লাইফস্টাইল ডেস্ক
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ওপর উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালীনই এক ধরনের দুর্বলতা আর আকর্ষণ কাজ করত। বিশেষ করে কুষ্টিয়া–মেহেরপুর–ঝিনাইদহ ও পাবনা জেলার ওপর একটা আলাদা ঝোঁক ছিলই।
পত্র পত্রিকা, টেলিভিশনের মাধ্যমে যা জেনেছিলাম সেটুকু ছাড়াও অন্যান্য আরও খুঁটিনাটি তথ্য জানার আগ্রহ ছিল। তবে সময়, সুযোগ, উপলক্ষের অভাবে যাওয়া হয়ে উঠেনি সে দিকে।
গত বছর কুষ্টিয়া গিয়েছিলাম এস বি সুপার ডিলাক্স নামক বাস কোম্পানির আমন্ত্রণে। খুব একটা ঘোরা হয়ে উঠেনি সে সময়ে। এ বছরে বেশ কিছুদিন ধরেই মাথায় পাবনা সফর করার একটা আগ্রহ জন্মেছিল। আমাদের ফেসবুক গ্রুপে ‘নর্থ বেঙ্গল বাস জোন’-এর এক মেম্বারের বাড়ি পাবনা জেলায় হবার সুবাদে সেখানে যাবার এক সুযোগের সৃষ্টি হয়। অবশ্য ব্যস্ততার কারণে যে খানেই যাই না কেন, কয়েক ঘণ্টার জন্যেই যাওয়া লাগে।
তারিখটা সঠিক মনে নেই, তবে ঘূর্ণিঝড় ফনির আক্রমনের ঠিক আগের রাতে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা পাবনা যাব। গ্রুপ চ্যাটে মাত্র ১০ মিনিটের মাঝেই চট করে এই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা চারজন ফ্রেন্ড।
সারারাত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরবেলা রওনা দিলাম গাবতলী টেকনিক্যালের উদ্দেশে। সেখানে সকালের নাস্তা করে চলে গেলাম সি–লাইন (ক্রিস্টাল লাইন) নামক বাস অপারেটরের কাউন্টারে। টিকেট করে সকাল ৮টার বাসে রওনা দিলাম পাবনার উদ্দেশে।
বাসে ওঠার আগেই আমার লক্ষ্য ছিল যে, যেভাবেই হোক বাসে দু তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিব। কেননা সারারাত ঘুম হয়নি। তবে সে আশা শেষ হয় যখন দেখি চন্দ্রার মোড় পার হবার পরে তুমুল বেগে বৃষ্টি।
বৃষ্টির সকাল, বাসে জার্নি, ঠান্ডা হাওয়া, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা! এই তিন-চারটে জিনিস যদি যাত্রার সময়ে মিলে যায়, আপনার শত মন খারাপেও এই রকম বাস যাত্রা আপনার মন ভালো করে দিতে বাধ্য। আমারও ঘুম ছুটে গিয়ে অগত্যা তাই হলো। যদিও মন খারাপের বিষয়গুলো অনেক আগেই নিজের মনের মাঝে দাফন করে ফেলেছিলাম।
এ দিকে, বাস ছুটে চলছে যমুনা সেতু পেরিয়ে সিরাজগঞ্জের দিকে। ফুড ভিলেজ প্লাস হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি দিয়ে আবার বাসের ছুটে চলা।
ধীরে ধীরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর পেরিয়ে প্রবেশ করলাম বাঙালির এক সময়ের রান্নার জন্যে অমূল্য ধন ‘বাঘাবাড়ি স্পেশাল ঘি’-এর বাঘাবাড়ি তে। মিল্ক ভিটার ফ্যাক্টরির পাশেই এক নদী, সেই নদীর ওপরের সেতু দিয়ে যখন ছুটে চলেছি তখন নিচে তাকিয়ে দেখি সারিসারি তেলের লরি নদীতে অপেক্ষা করছে মাল খালাসের জন্যে। বৃষ্টির দিনে এর সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল।
বাঘাবাড়ির পর প্রবেশ করলাম পাবনার বেড়া উপজেলা। এরপর পর্যায়ক্রমে কাশিনাথপুর, সুজানগর, চিনাক্ষরা, আতাইকুলা হয়ে ঠিক দুপুর আড়াইটার দিকে প্রবেশ করলাম সুচিত্রা সেনের পাবনায়।
পাবনায় নেমেই প্রচুর বৃষ্টি আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। পেটে প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছিল বিধায় চলে গেলাম পাবনা বাস টার্মিনালের পাশেই হালিম হোটেলে। সেখানে গরুর মাংস দিয়ে আহার শেষে এবার গেলাম মূল শহরে।
ব্রিটিশ আমলের অনেক নিদর্শন এখনো পাবনায় বহাল আছে, যা আমাকে অনেক অনেক মুগ্ধ করেছিল। আব্দুল হামিদ রোডে যাবার পথেই অনেক স্থাপনা দেখলাম। সন্ধ্যা হবার আগেই বৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্যে থেমে যায়। ব্যাটারি অটো রিজার্ভ নিয়ে চলে গেলাম পাবনার মানসিক হাসপাতালে। তবে মূল ভবন দেখার সৌভাগ্য হয়নি কেননা আবারও বৃষ্টির বাগড়া!
বৃষ্টি থামলে সময় নষ্ট না করে চলে গেলাম বিখ্যাত শিল্পপতি অ্যান্ড স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর পাবনার বিসিকে অবস্থিত খামারবাড়ি ‘দ্য এস্ট্রাস’ এ । ১২ ফিট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা এই খামার বাড়ির ভিতরে রয়েছে প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সমাধিসহ বাংলো, গেস্ট হাউজ ছাড়া অনেক কিছু (ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি, যা শুনেছি সব নিরাপত্তারক্ষীদের মুখেই)।
এরপর রাতে আব্দুল হামিদ রোডে আড্ডা শেষে গ্রিল আর কাশ্মীরী ফ্লেভারের নান খেয়ে নিই। এক একটা নান শেষ করতে আমাদের ১২টা বেজে গিয়েছিল বলা চলে। রাতের খাবার শেষে পাবনার প্যারাডাইসের ইলিশ-পেটি সন্দেশ, রসমঞ্জুরী আর গাজরের বরফি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে এবার ঢাকায় ফেরার উদ্দ্যেশ্যে আলহামরা বাসে উঠে পড়ি ।
অনেক ইচ্ছে ছিল প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিয়ে কুষ্টিয়া গিয়ে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবার। কিন্তু আবহাওয়া বৈরি থাকায় সে আর সম্ভব হয়নি।
ইচ্ছে আছে আবারও ফিরে গিয়ে দেখে আসবো মন ভরে সূচিত্রা সেনের জন্মস্থানের বাকি স্থানগুলো।
লেখক- আকিব চৌধুরী।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড