• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জসীম উদদীন : কাব্যরসে পল্লীর চিত্রকর

  সাহিত্য ডেস্ক

১১ জুন ২০২০, ১১:৩৬
পল্লীকবি জসীম উদদীন
ছবি : পল্লীকবি জসীম উদদীন

‘ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।’

‘কবর’ কবিতাটি মাত্র ২৩ বছর বয়সে রচনা করে বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন তুলেছিলে একজন কবি। যিনি পল্লী মানুষের দৃষ্টি দিয়ে লিখেছেন কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। শুধু কি তাই, লিখেছেন ‘আমার সোনার ময়না পাখি, আমার হার কালা করলাম রে, কেমন তোমার মাতা পিতা, নদীর কূল নাই কিনার নাইসহ বিখ্যাত অনেক গান। যিনি সু-পরিচিত পল্লি কবি হিসেবে। যার কাব্যের গঠনপ্রণালী এবং বিষয়বস্তু পাঠককে বাংলা লোক সাহিত্যের প্রগাঢ় আস্বাদন এনে দেয়। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থকে যার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় তিনি অন্য কেউ নন কবি জসীম উদদীন। আজ এই কবির জন্মদিন।

জসীম উদদীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বূলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম ছিল মোহাম্মাদ জসীম উদদীন মোল্লা। তবে তিনি জসীম উদদীন নামেই পরিচিত। কবির বাবার নাম ছিল আনসার উদদীন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা ছিলেন মা আমিনা খাতুন। খুব অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। কলেজে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায়, পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে, একদম সাবলীল ভাষায় আলোচিত কবিতা কবর লিখেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় এই কবিতাটি প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়।

কবি লিখেছেন পল্লী মানুষের জীবন ও চালচিত্র, শ্রমিক দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের কথা। তার কবিতায় দোল খায়েছে কুমড়োর ডগা, কচি পাতা, ছোট্টো নদীর মাঠের রাখাল, সাপুড়ের মেয়ের অনুপম উপমা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তার ভাব-ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃতি কবির হৃদয় এই লেখকের আছে। নকশি কাঁথার মাঠ কবিতাকে সুন্দর কাঁথার মতো করে বুনেছে। তার আদরের চোখে দেখেছি আমি, কেনো না এই লেখার মধ্য দিয়ে বাংলার পল্লী জীবন আমার কাছে চমৎকার একটি মাধুর্যময় ছবির মতো দেখা দিয়েছে। আর এক ধরনের পল্লী কবিতা আছে যা ভাব গভীর ও দার্শনিকতা পূর্ণ।’

এছাড়াও জসীম উদদীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক গান রচনা করেছেন। বাংলার বিখ্যাত লোক সংগীত গায়ক আব্বাস উদ্দীন, তার সহযোগিতায় কিছু অবিস্মরণীয় লোকগীতি নির্মাণ করেছেন, বিশেষত ভাটিয়ালী ধারার। জসীম উদদীন রেডিওর জন্যেও আধুনিক গান লিখেছেন। তিনি তার প্রতিবেশী, কবি গোলাম মোস্তফার দ্বারা ইসলামিক সংগীত লিখতেও প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে, তিনি বহু দেশাত্মবোধক গান লিখেছেন।

জসীম উদদীনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ : রাখালী, নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানক্ষেত, সোজন বাদিয়ার ঘাট, হাসু, রূপবতী, মাটির কান্না, এক পয়সার বাঁশী, সকিনা, সুচয়নী,ভয়াবহ সেই দিনগুলিসহ প্রভৃতি।

আরও পড়ুন : খালিল জিবরানের ‘পূর্ণ চাঁদ’

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ (মরণোত্তর) অসংখ্য সম্মাননা। তবে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রত্যাখ্যান করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। বাঙলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। জসীম উদদীনের শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে ফরিদপুর জেলার আম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড