• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভ্রমণকন্যাদের মুনলাই ভ্রমণ

  নুসরাত জাহান রিজভী

২২ মে ২০১৯, ১৯:৫০
মুনলাই
ভ্রমণকন্যাদের ৫১তম ভ্রমণ ছিল মুনলাই পাহাড়ে। (ছবি : লেখক)

রাত ১০.৩০ মিনিটে বাস। ২০জন মেয়ের যাত্রা শুরু হলো। বাস আসতে দেরি হবার জন্য সকলেই একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। তবে সকলে মিলেই বিরক্ত কাটিয়ে বেশ উদ্দিপনা নিয়েই বাসে উঠলাম।

ও আচ্ছা আনন্দে বলতেই ভুলে গেছি আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমরা যাচ্ছি পাহাড়ে। এখন ভাবছেন ট্রাভেলার মেয়েরা পাহাড়ে কি প্রথম? না, পাহাড়ে প্রথম না। তবে মুনলাইয়ের মত পাহাড়ি পাড়াতে এই প্রথম। মুনলাই বান্দরবান জেলার রুমা থানার একটা পাহাড়ি বোম উপজাতি পাড়া। তাই আগ্রহ আর উত্তেজনা একটু বেশিই। ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ যারা ভ্রমণকন্যা নামেই পরিচিত তাদের ৫১তম ট্যুর এটা।

বাসে উঠেই শুরু হলো গান, গানের গতিতেই ছুটে চলছে বাস। তারপর কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই কেউই জানিনা। হঠাৎ করে অনুভব করলাম একবার ডানে একবার বামে দুলছি। চোখ খুলেই দেখি সেই চেনা পাহাড়ি বাকের ভিতর দিয়ে বাস এসে থামল বান্দরবান বাস স্ট্যান্ডে।

মুনলাই

রোদের তেজে যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল পথের সৌন্দর্য। (ছবি : লেখক)

সময় নেই হাতে একদম রোদ ওঠার আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে। ডিম-খিচুড় খেয়ে উঠে বসলাম চাঁদের গাড়িতে। এতগুলো অচেনা মুখ আর তাদের সাথে এতগুলো দিন একসাথে থাকতে হবে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে আসন্ন অনিশ্চিত সময়গুলো নিয়ে কিছুটা যে সন্দিহান ছিলাম না সেটা বলবো না।

বান্দরবান থেকে আরও দুই-আড়াই ঘণ্টা চাঁদের গাড়ীতে পাড়ি জমালেই দেখা মিলবে মুনলাই পাড়ার। এই দীর্ঘপথ ভ্রমণ করার পর গন্তব্যে পৌঁছাতে আরও এতটা সময় ব্যয় করতে হবে ভেবে হয়তো ২০ জনের অনেকেই নিরাশ হচ্ছিলো। যেই না আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় আমাদের চাঁদের গাড়ি চারপাশে একবুক সবুজ নিয়ে চলা শুরু করলো শুরু হইয়ে গেল আনন্দ। দুর্গম রাস্তা, অগ্নিঝরা রোদ আর প্রচণ্ড বেগে ছুটে যাওয়া বাতাস কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মনের আনন্দে গান গাইতে ক্লান্তিকর মুহূর্তটাকে উৎসবমুখর করে তুললো সবাই। এমনকি সব চেয়ে কম কথা বলা মেয়েটিও সেদিন ওই মুহূর্তে চুপ করে বসে থাকতে পারলো না।

মুনলাই পাড়া পৌঁছানোর পর আমরা আবিষ্কার করলাম সৌন্দর্য দেখে সবাই থ হয়ে গেছি। কিন্তু তখনো জানতাম না আমাদের অবাক হওয়ার পর্ব কেবল তো শুরু! সভ্যতা থেকে এতটা দূরে বিচ্ছিন্ন থাকার পরও বম সংস্কৃতির মানুষরা খুবই শৃঙ্খল জীবন যাপন করে। প্রকৃতির মায়া মমতাকে আঁকড়ে ধরে সাজিয়ে তুলেছে তাদের নিজের জগত। তাদেরই শিল্প ফুটে ওঠা কাঠের ঘরে আমরা মনে রাখার মত অল্প কটা দিন কাটিয়ে এসেছি। সাঙ্গু নদীর তীরে বিস্তার লাভ করা এই আদি অকৃত্রিম পাড়াটা ছেড়ে আসতে এতটা মন খারাপ করবে সেটা প্রথম দিন কেউ ভাবতেও পারিনি। মাত্র ৫৪টা বাড়ির পাড়াটাতে কী জানি একটা মায়া আছে।

মুনলাই

ভাঙা পাহাড়ি পথে চলতে চলতে ভুলেই গিয়েছিলাম শহুরে যান্ত্রিকতা। (ছবি : লেখক)

এবার বলি মুনলাইকে নিয়ে অবাক হওয়ার অভিজ্ঞতাটা। মুনলাই বেস ক্যাম্পের সব একটিভিটি আর আতিথেয়তার কোন তুলনা চলে না। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে অভিজ্ঞ রন্ধনশিল্পি দিয়ে আমাদের প্রতি বেলায় খাবারের যে আত্মতৃপ্তি পেয়েছিলাম তা ভোলার নয়।

শুরু হলো ভ্রমণকন্যাদের মুনলাই পাড়া ঘুরে দেখা। প্রথম দিন বিকাল। সাঙ্গু নদীতে পানি কম থাকায় বেস ক্যাম্প থেকে আমাদের জন্য মুনলাই পাড়া লেক এ কায়াকিং এর ব্যবস্থা করা হয়। তবে যারা সাঁতার জানেন না তারা হয়তো গোড়ালি পর্যন্ত পানির সাঙ্গু নদীতেই কায়াকিং এ বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এমন ভাবার কোন কারণ নেই। বেস ক্যাম্প থেকে অভিজ্ঞ ট্রেইনার এর সার্বিক তত্তাবধানে সবকিছু পরিচালিত হয়। তাদের রেসকিউ করার যথেষ্ট সুব্যবস্থা রয়েছে। শুরুতে একটু ভয় কাজ করলেও লাইফ জ্যাকেট নিয়ে কায়াকিং এ নেমে পরেছিল ভ্রমণকন্যাদের সবাই। পড়ন্ত বিকেলে শান্ত ঝিলের পানি কেটে চলে যাওয়া বৈঠাটাও বুঝি আমাদের আনন্দটা অনুভব করতে পেরেছিল সেদিন। সমস্ত সন্ধ্যাটা ঝিলের পাড়ে কাটিয়ে সবাই ফিরলাম ক্যাম্পে।

মুনলাই

এতটা পথ পেরিয়ে ঝর্ণার শীতল জলে পেয়েছিলাম স্বর্গীয় প্রশান্তি। (ছবি : লেখক)

মনের কথাটা ভাবনাতে আসার আগেই গরম গরম চা এসে হাজির। প্রচণ্ড চা খোরগুলো কিভাবে যেন একসাথে হয়ে গিয়েছিলাম। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামছে আর এক উঁচু টিলার উপরে বসে আমরা চায়ের কাপে ঝড় তুলে আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। আস্তে আস্তে পাহাড়ে রাত নামছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। ধীরে ধীরে চাঁদটা যেন পৃথিবীর কাছে চলে এসেছে। ভরা পূর্ণিমায় এমন উদার পাহাড়গুলোকে সামনে রেখে গানের কলি খেলতে খেলতে কানে বাজছিল তক্ষকের ডাক। কী অদ্ভুত মায়াভরা পরিবেশ। নিজেকে আরণ্যক উপন্যাসের চরিত্র মনে হচ্ছিল। সেদিন ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা যান্ত্রিক জীবনে বসবাস করি। আর কোন ফাঁকে যে আমরা একটা পরিবার হয়ে গিয়েছি টেরই পাইনি।

মুনলাই পাড়াতে প্রথম সকাল। ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অনেকদিন হয় চলে গিয়েছিল। কিন্তু রিজুক ঝর্না ট্রেকিং এর জন্য আমরা সবাই ঠিকই সূর্যোদয়ের আগে যাত্রার আরম্ভ স্থানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতেই মেঘের কোল ঘেঁষে দাঁড়ানো পাহাড়ের বুক চিরে দিনের প্রথম আলো তখন উঁকি দিলো। আহ! ধরার বুকে এমন দৃশ্য না দেখে ঘরে বসে থাকা যেন একটি দণ্ডনীয় অপরাধ! ব্যস্ত নগরীর ধরা-বাঁধা আলোর নিচে সকাল সন্ধ্যা কাটাতে কাটাতে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মন ভুলানো লাল আভার সৌন্দর্য স্মৃতির এক কোণে কবেই বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

মুনলাই

এখানে না এলে কী নিদারুণ এক অপূর্ণতা রয়ে যেত। (ছবি : লেখক)

এরপর সবাই মারমা পাড়া দিয়ে সাঙ্গু নদীর তীর ধরে এগিয়ে চললাম। পথের মধ্যে কখনো কাদা আবার কখনো কোমর পানিও পেরিয়ে যেতে হলো আমাদের। পাহাড়ি দুর্গম উঁচু নিচু রাস্তা আর নদীর পাড় ঘেঁষে স্বচ্ছ পানির সতেজ কলতানে মুহূর্তেই অন্য সব শব্দ যেন থেমে গেল! পৌছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত রিজুক ঝর্ণাতে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ঝর্নার দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার সুনিপুণ কারিগরি দেখে ধন্য বোধ করছিলাম। এমন সময় কে যেন রংধনু বলে উল্লাসের চিৎকার হাঁকলো! আসলেই তো! ঝর্নার ঠিক নিচেই পাথরের গায়ে মনে হচ্ছে কে যেন রঙ তুলি দিয়ে রংধনু এঁকে দিয়ে গেছে! কেউ কোন সময় ব্যয় না করে ঝর্নার পানিতে লাফিয়ে পড়ল! রংধনুর সাত রঙ সেদিন সবার শরীর ভেদ করে সাদা কালো স্মৃতিগুলোকেও বেনিয়াসহকলাতে রাঙিয়ে দিয়েছিল। মেয়েগুলোর অবাধে পানিতে ঝাপাঝাপি যেন এক স্নিগ্ধতা্র আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছিল ঝর্ণার বুকে। প্রকৃতি কন্যাগুলো যেন প্রকৃতির সাথে মিশে একাকার হয়েছে। সকল সৌন্দর্য্ এখানেই যেন এসে থেমে গেছে।

সেই স্নিগ্ধতা নিয়ে ফেরার সময় সাঙ্গু নদীতে নৌকার বাতাসে যখন খানিকটা উদাসীনতা বাসা বাঁধছিলো ঠিক তখনই আমার কাব্যিক দশার অন্ত ঘটিয়ে মাঝি ভাই বললেন, “আপারা নৌকা আটকে গেছে বালিতে নেমে ঠেলা দেন!” অমনি আমরা ঝপাত করে পানিতে ঝাপ দিয়ে প্রবল উৎসাহে রেস্কিউ অভিযানে নেমে পরলাম। স্বচ্ছ পানির নিচে নানা রঙের নুড়ি পাথর। পানিতে নেমে হেইয়া-হো বলে নৌকা ঠেলে পারদর্শিতা দেখিয়ে আবার দিলাম ছুট ।

মুনলাই

হারিকেনের মৃদু আলোয় সেরেছিলাম রাতের খাওয়া। (ছবি : লেখক)

ক্যাম্পে ফিরে এসেই মজার একটা নাস্তা সেরেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম। পাহাড়ে কড়কড়া রোদে দুপুর হলো। এবেলা পাহাড়ি রেসে রান্না করেছে দুপুরের খাবার। পেট পুরে খেয়ে নিলাম সবাই। পরবর্তী রোমাঞ্চকর কার্যক্রম দেশের দীর্ঘতম জিপ লাইনিং এর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম।

কেউ কেউ উচ্চতাকে ভয় করলেও অরগানাইজার আর বাকিদের উৎসাহে সবাই জিপ লাইনিং একবার করে হলেও সম্পন্ন করলো। দোদুল্যমান সিঁড়ি বেয়ে জিপ লাইনিং বেস এ উঠার পর হঠাৎ উচ্চতা আর দূরত্ব দেখে সবাই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাবো তাও আবার দড়িতে ঝুলে ঝুলে। নিজের উপর আশ্বাস রেখেই একের পর এক পা দুটো কাঠের চৌকাঠ থেকে ছেড়ে দিলাম সবাই। না হলে যে জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতার সাথে দেখা মিলবে না। সামনে এগোতেই অদৃশ্য ডানাগুলো যেন মেলে ধরলাম শূন্যে। সূর্যাস্তের লাল আভা ঠিকরে পড়ছিল পাহাড়ের ওপাশে। একটু পর গতি হ্রাস পেলে আবার মর্তের মাটিতে পা রাখলাম। ‘আর পারিবনা’ কবিতাটা আপনা থেকেই আওড়াতে থাকি।

আজ রাতে চাঁদটা বুঝি একেবারে আমাদের সাথেই খেতে বসেছে। নিজেকে ঘুমাতে দিলে হয়তো আফসোসের কালো দাগটা সাদা হবেনা তাই দল বেঁধে পাড়া মাতিয়ে গোল্লাছুট খেললাম চাঁদের আলোয়।

মুনলাই

চলছে ঝুলে ঝুলে পাহাড় ডিঙানো। (ছবি : লেখক)

শেষের পাতায় মজার মত সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রম ছিল ট্রি-টপ একটিভিটি। এটা রাখা হয় শেষ দিন এবং সারাদিন ব্যাপি আমরা একের পর এক ৭ টা বেস অতিক্রম করে বিফল হই। এখানে আপনার শক্তি, মনোযোগ, নিজের উপর আয়ত্ত সবকিছুকে একসাথে কাজে লাগিয়ে দড়ির সাহায্যে মাটি থেকে প্রায় ৬-১০ ফিট উঁচু বেস পার হতে হবে। ক্রমেই বেসের কাঠিন্য বাড়তে থাকবে আপনার শক্তি একটু একটু করে কমাতে থাকবে। এরকম টান টান উত্তেজনার মধ্যেও আমরা কিন্তু মজা করতে কেউ ভুলিনি। অংশগ্রহণকারীকে আমরা কখনো হাসিঠাট্টা কখনো বা সহায়ক কোন উপায় বলে তার উৎসাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত এক অপরাজেয় প্রাণ কঠিনতম বেসটা যখন পার করলো আমরা সবাই খুশিতে এমন চিৎকার দিলাম যেন ওয়ার্ল্ড কাপ ঘরে এসেছে! আমরা করবো জয়…এমন অনুপ্রাণিত হয়েছি সেদিন সবার চেষ্টা দেখে যে চার দেয়ালের কর্মব্যস্ত জীবন এখনো সেটাকে ম্লান করতে পারেনি।

আজ মুনলাইতে শেষ রাত। মনটা যেন চাচ্ছিলো আরো কয়েকটা রাত থেমে যাক এই পাহাড়ী পাড়াতেই। রাতে আবার সেই ভরা জ্যোৎস্নায় স্নান করি আমরা সবাই ক্যাম্প ফায়ার এর সামনে। আহা কত উলটা পাল্টা গান বেসুরো গলায় গেয়েছি ভাবলেই হাসি পায়! মুনলাই শেষ রাতটাকে আরও স্মৃতিময় করতে আমাদের সবাইকে হতবাক করে দেয় ভ্রমণকন্যার পক্ষ থেকে ফানুশ উড়ানোর ব্যবস্থা। চাঁদের আলোয় ফানুশ যতক্ষণ নিভে না যায় সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। যেন ফানুশ নিভে গেলেই শেষ হয়ে যাবে এই রাত! এমন একটা ট্যুর আয়োজন করা আর ট্যুরমেটদের জন্যই হয়তো গল্প করার মত একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরব ব্যস্ত শহরে। ধন্যবাদ ভ্রমণকন্যাদের আর বস্তা বস্তা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরুক ভ্রমণকন্যাদের সাথেই।

ওডি/এসএম

দেশ কিংবা বিদেশ, পর্যটন কিংবা অবকাশ, আকাশ কিংবা জল, পাহাড় কিংবা সমতল ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা অথবা পরিকল্পনা আমাদের জানাতে ইমেইল করুন- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড