• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হুমায়ূন আহমেদ : এক নান্দনিক রূপকার

  শব্দনীল

১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫২
ছবি
ছবি : এক নান্দনিক রূপকার হুমায়ূন আহমেদ

‘আমাদের মধ্যে সম্মান করা এবং অসম্মান করার দুটি প্রবণতাই প্রবলভাবে আছে। কাউকে পায়ের নিচে চেপে ধরতে আমাদের ভালো লাগে। আবার মাথায় নিয়ে নাচানাচি করতেও ভালো লাগে।’

এই উক্তিটি আপনি পড়লে প্রথমে আপনার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে। কারণ, উক্তিটিতে সরল বাক্যে গভীর বোধের কথা বলা আছে। মনে হতে পারে জটিল কথাটি কে বলেছেন এত সহজ করে। অথবা এমনও হতে পারে লেখকের নাম পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না।

উক্তিটি বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি, যাকে আমরা চিনি বা জানি তারুণ্যের তিনি প্রতীক ‘হিমু’ এবং রহস্যের আলো-ছায়ায় আবৃত ‘মিসির আলি’র স্রষ্টা। বলছি বিংশ শতাব্দী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কথা।

যিনি সহজ-সরল ভাষার মধুরতায় সৃষ্টি করেছেন এক নান্দনিক মায়াজাল। আজ এই নান্দনিক মায়াজালের রূপকারের জন্মদিন।

হুমায়ুন আহমেদ একাধারে লেখক,সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার,নাট্যকার এবং অধ্যাপক(রসায়ন) হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক এবং আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। ১৯৭২ সালে 'নন্দিত নরকে' নামে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

জীবনের প্রথম উপন্যাসের নামকরণ ছিল এক অসাধারণ বিস্ময়কর। সাথে উপন্যাসের চিত্রনাট্যে দেখিয়েছিলেন চৌকষ মুন্সিয়ানা। এতে সাহিত্যবিশারদগন তখনই বুঝতে পেয়েছিলে, বাংলা সাহিত্যে নতুন এক ধূমকেতুর আবির্ভাব হচ্ছে।

তার সৃষ্ট হিমু, মিসির আলী ও শুভ্র চরিত্রগুলির দিকে তাকলে বুঝা যায় তিনি আসলে ধূমকেতু না নক্ষত্র ছিলেন। তার হাতে গড়া চরিত্রগুলো তরুণ থেকে শুরু করে সবার ভিতরে এক গভীর স্পন্দন সৃষ্টি করেছে। জীবদ্দশায় ছিলেন তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

বাংলা সাহিত্যে প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা এবং এর জনপ্রিয়তা তার হাত দিয়ে। হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ, গান ও উপন্যাসগুলো জনপ্রিয় হলেও টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। নির্মিত নাটকগুলোর ভেতর ‘কোথাও কেউ নেই’ সম্পর্কে না বললেই নয়। নব্বই দশকের বাকের ভাই চরিত্রটি আজও মানুষ মনে স্পন্দন জাগায়। এমনকি বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রুখতে দর্শকেরা হুমায়ুন আহমেদের বাড়িতে আক্রমণ করেছিলো।

এছাড়া তিনি ‘কবি’ উপন্যাসটি লেখার সময় বেশ কতক কবিতাও রচনা করেন। তার কবিতার ভেতর ‘গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না’ বেশ সমাদৃত।

হুমায়ুন আহমেদ গানও রচনা করেছেন। তিনি সুনিপুণ দক্ষতায় তার নাটক ও চলচ্চিত্রে গানগুলোর ব্যবহার করেছেন । ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ অথবা ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে চান্দের আলো’ গানটি জননন্দিত।

তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট আটটি পুরস্কার লাভ করেন। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ আসে শৈশবে বাবাকে দেখে। তার বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা হলেও সাহিত্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। তার অনুজ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক এবং সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট।

পরিবারের সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়া তার লেখালেখিতে অনুপ্রেরণা দান করে। তার স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, বাল্যকালে পিতা ফয়জুর রহমান নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রেখেছিলেন শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল।

বাবার চাকরী সূত্রে তিনি দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করেন। বগুড়া জিলা স্কুল,ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৫৬৪ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার জনপ্রিয় প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে মুহসীন হলেই লেখা।

হুমায়ুন আহমেদ গাজীপুর জেলার পিজুলিয়া গ্রামে ২২ বিঘা জমির উপর তার বাগানবাড়ি নুহাশপল্লী গড়ে তোলেন। বাড়িটির নামকরণ করা হয় স্ত্রী গুলতেকিন ও প্রথম পুত্র নুহাশ হুমায়ুনের নামে। জীবনের শেষ সময়ে তিনি এই বাড়িতে থাকতে ভালোবাসতেন। তিনি বরাবর নিজেকে বিবরবাসী মানুষ দাবী করলেও বস্তুত তিনি ছিলেন মজলিশী। রসিকতা পছন্দ করলেও ভণিতা এড়িয়ে চলতেন। মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরন পর্যবেক্ষক করা তার শখ ছিল। স্বল্পবাক,লাজুক প্রকৃতির মানুষ এবং বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তার লেখায় রাজনৈতিক প্রণোদনা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তিনি খুব ভোরে এবং মাটিতে বসে লিখতে পছন্দ করতেন। লেখার সময় তার মনোযোগ এতো তীব্র থাকতো যে সে সময় বাইরের কোনো শব্দ তার লেখার বিঘ্ন ঘটাতে পারতো না।

হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম উপন্যাস হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া,লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘ঘেটু পুত্র কমলা’ চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল।

২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারি চিকিৎসার সময় তার দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১২ দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেওয়ায় শারীরিক উন্নতি হলেও শেষ মুহূর্তে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমন করায় তার অবনতি ঘটতে থাকে। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি নিউ ইউর্কের বেলেভু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়।

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড