নবনী অাহম্মেদ
বই: আমাজনিয়া লেখক: জেমস রোলিন্স অনুবাদ: রাকিব হাসান প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর, ২০১৪ প্রচ্ছদ: ডিলান পৃষ্ঠা: ৪১৪ মূল্য: ৩৪০ টাকা(মুদ্রিত)
বইয়ের গ্রুপগুলিতে আমার নজরে পড়া সর্বাধিক পরিচিত বইগুলির মাঝে অন্যতম বই ‘আমাজনিয়া’। ২০১৪ সালে অনুবাদিত এই বইটি আমার সংগ্রহে আসে বছর খানেক আগে। এতদিনেও বইটি না পড়ার পেছনের কারণ খুব হাস্যকর। আমি বইটি জমিয়ে রেখেছিলাম। বেশ কিছু বই আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে আমার এই অনুভূতি হয়,পড়লেই তো ফুরিয়ে যাবে! এত্ত এত্ত রিভিউ আর পোস্ট দেখে এই বইটির ব্যাপারেও আমার এই অনুভূতি হয়েছে। এবং সত্যি সত্যি পড়ার পর আফসোস হয়েছে, আহা! রহস্য জানা হয়ে গেলো!
এখন আসি বইয়ের ব্যাপারে। বইয়ের মূল রিভিউয়ে যাওয়ার আগে ‘আমাজন’ নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরবো। এগুলির কোনটিই আমার নিজের বক্তব্য নয়। গুগোল ও উইকিপিডিয়া মামার সহযোগিতা নিয়ে নিজস্ব আগ্রহ থেকেই আমি এসব ঘাটাঘাটি করেছি। চাইলে আপনারাও তা করতে পারেন। তবে বইয়ের সাথে পরিচয় এর আগে এই কয়টি কথা পাঠকের জানা উচিত বলেই এখানে তা উল্লেখ করলাম।
আমাজন নদী পৃথিবীর ২য় দীর্ঘতম নদী। আমাজন নদী দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে ৫টি দেশ বিধৌত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার এই আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমির নাম ‘আমাজন’, যা ৯টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেক টাই এই অরণ্য নিজেই। পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% আসে আমাজন বন থেকে। হাজার হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদ এর অভয়ারণ্য এই বন। যেন এক প্রাকৃতিক লীলাভূমি।
চলে আসি বইয়ের কাহিনীতে। ‘আমাজন’ এর জীবন নিয়ে উপাখ্যান তারই নাম ‘আমাজনিয়া’।
আমাজনের স্থানীয় মিশনারি গ্রামের এক চার্চে এসে উপস্থিত হলো মৃতপ্রায় এক ব্যক্তি। চার্চের পাদ্রি তাঁর সাধ্য অনুযায়ী লোকটার সেবা এবং চিকিৎসা দেয়ার পরেও প্রাণ ত্যাগ করেন এই ব্যক্তিটি। কিন্তু কে এই লোক? ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় তার পরিচয়। মৃত ব্যক্তির নাম জেরাল্ড ক্লার্ক এবং তিনি আমেরিকার সি.আই.এ- এর একজন সদস্য। আজব কথা তো! সি.আই.এ-এর একজন সদস্য আমাজন বনে কী করছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে অতীত।
ঘটনাটি চার বছর আগের। কার্ল র্যান্ড নামের একজন ডাক্তার ইকো-টেক নামের এক পরিকল্পনা হাতে নেন। আমাজন জঙ্গলের হাজারো উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক জীবনধারণের রহস্য খুঁজে বের করা এবং আমাজনের স্থানীয় সব গোত্র যারা আমাজনের সব প্রতিকূলতা জয় করে আমাজনের সৃষ্টির মাধ্যমেই (ঠিক যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা!) এবং তারা টিকে আছে হাজার বছর ধরে - তাদের সেসব গোপন রহস্য উদ্ধার করে নতুন কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করাই ছিলো ডাঃ কার্ল র্যান্ডের উদ্দেশ্য। এবং এই উদ্দেশ্যেই একটা স্পেশাল টিম নিয়ে আদমশুমারি ও তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে যাত্রা করেন আমাজনের গভীরে। ডাঃ র্যান্ডের এই দলের একজন সদস্য ছিলেন এই জেরাল্ড ক্লার্ক নামের ব্যক্তিটি।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! ডাঃ র্যান্ডের এই দলটি চার বছর আগেই আমাজনের গভীরে হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও কোন হদিস মেলেনি তাদের একজনেরও। ঠিক যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে দলের প্রতিটি সদস্য। কিন্তু চার বছর আগের কঠোর অনুসন্ধানের শূন্য ফলাফলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফিরে এলো জেরাল্ড ক্লার্ক। কিন্তু এতেও ডাঃ র্যান্ডের দলের হারানো রহস্য যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেলো। কোন রকম সূত্র বা তথ্য না দিয়েই মারা গেলো এই এজেন্ট। ইস! আফসোস হচ্ছে তো? ডাঃ র্যান্ডের দলের কী এমন হয়েছিলো তা বুঝি আর জানা হলো না! তীরে এসেও তরী ডুবলো!
দাঁড়ান দাঁড়ান! রহস্য আরো বাকি! জেরাল্ড ক্লার্ক চার বছর আগে যখন অভিযানে যান তখন তার হাত ছিলো একটি। একটি যুদ্ধে ক্লার্কের একটি হাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে তা কেটে বাদ দিতে হয়েছিলো পূর্বেই। কিন্তু এই একহাতি ক্লার্ক যখন চার বছর পর ফিরে এলো তখন তার দু'টি হাতই দিব্যি দৃষ্টিগোচর হলো! তারমানে মৃত্যুপথ যাত্রী ক্লার্কের আরেকটি হাত গজিয়েছিলো? তা কীভাবে সম্ভব? নাহ! এসব রহস্য হজম করা যায়না! চার বছর পর ক্লার্কের আবির্ভাব এবং তার নতুন হাত সৃষ্টির রহস্য অনুসন্ধানে নতুন করে টিম গঠন করা হলো। দীর্ঘ চার বছর পর পুনরাবৃত্তি ঘটলো অতীতের। আবার এক দল যাত্রা শুরু করলো আমাজনের গভীরে। যেখানে সর্বদা ওত পেতে থাকে মৃত্যু!
মৃত্যুকালে ক্লার্কের দেহে ছিলো ‘ব্যান-আলি’ গোত্রের চিহ্ন। কথিত আছে এই ব্যান-আলিরাই নিয়ন্ত্রণ করে আমাজনকে। ব্যান-আলিদের অভিশাপে নাকি ধ্বংস হয়ে যায় সব কিছু। আর এই অভিশাপেই কি পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়লো এক মহামারী? কী এর প্রতিকার? রহস্য উন্মোচনকারী দল কি পারবে সফল হতে? নাকি তারাও হারিয়ে যাবে ডাঃ র্যান্ডের দলের মতোই? এই টানটান উত্তেজনা আপনার নার্ভ সিস্টেমকে উত্তপ্ত করতে সক্ষম।
সত্যি কথা বলতে বেশ অনেকদিন পর এত বেশি আকর্ষণের একটি বই পড়লাম। জেমস রোলিন্স এর জাদুকরী লেখার সাথে এটাই আমার প্রথম পরিচয়। স্বাভাবিক ভাবেই পছন্দের লিস্টে উনার নামটা উঠে গেলো। চুম্বক আকর্ষণে বইটি পড়ে শেষ করেছি। অনেকের কাছেই শুনেছিলাম যে, কাহিনী ধীর গতির। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে এভাবে না এগুলে সব ব্যাপারে পাঠক পরিষ্কার ধারণা পেতেন না। আমাজনের রহস্য জানার জন্য প্রতিটি লাইন উল্লেখযোগ্য। রাকিব হাসানের এটি প্রথম অনুবাদ হলেও যথেষ্ট ভালো করেছেন তিনি। অন্তত আমার কাছে তো বটেই। অল্প কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্যতা থাকলেও কাহিনীর বেগের জন্য তা গণনায় আনা যায়না। সর্বোপরি প্রকাশক এবং অনুবাদক কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাবো এত চমৎকার এক বইয়ের সাথে পরিচয় এর সুযোগ করে দেয়ার জন্য। ডিলান সাহেব এর করা প্রচ্ছদটা দারুণ লেগেছে।
খারাপ দিক হচ্ছে বানানের ব্যাপারটি। আ-কার,ই-কার এর ভুল, পাশাপাশি দু'টো শব্দ জোড়া লেগে যাওয়া এই জিনিস গুলি এখনকার অধিকাংশ বইয়েই দেখা যাচ্ছে। পাঠক এর প্রতি দয়াবশত হলেও এসব দিকে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ নজর দেয়া উচিত। বাধ্য হয়ে একটা কলম নিয়ে বই পড়তে বসি ইদানীং। অর্থাৎ প্রকাশিত বইয়ের প্রুফ রিডিং এর কাজটা সেরে ফেলি। পরবর্তীতে যিনি আমার বইটি পড়বেন কাটাকাটি দেখে তিনি বিরক্ত হবেন নাকি শুদ্ধ শব্দ দেখে খুশি হবেন তা অবশ্য আমার জানা নেই।
ফিকশন বইগুলি পড়লে আমি সব সময় একটা ঘোরের মাঝে চলে যাই। খুব করে এসব কিছু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়,মনে হয় সব বাস্তবেই যদি ঘটতো! কী দারুণ লাগতো! প্রতি ধাপে ভয়,বিপদ, প্রেম, বেঈমানি, দ্বিধা,সংকোচ এবং সাহসের এক গা ছমছমে আমাজনের জগতে আপনাকে স্বাগতম!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড