• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একরাশ বিরহের সমন্বয় : তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে

  অধরা আঞ্জুমান পৃথা

১১ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪০
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে
প্রচ্ছদ : তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে

বই : তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে লেখক : হুমায়ূন আহমেদ প্রচ্ছদ : সুখেন দাস প্রকাশনী : কাকলী প্রকাশনী মূল্য : ১২০ টাকা

আমার বইপড়া জীবনে অত্যাধিক বইয়ের লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ। তিনি আমার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, 'কথা বোঝাতে হবে সাবলীল ভাষায়। তুমি ঘৃণা করো বা ভালোবাসো..কঠিন করে না বলে বলো সহজ করে। এমনভাবে বলো যেন দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করতে না হয়।' আমি তার এই যুক্তি মুখস্থ করেছি। তিনিই একমাত্র লেখক, যিনি অতি সহজ কথা দিয়েও চোখ ঝাপসা করে ফেলতে পারেন... পারছেন, পারবেন অনন্তকাল!

হুমায়ূন ভক্ত, হুমায়ূনের নেশা বা হুমায়ূনপ্রেমী হিসেবে তার সবকটা বই আমার কাছে অনবদ্য। আমি কোনো বইকে নম্বর দিয়ে প্রথম দ্বিতীয় বা তৃতীয় করতে পারবো না। অন্ধভক্ত হিসেবে সে সাহস আমার হয় না।

তাই বইয়ের সঠিক মান যাচাই করতে হলে পাঠককে একবার হলেও হুমায়ূন জগতে প্রবেশ করতে হবে... হবেই!

উক্ত বইটি আমি আমার এক আপুকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলাম। পড়া হয়নি আগে। হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে ফোন আসলো, তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন এই প্রশ্ন করার আগেই বললেন, 'পৃথা! তুমি আমাকে এমন বই আরও দিবে। বই পড়ে কষ্ট পেতে আর কাঁদতে আমার ভালো লাগে।' তিনি হেচকি তুলছেন আর আমাকে অনুরোধের সুরে বই দেয়ার কথা বলছেন।

আমি তাঁকে আস্বস্ত করলাম- এরকম বই আরও দিবো! অনেক দিবো....সব হবে হুমায়ূন আহমেদের!

গতরাতে এই বই পড়তে বসেছি। অতি শক্ত হৃদয়ের মানুষ হয়েও আমি শেষ পাতায় এসে সামলে থাকতে পারিনি। আবেগ সামলে রাখা যায় কিনা জানি না..কিন্তু চোখের পানি সামলে রাখা কষ্টের! মারাত্মক কষ্টের!

পাঠক বইয়ের রিভিউ পড়েই পূর্ব ধারণা নিক বইটি কেমন।

রিভিউ :

একটি অদৃশ্য প্রেমের উপন্যাস। যে প্রেম দেখা যায় না তা অদৃশ্যই তো! ঠিক প্রেমের বলা চলে না.. বিরহের.. অসীম বিরহের উপন্যাস এই বই!

একজন অমায়িক, সুবোধ, আর রুপসী প্রেমিকার চোখের সামনে তাঁর দীর্ঘদিনের চুক্তিবন্দী প্রেমিকের হারিয়ে যাবার গল্প...

চোখের সামনে মানুষটাকে তার মনে হচ্ছে, অথচ সে অলক্ষে চলে যাচ্ছে অন্যকোথাও... অন্যকারো ঘ্রাণে হচ্ছে মাতোয়ারা...

প্রেমিকও জানে না সে দূরে যাচ্ছে। প্রেমিক চায়mনা সে এতদিনের ভালোবাসায় ঢিল ছুঁড়তে। অদৃষ্টচর কিছু যেন তাঁকে বাধ্য করাচ্ছে অন্যকারো কাছে যেতে.. সে তাই যাচ্ছে। একটু একটু করে প্রস্থানে নাম লেখাচ্ছে নিজের অজান্তেই! সে নিয়তির ফাঁদে আটকে গেছে। সে ফাঁদ কেউ ভাঙতে পারছেনা...

এই প্রস্থানোদ্যত ব্যথা সেই রূপবতী প্রেমিকা কীভাবে সহ্য করবে? অধিকার হারাবার চেয়ে যে 'হারিয়ে যাচ্ছে' ঘটনার পীড়া বেশী! সে কাকে বোঝাবে?

লেখক প্রেমিকার ব্যথা বোঝার জন্যে তাঁর ছোটবোনকে নিয়ে এসেছে..

অবনী এবং শ্রাবণী দুই বোন। অবনীর সমস্ত কষ্ট শ্রাবণী উপলব্ধি করে। শ্রাবণী মানুষের মন পড়তে পারে... সে মন পড়ার ক্ষমতা দিয়ে তাঁর মায়ের মাঝরাতের কান্নার কারণ বের করে ফেলেছে। তাঁর আরও অনেক কিছুর ক্ষমতা আছে! সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হিসেবে লেখক প্রকাশ করেছে মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা শ্রাবণীর প্রবল।

অবনী সহজ সরল। সন্ধ্যারাতে মাঠের মাঝখানে এক বটগাছের নিচে জোৎস্ন্যা দেখতে আসা যুবককে ধমক দিয়েও সে বোঝেনি তাকে সে পছন্দ করে ফেলেছে... তারতো প্রেমিক আছেই! শাহেদ তাঁর প্রেমিক। শাহেদকে অবনী পুরো বইয়ের কোথাও এক ফোঁটা অবহেলা করেনি...শাহেদও করেনি। কিন্তু তবু তারা কেউ কারো সাথে থাকতে পারছে না... কেন পারছে না? অন্যকারো অনুপ্রবেশে সব ফিকে হয়ে গেছে? সেই অন্যকেউটা কে?

লেখক এত গুছিয়ে কীভাবে বিরহ রটাতে পারেন আমি জানি না। জানার চেষ্টা কখনো কাজেও লাগেনি.... সুপাঠকই এর সঠিক ব্যাপার ধরতে জানবেন আশা করছি।

শেষে,

প্রকৃতি সবকিছু নিজের মত করে গুছিয়ে নেয়। কাউকে জানতে দেয় না সে কখন কী করতে চলেছে... ভালোবাসার ব্যাপারেও সে কোনো তথ্য দেয় না।

তাই যুগযুগ ধরে অবনীরা ভালোবাসার মানুষ নিয়ে স্বপ্ন তৈরী করে যাবে। অথচ স্বপ্নে উঠবে ঘূর্ণিঝড়! স্বপ্নে রাখা হাতেরা বদলে গিয়ে চার থেকে দুই হয়ে যাবে। কারো কিছু করার নেই! কিছু করার থাকবে না!

অবনীরা কাঁদবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে...

আকাশ থেকে জোছনা গলে গলে পড়বে বিরহের রাতের দিন। শীতের বাতাসে যেন সেই জোছনা ভাসতে ভাসতে ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। কষ্ট বুঝতে পারা কোনোএক শ্রাবণী বোনের কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলবে 'কাঁদে না আপা। কাঁদে না!'

প্রতিটি বই পড়ে বইয়ের শেষ পাতায় আমি একটা লাইন লিখে রাখি। এটিতেও লিখেছি। "বই পড়ার পরবর্তীকালের অনুভূতি আপনার কাছে আমি কীভাবে পৌঁছাবো স্যার?"

জাদুকর জবাব দেননি....

একদিন দিবেন আশা করছি। হোক স্বপ্নে!

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড