• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : শীতের সোয়েটার

  রুমান হাফিজ

০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:১৬
ছবি
ছবি : প্রতীকী

এ কয়দিন যাবত মাহা তার জন্য শীতের কাপড় কিনে দিতে আম্মুকে বারবার বিরক্ত করছে। আম্মু বলেছেন, শীত আরেকটু পড়ুক তারপর না হয় কিনা যাবে। কিন্তু মাহা তো নাছোড়বান্দা। শীতের কাপড় তার কিনে দেওয়া চাই-ই-চাই। আম্মু কানিজও এতদিন কেবল আশ্বাস দিয়েই চলেছিলেন। তবে এখন হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে ভেবে রাজি হয়ে গেলেন। ‘আচ্ছা তোমার আব্বুকে বলে আগামীকাল বের হবো, কেমন!’

হঠাৎ তার মনে হলো এইতো, গতবছর শীতে মাহাকে একটা সোয়েটার কিনে দেওয়া হয়েছিল। শীত চলে গেলে তা আবার ওয়াশ করে আলমারিতে রেখে দিয়েছেন। দেখলে এখনো পুরো নতুন মনে হবে। তাহলে এখন আরেকটা কিনে দেওয়া কি ঠিক হবে? এ নিয়ে মাহাকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু কোন লাভ হয় নি।একটাই কথা, এই শীতে তার নতুন সোয়েটার চাই।

মাহার আব্বু সব কিছু আম্মুর থেকে শুনেছেন। কি ভেবে তিনি আর কোন কথা না বলে কখন বের হবেন তাই ঠিক করলেন।

আব্বু-আম্মু ছাড়াও বাসায় মাহা আর একমাত্র ছোট ভাই তামিম থাকে। মাহা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে তবে তামিমকে এখনো স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি। ইতোমধ্যে স্কুলের অনেক পড়াই তামিমের শেষ। তাদের আম্মু অনেক মজা করে পড়া শিখাতে পারেন।

মাহাদের আব্বু একটা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করেন। অফিসের কাজের চাপ, নানামুখী ব্যস্ততা। যার ফলে খুব কম সময়ই তিনি বাসায় কাটাতে পারেন। আর আম্মু চাকুরী না করলেও মাঝেমধ্যে সামাজিক নানা কার্যক্রম এ অংশগ্রহণ করে থাকেন। বেশ কিছু দেশি এবং বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থার সাথে তিনি জড়িত। যাইহোক আজ বের হবেন মাহার জন্য সোয়েটার কিনতে। আব্বু-আম্মু, মাহা সাথে তামিমও। তামিম সাথে থাকা মানে মাহাকে যা যা কিনে দেওয়া হবে তামিমকেও তাই দিতে হবে। এ নিয়ে কোনপ্রকার এদিকওদিক চলবে না। তামিম ছোট হলেও অনেক কিছুই বুঝতে পারে। তার আপু মাহাকে যা যা দেওয়া হবে তাকেও তাই দিতে হয়। নতুবা কেঁদে কেঁদে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।

মার্কেটে এসে বেশকিছু দোকান ইতোমধ্যে দেখা হয়েছে। মাহার চয়েস অনুযায়ী হচ্ছে না, আবার হলেও সাইজের ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটছে।তারপর একটা দোকানে পাওয়া গেলো। মাহার চয়েস সবুজ আর তামিমের চয়েস নীল। দুজনের পছন্দমতো দুটো সুয়েটার কিনা হলো।

তাদের জন্য শীতের আনুষঙ্গিক আরো কিছু কেনাকাটা করা হলো। এবার হালকা নাস্তা সেরে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা।হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে, গাড়ির গ্লাস দিয়ে মৃদু বাতাস প্রবেশ করছে। তামিম পিছনের সিটে আম্মুকে জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে।আব্বু গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দিলেন।

বাসার প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে। হঠাৎ করে আব্বুকে গাড়ি থামাতে বলে মাহা।তাড়াতাড়ি ব্রেক করলেন।কি হয়েছে? কোন জবাব দেয়নি মাহা।স্টিয়ারিং থেকে ছুটে এসে পিছনের দরজা খুলে জানতে চাইলেন। মাহা নেমে গেলো। আব্বুকে সাথে নিয়ে মোড়ের দিকটায় এগিয়ে গেলো। আব্বু বারবার জিজ্ঞেস করলেও মাহা উত্তর দেয়নি।একরকম জোর করে আব্বুকে নিয়ে গেলো। একটু পর একটা কুঁড়েঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো মাহা। রিনু বলে ডাক দিতেই দরজা খুলে দিলো মাহার সমবয়সী এক মেয়ে। ওর নামই রিনু। ঘরে অসুস্থ মা ছাড়া আর কেউই নেই। ওরা মাহাদের স্কুলের পাশেই থাকে। খুবই কষ্টে তাদের দিনযাপন করতে হচ্ছে। মাহাদের স্কুলে রিনু কাগজ, বোতল, কাঠ ইত্যাদি কুড়াতে যায়।যার সুবাদে মাহার সাথে পরিচয়। মাহা রিনুকে পেলে কিছু না কিছু দিতে চেষ্টা করে।মাহার অনেক দিনের ইচ্ছে ওর জন্য ভালো একটা জামা কিনে দেওয়ার। কিন্তু কিভাবে দেবে। সেই চেষ্টা করতেছিল। শীত যেহেতু এসেই পড়েছে তাই শীতের কাপড় দেওয়াই ভালো হবে ভেবে এই সোয়েটারটা কিনেছে।

মাহার আব্বু কোন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।

মাহা তার হাতে থাকা সোয়েটারের প্যাকেটা রিনুর হাতে ধরিয়ে দিলো।রিনু তো রীতিমতো অবাক! চিৎকার দিয়ে মাকে ডাক দিতে যাবে কিন্তু গলা দিয়ে কেবল শাঁ শাঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। আনন্দের মাত্রাটা খুব বেশি হলে বুঝি এমনটা হয়!

ততক্ষণে মাহার আম্মুও এসে পড়েছেন তামিমকে নিয়ে।

প্যাকেট খুলে মাহা রিনুর গায়ে সোয়েটারটা পরিয়ে দিলো।জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে রিনু। মাহার চোখেও পানি।পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলেন আব্বু আম্মু। কারো মুখে কোন কথা নেই।একে অপরের দিকে কেবল চেয়েই রইলেন।চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো আনন্দাশ্রু।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড