• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জলের আয়নায় চাঁদের মুখ

  সৈয়দ মিজান

০৪ আগস্ট ২০১৯, ২২:৪৪
হাওর
হাওরের এমন রূপ দেখতে বারবার যেতে চায় মন। (ছবি : লেখক)

আকাশ ঘন নীল। সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। থোকা থোকা ফুলের মতন। শরতের আকাশ সত্যিকারের রূপ নিয়েছে। আমি শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছি। শুয়ে আছি একটি নৌকার উপর। একটু নড়লেই নৌকা দুলে উঠে। নৌকা ভাসছে হাওরের উপর। হাওরের নাম পাকনা হাওর। গিয়েছিলাম সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানায়। ফেনারবাগ গ্রামে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছি। বিশাল আয়োজন। কয়েকরকম মাছ, দেশি হাঁস, দেশি মোরগের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

আমি শুয়ে আছি নৌকার একদম মাঝামাঝি। একপাশে সূর্য অস্ত যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যপাশে থালার মতন বিশাল চাঁদ খলখল করে হাসছে। আজ পূর্ণিমা৷ শারদ পূর্ণিমা আমার খুব পছন্দের৷ হাওরের জলে পেলে তো কথাই নেই। নিজের প্রতি নিজেরই হিংসে হচ্ছে। সৌভাগ্য না থাকলে এমন সৌন্দর্য্য চোখে দেখা যায় না।

পশ্চিম আকাশ কপালে সিঁদুর মেখে বসে। যেন চাঁদের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। মাথার কাছে উকুলেলে বাজাচ্ছে একজন। কয়েকজন সমস্বরে গাইছে৷ বেশ লাগছে! আহ! জীবন এত মধুর কেন!! মধুর এবং ছোটো কেন?

সূর্য ডুবে গেছে। আস্তে আস্তে চাঁদ পেখম মেলছে। ঝলমল ঝলমল করছে যেন৷ আমি উঠে বসলাম। প্রথমেই যে দৃশ্যটা চোখে পড়ল তা দেখে আমি থমকে গেলাম। ছোট্ট একটা গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছে নৌকা। গ্রাম থেকে কয়েকশ মিটার দূরে একা একটা বাড়ি৷ সামনে মস্ত উঠোন। বেশ কিছু গাছ। একদম হাওর লাগোয়া বাড়িটির সামনেই দুটো নৌকা বাঁধা। গল্প করছে যেন পরস্পর। বাড়ির পেছন দিকটায় বিশাল এক মাঠ৷ সন্ধ্যার আধো আলোতে যতদূর দেখা যায় পুরাটা সবুজ। দিনের বেলায় হয়তো গরু চড়ে কেবল। ইচ্ছে করছে এই বাড়িটিতে আজ রাতটা থেকে যাই।

কোন একদিন হয়তো সত্যি সত্যি এমন সৌভগ্যও হবে। পাকনা হাওর পাড় হয়ে নৌকা এখন নদীতে পড়ছে। মাঝিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম নদীর নাম জানেনা। জায়গাটার নাম গজারিয়া৷ বিশাল নদী। (পরে জেনেছিলাম সুরমা নদী এখানটায় এসে ধনু নদী হয়ে গেছে!) ঢেউগুলো চকচক করছে। সামনে আরো কয়েকটা হাওর পাড়ি দিতে হবে।

নদী থেকে প্রথম যে হাওরে পড়বে নৌকা তার নামটি বড়ই সুন্দর! সোনার থাল হাওর। কী অপূর্ব নাম! এর পরের হাওর ধানকুনি।

আকাশে একটা দুটো তারা দেখা দিচ্ছে। অনেক দূরে বিজলি চমকাতে দেখা গেল। হাওরের এই এক চরিত্র। হঠাৎ কখন ঝড় আসবে বোঝাই যায় না৷ সুন্দর আবহাওয়া। হঠাৎ দেখা গেল তুমুল ঝড়। সব উথাল পাতাল করে দিয়ে চলে গেল। এরকমটা হামেশাই ঘটে এখানে৷ খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এটা।

আমি চাঁদের দিকে তাকালাম। এতক্ষণ যেন অপেক্ষা করে ছিল আমার জন্য। ফিক করে হেসে ফেললো। কেমন একটা মন উদাস করা ব্যাপার। নিচে চাঁদের প্রতিবিম্ব। চারপাশে কেওমন ঘোরলাগা অপার্থিব আলো। হুট করে দেখলে মনে হয় পরিচিত পৃথিবীর বাইরে ভিন্ন কোন জগতে আছি। হাওরের পূর্ণিমা যারা না দেখেছে তাদের কথা ভেবে মায়া হলো। পরক্ষণেই মনে পড়লো মাঝ সাগরে তো পূর্ণিমা দেখিনি আমি। তবে হাতের কাছে যা পেয়েছি তাই বা কম কীসে। আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। কী অদ্ভুত একটা বিষণ্ণতা কাজ করছে ভেতরে।

চাঁদের মুখোমুখি বসে তারাশঙ্কর বাবুর কথাটা বেশ মনে পড়ছে। " ভালবেসে মিটলো না সাধ, ফুরালো না এক জীবনে... হায়রে, জীবন এত ছোট ক্যানে?"

ওডি/এসএম

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড