• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

অন বুলশিট : হ্যারি জি. ফ্রাঙ্কফুর্ট

  কে এম রাকিব

২৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০০
প্রচ্ছদ
প্রচ্ছদ : অন বুলশিট

পপ কালচারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাডেমিশিয়ান ( একাডেমিতে সেয়ান যিনি! ) এবং পণ্ডিতদের বইপত্র লেখার চর্চা পশ্চিমে অনেক দিনের। মেইবি রলা বার্থের ‘মিথলজি’ প্রকাশের পর থেকে এইটা যথেষ্ট বেগবান হয়। এই যে লার্জার অডিয়েন্সকে উদ্দেশ্য করে লেখা, এইটা ভালো প্র্যাকটিস। বাজারের যুগে এইটা স্বাভাবিকও অবশ্য।

২০০৫ সালে ৬৭ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা বই প্রকাশের পরপরই বেস্টসেলার হলে প্রায় অবসিকিউর এক ফিলসফি প্রফেসর হ্যারি জি. ফ্রাঙ্কফুর্ট রাতারাতি তারকা বনে যান। বেস্টসেলার বইটা ছিলো বুলশিট নিয়ে। ‘অন বুলশটি’। যদিও ১৯৮৫ সালে একটা জার্নালে ওইটা প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হইছিলো। ২০০৫-এ প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ওইটারে পুস্তিকা হিসেবে ছাপায়।

বইয়ের শুরুতেই ফ্রাঙ্কফুর্ট জানান, সমাজ বুলশিটে টইটম্বুর। অথচ বুলশিটের মতো কনসেপ্টের কোনো পরিষ্কার বোঝাপড়া ও থিয়োরি নাই পাবলিকের। তাই উনি থিয়োরি দেওয়ার চেষ্টা নিছেন। শুরুতেই ফ্রাঙ্কফুর্ট বলে নিছেন, তার লক্ষ্য বুলশিটের রেটরিক নিয়ে কথা বলা না। বরং উদ্দেশ্য মূলত বুলশিট কী এবং কোনটি বুলশিট নয়- সেইটার তাত্ত্বিক বোঝাপড়ায় যাওয়া।

তো, বুলশিটের বিষয়ে কী বলছেন মি. ফ্রাঙ্কফুর্ট?

বুলশিট কী? মিথ্যা থেকে বুলশিট কিভাবে আলাদা? এবং কেন মিথ্যার চাইতে বুলশিট বেশি ক্ষতিকর? মোটামুটি এই প্রশ্নগুলার উত্তর দেওয়ার চেষ্টাই বইটার বিষয়বস্তু।

আগেই বলে নিই, বুলশিট শব্দটার কোনো বাংলা আমি করতে যাবো না। স্ল্যাং বলে অনুবাদ এমনিতেই দুঃসাধ্য। আর বাংলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দের, বিশেষত টেকনিক্যাল টার্মের, যে খটমটে ‘তৎসমায়িত’ দুর্বোধ্য বাংলা করা হয় তার চাইতে মূল শব্দটা রেখে দেওয়াই ভালো। তৎসম, আরবী, ফার্সি, ইংরেজি, হিব্রু যে ভাষার শব্দই হোক না কেন, আমার আপত্তি নাই যতক্ষণ পর্যন্ত সহজবোধ্য থাকে। প্রেপজিশন নাকি ‘পদান্বয়ী অব্যয়’? আমি প্রেপজিশনই পছন্দ করবো।

বুলশিটের ‘ঋষভবৃষ্ঠা’ জাতীয় একটা বাংলা সম্ভবত পড়েছিলাম কয়েক বছর আগে অরিন্দম চক্রবর্তীর লেখায়। যতদূর মনে পড়ে ওই লেখাটা ‘অন বুলশিট’ বইটা নিয়ে না। অন্য কিছু নিয়ে। বইটা হাতের কাছে না থাকায় এবং স্মৃতিশক্তির প্রতি যথেষ্ট কনফিডেন্স নাই বলে ‘সম্ভবত’ শব্দ যুক্ত করলাম। অরিন্দম আমার পছন্দের লেখকদের একজন হইলেও এই যে খটমটে বা ‘কষা’ বাংলা এইটা আমি নিতে রাজি না। উঁচা নাকওয়ালাদের মতো এই ধরণের শব্দ ব্যবহার আমপাঠককে পরোক্ষে দূরে সরায়ে দেয়। তবুও যদি একান্তই কোনো বাংলা করতে হয় ‘বালছাল’ শব্দটা প্রস্তাব করতে পারি। তথাপি, আমি বুলশিট শব্দের বাংলা করতে যাবো না। ইংরেজি বুলশিট বাংলাতেও বুলশিট হিসেবে চলুক।

যাহোক। বুলশিটের তত্ত্ব দাঁড় করাতে গিয়ে তিনি বলেন, বুলশিট একধরণের ‘অসত্য’ হলেও বুলশিট সাধারণ মিথ্যার থেকে ভিন্ন । বুলশিটারও মিথ্যাবাদীর থেকে আলাদা। ফ্রাঙ্কফুর্টের মূল অবজারভেশন, মিথ্যুক মিথ্যা ছড়াইতে চাইলেও, তার কাছে সত্যি মিথ্যার পার্থক্য ম্যাটার করে। অন্তত নিজের কাছে সত্য বলে একটা কিছু আছে এইটা একনলিজ করা লাগে। লিখেছেন, ‘যদি না সে মনে করে সে সত্যিটা জানে তাহলে কারও পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভবই না। বুলশিট উৎপাদনে এইরকম কোনো ধারণার দরকার পড়ে না।’ বুলশিটার কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা সে কেয়ারই করবে না। তার মনোযোগ দর্শক/শ্রোতাদের রিয়্যাকশনের দিকে, ইম্প্রেশনের দিকে। অর্থাৎ ট্রুথের ব্যাপারে বুলশিটার ইনডিফ্রেন্ট।

উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।

রানাপ্লাজা ধ্বসের পরে মন্ত্রী যখন কারন হিসেবে কিছু লোকের ভবনের পিলার ধরে ধাক্কাধাক্কির কথা বললেন কেউ তার কথা বিশ্বাস করে নাই। এমনকি, আমার ধারণা তার নিজেরও বিশ্বাস হয় নাই কথাটা। আপনি বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না এইটা নিয়া তার মাথা ব্যাথা নাই। যদি সে মিথ্যা বলতো তাইলে তাকে তার উদ্দেশ্য হৈতো মিথ্যাটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। কথাটা আসলে পিওর বুলশিট।

অথবা মনে করা যাক, সবাই জানে রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। তারপরও ‘সুপার ক্রিটিক্যাল’ প্রযুক্তি ইত্যাদি কথা বলে যারা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না দাবি করার চেষ্টা করে, তারা বুলশিটার। তাদের বক্তব্যের সত্যি-মিথ্যা নিয়া তাদের মাথা ব্যাথা নাই, বুলশিটারদের থাকে না। এরা ট্রুথের ব্যাপারে ইন্ডিফ্রেন্ট। আর আপনি তার কথা বিশ্বাস করবেন কি করবেন না। ওটা নিয়েও সে মাথা ঘামায় না। ঘামায় অন্য কিছু নিয়ে। ফ্রাঙ্কফুর্ট বলেন, bullshitter is trying to get away with something.

কীভাবে? বুলশিটিইং-এর মাধ্যমে তৈরি ইমপ্রেশনের মাধ্যমে। প্রডাক্টের বিষয়ে যে ভালো ভালো কথা বললো বিজ্ঞাপন তা আপনি বিশ্বাস না করলেও আপনার হয়তো বিজ্ঞাপনের মডেলের মতো আকর্ষনীয়, সুখী আর সফল হইতে মনে চাইলো। হরলিক্স দিয়া দুধের শক্তি পুষ্টিগুণ বাড়াইতে টিভিতে যে সুখী সমৃদ্ধ ‘ভাবি’র কথা আপনার বিশ্বাস হইতে না পারে, তার পরিবারের সুখী, দৃষ্টিনন্দন লাইফস্টাইল আপনাকে প্রলুব্ধ কিন্তু করতেই পারে।

বর্তমানে বুলশিটের মহামারির কারণ কী?

বুলশিটের প্রধান উৎপাদনক্ষেত্র এ্যাডভার্টিজিং ইন্ডাস্ট্রি, পি-আর মার্কেটিং শোবিজনেসসহ অন্যান্য মিডিয়া-সম্পর্কিত অঞ্চল। পলিটিক্স তো আছেই। এছাড়া ফ্রাঙ্কফুর্টের মতে, ‘পরিস্থিতির দাবিতে নিজেই বোঝে না এমনসব কথা-বার্তা কারো বলা লাগলে বুলশিট অবধারিত। ফলে, বুলশিটের উৎপাদন বেড়ে যায় যখন ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্টি বিষয়ে কথা বলার বাধ্যবাধকতা থাকে বা সুযোগ ঘটে যার প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ব্যক্তির আয়ত্ত্বের বাইরে। পাব্লিক লাইফে এই বিড়ম্বনা নৈমিত্তিক ঘটনা, যেখানে তাদের নিজেদের প্রবণতা বা অন্যদের চাহিদার কারণে হোক, লোকজন প্রায়শই এমন সব বিষয়ে প্রচুর কথা বলতে বাধ্য হয় যেসব বিষয়ে তাদের তেমন কোনো ধারণাই নাই। মোটামুটি এইরকম ঘটনা ঘটে মূলত ব্যাপক বিস্তৃত ধারণা থেকে যে, গণতন্ত্রে একজন নাগরিকের সমস্ত বিষয়েই, অন্তত যা কিছু তার দেশ সংশ্লিষ্ট, মতামত দেওয়াটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।‘

বুলশিট মিথ্যার চাইতেও ভয়ঙ্কর কারণ এই জিনিস আইডেন্টিফাই করা বেশি কঠিন। ফ্যাক্ট চেকিং-এর প্রশ্নই আসে না। এর প্রভাবের মধ্যে একটা হৈতেছে, বুলশিট ট্রুথ/সত্যি জিনিসটাই হালকা করে দেয়। একটা শর্ট ডকুমেন্টারিতেও এই কথাগুলা জনাব ফ্রাঙ্কফুর্টের মুখে শোনা যাবে।

বুলশিটের দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল হৈতেছে, অর্থনীতির গ্রেশামস ল’র মতো; ( তুলনাটা ফ্রাঙ্কফুর্ট দেন নাই, আমারই) ব্যাড মানি গুড মানিকে যেমন মার্কেট ছাড়া করে, তেমনি বুলশিট সমাজের ট্রুথ জিনিসটারেই প্রায় নাই করে দেয়। সমাজে ট্রুথের যে ‘পবিত্র’ ভাবমূর্তি সেইটারে গুড়ায়া দেয়।

‘অন বুলশিট’ নাম শুনে যদি মনে করেন খুবই মজার বই হবে তাহলে হতাশ হইতে পারেন। সাইজে ছোট হৈলেও টিপিক্যাল ফিলসফি টেক্সটের মতোই দুষ্পাঠ্য। আইভি লিগ এক প্রফেসর বুলশিটের মতো টার্ম নিয়ে সিরিয়াস দার্শনিক বই লিখেছেন এইটাই পাঠকদের কৌতূহলী করে থাকবে হয়তো। নতুবা প্রচুর পাঠক পাওয়ার কথা না। একাডেমিক, দার্শনিক লেখায় আর্গুমেন্টের সফিস্টিকেশন থাকবে, গদ্য হুমায়ুন আহমেদের সহজ, সুস্বাদু গদ্যের মতো হবে না স্বাভাবিক। অধিকন্তু, একাডেমিক লেখা হিসেবেই যতটা পরিষ্কার হতে পারতো ফ্রাঙ্কফুর্টের লেখাটা তার ধারে-কাছেও নাই। জার্গনের ভিড়ে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা আছে প্রচুর যার উপযুক্ত নাম একাডেমিক বুলশিট। উনি ৬৭ পৃষ্ঠায় যা যা বলেছেন একটু যত্নবান হইলে অনধিক ২০ পৃষ্ঠায় বলা যাইতো। তাছাড়া বুলশিট চিহ্নায়নের যে প্রয়াস উনি নিছেন সেইটাও যথেষ্ট কনভিন্সিং মনে হয় নাই। কারণ বলি।

ফ্রাঙ্কফুর্ট মূলত মোরাল ফিলসফার। ট্রুথ বা সত্যিকে যেভাবে উনি ধ্রুব ধরে আলোচনা করেছেন এবং সেই ট্রুথের সাপেক্ষে যেভাবে মিথ্যা ও বুলশিটের আলাপ করেছেন, তাতে এইটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ট্রুথের পোস্টমডার্নিস্ট মতকে উনি বেইল দিতে চান না। ‘পোস্টমডার্নিস্ট’ শব্দ তার লেখায় কোথাও উল্লেখ না থাকলেও দার্শনিক হিসেবে তার পজিশন লেখাটা থেকে টের পাওয়া যায়। ট্রুথেরও যে রিলেটিভিটি আছে, নানান রকম শেড আছে, ব্যক্তি-স্থান-কালভেদে ট্রুথ যে বদলাইতে পারে পোস্টমডার্নিস্টদের এইমতকে উনি পাত্তা দেন নাই। এইটা অসাবধানতাজনিত ঘটছে এমন ভাবার কারণ নাই। উনি সচেতনভাবেই করছেন। এবং শুধু ট্রুথ না প্রায়শ উনি ‘দ্য ট্রুথ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন বইয়ে।

ফ্রাঙ্কফুর্টের মতানুযায়ী, মিথ্যাবাদী জানে সে মিথ্যা বলতেছে এবং সচেতনভাবে করে। অন্যদিকে, তার বক্তব্য সত্যি না মিথ্যা বুলশিটার সেই বিষয়ে আদৌ মাথা ঘামায় না। ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাবিত ডিস্টিংকশন অনুযায়ী, মিথ্যাবাদী ও বুলশিটার উভয়েই তাহলে অসত্যের কারবারি, তবুও কেন মিথ্যাবাদীর চাইতে উনি বুলশিটারকে বেশি ক্ষতিকর মনে করেন? বইটা দুইবার যত্ন নিয়ে পড়েও বিষয়টা আমি পরিষ্কার বুঝি নাই। বরং মনে হৈছে ফ্রাঙ্কফুর্টের আর্গুমেন্ট যথেষ্ঠ কনভিন্সিং না।

কেবল ট্রুথ-এর প্রতি ইনডিফরেন্স দিয়া বুলশিটরে চিহ্নায়নের প্রক্রিয়াটা যথেষ্ট না। ডেফিনিশনে ত্রুটি মনে হৈছে, (কিছুদিন প্রাগম্যাটিক্স নিয়া কিছু বইপত্র পড়েছিলাম বলেই হয়তো মনে হইতেছে) উনার আলোচনাটা পুরাপুরি সেমান্টিক এনালিসিস হওয়ার কারণে। বুলশিটের ক্ষেত্রে, সেমান্টিক্সের ইনভল্ভমেন্ট থাকলেও, আদতে এইটা প্রাগম্যাটিক্সের সাথেই বেশি সম্পর্কিত মনেহয়।

[ভাষাতত্ত্বের দুইটা ফিল্ড হিসেবে, সেমান্টিক্স ও প্রাগম্যাটিক্স উভয়ই মিনিং সম্পর্কিত বিদ্যা হইলেও সেমান্টিক্স যেখানে এক্সপ্রেশনের (অভিব্যক্তি), মিনিং, রেফারেন্স, ট্রুথ ইত্যাদির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে সিগনিফায়েড সিগনিফায়ার, কোডিং–ডিকোডিং ইত্যাদি যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, প্র্যাগমেটিক্স সেখানে সবার আগে জোর দেয় কন্টেক্সটের উপর। কথা বলাকে প্র্যাগমেটিক্স শুধু তথ্যের আদান–প্রদান হিসেবে বিবেচনা করে না, জাস্ট কমিউনিকেশন বা মনের ভাব প্রকাশ করা বিবেচনা করে না। বরং পারফর্মেন্স হিসেবে দেখে (একাডেমিক টার্ম ব্যবহার করলে কথাবলা একধরণের ‘পার্‌ফর্‌মেটিভ আটারেন্স’ বা ‘স্পিচ এ্যাক্ট’ )।

এইভাবে দেখাতে কোনো এক্সপ্রেশনের মিনিং নির্ধারণে, কন্টেক্স অর্থাৎ বক্তা, ইন্টেনশন, সময়, পরিস্থিতি, রাজনীতি–অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয় এসে পড়ে আর জোরালোভাবে আসে ‘কেন?’ প্রশ্নটা। বর্তমান লেখাটা যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন নেটে সার্চ করে দেখলাম যে বুলশিট নিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টের সেমান্টিক ডেফিনিশনের কোনো ক্রিটিক বা এই দিকটা আলোচনা করছেন কিনা। অবাক হইলাম তেমন কোনো লেখা চোখে না পড়ায়।

বর্তমান ভাষাতত্ত্ব (ও দর্শন, যেহেতু বর্তমানকালের দর্শন, যাকে এনালিটিক ফিলসফি বলে, মূলত ভাষা ও মিনিং নিয়ে মাইক্রোস্কোপিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনেই রত) যে সচেতনভাবেই প্রাগম্যাটিক্স এভয়েড করে সেমান্টিক্সের দিকে ঝোঁকা তার কারণ অবশ্য বোধগম্য। রাজনীতি এড়ায়ে, ক্ষমতা শ্রেণী ইত্যাদি এড়ায়ে ‘নিরপেক্ষ’ দর্শনচর্চা করা যায় তাতে। যা হোক, অধুনা দর্শনে প্র্যাগমেটিক্স এর জায়গা কতটুকু বুঝতে ‘প্রাগমেটিক্স’ ও ‘সেমান্টিক্স’ লিখে গুগল করলাম। গুগল দেখালো, সেমান্টিক্সের জন্যে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ রেজাল্ট। অন্যদিকে প্রাগম্যাটিক্সের জন্যে মাত্র ৯০ লাখ! বর্তমান জগতের জ্ঞানচর্চার স্বভাবচরিত্র বুঝতে এইটা একটা ছোট্ট ইশারা। বুঝলাম ফ্রাঙ্কফুর্টের এই ডেফিনিশনের অনেক রকম সমালোচনা থাকলেও প্রাগমেটিক্স নিয়া তাদের কেউ তেমন কোনো কথা বলতেছে না কেন।

(সেমান্টিক্স ও প্রাগম্যাটিক্স নিয়া উদারহণসহ বিস্তারিত পরিষ্কার ধারণা এইখানে দিতে পারলে ভালো হৈতো। এই আলাপটা আরও মজা নিয়ে বোঝা যাইতো। বিশদে যাওয়ার সুযোগ এইখানে নাই। লেখাটাও লম্বা হয়ে যাইতেছে। প্রিয় রিডার, আপনি এখনো আমার সাথে আছেন? থাকলে থ্যাংক্স। প্রাথমিক ধারনা পাইতে উইকিপিডিয়া ঘুরে আসতে পারেন।

অথবা এই লেখাটা পড়তে বোরিং লাগলে বুলশিট নিয়ে কমেডিয়ান জর্জ কার্লিনের এই ক্লিপটা দেখা যাইতে পারে। দিস ইজ নো বুলশিট পার্ফমেন্স! স্ল্যাং–এ এ্যালার্জি না থাকলে নিশ্চিত মজা পাবেন। কার্লিনের এই পারফরমেন্সটা কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্টের বইটা প্রকাশের আগের অর্থাৎ ২০০৫ সালের আগের। ) ]

প্রবলেমটা সেমান্টিক্সের না প্রাগমেটিক্সের। কেননা, বুলশিটার আর মিথ্যাবাদীর ক্ষেত্রের ট্রুথের ধারণাটাই আলাদা হওয়া উচিৎ যেহেতু তারা দুইটা আলাদা কাজ করতেছে। মিথ্যাবাদী ট্রুথের বিষয়ে আমাদের ভুল পথে নেওয়ার চেষ্টা করে, বোঝায় এইটা না ওইটা সত্যি। বুলশিটার আমাদেরকে এমনভাবে ম্যানিপুলেইট করার চেষ্টা করে যে, তাকে আপাতভাবে মনে হবে, সে একধরণের ইফেক্ট তৈরি করতে চাইতেছে বলেই সে এই মিথ্যা বলতেছে, আসলে সে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম ইফেক্ট তৈরি করার চেষ্টা করা। বুলশিটারের কাজ আপনাকে বিশ্বাস করানো না (যদিও অল্প কিছু ভোলাভালা লোক বিশ্বাস করতেও পারে) অর্থাৎ তার মিথ্যাও মেনিফোল্ড মিথ্যা!নিতান্ত ট্রুথের প্রতি ইন্ডিফ্রেন্ট থাকা না, আরও জটিলতর মিথ্যা।

মন্ত্রীর ভাষ্য, বিল্ডিং-এর পিলার ধরে নাড়াচাড়া করার ব্যাপারটা বিবেচনা করা যাক। তার ইন্টেনশন এইটা না যে আপনি তারে বিশ্বাস করেন, আসলে মিথ্যা দিয়ে সে অন্য কিছু হাইড করতেছে, বা আপনারে বিজি রাখতেছে অথবা তার অন্য কোনো এজেন্ডা আছে। মিথ্যাবাদী এবং বুলশিটারের ইন্টেনশনের ধরণের তফাৎ, কনটেক্সটের পার্থক্য আমলে নিয়েই বুলশিট ডিফাইন করা উচিৎ মনে হয়। সেইটা কিভাবে হবে জানি না। ডিফাইন করার কাজটা আমি নিতেছিও না অবশ্য।

ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদদের জন্যে কঠিনতম কাজটা হবে এতো এতো বুলশিটের ভিড়ে সত্যি খুঁজে বের করা। যে হারে ফেইকনিউজ সাইট ও ফেইক উদ্ধৃতির বন্যা চলতেছে চারিদিকে এইটা আসলেই আতঙ্কজনক পোস্ট-ট্রুথ যুগ। এই যুগে সর্বত বিরাজমান জিনিস মহান বুলশিট।

‘অন বুলশিট’ বইটা বুলশিটের সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া আপনাকে তথ্যের অথেনটিসির বিষয়ে যথেষ্ঠ সংশয়ী করে তুলবে। চারপাশের বুলশিটের ভিড়ে হয়ত নন-বুলশিটিং এলিমেন্ট খুজে বের করতেও হেল্পাবে। একসময় আমার সন্দেহ ছিলো অধিকাংশ মানুষ যা বলে সেসবের বেশিরভাগই জাস্ট ইফেক্ট, ইম্প্রেশন ও ম্যানিপুলেশনের জন্যে বলে। বইটা পড়ে সন্দেহটা প্রায় বিশ্বাসে পরিণত হৈছে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড