নবনী অাহমেদ
বই: ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া লেখক: মো. ফরহাদ চৌধুরী শিহাব মূল্য: ২৬০ টাকা পৃষ্ঠা: ১৭২ প্রকাশনী: আদী প্রকাশন প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
প্রথম প্রশ্ন- আপনি কি বাচ্চাকাচ্চা অপছন্দ করেন? তাদের কৌতূহলী প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন - ছোটদের কাজকে আপনার অযৌক্তিক বলে মনে হয়? অল্প বয়সেই বেশি বুদ্ধিমান বাচ্চাকে ইঁচড়েপাকা বলে মনে হয়?
তবে প্লিজ আপনি এই বই পড়বেন না। বইটি আপনার জন্য না। আপনি বরং আপনার বুড়ো মন আর রাশভারী মেজাজ নিয়েই থাকুন আর এদিকে আমরা "বাবাকোয়া" দের পৃথিবীতে উঁকি দিয়ে আসি।
ছোট্ট বাবাই। বয়স যার মাত্র ৫ বছর, সে নিজেকে সবার কাছে ‘ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া’ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে। প্রতিদিন বাবাকোয়া কোন না কোন এডভেঞ্চার মিশন সম্পন্ন করে থাকে। অবশ্য এসব মিশনের মাঝে স্টোর রুমের ইঁদুর গুলিকে দেখাশোনার পর্বও আছে! না, এতে হাসির কিছু নেই। বাবাকোয়া সকল জীবের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল! শুধু এসব মিশনে অংশ নিয়েই সে থেমে থাকেনা। তার সমস্ত মিশন এর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এবং পরবর্তী মিশন এর কর্মশালা সে কাগজে লিপিবদ্ধ করে থাকে। তার ব্যক্তিগত ডায়েরীর উপরে বড় বড় করে লিখা ‘ক্যাপ্টেন বাবাকোয়ার গোপন মিশনসমূহ’!
যদিও বাবাই এসব এডভেঞ্চার রূপী কর্মকাণ্ড তার মা নভেরা দু'চোখে দেখতে পারেননা এবং সুযোগ পেলেই বাবাইকে ধোলাই দিতেও পিছপা করেন না, তবুও বাবাই থেমে থাকেনা! দুর্বার গতিতে সে এগিয়ে চলে তার মিশনে! তাকে কিছুটা সাহায্য করে খালামণি মিথিলা। এবং বাবা জাহিদ উৎসাহ এবং পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থাকে বাবাইয়ের।
"ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া" বইটি বাবাইয়ের অতি মজাদার সব ঘটনার নথিপত্র। যেখানে প্রতিটি গল্প অদ্ভুত, সেই সাথে হাস্যকর কিন্তু শিক্ষামূলক।
কৈশোরে জাফর ইকবাল এর স্যার কিশোর উপন্যাস পড়ার দীর্ঘদিন পর আবার বাচ্চাদের এত চমৎকার এই বইটি পড়লাম। আমার ধারণা বাচ্চাদের পছন্দ করেন না এমন মানুষ হাতে গোণা। পছন্দের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। কেও অতিরিক্ত পছন্দ করে,কেওবা কম। কিন্তু একেবারেই পছন্দ করেনা এমন মানুষ সংখ্যায় নগণ্য।
এক শিশুর মুখের হাসি দেখে অতি পাষাণের মন টাও গলে যাবে এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। যদিও এই যুগে এসে কচি বাচ্চারাও বিকৃত মানুষের বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা! এরা মানুষ রূপী জানোয়ার। এদের হিসেব আলাদা।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি বাচ্চাদের খুব পছন্দ করি। অতিরিক্ত পছন্দ! এজন্যেই আমি যখন কাহিনী গুলি পড়ি তখন বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো, ইস! বাবাই কেন আমার ছেলে না! এমনকি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ছেলে বা মেয়েকে বাবাইয়ের মতো নীল হেলমেট পরিয়ে রাখবো সব সময়। সে গম্ভীর মুখে আমার পুরো বাড়িতে হেলমেট মাথায় ঘুরাঘুরি করবে, এই দৃশ্য ভাবতেই এক অন্যরকম অনুভূতি হয়।
লেখক এর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ‘অমিয়েন্দ্র’ বইটি পড়ার মাধ্যমে। তখনি মুগ্ধতা এসেছিলো। "ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া"তে এসে লেখকের আলাদা এক লিখনির সাথে পরিচয় হলো। আমার মনে হয় বাচ্চাদের বই লিখা অনেক কঠিন। কারণ এজন্য আপনাকে একটি বাচ্চার মতো করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
জীবনের স্রোতে ভেসে শৈশবকে পেছনে ফেলে বাস্তবতার স্পর্শে পুড়ে খাক হবার এই বয়সে এসে একটি নিষ্পাপ বাচ্চার চোখে সব কিছু দেখা চাট্টিখানি কথা নয়। আর যদি বাচ্চাদের নিয়ে লিখা বইটি বড়দের কেও সমান ভাবে আনন্দ দিতে পারে,তবে বুঝতে হবে লেখক সার্থক। ফরহাদ ভাই এক্ষেত্রে সফল পুরোপুরি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। লেখক এর জন্য শুভকামনা রইলো।
ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া বইটির প্রচ্ছদ দেখেই আমি মূলত বইটির প্রতি আগ্রহী হই। দারুণ এক প্রচ্ছদ! দেখতেই শান্তি শান্তি লাগে।
বেশ কিছু বানান ভুল ছিলো,প্রিন্টিং মিস্টেক। আর যেটা খারাপ লেগেছে তা হলো, সংলাপে লেখ্য আর কথ্য ভাষার সংমিশ্রণ। এক জায়গায় বাবাই বলছে,"খাইছি" তো আরেক জায়গায় বলছে ‘খেয়েছি’। যেকোনো একটা বজায় রাখলেই বেশি ভালো লাগতো।
বাবাকোয়াদের জন্যেই আসলে পৃথিবীটা সুন্দর। হাফধরা প্রাপ্তবয়স্ক মনের আড়ালেই শিশু মনকে বাবাকোয়ারা নাড়া দিতে পারে। আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশবের স্মৃতিময় সেইসব ছেলেমানুষির দিনগুলিতে। নিজেই অজান্তেই ঠোটের কোণে ফুটে উঠবে হাসি।
সবশেষে বলবো, বাবাইরা ভালো থাকুক,সুস্থ থাকুক। পৃথিবীর, সমাজের নোংরামির কবল থেকে বাবাইরা মুক্ত থাকুক। আর আমরাও যেন বাবাইদের স্পর্শে কিছুটা পবিত্র হওয়ার সুযোগ পাই। ভালবাসা তাদের জন্য।
বইয়ের প্রিয় একটি ছড়া, তেলেপুকা তেলেপুকা কুথায় তুমি যাউ? এত্ত কাগুজ কেমুন করে চিবিয়ে তুমি খাউ? খাচ্ছো কেনু বই খাতা আর জুতার কালো ফিতা- বুটের কালি খাউ নাকি ভাই- মিষ্টি নাকি তিতা? আমিও খাই শাদা রবার- লাল কলমের কালি, কেরসিনের তেল খেয়ে ভাই- পট করেছি খালি! আম্মা মারে ধুরুম ধারুম- আব্বা হাসে তাই বাবাকোয়ার সৈন্য নিয়ে- কুথায় আমি যাই?
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড