সাহিত্য ডেস্ক
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে কবি পলিয়ার ওয়াহিদের তৃতীয় কবিতার বই ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান। ২৩১-২৩২ নম্বর অনুপ্রাণনের স্টলে কাব্যগ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে।
মেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় কবিতার বই। কিন্তু অনেক বইয়ের ভীড়ে ভালো বই খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। পাঠকের মতামতের ভিত্তিতে এই বইটি এবার বেশ আলোচনায়। যারা ভালো কবিতা পড়তে চান তাদের এই বইটি সংগ্রহ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটির প্রচ্ছদ শেয়ার করেছেন কবির অনেক ভক্ত ও বন্ধুরা।
পশ্চিমবঙ্গের কবি রূপক চক্রবর্তী ‘মাসিক কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’ কবিতাটি পড়ে লিখেছেন- ‘পলিয়ার ওয়াহিদ। নাম যেমন সুমিষ্ট তেমনই অতি সুমিষ্ট তার কবিতা। তিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের কবি। তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি আমাদের সুমহান বাংলা ভাষার কবি। তার ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’ যদি আমি লিখতে পারতাম তবে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেত। পলিয়ার ওয়াহিদের এই কবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ কবিতার মধ্যে থেকে আলাদা করে কোনো শব্দ, কোনো বাক্য, কোনো লাইন তুলে দেওয়া যাবে না। কেননা সে চেষ্টায় গোটা কবিতায় ক্ষতর সম্ভাবনা দেখা দেবে। এমনকি কবিতাটি ভেঙে পড়তে পারে। তা না করে তাকে সম্পূর্ণ পড়লে এক অসম্ভব আস্বাদ পাওয়া যাবে। নিজের ভাষার প্রতি তার যে ভালোবাসা সেটা টের পেয়ে যেন ভাষাই তার হাতে উঠে এসেছে মা স্বরস্বতী হয়ে।’
কবি জব্বার আল নাঈম লিখেছেন- ‘পল্লি অঞ্চলের মাটির সঙ্গে মিশে সেই মাটির রস আস্বাদন করা কবি ও কথাসাহিত্যিকের সংখ্যা খুবই কম। পল্লিকবি জসীম উদ্দীন পরম্পরা কবি আমরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তেমন একটা পাইনি বলা যায়। সেখানে নব্বই দশকে এসে মুজিব ইরম সেই পথের হাল ধরেছেন। আর সেই হালে পানি ঢালছেন পল্লিরভাই পলিয়ার ওয়াহিদ। পলিয়ারের দোআঁশ মাটির কোকিল গাছের রস টেনে বড়ো হওয়া মওসুমি ফল। যে ফলে ক্ষুধা মিটবে বাংলা তথা পৃথিবীর মানুষের।’
কবি শঙ্খচূড় ইমাম লিখেছেন- পলিয়ারের ভাষা একেবারে তার নিজস্ব। স্বতন্ত্র্য সুর তৈরিতে সে সার্থক। ‘কাঠবাদাম’ কবিতায় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার সে টান তাই প্রতিনিয়ত হয়। কাঠবাদামের পাতাকে কবি স্বদেশ চিন্তা করেছেন। প্রতিটি মানুষের কাছেই নিজের দেশ প্রিয়। বুকে লুকিয়ে থাকে দেশপ্রেম। শেষ পর্যন্ত স্বদেশের বুকেই আশ্রয় পেতে চায়। অথচ সেই স্বদেশ কতটা তার অনুকূলে থাকে সেটাই মুখ্য বিষয়। কিন্তু শকুনদের উল্লাস আর দুর্বৃত্তদের হাতে তা বিদ্ধ হয়। এর জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ সুস্থ চিন্তা। আর কবি পারে সেই সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাজকে জানান দিতে। তিনি সেটাই করেছেন। কবি লিখেন— ‘কাঠ-কাদামের পাতা/ তোমার চ্যাপ্টা বুক/ আমাকে প্রশ্রয় দেয়—/ অথচ নদী ভরাটের মতো/ তুমি চিরকাল বেদখল/ দুর্বৃত্তের হাতে।’
কবির কবিতা নিয়ে কবি ও কথাশিল্পী মোসাব্বির আহে আলী লিখেছেন- পলিয়ার সবল ও দৃঢ়প্রত্যয়ী, তার দীর্ঘস্থায়ী বয়ান মাটি ও প্রেমিকাসংলগ্ন। কবি যেন তার ইংলিশ প্যান্টের পকেটে করে সেই কত আগে নিয়ে এসেছেন মাঠ ও উঠোন গড়ানো সোনালি কিছু ধান, সুযোগ পেলে তিনি এই ধান পাঠককে বের করে দেখান, এই ধান তার কবিসত্ত্বার স্মারক যেন, কবিতা যেন তার কাছে কৃষিজ। কবি তার জন্মগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন কিছু নিজস্ব শব্দও, যা পরিমিতভাবে নৃত্যরত ও সুমিষ্ট আবরণযুক্ত গাঢ় চিত্রকল্পময়। উদাহরণ হিসেবে তার ‘ফসলপ্রেমিক আব্বা’ কবিতাটি পাঠ করি— ‘ধান চাষ করা লস/ তার চেয়ে লাভ চাল কিনে খাওয়া/ এ কথা আব্বাকে বলি আমি/ আমার নিরিখে তিনি বললেন—/ তোমরা শিক্ষিত—অঙ্কে পাকা!/ লাভ-লসের হিসেব/ সহজে কষতে পারো তাই/ আমি তো কৃষক; ফসলপ্রেমিক মন/ প্রেমিকা গাভিন ধান ছাড়া/ দেহের গোলা কি দিয়ে ভরবে বাজান!’ কবি দার্শনিকও বটে। মৃত্যু, জন্ম, প্রেম নিয়ে তার বিশদ গভীর ভাবনা। তিনি যেন একনিষ্ট মৃত্যুপ্রিয়, জীবনের যবনিকা তার বন্ধুবৎ- ‘মৃত্যুই কেবল জীবনের একনিষ্ট অপেক্ষমান বন্ধু/ কারণ জীবনে একটি সূর্যাস্তই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।’
কবি ও কথাকার খালেদ রাহী তার কবিতা নিয়ে লিখেছেন- পলিয়ারের কবিতায় দার্শনিকতা, নান্দনিকতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাছাড়া ‘দোআঁশ মাটির কোকিল’-এ উপমাশ্রয়ী চিত্রকল্প অভিনব ও অসাধারণ যেসব পাঠক কবিতায় আবেগের তারল্য এড়িয়ে চলতে চান, দর্শন খুঁজতে চান- বোধে ভাবনায় জীবনের সারাংশের শিল্পরূপ খুঁজতে চান, তারা তার কবিতায় কল্পনা ও প্রজ্ঞার যোগসূত্রে মেজর কবিতা খুঁজে পাবেন।
শঙ্খচিল পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ পাঠক তার কবিতা নিয়ে লিখেছেন- ‘পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা মানে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝা পড়া। নিজস্ব উপলব্ধির এক গভীর উপস্থাপন। নিজেকে ক্রমাগত অনুবাদ করে যাওয়া। যেমন তার ‘মাটির আঁচল ছোঁবো’ কবিতায় লেখেন- ‘মা আমি তোমার কাছে থাকবো আর মাটির ঘরে শোবো। আমি কৃষকের ছেলে, মাটি জল কাঁদা ছাড়া কীভাকে বাঁচি। বাবা তুমি মন খারাপ করলে নাকি? তুমি মাটিতে বীজ দাও আমি এ সে মমতার মই দিবো।’
কবিতায় স্থান পাওয়া এ শব্দগুলো যেন এসেছে প্রাণ থেকে। এগার লাইনের এ কবিতা পড়তেই যেন বেলা গড়িয়ে যায়। তবু ইচ্ছে হয় না ছেড়ে উঠতে। ‘নিজেকে নিও—দেখে-শুনে/ সাথে নিও—কবিতার খাতা/ শহরের সাথে দেখা হলে বলো—/ ভালো আছে—তোমাদের গ্রাম’ (গাঁওগিরাম)
ফেসবুক টুইটারে বইটির প্রচ্ছদ শেয়ার করেছেন অনেকে। সব মিলে বইটি পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে বলে জানান প্রকাশকও।
ওডি/এএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড