সাহিত্য ডেস্ক
অনেক চেষ্টা করেও মেইন মনে করতে পারল না যে আজ কী বার!
অবশেষে একটা কাউচে বসে ৪১১ তে ফোন দিল সে।
“আপনি কোন শহর থেকে বলছেন?” ওপার থেকে বলে উঠলো মহিলা অপারেটর।
“লস অ্যাঞ্জেলস।”
“বলুন স্যার।”
“আজ কী বার?”
“দুঃখিত স্যার! আমি একজন অপারেটর!”
“আপনি একজন তথ্যদাতা, ম্যাডাম! আর এই দেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমার তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে!”
“আজ বুধবার স্যার।”
“ধন্যবাদ” এই বলে ফোনটা রেখে দিল মেইন।
বেশ সময় নিয়ে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করল মেইন। আর তারপর জায়গাটাকে সত্যিই বেশ সুন্দর লাগছিল। এটা ছাড়াও ম্যানহ্যাটন আর হসটনে দুটো অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ওর। রয়েছে হলিউড হিলে একটা প্রাসাদোপম বাড়ি আর মাওই দ্বীপে আরেকটা বাড়ি ( দুটোতেই রয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষটার স্মৃতি! এ দুটোতে বলতে গেলে যায়ই না সে)।
হলিউড হিলের বাড়িটাতেই সম্ভবত সে আর এলিজাবেথ অ্যাস্টন নিজেদের জীবনের সেরা সময়টা কাটিয়েছিল।
কেন যেন আজকাল এলিজাবেথের কথা একটু বেশিই মনে পড়ে মেইনের। হুইস্কির আরেকটা বোতলে চুমুক দিতে শুরু করল সে। এই মদ আর নেশা ব্যাপারটাই একমাত্র তার মন থেকে এলিজাবেথকে দূরে রাখে।
আজ মেইনের অনেক টাকা, অনেক বিখ্যাত সে! কিন্তু ওর কাছে এগুলো মূল্যহীন মনে হয়। সে নিজের ভালোবাসাকে বাঁচাতে পারেনি! পারেনি বন্ধুত্বগুলোকে টিকিয়ে রাখতে! সে কখনোই নিজের কাছের মানুষদের আঘাত করতে চায়নি, কিন্তু তারপরেও কোনো না কোনোভাবে সেই তাদের এতোটাই কষ্ট দিয়েছে যে তারা সবাই চলে গেছে। এজন্য মেইনকে খুব একটা দোষও দেওয়া যায় না। মিডিয়া এবং পাপ্পারাজিরা একদম জোঁকের মতো ওর পিছে সারাদিন লেগে থাকে, ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই রাখেনি এরা বেচারার জন্য। ওর সবকিছুই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়া হয়! আর সেজন্যই মেজাজটা মাঝে মাঝেই চড়ে যায় তার।
আর দিনের শেষে মানুষ তো মেজাজ দেখানোর জন্য কাছের মানুষগুলোকেই বেছে নেয়, তাই না? যাদের সাথে আপনার সম্পর্ক নেই তারা, না আপনার রাগের পরোয়া করে, না আপনার খুশির! তাই ওদেরকে মেজাজ দেখিয়ে আপনি কখনোই স্বস্তি পাবেন না! মেইনও মানুষ, আর মানুষের মতোই সে নিজের কাছের মানুষগুলোর সাথে মাত্রাতিরিক্ত খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে।
আগের পর্ব পড়তে : ডেল জেমসের ‘উইদাউট ইউ’ (অনুবাদ)
অনেক বন্ধু ওকে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেছে, কিন্তু লাভের অংকটা শূন্যই রয়ে গেছে। মদের প্রতি মেইনের আসক্তি একদমই কমেনি। গত কয়েকবছর ধরে নিয়মিত কোকেনও নিচ্ছে সে।
পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার তরুণের আদর্শ সে, অসংখ্য তরুণী মেয়ে তাকে নিজেদের স্বপ্নের নায়ক ভাবে! আর সেই মেইন প্রতিদিন আয়নার সামনে বসে বিড়বিড় করে বলে, “আমি একটা ভুল! শুধুই একটা ভুল!”
মাঝেই মাঝেই মেইন নিজেকে প্রশ্ন করে, “এলিজাবেথ মেয়েটা কেন বুঝত না যে অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিছানাতে গেলেই আমি ওদের হয়ে যেতাম না! ওটা শুধু একটা উত্তেজনা! আমি শুধু ওকেই ভালোবাসতাম!”
কিন্তু ভেতরে ভেতরে মেইন জানে যে আসলে সব দোষ ওরই। কোন মানুষই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে বিছানাতে কল্পনা করতে পারে না। এমনকি সে যদি কখনো শুনত যে এলিজাবেথ অন্য কারো সাথে শুয়েছে তবে সেও অনেক কষ্ট পেত। কিন্তু এসব বোঝার পরেও নিজেকে কখনোই এক নারীতে সন্তুষ্ট রাখতে পারেনি মেইন। মদ আর কোকেনের মতো নারীও তার কাছে একটা নেশাই! যদিও তার হৃদয়ের পুরোটাই শুধুমাত্র এলিজাবেথের জন্য।
হুট করে মেইনের কানে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হল। এটা খুবই স্বাভাবিক। মেইন এটাকে বলে উচ্চ ভলিউমের ‘রক এন’ রোল’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া! মাঝে মাঝেই এটা হয় ওর।
ব্যাথাটাকে পাত্তা না দিয়ে স্মৃতিচারণে মন দিল মেইন। ওর প্রাক্তন ব্যান্ড ‘সুইসাইড শিফট’ এর সাথে সেই ট্যুরের স্মৃতি! সেই সময়ে লম্বা ট্যুরে ছিল ওরা, আর গোটা বছর জুড়ে ২৮৪ টি কনসার্ট করেছিল। প্রতিটি কনসার্টের আগে এলিজাবেথকে বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দিত ও। এলিজাবেথও এসে পড়ত। স্টেজে ওঠার আগে এলিজাবেথ কে না দেখলে ওর চলতই না।
যেকোনো ট্যুরেরই সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ অংশ হল শেষ কনসার্ট। আর ওই ট্যুরের শেষ কনসার্টে সুইসাইড শিফট ছিল হেডলাইনার! মেইন খুব করে চাইছিল এলিজাবেথ এই কনসার্টে ওর সাথে থাকুক! সে ওকে টিকেটও পাঠিয়েছিল। কিন্তু এলিজাবেথের আসা হয়নি!
খুবই ভালো ছিল ওদের কনসার্টটা। মেইন প্রচুর পরিমাণে ড্রাগ নিয়েই স্টেজে উঠেছিল(সে সব কনসার্টের আগে এমনটা করে)। সেই কনসার্টের স্মৃতি এখনো চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে মেইনের। প্রতিটা গিটার একক বাজানোর সময়ের তার আঙ্গুলগুলোতে যেন স্বয়ং শয়তান ভর করছিল, প্রতিবার যখন সে মাইক্রোফনের সামনে যাচ্ছিল ‘পার্শ্ব কণ্ঠ’ দেওয়ার জন্য তার গলাতে যেন ঝরে পড়ছিল তার ব্যক্তিগত ঈশ্বরদের আর্শীবাদ! রক এন’ রোলের আত্মা ওর ওপরে ভর করেছিল সেদিন! ফ্লোরিডার ৪০০০ হাজারের বেশী দর্শক সেদিন উন্মাদ হয়ে গেছিল!
চলবে...
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড