ্ছে করে। তারপরও তোর উপর আমার একটা বিশেষ অধিকার থাকেই, সেটা আমি তোকে যতো কষ্টই দিয়ে থাকি, কারণ তুই যে আমার অপরিনত বয়সের একমাত্র ভরসার স্থল ছিলি, কিন্তু তোকে নিয়ে একটা ভাবনার জগৎ ছিলো, স্বপ্ন ছিলো, ছিলো রূপকথার একটা রাজ্য, সেখানে ছিলো রাজা-রাণি, পঙ্থিরাজ হাতি-ঘোড়া, আর ছিলো দেবতারুপী রাক্ষোস…।

কথা বলতে-বলতে আমরা বাসার সামনে চলে এলাম, গেইটের সামনে দাঁড়াতেই এদিক-ওদিক তাকিয়ে হৃদিতা আমার হাত ধরে ফেললো, শক্ত করে আমার হাত ধরে সে কাঁপতে লাগলো, কাঁপা কন্ঠে বললো, ‘অপু তোর দোহাই লাগে, আগামী ক’টা রাতে তুই বাসায় থাকিস না।’

হঠাৎ আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েই হৃদিতা তার বাসায় ডুকে গেলো, আমিও অবাক হয়ে গেলাম, কি বলতে চেয়েও হৃদিতা আমাকে বলতে পারছেনা, তবে কি সে কিছু জানে, নাকি অনেক কিছুই জানে, যা আমি জানি না, হৃদিতা কি আমার কোনো সমূহ বিপদের গন্ধ পাচ্ছে? যেমন পাচ্ছে শাহ আলম ভাই, হৃদিতা আবার অন্য কারো সর্বনাশ হয়েছে বলে ইংগিত দিয়েও থেমে গেলো! কার সর্বনাশ হলো? আচ্ছা, যার সর্বনাশ হলো, না হয়ে গেছে, আমার যে একটা বিপদ হতে পারে সে ব্যাপারে হৃদিতা যেনো অনেকটা নিশ্চিত! কে করতে চাচ্ছে আমার সমস্যা? কে?

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড