• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

সাহিত্যে সঙ্গীতের ছোঁয়া : দ্য কালার অফ ওয়াটার

  আফিফা আনোয়ার

১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৩
বই
প্রচ্ছদ : দ্য কালার অফ ওয়াটার

জেমস ম্যাকব্রাইড তার দ্য কালার অফ ওয়াটার মেমোয়ার গ্রন্থটিকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন অনেকগুলো দিক থেকে। লেখক তার মেমোয়ারে দুটো ভয়েস ব্যবহার করেছেন। তার জীবনকাহিনী পাঠক শুধু তার কাছ থেকেই শোনেনি, শুনেছে তার মা রুথি ম্যাকব্রাইড জরডানের কাছ থেকেও। জেমস তার লেখায় শুধুমাত্র একজন ভালো মেমোয়ারিস্ট-এর কলাকৌশলই ব্যবহার করেননি, বর্ণবাদের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য তিনি ওরাল হিস্টোরিয়ান-এর মতোও কাজ করেছেন।

দ্য কালার অফ ওয়াটার একটি পরিবারের নিজস্ব সত্ত্বার অনুসন্ধানও বটে। ম্যাকব্রাইড অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বর্ণনা করেছেন একজন কালো মানুষ দাবি করা সাদা মায়ের সন্তান হিসেবে তার জীবনযাত্রা ও সেই মায়ের বারোটি সন্তান কী কী অভিঘাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে কালো অধ্যুষিত এলাকায়।

জেমস ম্যাকব্রাইড নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন এলাকায় কালোদের জন্যে নির্মিত প্রজেক্ট হাউজে বারো জন ভাইবোনের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন একজন কালো চার্চ মিনিস্টার ও সাদা রেসের মা যিনি কিছুতেই নিজেকে সাদা হিসেবে স্বীকার করতেন না। কালো এলাকায় জেমস সব সময় তার মায়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। কিন্তু মা তা উপেক্ষা করে নিজেকে নিরন্তর কালো হিসেবে দাবি করেছেন আর তার সবগুলো সন্তানের কলেজ গ্রাজুয়েশনের স্বপ্ন দেখেছেন। জেমস প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার মায়ের অতীত সম্পর্কে জানতে পারেনি, বইতে তার মা রুথের কণ্ঠে জেমস অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে পাঠককে জানান দিয়েছেন কীভাবে রুথের পরিবার ১৯২১ সালে পোল্যান্ড থেকে ইহুদী ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান শুরু করেন। রুথের বাবা ছিলেন একজন ইহুদী সিনেগগের র‌্যাবাই। কিন্তু পরিবার চলার জন্যে তারা একটি জেনারেল স্টোরের ব্যবসা শুরু করে।

বাবাকে সাহায্য করতে গিয়ে রুথ উপলব্ধি করেছে সে এমন একজনের সন্তান যিনি বর্ণবাদী ও কালোকে সুযোগ পেলেই ঠকাতেন জিনিসপত্র বেশি দামে বিক্রি করে। ছেলেবেলায় রুথ দুর্ভাগ্যবশত দেখতে সক্ষম হয়েছে কী করে সাদা জনগোষ্ঠী চারদিকে অত্যাচার ও আক্রমণাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি করতো ক্রমাগত। তখন থেকেই রুথ সাদা ইহুদী গ্রুপ থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে শুরু করেছে। একটু বড় হতেই রুথ এন্ড্রু ডেনিস ম্যাকব্রাইড নামে এক কালোকে বিয়ে করে নিজ পরিবার ছেড়ে নিউ ইয়র্কের হারলেমে জীবন যাপন শুরু করে। তখন থেকেই সে কালোদের জীবন আচরণ গ্রহণ করে ও নিজেকে কালো মহিলা ভাবতে শুরু করে।

নিউইয়র্কে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে রুথ জুডাইজম ছেড়ে ক্রিশ্চিয়ানিটি গ্রহণ করে ও ‘পাওয়ার অফ ফরগিভনেস’ বা ক্ষমার ক্ষমতায় আরো বেশি ডুব দেয়। সত্য উন্মোচনের আগ্রহে জেমস ম্যাকব্রাইড এই বই রচনায় হাত দেয়। যা আসলে নিজের অতীত তথা নিজের বর্ণ, ধর্ম ও সামাজিক পরিচয়কে নতুন করে খুঁজে পাবার প্রয়াস। যেভাবে লেখক তার জীবনের বিভিন্ন ছোট ছোট ঘটনা ও অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন তাতে নিজের না জানা অতীত খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যাবার হতাশা ব্যক্ত হয়েছে বেশি। নিজের রেসিয়াল আইডেনটিটি বা বর্ণপরিচয় জানার জন্যে তার মাকে বার বার প্রশ্ন করেছে আর প্রতিবারই তার মায়ের উত্তরে বুঝতে পেরেছে রেস মানুষের সেকেন্ডারী আইডেন্টিটি। বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে জেমস তার মায়ের অস্বাভাবিক পাগলামী আচরণগুলোকে বিভিন্নভাবে দেখবার দৃষ্টি অর্জন করে। যদিও ১৯৬০ সালের ‘ব্ল্যাক পাওয়ার’ মুভমেন্ট-এর সময় তার কষ্ট হয়েছে এই ধারাকে সর্বাত্মক ভাবে গ্রহণ করতে, কেননা তার মা দেখতে একজন সাদা এই সত্য তাকে কষ্ট দিতো।

রুথ ম্যাকব্রাইড যত শক্তির সাথে তার অতীত ও নিজস্ব পরিচিতিকে ঘৃণাভরে অস্বীকার করেছেন, ম্যাকব্রাইড-সন্তানরা তত শক্তির সাথে তাদের নিজস্ব ক্রসব্রিড কালো পরিচয়কে আঁকড়ে ধরেছে। তারই ফল হিসেবে বেশ কয়েকজন ম্যাকব্রাইড সন্তান সিভিল রাইটস মুভমেন্টে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। নিজ সত্তার পরিচয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে লড়তে গিয়েই হয়তো রেভ্যুলেশন হিসেবে রুথির সবগুলো সন্তান তাদের প্রফেশনাল জীবনে সার্থকতা অর্জন করেছে। বিধাতার রং কী এ প্রশ্নের উত্তরে জেমস-এর মা সবসময়ে বলেছেন ‘গড ইজ দ্যা কালার অফ ওয়াটার।’

দ্য কালার অফ ওয়াটারকে অল্প কথার বলা যায় একটি পরিবারে একজন মায়ের অপরাজিত ইচ্ছাশক্তি ও ভালোবাসা কীভাবে তার সন্তানদের জীবনে সার্বিক সাফল্য ঘটাতে পারে তার সার্থক অংকন। জেমস ম্যাকব্রাইড হচ্ছেন একজন দক্ষ লেখক ও সংগীতজ্ঞ। তিনি সংগীতের নোটের মতো রেস, পরিবার, ইতিহাস ও ধর্মকে বাজিয়েছেন সাহিত্যের সেক্সোফোনের মাধ্যমে।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড