• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শরতের অতিথি

  সানজিদা সামরিন

২৪ মে ২০২০, ১৪:২৪
শরতের অতিথি
শরতের অতিথি

-বিভা! আশপাশ ফিরে কাউকেই দেখলাম না। -এই যে উপরে…! তাকাতেই বুকের ভেতর বজ্রপাত হলো যেন, বিস্মিত হবো না আনন্দিত হবো ঠাহর পেলাম না। সিঁড়ির রেলিংয়ে একহাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে শীতলদা! নীলরঙে এত মায়াবী লাগে কেন তাকে…। দুধ-গোলাপ গালে টোল ফেলে মৃদু হাসছেন। আমি উপরে উঠতে উদ্যত হলে নিজেই নেমে এলেন। বললেন- বীভাবরী, কেমন আছ? সো মেনি চেঞ্জেস…। তার চাহনি যেন আমার মুখের প্রতিটি কোষ সুক্ষ্মভাবে রপ্ত করে নিয়েছে। চোখ নামিয়ে বললাম- হু, আপনি কবে এলেন? কোনো খবর না দিয়েই! -এইতো এসেছি ভোরবেলায়। হ্যাঁ, সারপ্রাইজ দিতেই না জানিয়ে এসেছি। তোমাকে খুঁজেছিলাম। মা বললো, তোমার বাবার বাড়িতে আছ। কী খবর সেখানকার, বললে না তো কেমন আছ? বললাম, মাত্রই ফিরেছি। শ্রাবণ আমায় নামিয়ে দিয়ে অফিস গেল। সবাই ভালো আছে, আমিও। কী অদ্ভূত লাগছে। শীতলদা অস্বাভাবিক রকম স্বাভাবিক। ঠোঁটে হাসি ধরেই রেখেছেন। এমন একটা ভাব তার চোখেমুখে যেন আমি তার ছোট ভাইয়ের বৌ ছাড়া আর কিছুই নই! আদৌ কি কিছু ছিলাম না! না না আমি এসব ভাবতে চাই না। ঘোর কাটিয়ে বললাম- নাশতা করেছেন শীতল দা? -হ্যাঁ করেছি। চা খাওয়াবে? এলাচ-দুধ চা! -নিশ্চয়ই! এক্ষুণি নিয়ে আসছি। তিনি হেসে উপরে চলে গেলেন। চুলায় চা ফুটছে। কী অদ্ভূত! শীতলদা চা খাবেন! তিনি তো চা খান না। তাকে বড্ড বেশিই সপ্রতিভ দেখাচ্ছে। যেন তরতাজার চেয়েও বেশি কিছু। এ ব্যাপারটাই বুকে বাঁধছে। শ্রাবণ আর আমার বিয়েতে তিনি ছিলেন না। হুট করেই বিয়ে হয়েছে আমাদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে ছোট্ট অনুষ্ঠান। গোটা সময়টাই শীতলদাকে খুঁজেছিলাম মনে মনে। কাউকে প্রশ্নও করতে পারিনি। পরে জেনেছি তিনি আসেননি। ছোটভাইয়ের বিয়ে আর বড়দা নেই! হয়ত সেবার কলকাতা পাড়ি দেবার মতো এবারও মেহনত করে গড়া ঠুনকো বাহানায় শিলিগুঁড়িতে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যেটুকু জানি শীতলদা মিষ্টি কম খান। আধ চামচ চিনি নেড়ে চায়ের কাপ তুলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। দেয়াল আয়নায় চোখ পড়তেই মনে হলো এ যেন এক বছর আগেকার আমি। উচ্ছল! হালকা, একটা পাঁপড়ির মতো বোধ হচ্ছে নিজেকে! যেন শরীর, মন, মস্তিষ্ক সবকিছুর ওজন কমে গেছে…। আশপাশের সবকিছুকে সুন্দর মনে হচ্ছে। উপরের বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়ানো শীতলদাকে দেখে অকারণেই বুক ধড়ফড় করে উঠলো, এই মুহূর্তে একটা বড় নিঃশ্বাসও কি নিতে পারব না! হে ঈশ্বর…। কাছে গিয়ে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বললাম- একটা কথা বলবো শীতলদা? শীতলদা ঠোঁটের কাছে কাপ নিয়ে আগের মতো করেই বললেন- চাইলে একশোটা বলো। তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি, জ্বলছে হীরের দুটো চোখ। -আমাকে আগের মতো আর মনে পড়ে না তাই না? যেচে পড়ে ভুলে গেছেন...। তিনি চোখ সরিয়ে শান্তস্বরে বললেন, কেন মনে হলো। -উপলব্ধি হয়...। শীতলদা চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললেন- উপলব্ধিতেই আছ…। তার শীতল-শান্ত কণ্ঠের এই দুটি শব্দ আমার চুলের গোঁড়া থেকে পায়ের আঙ্গুল অব্দি অসাড় করে ফেলেছিল। এতটাই অসাড় হয়ে আসছিল যে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভবপর হয়নি আমার...।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড