অনন্যা জান্নাত
দ্বিতীয় জীবন
একপৃথিবী বিরহ শুষে নিয়েছে অচেনা আগন্তুক! হৃদয়ের ব্যালকনিতে ফুটিয়েছে রংবেরঙের ফুল; উপড়ে ফেলেছে কাঁটাময় ক্যাকটাস!
ভালোবাসার আগুনে পোড়াতে পোড়াতে করেছে শুদ্ধ, বানিয়েছে সতী সাবিত্রী, জন্মজন্মান্তরের অবুঝ নিখাদ প্রেমিকা!
স্পর্শসুখে ভাসিয়েছে প্রণয়ের অথৈ গভীর সমুদ্রে, ভালোবাসার সুশীতল নিবিড় পরশে গহিনে লুকোনো অনাদিকালের বিষাদ-দেবতা হয়েছে নিরুদ্দেশ!
প্রণয়ের নিবিড় ছোঁয়ায়, আবেগের গভীর শিহরণে হৃদয় অতলান্তে দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষতবিক্ষত স্মৃতিমেঘ হারিয়েছে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে, প্রেম-দেবতার গভীর সান্নিধ্য ভুলিয়েছে জ্বালাময় অতীত, ভাসিয়েছে সুখস্মৃতির শ্রাবণে!
অনিন্দ্য প্রেমের নন্দিত সুখে জীবনসমুদ্রে উতলে উঠেছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস! আকাশচুম্বী ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তৃষ্ণার্থ হৃদয়, দূর হয়েছে আজন্মের পুঞ্জীভূত ক্ষত!
কৃষ্ণচূড়ার টকটকে গাঢ় লালে পূর্ণতার প্লাবনে ভাসছে নতুন জীবন; গভীরতম সুখের হাতছানিতে নিরন্তর কাছে টানছে দ্বিতীয় জীবন!
অমৃত-সুখ নিবাস
অনন্ত-অসীম-দূর্বার প্রেমে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যায় তাঁর খুব কাছাকাছি!
ভালোবাসার অন্তহীন আবদার ঘুচিয়ে দেয় সমস্ত দূরত্ব, মিলিয়ে দেয় প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ চন্দ্রিমা!
চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ব সম্মিলনে কেটে যায় নিকশ কালো-নিরবিচ্ছিন্ন আঁধার!
জোনাকির খসে পড়া এক টুকরো আলোর মোহনীয়তায় অনুভূতির সমুদ্রে ওঠে প্রলয়ঙ্করী ঢেউ!
নিষ্পলক চাহনিতে জেগে ওঠে ভালোবাসার অথৈ সমুদ্র, দু’চোখের পাতায় ভর করে জীবনের অমীমাংসিত অধ্যায়!
নকশা খচিত ঐ আঁখিদ্বয়ে ক্রমশ সুস্পষ্ট হয় প্রেমের সুনীল আকাশ!
ঝাঁকড়া চুলের কোমল স্পর্শে, শৈল্পিক সৌন্দর্যে পৃথিবী হয়ে ওঠে শ্যামসুন্দর!
মৃদুমন্দ হাসির উথলে ওঠা জোয়ারে ভেসে যায় হৃদয় নগরী!
বাক্যে সজ্জিত অর্থপূর্ণ উপমার সন্ধানে ঐ মুখেতে দিবারাত্রি,অহর্নিশ করি শত-সহস্র বর্ণমালার চাষ!
আবেগের উত্তাল তরঙ্গে, প্রেমের সুনিবিড় ছোঁয়ায় জীবন হয়ে ওঠে অমৃত-সুখ নিবাস!
নিয়ন্ত্রণ
তোমার কাছে আসলেই যৌনতার ঘ্রাণে সুড়সুড় করে ওঠে শরীর; রক্তকণিকায় জেগে ওঠে যৌবনের তাল-মাতাল স্রোত!
বেরিয়ে আসে পোষাকে আবৃত সুসভ্য আমিটার পশ্চাতে লুকায়িত অনাদিকালের আদিম হিংস্রতা!
যৌবনের উত্তপ্ত উত্তাল স্রোতে, আবেগের মোহনীয়তায়, স্পর্শের উষ্ণ অনুভবে উতলে ওঠে দুনির্বার অবাধ প্রেম, জেগে ওঠে পৈশাচিক নগ্নতা!
মন চাই জাপটে ধরি তোমায় আজন্মের আদিম, অকৃত্রিম উন্মাদনায়, আবদ্ধ করি সুগভীর বাহুবন্ধনে, চুম্বনে চুম্বনে পৌঁছে যায় সুখের সর্বোচ্চ সীমানায়!
তবুও যৌবনের দুর্বার, মাতাল উন্মাদনায় গা ভাসিয়ে সীমা লঙ্ঘন করি না, কলঙ্কিত করি না শুদ্ধ পবিত্র প্রেম, নিয়ন্ত্রণে রাখি অবাধ যৌবন-স্রোত, অপেক্ষায় থাকি সেই সুনির্দিষ্ট, সোনালী সময়ের,কাঙ্ক্ষিত শুভক্ষণের।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
মানুষরূপী পশুদের হিংস্র বর্বরতার বিষণ্ণতার নিবিড় কালো আঁধারে ঢেকে যায় জীবন!
নিকষ কালো আঁধার ক্রমশ গ্রাস করে গহীনের যতো আশা-কাঙ্ক্ষিত আর সুখস্বপ্ন!
সভ্যতার দাঁতাল শকুনেরা ছিঁড়েখুঁড়ে খায় মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার!
বাঁচতে চেয়ে মরে যাই হাজার বার!
জীবন উদ্যানে হলি খেলতে যেয়ে দেখি ছিটে ফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ধূসর, বিবর্ণ মাটি চুঁইয়ে চুঁইয়ে!
ঘটনার কেন্দ্রস্থল খুঁজতে যেয়ে দেখি ১২ বছরের কিশোরীর গলিত লাশ পড়ে আছে রেল লাইনের ধারে!
গতরাতেই খাদ্য হয়েছিলো যে জন কিছু হিংস্র হায়েনার; বন্য পশুগুলো খুবলে খেয়েছে যার হাড়-মাংস, ডাস্টবিনের ময়লা কাঁদায় পড়ে আছে যার ক্ষত-বিক্ষত অর্ধউলঙ্গ নগ্ন শরীর!
লাশটি নিয়ে চললো কিছুক্ষণ খুব কাটাছেঁড়া আর পরীক্ষা নিরীক্ষা তারপর চোখের পানিতে চিরকালের মতো শুইয়ে দিলাম মাটিতে!
এবার পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলাম আইনজীবীদের দ্বারে দ্বারে হায়েনাগুলোকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের প্রত্যাশায়!
কিন্তু নাহ কিছুই করতে পারিনি, আইন-কানুন আর অনিয়মের ফাঁক ফোঁকরেই কখন যেনো কেটে গেছে বারোটা বছর!
ধর্ষকরা দাঁত কেলিয়ে, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বাংলার মাটিতে, রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ায় বাইরে আর তাদের দৌরাত্ব আর ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়েছে গণমানুষের কাঙ্ক্ষিত রায়!
সময়ের বিবর্তনে এভাবেই একে একে পেরিয়ে গেছে বারোটা বছর কিন্তু সেই বারো বছরের নিষ্পাপ, কোমলমতি মেয়েটার ধর্ষণ-হত্যা মামলার সুবিচার আজও হয়নি!
কামুক
আমার অপরাধ ছিল কাউকে আঁকড়ে বাঁচার!
যতবারই কাউকে আঁকড়ে ধরেছি প্রেমিকের পরিবর্তে পেয়েছি কামুক!
কামুকের লোভী, হিংস্র দৃষ্টির কাছে পরাজিত হয়েছি বারবার!
প্রবল বিষাদে নোনাজলে ভিজেছে দু’চোখের প্রশস্ত পাতা!
একবুক হাহাকারে নিজের ভেতর গুমরে মরেছি শতবার!
নিঃশব্দ চিৎকারে, অনুচ্চারিত শব্দের প্রহসনে, বুকফাটা ক্রন্দনে জীবন ঢেকে গেছে গাঢ় গভীর অন্ধকারে!
শহরের উঁচু উঁচু দালানের ভাঁজে চাপা পড়েছে ভারি দীর্ঘশ্বাসগুলো!
ভারসাম্যহীন অনৈতিক আবদারে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি আর অনিচ্ছাকৃত অহেতুক বাকবিতণ্ডায় ভরে গেছে জীবনের সমস্ত সমীকরণ!
পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত - সর্বত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমার একজন প্রকৃত প্রেমিক জোটেনি যার বাহুডোরে খুঁজে নেব পৃথিবীর সমস্ত সুখ প্রবল ভরসায়!
যতবারই প্রেমিক হিসেবে কাউকে চেয়েছি - পেয়েছি প্রেমিকরূপী হিংস্র কামুক!
কামুকের কাম-দৃষ্টিতে ভেসে গেছে এই জীবনের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া; শুভ্র প্রেম আর নিখাদ ভালোবাসা!
হাজার হাজার পুরুষ দেখেছি; কামুক দেখেছি কিন্তু প্রেমিক দেখিনি একটিও!
আমার অপরাধ ছিল আমি শুধু একজন খাঁটি প্রেমিক চেয়েছিলাম; আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম দুটি ভরসার হাত।
অথচ সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে আজও আমার একজন প্রেমিক জোটেনি!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড