• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গরিব পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে কমোডো দ্বীপ ভ্রমণ

  ফিচার ডেস্ক

২৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:৩২
ড্রাগন
কমোডো দ্বীপে বাড়তি পর্যটক কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার।(ছবি : বিবিসি)

কমোডো ড্রাগনের দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার নাম বিশ্বজোড়া খ্যাত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই সরীসৃপটির দেখা এই অঞ্চলেই মেলে। এমনকি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপেরই নাম হয়ে গেছে কমোডো দ্বীপ। বহু বছর ধরেই সারা বিশ্বের মানুষ এই ড্রাগন দেখতে ছুটে যান ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির পর্যটন খাতকে গতিশীল করতে কমোডো ড্রাগনের অবদান অসামান্য। তবে সম্প্রতি দেশটির স্থানীয় একটি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কমোডো ড্রাগন দেখা পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই সাথে যেসব দ্বীপে কমোডো ড্রাগনের বসবাস সেখানেও বসবাস করতে দেওয়া হবে না কোনো মানুষকে।

কমোডো ড্রাগন বিশ্বের সবচেয়ে বড় গিরগিটি হিসেবে পরিচিত। এই প্রাণীটির দাঁত অনেক ধারালো। এই প্রাণীর কামড় অনেক বিষাক্ত। ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি দ্বীপে এই বিরাট সরীসৃপটির বাস। বিরল একটি প্রাণী হওয়ায় সারা বিশ্বেই এর বেশ নাম ডাক রয়েছে। তাই প্রতি বছর অনেক পর্যটক ছুটে আসেন এই ড্রাগনটিকে দেখতে। এই প্রাণীটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। সিনেমাও তৈরি হয়েছে অনেক এই প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় মানুষদের আলাদা ভালবাসা রয়েছে এই প্রাণীটির প্রতি। তবে সম্প্রতি যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এতে করে পালটে যাবে এই প্রাণীর সাথে মানুষের সম্পর্ক।

কমোডো দ্বীপাঞ্চলের গভর্নর ভিক্টর বুংটিলু লাইসকোডাট জানালেন, "দ্বীপটির নাম কমোডো দ্বীপ হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রাণীটির জন্য। এটা মানুষের জন্য নয়। এখানে তাই মানবাধিকার কোনো কাজ করবে না। এখানে শুধুই প্রাণী অধিকার প্রাধান্য পাবে। আমরা এখানে একটি অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে চাই।" তার কাছ থেকেই জানা গেল ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই দ্বীপটিতে মানুষের আনাগোনা বন্ধ রাখা হবে ২০২০ সাল থেকে। এরপর দীর্ঘ একটা সময় পর অল্প কিছু দর্শনার্থীর জন্য কেবল এটি খুলে দেওয়া হবে। যার টিকিটের মূল্য থাকবে অনেক বেশি চড়া। কেবল মাত্র বিত্তশালীরাই এই দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবে সে সময়। আর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এই দ্বীপে থাকা মানুষদের চলে যেতে হবে অন্যত্র।

ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। তারাও এটি বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানা গেল। তবে স্থানীয় মানুষেরা এমন সিদ্ধান্তে বেশ নাখোশ। তারা এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। আব্দুল গফুর কাশেম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, "আমাদের সাথে ড্রাগনের কোনো বিরোধ নেই। বরং আমরা এটিকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে চেষ্টাই করে থাকি। কিন্তু এমন একটি অভিযোগ এনে আমাদের দ্বীপ ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে যেটি সত্যিই হাস্যকর।"

বিশ শতকের গোড়ার দিকে যে পরিমাণ পর্যটক এই দ্বীপে আসতেন কমোডো ড্রাগন দেখতে এখন এই সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেশি। যার ফলে পরিবেশ এবং প্রকৃতির ওপর বেশ বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে দাবি করছে স্থানীয় বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন।

এজন্য তারা সেদেশের সরকারের ঘাড়েও দোষ দিচ্ছে। সরকারি অর্থায়নে এই জায়গাটিকে টুরিস্টদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। বিশেষ করে সেখানে বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যা পরিবেশের জন্য মোটেও ভালো কিছু ছিল না। এছাড়াও কমোডো ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশ পথে নানা ধরনের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এবং হোটেল গড়ে ওঠেছে বেশ নির্বিঘ্নেই।

তবে এবার সরকারের টনক নড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অস্ট্রেলিয়ান গবেষক ডক্টর টিম জেসপ দীর্ঘদিন ধরে কমোডো ড্রাগন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। তিনি জানালেন, "যে হারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে তাতে খুব শীঘ্রই এই দ্বীপাঞ্চল একটি ভাগাড়ে পরিণত হবে। এখনই যে পরিমাণ হোটেল গড়ে ওঠেছে তাতে দ্বীপের পরিবেশ অনেক নষ্ট হয়ে গেছে বলা যায়। তাছাড়া কত প্লাস্টিকের বর্জ্য যে জমা হচ্ছে এই অঞ্চলে তা বড়ই পরিতাপের ব্যাপার।" তবে তিনি কমোডো ড্রাগনের প্রধান খাদ্য হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে সরকারের এমন বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কমোডো দ্বীপটিতে মোট দুই হাজার লোকের বসবাস। প্রায় সময়েই দশ ফুট লম্বা এই ড্রাগনের হামলার শিকার হন অনেক মানুষ। প্রাণও হারাতে হয়েছে অনেককে। স্থানীয় লোকদের প্রধান জীবিকা হোটেল ব্যবসা। এখানে ছোট বড় অনেক হোটেল আছে। রাতে এখানে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

সরকারের নতুন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। এই দ্বীপটি ২০২০ সালের মধ্যে সাধারণ মানুষদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর এতে বছরে ৫০ হাজারের মতো পর্যটককে ঢুকতে অনুমতি দেওয়া হবে। যারা ১ হাজার ডলার দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করবে কেবল তারাই এই দ্বীপে এসে কমোডো ড্রাগন দেখে যেতে পারবে। বছরে ৫ কোটি ডলার আয় করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

গভর্নর ভিকটর বুংটিলু জানান, "পর্যটকদের আশা বন্ধ করার ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বিবৃতিও দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, "পর্যটকের সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে হবে, সেই সাথে চালু করতে হবে কোটা প্রথা। আমরা চাই প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধি করে আয়ের দিকটিও সচল রাখতে। একই সাথে পরিবেশ সুরক্ষা এবং পর্যটন খাত থেকে আয় দুটোই ভালো রাখতে চাই আমরা।"

ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এই পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।

সূত্র : বিবিসি

ওডি/এসএম

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড