• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জান্তব বিভীষিকায় অনির্বাণের ‘যকৃৎ’

  মাসুম আহমেদ আদি

১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৪১
যকৃৎ
যকৃৎ (লেখক: সৈয়দ অনির্বাণ)

বইয়ের নাম: যকৃৎ লেখক: সৈয়দ অনির্বাণ প্রকাশক: বহুমাত্রিক জনরা: ডার্ক ইয়াং এডাল্ট হরর প্রচ্ছদ: হুমায়রা আহমেদ তিহি পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৭৬ মূল্য: ২৭৫ টাকা মাত্র

রকি, আলিফ এবং শিহাব। একটা আবাসিক কলেজে পড়ে। স্টাডি গ্যাপের কারণে তিনজনই ক্লাসের সিনিয়র। সেটার ফায়দা নিতেও ছাড়েনা কেউ। রকি খুব চঞ্চল, খুব উড়ে বেড়ায়। আলিফ মোটামুটি গোছের, চিন্তাভাবনায় রকির থেকে ভালো। শিহাব সবসময়ই নির্লিপ্ত, জগতের কোনোকিছুতেই তার কিছু যায় আসে না। এর পেছনে দায়ি ছোটোবেলায় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। অত গভীরে না যাই। যাইহোক, ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ পালিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে চলে যাবে। সপ্তাহখানেক মৌজ মাস্তি করবে ওখানে। সেজন্য দরকার বেশ মোটা অংকের টাকা। সেটাও প্ল্যানমাফিক বন্দোবস্ত হয়ে আছে। এখন শুধু প্ল্যানটা কার্যকর করার পালা।

ওদের সাথে ঘটনাক্রমে ভিড়ে যায় নিশি নামের একটা মেয়ে। তানজিনা আগে থেকেই প্ল্যান এ ছিল। নিশিকে নিয়ে মহাবিপদ। যাইহোক, বিপদ কাটিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত চলেও গেল ওরা। কিন্তু বাধ সাধলো প্রকৃতি। ওদের আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ফুর্তি করতে দিল না। প্রচন্ড প্রলয়ঙ্করী ঝড় উঠল সাগরে। দশ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হলো। এখন আর কি, হোটেলে বসে বসে বোর হও। অবশ্য বারটা খোলা আছে, এই যা ভরসা। কিন্তু এই ঝড়ের রাতে, বৃষ্টি ও বাতাসের তান্ডবের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল জান্তব এক বিভীষিকা! অতিপ্রাকৃত শক্তিধর এক বুড়ি, যার প্রধান লক্ষ্য মানুষের কলিজা!

এদিকে অন্য একটা টাইমলাইনে একটা আন্ডার কন্সট্রাকশন বাড়িতে পাওয়া গেল তিনটি লাশ। একজন বয়স্ক লোক, তার স্ত্রী এবং মেয়ে। মহিলা এবং তার মেয়ে একদম বিবস্ত্র। বোঝা গেল ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হলো, ধর্ষণটা কখন করা হয়েছে? খুনের আগে না পরে?

একদম প্রথম থেকেই আঠার মত লেগেছিলাম গল্পটার সাথে। এর জন্য দায়ি করা যায় লেখককে। লেখকের লেখনশৈলী এত চমৎকার, মনে হচ্ছিলো আমার সামনেই ঘটছে সব। মনে হচ্ছিল আমি আসলে বই পড়ছি না, সিনেমা দেখছি। এটাই হওয়া উচিৎ একটা লেখকের বৈশিষ্ট্য। এমন অনেক হরর বই পড়েছি যেগুলোর কাহিনী হয়তো মনে দাগ ফেলেছে, কিন্তু মনে হচ্ছিল অন্য কেউ মুভি দেখে আমাকে গল্পটা বলছে। মানে একদমই ঢুকতে পারিনি ভিতরে। সেইদিক দিয়ে এই বইটা ফার্স্টক্লাস। গল্পটা সাধারণ, কিন্তু পরিবেশনটা অসাধারণ।

হয়ত এর আগে কাছাকাছি প্লটের এমন অনেক গল্প আপনারা পড়েছেন, তবে সেগুলো কতটা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন সন্দেহ আছে। স্কুল পালানোর ব্যাপারটা নস্টালজিক। আপনার আমার অনেকের জীবনেই এরকম ঘটনা আছে। ছোটবেলায় হয়তো স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গেছেন কেউ, কেউ হয়তো খেলা দেখতে গেছেন, আবার কেউ হয়তো ঘুরতে চলে গেছেন। বইয়ের প্রথম দিকে যখন রকি, আলিফ আর শিহাব পালিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান করছিল, তখন ভিতরে ভিতরে নিজেও একটা থ্রিল পাচ্ছিলাম। ভেতর থেকে কেউ একজন বলতেছিল, এবার মজা হবে!

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:

নতুন প্রকাশনীর নতুন বই। কাগজের মান এবং বাঁধাই প্রশংসনীয়। প্রচ্ছদটা অতটা ভালো লাগেনি, বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে কিছুটা মিল রাখার দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। কি এবং কী এর ব্যবহার কয়েক জায়গায় গোলমাল করে ফেলেছে। এছাড়া বানান ভুল প্রায় নেই বললেই চলে।

তবে, একই লেখায় কোনো ভিন্ন উক্তি ব্যবহার করতে আগে একই ফন্ট ইটালিক ব্যবহার করা হত। কিন্তু সেটা থেকে বের হয়ে মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ ভিন্ন ফন্ট ব্যবহার শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই বইয়েও সেটা ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু, এটায় কেন যেন দৃষ্টিকটু লেগেছে ফন্টটা, কাছাকাছি অন্য কোনো ফন্ট ব্যবহার করলে হয়তো ভালো লাগতো। পড়তে গিয়ে কিছুটা স্লো হয়ে যেতে হয়েছে ঐ ফন্টে। ভালো কথা, যারা পড়বেন ভাবছেন, অবশ্যই রাতের বেলা পড়বেন।

হ্যাপি রিডিং।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড