• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হৃদিতা তুই এমন কেন’ এর তৃতীয় পর্ব

ধারাবাহিক গল্প : হৃদিতা তুই এমন কেন

  তানভীর আলাদিন

০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৮
ছবি
ছবি : প্রতীকী

হৃদিতা আর মাসুম দা’র সামনে এমন একটা ভাব করলাম যেনো আমি কিছুই মনে করিনি। ওদেরকে পাশ কাটিয়ে আমি চলে এলাম। মনের ভেতর ঝিলিক মেরে আগুন জ্বলে উঠলো। হৃদিতা এ কি করছে আমার সঙ্গে? তাহলে কি সে এতদিন একটি বারের জন্যেও আমাকে ভালোবাসেনি? আমাদের পায়ে-পায়ে, গায়ে-গায়ে চলা-ফেরা বন্ধুত্ব, থিয়েটার, গান, কবিতা, রিহার্সাল সবই টাইমপাস মাত্র? শুনেছি তারুণ্যে মেয়েরা ‘রাফ এন্ড টাফ’ ছেলেদের পছন্দ করে। তাহলে তো আমিতো হৃদিতার জন্য শতভাগ ফিট।

মিছিল-মিটিং-পিকেটিং, মহল্লায় দাদাগিরি, কাউকে ধমকিয়ে তার বাইক নিয়ে সারাদিন টই-টই করা এগুলো সবই তো আমার মধ্যে আছে, তাহলে হৃদিতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাসুম দা’র মতো ভেদা মাছ টাইফের নিরেট ভদ্রলোক পছন্দ করলো কেন? রহস্যটা কোথায়, হৃদিতা যেনো আমার কাছে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা! যে মাসুম দা’ কিনা সারাদিন বইয়ের মধ্যে মুখ গুজিয়ে থাকাটাকেই জীবনের ব্রত মনে করে, আরে মাসুম দা’তো সিগারেট ছাড়া জীবনের আর কেনো কিছুতেই এগুনোর সাহস পায়নি! যে জীবনকে নিজের জন্য ভোগ কিংবা উপভোগ করতে শিখেনি, সে তোকে কি দেবে বলতে পারিস হৃদিতা? তোর সব কথা আমাকে বলবি বলে, আজ দু’বছরেও বলেতে পারিসনি! আবার মাসুম দা’কে দেবতাও বলিস! কেন? মাসুম দা যদি আমার বড় দাদা না হতেন তাহলে হৃদিতাকে চাপ দেয়া যেতো, ঘরের মধ্যে একটা সমস্যা হোক তা আমিও চাইনা, তাই বলে কি এভাবে আমিও কষ্ট পেতেই থাকবো!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটতে-হাটতে এসে গেলাম বড় রাস্তার মাথায়, দেখা হয়ে গেলো শাহ আলম ভাইয়ের সঙ্গে, তিনি বললেন, চল টাউন হলের দিকে যাই, আমি তার সঙ্গে হাঁটছি। শাহ আলম ভাই আমাদের ‘বৈঠা থিয়েটার’র বড়ভাই, তিনি একজন ভালো নাট্যকার ও নির্দেশক, সম্প্রতি শাহ আলম ভাইয়ের কারণেই আমি আমাদের জেলায় সম্মিলিত ছাত্রঐক্য আন্দোলন কমিটিতে স্থান পেয়েছি। দুইবছর আগে তার রচিত ‘মুক্তিযোদ্ধার কান্না’ নাটকটিতে আমরা অভিনয় করেছিলাম, রাজাকার ও স্বৈরাচার বিরোধী বক্তব্যে ভরা নাটকটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বিশেষ করে নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পরে সবাই নাটকটি লুফে নিয়েছিলো। এক সময় প্রশাসনের খড়গ নেমে আসে নাটকটি মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে, স্থগিত হয়ে যায় মঞ্চায়ন। নাটকটিতে আমি ভিলেনের ভূমিকায় হলেও একমাত্র নারী ও মূল চরিত্রে ছিলো হৃদিতা।

শাহ আলম ভাই বললো, অপু তোকেই খুঁজছিলাম কারণ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনটা আরেকটু বেগবান করতে হবে তাই মিছিল মিটিংয়ের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আন্দোলনটাও জোরদার করা চাই। ভাবছি ‘মুক্তিযোদ্ধার কান্না’ আবার মঞ্চে আনবো। তার আগে প্রতিদিনের মিটিংয়ের আগে কিছু দেশত্ববোধক গান আর জ্বালাময়ী কবিতা আবৃত্তি করা চাই-ই-চাই, মিটিংগুলো এমন হতে হবে, যেনো সাধারণ জনগণের হৃদয়েও আন্দোলনে সামিল হওয়ার ঢেউ জেগে উঠে... একটি সার্বজনীন আন্দোলন চাই বুঝলি।

আমি বললাম, শাহ আলম ভাই তুমিতো নিজেই ভালো আবৃত্তি করো, তাহলে ভাবনা কি আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তিনি বললেন, শোন একজনকে দিয়ে হবে না, আরো লাগবে, ধর আমি গ্রেফতার হয়ে গেলাম, তাহলে যেনো তুই চালিয়ে নিতে পারিস, গানের জন্যেও কাজ করছি, চারজন করে তিনটি দল করতে চাই, সমস্যাটা হচ্ছে নাটকে, এমন পরিস্থিতিতে মেয়ে অভিনেত্রী পাওয়াটা কঠিন হচ্ছে, হৃদিতা আর তোর তো আবার এইচএসসি পরীক্ষা, আমি বললাম, শাহ আলম ভাই আমার কাছে কাছে দেশ আগে, হৃদিতার বিষয়ে আমি বলতে পারেবো না, তার বাবা নাকি আবার বদলি হয়ে যাচ্ছে, তুমি কথা বলে দেখো।

শাহ আলম ভাই বললো, দেশের এই অবস্থা আর সামনে মেয়ের পরীক্ষা এই সময়ে মালেক সাহেব নিশ্চয়ই পরিবার নিয়ে যাবেন না। ঠিক আছে, আমি কথা বলে নেবো, সমস্যা হবে বলে মনে হয় না, যেহেতু নাটকটি তোদের করা আছে, মাত্র পনের দিন রিহার্সাল করলেই দাঁড়িয়ে যাবে, পরের পনের দিনে ৬ থেকে ৭টা শো মঞ্চায়ন করলেই হয়ে যাবে। শাহ আলম ভাইয়ের কথা শুনে আমার মনের ভেতর আনন্দের একটা হিল্লোল বয়ে গেলো এই ভেবে যে, আবার মাস খানেকের জন্য হৃদিতাকে আগের মতো কাছে পাবো, হয়তো এই সময়ে সে মাসুম দা’র মোহ মুক্ত হয়ে আমাকেই ফের কাছে টেনে নেবে।

শাহ আলম ভাই হঠাৎ বলে উঠলেন আচ্ছা অপু তোর মাসুম দাদা এখন কি করে রে? আজকাল নাকি স্বৈরাচারের ছানা-পোনাগুলোর সঙ্গে ওর নাকি খুব দহরম-মহরম! আচ্ছা, আমি আরেকটু ক্লিয়ার হয়ে নি, পরে না হয় তোর সঙ্গে এ বিষয়ে ফের আলাপ করবো।

কিরে অপু কি ভাবছিস? আচ্ছা বলতো তুই হেলাল হাফিজের কবিতা কয়টা মুখস্থ পারিস? আমি বললাম একটাও না।

-বলিস কী, পাগল? শোন অপু, হেলাল হাফিজের নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতাটা আজই মুখস্থ করবি, নাটকটা আবার দাঁড় করানোর আগে এটি প্রতিদিনই মিটিংয়ে তোকে আবৃত্তি করতে হবে, আর আমি কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটি করবো।

আমি বললাম, ভাই হেলাল হাফিজের কবিতাটা কই পাবো? আমার কাছে তো বইটাই নাই।

শাহ আলম ভাই আমাকে নিয়ে টাউন হলের উল্টো দিকের রমিজের হোটেলে ডুকলেন, রমিজের দোকানের হিসাবের খাতা থেকে একটা সাদা কাগজ নিয়ে প্রায় পাঁচ মিনিটে কবিতাটা লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন, কবি হেলাল হাফিজ এটি ১৯৬৯ সালে লিখেছেন, পরে তার ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। তুই পড়ে দেখ- ভালো লাগবে, আন্দোলনের একটা ঘ্রাণ পাবি, নে আমার সামনে একবার পড়তো দেখি।

অমি কাগজটা হাতে নিয়ে কবিতাটি পড়তে লাগলাম-

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় মিছিলের সব হাত কণ্ঠ পা এক নয় ।

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে, কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার । কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে, কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনি হতে হয় ।

যদি কেউ ভালোবেসে খুনি হতে চান তাই হয়ে যান উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।’

(চলবে..)

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড