রওশন আরা মুক্তা
১ চোখ খুললে যা থাকে, মুদলে তা কেন থাকে না! সূর্যের নিচে সব বোধ গলে যায়। কালো হয়ে আসে রোদের কণারা। ব্ল্যাকআউট। দপদপ করে জ্বলে উঠেই যে-নক্ষত্র নিভে যায়, উজ্জ্বল এক আগুন মুহূর্ত বুকে ছুরি চালিয়ে, যে-পাপের বা যে-পুণ্যের লালফিতা কাটে, সেই সুপারনোভার ধূলি-কুহেলিকায় কী হারায়? কোন ভ্রূণ আত্মহত্যার কথা ভাবে,— বিকলাঙ্গ জন্ম চায় না। কোন জরায়ু জরাগ্রস্ত হয়, জেনিথের নিচে?
২ দুটো মানুষের হৃদয়-নিংড়ানো আর্তনাদ গুলে যায় ব্রহ্মপুত্রের টলটলে জলে। তীরের গোড়ালি-সমান জলে চিকচিকে বালুর প্রতিটি কণায় কার প্রতিবিম্ব ফুটে থাকে? মৃদু ঢেউয়ে জল সরে যায়, নতুন জল আসে, কার ছবি ভাসে সেই জলে? রোদের ছায়া পড়ে মুখে, চুলে বাতাস লাগে, ব্রহ্মপুত্রে আবার জল ভাসে, আরো জল ভাসে, ভ্রূণের হাসি মুছে যায়, আশঙ্কায় দুরুদুরু বুকে ভ্রূণ স্বপ্নে আসে, মা ডাকে, কাঁদে। আমাকে মেরো না!
৩ ভ্রূণ তোমাকে আর ডাকব না, ভ্রূণ, আমার নাভি থেকে খুলে নাও তোমার নল; আমার রক্তস্বল্পতা। তোমাকে শরীরে রাখব না আর। গর্ভে, ওমে, প্রেমে রাখব না। ভ্রূণের নল খুলে যায় নাভি হতে। লাল হয়ে যায়, লাল হয়ে যায়, ব্রহ্মপুত্র লাল হয়ে যায়! জলে ভেজানো পায়ে আলতা-পরা হয়ে যায়, ব্রহ্মপুত্র আমার লাল হয়ে যায়— গর্ভপাতের রক্তে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের অক্সিজেনহীনতা গ্রাস করে নারী শরীরকে। চিৎকার চাপে দাঁতে ঠোঁট চেপে।
৪ মহাজাগতিক পোকারা লালফিতা খায়, লাল লাল, লাল লাল, লাল ফিতা। মাকড়সার মতো জাল বুনে লালসুতা দ্বারা— লালসালু। ভ্রূণের সমাধি ঢাকে লালসালু। দুপুরবেলার ব্রহ্মপুত্র লাল হয়ে যায়, লাল হয়ে যায়। রক্তজমা বুকে সাদা দুধ জমে না, ব্রহ্মপুত্র লাল হয়ে যায়! ব্রহ্মপুত্র হিমশীতল বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে। রক্তলাল— লাল লাল— বরফে ঢাকা পড়ে যায়। বরফ-চরে লালসালুতে ঢাকা ভ্রূণের সমাধিতে স্বরগ্রাম রেওয়াজ করে, অরোরা আলোর নিচে। বেহালা বাজে, রাতের আঁধারে ফোটে সুন্দর সব ফুল।
৫ শেষ বিন্দুটুকু মুছে ফেলে, জরায়ু ব্যবচ্ছেদ শেষ করে। লাশকাটা পোকারা দাঁত ঘষে, ক্রূর হাসি হাসতে গিয়ে মিইয়ে যায়। ভ্রূণ হত্যা মহাপাপ। লাশকাটা পোকারা ভ্রূণকে আগলে রাখে। কীটেরা জানে, ভ্রূণহত্যা মহাপাপ। সামাজিক জরায়ু জানে না— ভ্রূণহত্যা মহাপাপ।
৬ তোমাকে পথ দেখাবার কালে, একজোড়া ফিরোজারঙা ফড়িং আমাকে জানিয়েছিল, ভ্রূণহত্যা মহাপাপ। ওরা মিলিত হতে হতে উড়ছিল, জোড়া-লাগা দুই শরীরকে এক শরীর বলে ভ্রম হয়। ফিরোজারঙা ফড়িং আমি আগে দেখি নাই, সঙ্গমরত ফড়িং আমি আগে দেখি নাই। তারা উড়ে এসে কেন তোমার হাতে বসল! কেন আমি দেখলাম? মিলনে একাকার ঘাসফড়িং; আমি কেন দেখলাম?
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড