• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আপনার সোনামণিকে নিয়ম মেনে সঠিক খাবার দিচ্ছেন তো?

  নন্দিনী চৌধুরী

৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২০
শিশু খাদ্য
শিশুকে সঠিক খাদ্য দিন (ছবি : নন্দিনী চৌধুরী)

"আমার মেয়ে যেদিন ঠিকঠাক ভাবে খায় সেইদিন আমাদের এত খুশি লাগে যে ইচ্ছা করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেই ফিলিং হ্যাপি"— কথাগুলো বলেছিলেন জনৈক পিতা। বাচ্চাদের খাওয়ানো নিয়ে চারপাশের মানুষদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা দেখে আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই। আমার ছেলে যখন বাড়তি খাবার খাবে তখন কীভাবে সব সামলাবো।

সেই চিন্তা থেকে প্রচুর স্টাডি করলাম আর নিজে নিজে একটা গাইড লাইন বানালাম। সেই গাইডলাইনের মূল উদ্দেশ্য শুধু বাচ্চাকে খাওয়ানো না, তার একটা সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা ছিলো। যা মোটামুটি ফলপ্রসূ ছিলো।

প্রথম খাদ্য-

আমার ছেলের বয়স ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত আমি ওকে বুকের দুধ ছাড়া একফোঁটা পানিও খেতে দেইনি। ছয় মাস হওয়ার পর প্রথম দিন ওকে ঢেকিছাটা লাল চালের গুড়া সেদ্ধ করে ব্রেস্ট মিল্ক মিশিয়ে দিয়েছিলাম। তার কিছুদিন পর লাউ সেদ্ধ।

বাচ্চাদের যেকোনো নতুন খাবার একবারে একটার বেশি দিতে নেই। একটা খাবার দেয়ার তিন দিন পর খাবার বাচ্চার সয়ে যাবার পর নতুন কিছু দিলে ভালো। যেমন আমি প্রথমে ওকে লাউ সেদ্ধ দিয়েছি। এইভাবে তিন দিন খাওয়ানোর পর তার সাথে চালের গুড়া মিশিয়েছি। তার তিন দিন পর লাউ, চালের গুড়ার সাথে গাজর দিয়েছি। তার তিন দিন পর লাউ সরিয়ে আলু দিয়েছি গাজরের সাথে। এইভাবে একটু একটু করে ওকে নতুন খাবারের সাথে পরিচিত এবং অভ্যস্ত করেছি।

খাওয়ানোর পদ্ধতি-

বাচ্চাকে অবশ্যই বসে খাওয়াতে হবে। শুয়ে খাওয়ানোটা একটা ভীষণ বাজে অভ্যাস। এই ক্ষেত্রে আমি বলবো একটা হাই চেয়ার বা ফিডিং চেয়ার কেনা ভালো। আহামরি দাম না। মোটামুটি ২৫০০ টাকায়ও পাওয়া যায়। হাই চেয়ারে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে পারলে শিশু এবং মা দুইজনের জন্যই আরামদায়ক।

আমি মুখেভাতের দিন আবেগের বশবর্তী হয়ে ওকে রুপার বাটিতে খাইয়ে ছিলাম। এটা খুব ভুল। এই ধরনের মেটালের বাটিতে বাচ্চাদের খাওয়ানো ভালো না। সব চাইতে ভালো স্টিলের বাটি। আর একটা ফিডিং স্পুন। ফিডিং স্পুন বলতে আমি আরএফএল এর প্লাস্টিকের চামচগুলোর কথা বলছি না। একদম নরম সিলিকন টাইপের যে চামচ গুলো বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য বানানো হয় একটু দাম দিয়ে হলেও সেই চামচগুলো কেনা উচিত।

প্রতিদিন একই টাইমে, একই স্থানে বসিয়ে, একই প্লেট বাটি দিয়ে যখন ওকে খাওয়াতে বসবেন। তখন একটা সময় যাওয়ার পর ওর ব্রেইনে সেট হয়ে যাবে এটা খাওয়ার সময় এখন খেতে হবে। ঠিক যেভাবে আমরা যারা দুপুর দুটায় লাঞ্চ করে অভ্যস্ত তাদের ঠিক দুপুর দুটায় খিদা লেগে যায়। আমাদের দেহঘড়ি আমরা যেভাবে সেট করবো সেইভাবেই চলবে।

এইতো গেলো পদ্ধতির কথা। এখন শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হলে নিচের কিছু পয়েন্ট মাথায় রাখতে হবে-

১। সাধারণত একটা ছয় মাসের বাচ্চা দুই/তিন ঘণ্টার ব্যাবধানে ফিডিং করে। শিশুকে বাড়তি খাবারটা এই সময়টার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে যাতে তার অতিরিক্ত ক্ষুধা বা পেট ভরা কোনটাই না থাকে।

২। ৬-১২ মাসের শিশুর খাবারে কিছুতেই লবন বা চিনি দেয়া যাবে না কারন এক বছরের নিচের একজন শিশুর কিডনি এতখানিক পরিপক্ক হয়না যে সে লবন শোধন করতে পারবে। প্রতিটি খাবারেই একটা প্রাকৃতিক লবন থাকে সেটাই শিশুর স্বাদের জন্য যথেষ্ট। জাস্ট মাথায় রাখতে হবে খাবারে চালের পরিমাণ যাতে সবজির চাইতে বেশি না হয়। সবজির তিন ভাগের একভাগ চাল হলেই তা শিশুর স্বাদের জন্য ঠিক হবে।

৩। আমার ছেলে জিনেটিকলি অনেক শুকনা। তাই অনেকেই আমাকে সেরেলাক দিতে বলতো। কিন্তু আমি দিতাম না। কারণ, সেরেলাকে পুষ্টিকর কিছুই নেই। কিছু আজেবাজে উপাদানের কারণে শিশুর গা ফুলে তাই দেখতে স্বাস্থ্যবান মনে হয়। কিন্তু শিশুর শারীরিক ভিত শক্ত হয় না। আর সেরেলাক খাওয়া শিশুগুলো অন্য খাবার খেতে চায় না। যে কারণে তাদের পুষ্টির কমতিটা রয়েই যায়।

৪। অনেকে হোমমেড সেরেলাক দেয়। সেটা আমার আরও অপছন্দ। একটা একবছরের শিশু ৪/৫ রকম ডাল, ৪/৫রকম বাদাম সহ্য করে কী করে? এরতো গ্যাস/টামি ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার কথা।

৫।যতদিন আমার ছেলে বেস্ট ফিডে ছিলো ততদিন আমি ওকে কোনরকম আলাদা দুধ খেতে দেইনি। ফিডিং ছাড়ার পর গরুর দুধ দিয়েছি।

৬। আমার বাসায় তিন "c" নিষিদ্ধ -চকলেট, চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্ক। চকলেটের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ছাড় দেয়া হয় যদি সেটা খুব ভালো কোয়ালিটির হয়। আর চিপস কালেভাদ্রে কোথাও ঘুরতে গেলে অন্য বাচ্চাদের খেতে দেখলে তখন। আমার ছেলে ওর আড়াই বছরের জীবনে কখনো কোল্ড ড্রিঙ্কস এর টেস্ট কেমন দেখেনি। কারণ, এই ধরনের খাবার শিশুদের ক্ষিদা নষ্ট করে ফেলে। দুই মিলের মাঝখানে স্ন্যাক্স হিসাবে ফল, বাদাম, দই, চিজ খেতে দিন।

৭। অনেক মায়েরা শিশুদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে রীতিমতো ক্রেজি হয়ে থাকে। মনে রাখবেন গামলা ভর্তি ভাত খেলেই যে স্বাস্থ্যবান হওয়া যায় তা না। পরিমাণ যাই হোক মাথায় রাখতে হবে যাতে তার প্রতিদিনের ডায়েটে একটা ফল, কলা, সবজি, মাছ/মাংস, ডিম, একটা ডেইরী প্রোডাক্ট, আর লেবুর শরবত বা টক ফল থাকে। তাহলেই হবে।

৮। প্রতিটি মানুষের চাহিদা, গ্রহণক্ষমতা ভিন্ন। তাই পাশের বাড়ির বাচ্চা চারবাটি খাবার খায় আমারটাকেও খেতে হবে এই ধরনের ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ওকে ওর ডিমান্ড অনুযায়ী খাবার দিন।

৯। বাচ্চাদের অতিরিক্ত মিষ্টি খাবারের অভ্যাস না করে একবছর বয়সের পর তাকে বাসার রেগুলার খাবারে অভ্যস্থ করতে হবে।

১০। সবশেষে বলবো আমাদের যেমন মাঝে মাঝে রুচি থাকে না। ওদেরও এমন হয়। তাই প্লিজ খেতে না চাইলে ওকে জোর করে ঠুসাবেন না। তাকে স্পেস দিন ঘণ্টাখানেক পর অফার করুন। না খেতে চাইলে বাদ দিন। পরে অফার করবেন। ওদের পেটটা কুয়া না যে সারাদিন ঠুসতে থাকবেন।

তথ্যসূত্র : হোলসাম বেবি ফুড

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড